আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Wednesday 7 February 2018

গুহাচিত্র বনাম ফেসবুক স্টেটাস


(ছবি ঋণঃ আনন্দবাজার পত্রিকা)
কটা কাল ছিল মানুষ গুহাতে ছবি এঁকে নিজের 'স্টেটাস' জানাতেন। সেগুলো স্থানে ভ্রমণ করতে পারত না। কিন্তু কালে ভ্রমণ করে একাল অব্দি এসে পৌঁছেছে। সভ্যতার ইতিহাস পাঠ তাই এখনো সহজ হয়ে আছে। আজকাল লোকে ফেসবুকে, টুইটারে স্টেটাস লেখেন। সেগুলো দ্রুত স্থান ভ্রমণ করে। তারপরে তলিয়ে যায়। হোয়াটস এপে হলে যাকে পাঠানো হলো, তিনি পর মুহূর্তে 'ডিলিট' করে দেন। এই হচ্ছে, এর সর্বোচ্চ সম্মান। তার মানে গুহাচিত্রের বিপরীতে এই সব কালভ্রমণ করতে একেবারেই অক্ষম। চিরকালীন' বলে শব্দটি এখানে একেবারেই বেমানান।
          সম্প্রতি দেখলাম, কেউ  কেউ স্টেটাস দিয়ে জানাচ্ছেন দেখলাম ফেসবুকে আর ভালো লাগছে না। যারা জানাচ্ছেন , তারা যে ফেসবুকের চমকে ধরা কে সরা জ্ঞান করছিলেন , তাও দেখছিলাম। ভালো যদি নাই লেগে থাকেসে আমাদের কাছে সুসংবাদ। আন্তর্জালে আমার উপস্থিতি এই ফেব্রুয়ারিতে এক দশক পার করেছে। আন্তর্জালে বাংলা লেখালেখি ভারতেই যারা শুরু করেছিলেনখুব অতিশয়োক্তি হবে নাতাদের প্রথম দিককার মানুষ আমি। তখন পূর্বোত্তরে কেউ লিখতেনই না। গোটা ভারতে যে কজন হাতগুণা লিখতেনআমরা বলতে গেলে পরস্পরকে চিনতাম। ফেসবুক থাকলেও সেরকম জনপ্রিয় ছিল না। তখন ব্লগ ছিলছিল ই-মেল গ্রুপঅর্কুট , ইত্যাদি। অসমিয়াতেও কেউ লিখতেন না। ২০১০এ ফেসবুক পোষ্ট করলেই ই-মেলে চলে যাচ্ছেদেখে ব্যবহারকারী হুহু করে বাড়তে শুরু করে। আমরা সেই সময় অসমিয়ার প্রচারে প্রসারেও কাজ করি যেমনপূর্বোত্তরে বাংলা লেখালেখি নিয়েও কাজ শুরু করি। রোমানে বাংলা--অসমিয়া লিখিয়েদের থেকে কত গালি অপমান যে সইতে হয়েছে বোঝাই কী করে! এক বন্ধু প্রায় বাজিই ধরেছিলেন আন্তর্জালে বুঝি বাংলা লেখাই যায় না। তাঁকে যখন শিলচরে গিয়ে প্রায় জোরে ধরেই বাংলা লেখা দেখাইশেখাই---ফিরতে না ফিরতে দেখি তিনি ফেসবুকে গ্রুপ খুলে বসেছেনবাংলাতে। ফেসবুকের এতোই চমক। অথচতিনি কবি। আশা করেছিলামনিজের একখানা ব্লগ করবেন। যেভাবে নিজের খাতাতে স্থায়ীভাবে লিখে রাখেনসেভাবেই ব্লগে লিখে রাখবেন। যেভাবে নিজের সম্পাদিত কাগজ করবেনসেভাবেই ব্লগ সম্পাদনা করবেন। কিন্তু সেগুলোতে তো এতো এতো গরম গরম লাইকআর বাহবা মেলে না। ফলে সমস্যা হলো। তারা লাইকের মোহে বুঁদ রইলেন। এবং রাতারাতি কেউকেটা বিখ্যাত হয়ে গেলেন (বলে ভেবে নিলেন)। গোঁদের উপরে বিষফোড়ার মতো এলো স্মার্টফোন। বাংলা লেখালেখি সে আরো সহজ করে তুলল। এখন আর বলতে হলো না। বা হয় না।ভালোই তো হলোতাই নাভাবের আদান প্রদান খুব দ্রুত হতে শুরু করল। ভাবের তুফান ছুটল। সেই তুফানে বহু বাড়ি ঘর সংসার উড়েও গেল। তুফান সব সময়েই ভালো। তার মানে বর্ষা এলো। এবারে চাষাবাদ হবেফসল ফলবে। কিন্তু তুফানের আগে পরে বানও ডাকে। বানের তোড়ে সব ভেসে মিশে একাকারও হয়ে যায়। আর তৈরি করে দলা দলা আবর্জনা। সেই সব আবর্জনা দেখে যদি ঘেন্নাতে কেউ কেউ চলেই যানবাংলা ভাষার পক্ষে তবে সেই সব সুসংবাদ। কিন্তু আমরা যাই না কেনকারণপালাবার মধ্যে সুখ নেই। আবর্জনার পুণর্ব্যবস্থাপনার  মধ্যে রয়েছে যেটুকু। খুব কম লোকে তাতে হাত দিচ্ছেন। সেই কম লোকেই আগামীর দিশা দেখাবেন বলে আমার বিশ্বাস। এই যেমন একটিই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়একটিই মাত্র কলেজ কলকাতার সরসুনা কলেজ আন্তর্জালের বিশাল জগতের রহস্য নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেনআলো দেখাচ্ছেন--- ভাবা যায় কি সেই সব কাজের একটি অংশ হলো রবীন্দ্রনাথের নানা পাঠের আন্তর্জাল উপস্থিতি। ফেসবুকের মহাপুরুষ--নারীরা সেসব সম্ভবত দেখেনও নিকল্পনাও করতে পারেন না। বাংলা ওয়েবজিনওয়েবপত্রিকাক্রমেই বাড়ছে। এমন কি পূর্বোত্তরেও। ঈশানের পুঞ্জমেঘকাঠের নৌকার বয়সতো হচ্ছেই। (জনপ্রিয় নয় যদিওঅনেকে ঘেন্নাও করেন। সেসব ভালো)। বেশ কিছু ইউনিকোড পত্রিকা এখন আসাম ত্রিপুরার থেকে বেরোচ্ছে। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্যে মতো তরুণ কবিরা এখন ব্লগজিনে মজেছেন। একা একাই আলোর মশাল হাতে তুলে নিয়েছেন। খুব কম। তাতেই আশা জাগছে। রাতের আকাশের আঁধার কণাদের সংখ্যাই তো বেশি। অগুনতি তারারাও রয়েছে বটে। দেখা গেলে বোঝা যায় আকাশ পরিষ্কার। সুতরাং তাদেরও ফেলা যাবে না। কিন্তু আলো করে তো একা চাঁদ। আমাদের এই নবীন চাঁদদের অভিনন্দন... তাঁদের পক্ষ বদল ঘটুক। রাহু-কেতুর ভোগে না পড়লেই হলো। আমাদের জন্যে সেই সুসংবাদ। ফেসবুকে অনেকেই প্রশংসা প্রশস্তি করেনআসলে নিজেরা বিনিময়ে তোল্লা পাবেন বলে। কিন্তু এই তরুণেরা জানেনআমাদের প্রশস্তি নির্ভেজাল। কেবলই ভাষা এবং ভাবের সমবেত স্বার্থে। 
          আজ সকালে প্রবীণ কথাশিল্পী মিথিলেশ ভট্টাচার্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আন্তর্জালের 'আবর্জনানিয়ে নিজের উষ্মা জানাতে। আমিও সমবেদনা জানালাম। কিন্তু সঙ্গে করে মনে হলোআমাদের এই সব শুক্লপক্ষ সংবাদও এই প্রবীণদের কাছে পৌঁছানো চাই। তাঁরা আন্তর্জালে আসবেন না। তাঁদের সসম্মানে অন্যরকম করে নিয়ে আসা চাই। আমাদের দৈনিক কাগজের আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী 'অসভ্যসম্পাদক যখন সাহিত্যের পাতাতে রাশিফল ছেপে যাচ্ছেআর ভগীরথ মিশ্রআবুল বাসারঅমর মিত্রদের 'জয়পতাকাআমাদের দেখিয়ে বিদ্রূপ করে যাচ্ছেতখন আমাদের অনুপস্থিত পূর্বসূরিদের সসম্মান উপস্থিতি সম্ভব করাটা হোক আমাদের পরবর্তী রণকৌশল। সেই কাজ একা কারো দ্বারা সম্ভব নয়। সমবেত 'ভাবান্দোলনে'র দ্বারা সেসব সম্ভব। আমাদের 'রিফিউজি লতাজীবনের অন্ত পড়ুক। তৃণ গজাক , তার ফাঁকে ফাঁকে মহীরুহ অঙ্কুর মেলুক।