আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Monday 5 July 2010

লং ড্রাইভে রবীন্দ্রনাথ

                                                               মূল অসমিয়াঃ বিকাশ জ্যোতি শইকিয়া।
লং ড্রাইভে বেরিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁকে সেলাম ঠুকছে পথের পাশের গাছগুলো।
ফুলগুলো, সম্ভাষণ জানাচ্ছে বুড়ো পাহাড়ের পাথরগুলো।


রবীন্দ্রনাথের ঠোঁটে সিগেরেট, গেল রাতের  নেশার খানিকটা দু’চোখের আবেশে
পথ চলতি লোকেরা দেখে রবীন্দ্রনাথের এলটো কার, বেপরোয়া চাল চলন
ঐ যে , কানে মোবাইল নিয়ে ড্রাইভিং সিটে রবীন্দ্রনাথ, কারের স্টিরিওতে দুমদাম মিউজিক
নচিকেতার গান, ট্রাফিক জ্যামে মন্থর রবীন্দ্রনাথের গাড়ি


মালিগাঁওয়ের একটি ধাবাতে থেমে যায় রবীন্দ্রনাথের কার, ধাবার ভেতরে একটা ইন্টারভ্যুর আশাতে নীলিম কুমার
কাউণ্টারে দুই প্লেট পর্ক, আর একটা ব্লেন্ডারস প্রাইড ফুল অর্ডার দিয়ে সিট টেনে বসে পড়েন রবীন্দ্রনাথ,
বিস্মিত নীলিম কুমার, দু’পেগ টেনে বলেন, দাদা , একটা কবিতা শোনান
ধুর কবিতা!! বিরক্তিতে মুখ কোঁচকান রবীন্দ্রনাথ। বিরবিরিয়ে বলেন, দুনিয়াতে যত্তসব টাকার ধান্দা !
তার চে’ বলো এই রাজ্যে  কি কিছু ম্যানেজ করা যাবে, এন আর এইচ এমের বাজার শুনেছি বেশ ভালো
বাঁধের ঠিকাতেও বুঝি অঢেল টাকা, পি ডাব্লিউ ডি-র খবর কী, পেপারের বিজনেসও মন্দ নয় !
আশ্চর্যচকিত হয়ে যান নীলিম কুমার, এ কী বলছেন রবীন্দ্রনাথ! কী বলছেন এ সব ?
From Uddiponar Kobita

এই কি সেই রবীন্দ্রনাথ যিনি কবিতা লিখেছিলেন, গীতাঞ্জলি, দ্য সং অফারিংস
‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ!’ অ্যাঁ ! কী পরিবর্তন, বেশ  ! বেশ!
মুড অফ হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথের। কী কবিতা , কোথায় কবিতা, কিসের কবিতা!
 এ পাগল বলে  কী! ছাড়ো তো তোমার প্রলাপ, কবিতাতে কি কিছু পাল্টায় ?
কল্পনারসিকের বাজে কালচার!  কার জন্যে কবিতা ? নিরন্ন মানুষের পেট ভরে না কবিতাতে
সোনাগাছির বেশ্যারা কাবিতা লেখে ভদ্রমানুষের, বানে ধোয়া ধেমাজি কবিতা লেখে রাজনীতির মানুষের
সংঘর্ষে নিহতের আত্মীয়রা লেখে শোকের স্বরলিপি, কবিতার বিষাদ


বিব্রত, বিমূঢ় নীলিম কুমারকে ছেড়ে চলে আসেন রবীন্দ্রনাথ।  আবার, আবারো ড্রাইভিঙে রবীন্দ্রনাথ
এইবার রবীন্দ্রনাথের ঠোঁটে শিস, এইবারে রবীন্দ্রনাথের ড্রাইভিঙে বসন্ত, ব্রেক মারেন, স্পীড বাড়ান
ধীরে ধীরে খুলে যায় রবীন্দ্রনাথের মুখোস, ভিজে আসে রবীন্দ্রনাথের দুটো চোখ, পথের পাশে দাঁড় করান গাড়ি
স্টিয়ারিঙে মুখ রেখে হুঁ হুঁ করে কাঁদেন রবীন্দ্রনাথ, হুঁ হুঁ করে কাঁদেন, হুঁ হুঁ করে কাঁদেন
কেন কাঁদেন রবীন্দ্রনাথ? কেন কাঁদেন, কেন কাঁদেন
এতোদিন কি তবে রবীন্দ্রনাথ একা ছিলেন, নির্বাসিত ছিলেন, ছিলেন বিপন্ন আর ক্লান্ত !
মরে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ কোত্থেকে এসেছিলেন, কোথায় কাটিয়েছিলেন দিনগুলো, কী খেয়েছিলেন, কোথায় শুয়েছিলেন
এতোদিন কি বিশ্বকবি কবিতা লিখছিলেন, কফিহাউসের আড্ডাতে কি ছিলেন তিনি
নাটক দেখেছিলেন, পড়েছিলেন খবরের কাগজ, ধর্ষণ বলাৎকারের ছবিরা কি তাঁর সকালবেলাগুলো গিলছিল?


গেল রাতে স্বপ্নে রবীন্দ্রনাথ, লং ড্রাইভে রবীন্দ্রনাথ, পথের পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাঁদছিলেন
পথ চলতি লোকেরা  দেখছিল সেই দৃশ্য, সিনেমার মতো পার হয়ে যাচ্ছিল সেই দৃশ্য আর মিলিয়ে যাচ্ছিল


রবীন্দ্রনাথ লং ড্রাইভে আসছিলেন  আর পথের পাশের গাছগুলো, ফুলগুলো তাঁকে  সেলাম ঠুকছিল
সারা রাত ধরে   লং ড্রাইভে আসছিলেন রবীন্দ্রনাথ, আর ভোর বেলা চলেও গেছিলেন


আবার কি  কখনো  আসবেন, লং ড্রাইভে রবীন্দ্রনাথ ?




From Uddiponar Kobita

3 comments:

Ind_Anirban said...

Khub e sundor..

সুশান্ত বর্মন said...

মজার তো! চিন্তাবৈচিত্র্যে মুগ্ধ হলাম।

সুশান্ত কর said...

হ্যাঁ। তাই!