আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Monday 6 June 2016

রবীন্দ্র সংগীত আর ফেসবুকের ইঁদুর মাছি

(C)Image:ছবি
সেদিন আমাদের আবাসিক প্রকল্পে একটি মেয়ের পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করলে নিচে একটি 'পার্টি' হয়েছিল। সবাই জানে, আমাদের কাছে প্রচুর গানের সংগ্রহ আছে। মেয়েকে বলা হলো ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে বাজাতে। মেয়ে নিয়ে গিয়ে আমাকে দায়িত্ব দিলে, আমি কিছু বাংলা গান বাজালাম। তার মধ্যে ভূপেন, সুমন, অঞ্জন দত্ত, আশা ভোষলে, লতামুঙ্গেসকরের পুরোনো গানও ছিল। কিছুক্ষণ বাজবার পরে দেখি বডোদেরই কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন, স্যর, এই সব কী গান লাগিয়েছেন! ভালো গান লাগান! 'ভালোগান' কী আমি জানি। তার পরেও বলছিলাম। সেসব নেই। কিন্তু আমার মেয়েও এজমানার কন্যা। সে কতক্ষণ পরে নিজে এসে ইয়ো ইয়ো হনি সিং টাইপ চালিয়ে দিল। সব্বাই বেশ খুশ। কাল দেখলাম, রজতদা (কান্তি দাস) নিজের দেয়ালে ফেসবুকে কীসব বাজে কারবার হয় জানিয়ে নিজের হতাশার কথা জানাচ্ছিলেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করলাম, বাজারে এর চেয়ে বেশি কী আশা করেন, তিনি প্রথমে বাজার অর্থনীতি যে এই দুনিয়াতে টিকতে এসছে, তাই বললেন। পরে যখন বললাম, আপনার বাড়ির কাছে যে বাজারে নিত্য যান, সেখানে গিয়ে কী রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর বসালে সমাদর আশা করেন? তিনি তখন বললেন, ঠিক! তার মানে, না আশা করেন না। ফেসবুক হচ্ছে শিলচরের ফাটক বাজার বা গুয়াহাটির ফ্যান্সি বাজারের মতো। ভালো মন্দ সব লোককেই সেখানে যেতে হয়, কিন্তু কোনো স্থায়ী জিনিস সেখানে মেলে না। সেখানে সবই বাজারের চাহিদা মেনে হয়। আমাদের মুস্কিল হলো, আপনি রবীন্দ্র সঙ্গীত একখানাও এখানে শুনিয়ে দেখুন, খুব কম লোকে শুনবেন, খুব কম লোকে লাইক দেবেন, খুবকম লোকে কথা বলবেন, বা ঝগড়া বা বিতর্ক করবেন। কিন্তু বাবা রামদেবের শাড়ি পরা ছবি দিন---হিট! কারণ, এইটাই সবচাইতে সহজ কাজ। কোনো দায় নেই , দায়িত্ব নেই, শ্রম নেই, নিষ্ঠা নেই, আন্তরিকতা নেই! সমাজের ভালো মন্দ বিবেচনা নেই। কিছুক্ষণ টাইম পাস হয়ে গেল। শ্রম হয়তো আপনি অন্য ভালো জিনিসে করেন, এখানে কিছু নিজেকে হালকা করে নেন। যেমন বাজারের চায়ের দোকানের আড্ডাতে যোগ দেন আরকি। কিন্তু যদি ভেবে বসেন, চায়ের দোকানেই আসল কবিতা লেখা হয়, দেশের আসল ইতিহাস লেখা হয়---সমস্যা সেখানেই। বহু বড় বড় কবি ঐতিহাসিকও দেখছি, ফেসবুক জমানাতে এখানেই লাইকের সন্ধানে আসেন। মিষ্টিতে যেমন মাছিও ভন ভন করে, এখানেও তাই করে যখন ---অনেকে সেই মাছিদেরকেও আসল বোদ্ধা ভাবার বিভ্রান্তিতে ভোগেন। অনেকে বিরক্ত হয়ে পণ করে বসেন , ধুর ছাই ! আর এই বাজারে মুখ দেখাবো না। মুখ না দেখালে নিজেরই ক্ষতি। আরো বহু মুখ দেখার থেকেবঞ্চিত হবেন। কিন্তু রবীন্দ্র সঙ্গীতের আসর বসাতে চাইলে বাজারে বসাবেন না। আর বোদ্ধা , বা অবোদ্ধার মধ্যে তফাৎ করতে শিখলে ভালো। ব্যক্তিগত ভাবে আমি জানি, ফেসবুকে যা বলি, লিখি সবই অস্থায়ী। আর এখানে ইদুঁর মাছির উৎপাতও কম নয়। তবু বাড়িতে যে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা দেখি অসম্ভব, তাদের সঙ্গে দেখা হবার মোহে, দুটো কথা বলে বাড়িতে ডাকবার মোহেই এখানে আসি। আমার নিজের কিছু ব্লগ আছে, সেখানে বছরে তিন চারটা লেখা বেরোয়। চারপাঁচজন লোকে সেসব পড়েন। একাধিক সম্পাদক একটি লেখা নিয়ে গিয়ে ছাপেন। জানি তারাই আসল সমঝদার। বাকি সবই মায়া। বাকি সবই আজ আছে কাল নেই। ! এমনকি প্রায়ই বাজার বন্ধের মতো এখানেও বন্ধ নামতে পারে, যখন তখন!

No comments: