আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Sunday 16 August 2009

Indepence day

I'm waiting for the day when our country would be totally free from western hegemony. Till then no celebration of independence day!

Saturday 15 August 2009

Lekha Porar Sohoj Poth

From Lekha Porar Sohoj Poth
From Lekha Porar Sohoj Poth

লেখাপড়ার সহজ পথ
     

যাকে  বহন করে চলেছি , তাকে বাহন করতে হবে:
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ যে স্কুল পালানো ছেলে ছিলেন সে আমরারবীন্দ্র জীবনী মুখস্থ করতে গিয়ে সব্বাই শিখে গেছি। শুধু কি ইস্কুল পালানো ? বড়হয়েও , যখন কিনা নিজেও এক বড়সড় মাষ্টার তখন, ইস্কুল আর  ইস্কুলের মাষ্টারমশাইদের নিয়ে যা নয় তা লিখেওগেছেন । আমাদের স্কুলপালানো দুষ্টরা যখন বড়দের বিচারের মুখে পড়তে হয় তখন যাতে সাক্ষ্য হিসেবে তাঁকে হাজির করতে পারে তার জন্যেআমরা কিছু উদ্ধৃতি দিয়েই রাখি। তিনি লিখেছেন, প্রকৃতিরসাহচর্যের থেকে দূরে থেকে আর মাষ্টারদের সঙ্গে প্রাণগত যোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আমাদেরআত্মা যেন শুকিয়ে   যেত । মাষ্টারেরা সবআমাদের মনে বিভীষিকার সৃষ্টি করত। (আশ্রমের রূপ ও বিকাশ)  লিখেছেন, ছেলেদের মানুষকরে তুলবার জন্যে যে একটা যন্ত্র তৈরী হয়েছে, যার নাম ইস্কুল, সেটার ভিতর দিয়েমানব শিশুর শিক্ষার সম্পূর্ণতা হতেই পারে না। আরো লিখেছেন, আমাদের শিক্ষাকে আমাদের বাহন করিলাম না, শিক্ষাকে আমরা বহন করিয়াইচলিলাম.... বর্তমান শিক্ষা প্রণালীটাই যে আমাদের ব্যর্থতার কারণ, অভ্যাসগত অন্ধমমতার মোহে সেটা আমরা কিছুতেই মনে ভাবিতে পারি না। ( শিক্ষা, অসন্তোষের কারণ ।)
এই যে বর্তমান শিক্ষা প্রণালী এটা কিন্তু এখনো বর্তমান, এই স্বাধীনভারতেও, একুশ শতকেও । রবীন্দ্রনাথ নিজে সেই শিক্ষা প্রণালীর বিরুদ্ধে একটা প্রণালীশান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন-বিশ্বভারতীতে দাঁড় করাবারচেষ্টা করেছিলেন । আমাদের অভিবাবকেরা বা এ যুগের মাষ্টারেরাও আমাদের নিয়ে যতইরবীন্দ্র জয়ন্তীর আয়োজন করুন না কেন , যতই তাঁর কবিতা আবৃত্তি করিয়ে নিন না কেনতাঁর কাজের কথা কিন্তু তেমন করে বলেন না বা তার অনুসরণও করেন না। শান্তিনিকেতনেরবীন্দ্রনাথ চাইছিলেন ছেলেমেয়েরা হাসবে-খেলবে, গান গাইবে-ছবি আঁকবে, হাতে কলমে কাজকরবে আর জীবনের পাঠ পড়বে । তারা ভুলবে শ্রেণি বিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষপৃথিবীর তাবৎ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হতে শিখবে  । তাদেরসামনে থাকবে জীবনের এক মহৎ লক্ষ্য। তাঁর মতে , স্বাজাত্যেরঅহমিকার থেকে মুক্তিদানের শিক্ষাই আজকের দিনের প্রধান শিক্ষা।  ব্রিটিশের এদেশে প্রবর্তিত  শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনি চাইছিলেন এদেশ থেকে সমূলেউৎপাটন করা হবে । কিন্তু তা হয়নি । উল্টে স্বাধীন ভারতে বিশ্বায়নের যুগে তাআরো  জাঁকিয়ে বসেছে । আরো  শোনা যায় ভেতর থেকে শান্তিনিকেতনকেও ক্ষয়ে গিয়েসেরকম হয়ে উঠতে দেয়া হচ্ছে । আজকাল অবশ্য ইস্কুলের মাষ্টারেরা ছাত্রের গায়ে হাততুললে তার বিরুদ্ধে আইন হয়েছে । কিন্তু হলে কি হবে, ভাঙা-নোংরা শ্রেণি কোঠা, ভারীবইয়ের বেগের বোঝা, হোমওয়ার্কের ঠেলা, প্রাইভেট টিউটরের বাড়ি বাড়ি  দৌড়  আরপরীক্ষার প্রতিযোগিতাতে পিছিয়ে পড়ার লজ্জার শনির দশা তথা গলায়  দড়ি দেবার রোগের থেকে সহজে যেমুক্তি পাওয়া যাবে তা মনে হচ্ছে না। লেখা পড়াতে ভালো হবার সবচে সহজ পথটা হচ্ছে এই মুক্তির পথ , রবীন্দ্রনাথের পথ।   এ নিয়ে আমাদের ভাবতে এবং কাজ করতে হবে । কিন্তুরাত পোহাতেইতো আর তা হচ্ছে না! যথার্থ শিক্ষাকে বাহন করে তুলতে  না পারা অব্দি আপাতত আমাদেরএই বর্তমান শিক্ষা প্রণালীর বোঝাই বহন করে যেতে হবে। তাই তারভার লাঘবের কথা ভাবা যেতে পারে । গান্ধি যখন অসহযোগ আন্দোলনের দিনে ছাত্রদের স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসবার আহ্বান জানাচ্ছিলেন তখন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এর বিরোধীতাকরেছিলেন। কেননা, তাঁর মনে হচ্ছিল বৃটিশের থেকে যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকুও আমাদেরছাত্রদের নিতে হবে । নইলে তারা পুরোটাই অন্ধকারে থেকে যাবে ।   আমরা তাই এই দুঃসহ দুর্বিপাকের মাঝেও খানিকআলোর সন্ধানে বেড়াব এই লেখাতে ।

যে হিরেটি ওল্টানো  আছে তাকে সোজাকরতে  হবেঃ

আমাদের বিদ্যানিকেতনগুলো থেকে যে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রত্যেক বছর পাশ করেবেরিয়ে আসে, তার তাদের সংখ্যাটা শুনছি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে । এবারকার (২০০৯)  উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষাতে   কলা বিভাগে ১,৪০,৪১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে৯৫,৪৭৩ জন উত্তীর্ন হয়। ব্যর্থ হয়ঃ ৪৪,৯৪৬ জন; বাণিজ্যে ১১,৬৮২জন পরীক্ষার্থীরমধ্যে সফল প্রার্থী ছিল ৮,৪২৪ জন। ব্যর্থ হয় ৩,২৫৮ জন। বিজ্ঞানে  মোট ছাত্র-ছাত্রী ছিল  ১২,৫৩১, উত্তীর্ণ হয় ১০,০৫২ জন। অনুত্তীর্ণহয়  ২,৪৭৯ জন। আপাত দৃষ্টিতে অনুত্তীর্ণেরপরিমাণ কম। এই দেখিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির ঢাক পেটানো হয়।  কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখলেই শুভঙ্করের  করুণ ফাঁকি ধরা পড়তে সময় লাগেনা ।  
             এবারেকলা  বিভাগে প্রতি ১৪ জনে    ( ১০ হাজারে ১জন ধরে )  ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্র মাত্র ০.৬ জন        ( ৬,৩২৩) ; ২য় বিভাগে ১.৭ জন ( ১৭,১৭৯) ,তৃতীয় বিভাগে ৭.৩ জন ( ৭২,৯৭১) এবং অনুত্তীর্ণ ৪.৪ জন ( ৪৪,৯৬৪) । বাণিজ্যে   প্রতি ১২ জন   ( ১ হাজারে ১ জন ধরে) ছাত্রের মধ্যে ১ম বিভাগেউত্তীর্ণ ছাত্রের সংখ্যা ১.৩ জন ( ১,৩৩৮), ২য় বিভাগে ২.৬ জন ( ২,৫৪১), তৃতীয়বিভাগে ৪.৬ জন ( ৪,৫৪৫) এবং অনুত্তীর্ণ ৩.৩ জন ( ৩,২৫৮) । বিজ্ঞানে প্রতি প্রতি ১২জন ( ১ হাজারে ১ জন ধরে) ছাত্রের মধ্যে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রের সংখ্যা ৩ জন (৩,০৩০), ২য় বিভাগে ৫.৩ (৫,৩৯৬) , ৩য় বিভাগে উত্তীর্ন ছাত্রের সংখ্যা ১.৬ (১,৬২৭)এবং ব্যর্থ ছাত্রের সংখ্যা ২.৪ জন (২,৪৬১) । সব বিভাগ মিলিয়ে চিত্রটি এরকম---প্রতি ১৬ জন ছাত্রের মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রের মধ্যে সফল ছাত্র সংখ্যা মাত্র ১১ জন ।১ম বিভাগে ১ জন, ২য় বিভাগে ২ জন, ৩য় বিভাগে ৮ জন  এবং ব্যর্থ হয়েছে ৫ জন  ছাত্র-ছাত্রী । এই সংখ্যামানকে এক চিত্র দিয়ে  দেখালে সে চিত্রটি হবে এরকম , চিত্র -০১এর ওল্টানোহিরের  মতো।  
            ‘হিরেটাকে যে  কখোনো এমন  চিত্র -০২ এর মতো  সোজা করেও দেখানোও সম্ভব  এ যেন দূর দূর পর্যন্ত আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। ৩য় বিভাগে উত্তীর্ন হওয়া ছাত্রদের অতি অল্পই পরে ঘুরে দাঁড়ায়। বেশির ভাগইজীবনের যুদ্ধে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ হাঁটে । এদের পাশ করানো হয়েছে শুধু ঘুরেদাঁড়াবার একটা সুযোগ করে দিতে। সুযোগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতে খুব একটা নেই ।পরীক্ষার এই বাজে পরিণামতো আর কেবল ব্যক্তি ছাত্রের নয় । এর জন্যে লজ্জা পাওয়া উচিত আমাদের পুরো ব্যবস্থার ।যতক্ষণ সেটি হচ্ছে না ব্যক্তি ছাত্রকেই তার কর্ম তথা অধ্যয়ন পন্থা পাল্টাতে    হবে । চিত্র ১এর এটিই নির্দেশ । আমাদের এইপ্রবন্ধেরও এটিই চেষ্টা।
অনুত্তীর্ণ আর তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রদের এক সঙ্গেনিলে সংখ্যাটা বেশ বড় দাঁড়ায় । প্রতি ১৬ জনে ১৩ জন ( ১,৩০,৬৭৮ ) । তিন চতুর্থাংশেরথেকেও বেশি !!! এরা প্রায়  সব্বাই  নোট মুখস্থ করে । এদের  অর্ধেক অন্তত গৃহ শিক্ষকের বাড়ি যেয়ে পড়াবারক্ষমতা রাখে এবং তা গিয়েও থাকে । এদের থেকে প্রতি বছরে নোট লেখক ও গৃহ শিক্ষকদের কোটিকোটি টাকা আয় হয় । তার পরেও এই ব্যর্থতা কেন এই কোটি টাকার প্রশ্নটা আমরা খুব কমকরি । করাটা যে উচিত  এক অভ্যাসগত অন্ধ মমতার মোহে সেটা আমরা কিছুতেই মনে ভাবিতে পারি না।

যারা জানে যে কী করে শিখতে হয় তারা যথেষ্ট জানেঃ
একেবারে যে কোনো প্রশ্ন করি না তা নয়। কিন্তু সেসবপ্রশ্নের জন্যে আমাদের সবজান্তা মনে উত্তর তৈরি করাই থাকে। বাবা বলেন, ছেলের ভাগ্যটাইখারাপ। মা বলেন, মেয়ের সে রকম ব্রেন নেই ! সে উত্তরগুলো তারা পেলেন কৈ, সে কৈফিয়তসাধারণত দেন না।  কেউ জিজ্ঞেসও করেনা । তোআর কি করা যাবে ! যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন তাদের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। শনিঠাকুরছাড়া তাদের ভাগ্য  ভালো করার সামর্থ্য কারোনেই ।  যারা ব্রেনতত্বে বিশ্বাস করেন তাদের সঙ্গে কথা এগুনো যায় ,কেননা ওটা শরীর তত্ব আরমনস্তত্বের বিষয় । ব্রেন মানেতো মাথা , কাঁচা বাংলাতে   ঘিলু । ওটা কেউ কমবেশি নিয়ে জন্মায় এমনটি কখনো শোনা যায় নি। যে কারণে কেউ একটা হাত বা পা বা চোখ নানিয়ে জন্মাতে পারে তেমন কোনো অস্বাভাবিক কারণ ছাড়া কারো ঘিলু পঙ্গু হতে পারে না।  কম বেশি  হবারতো প্রশ্নই ওঠে না। ঘিলু বা মাথা তার স্মৃতিশক্তিকে ব্যবহার করে  আমাদের মেধাকে ধারণ করে। মেধা কথাটার মানে কাজে আর চিন্তাতে আমাদের দক্ষতা । সেদক্ষতাগুলো আমরা হাতে পায়ে--মুখে প্রকাশ করলেও তা কিন্তুআসলে সঞ্চিত থাকে আমাদের মাথাতে স্মৃতির আকারে । সেখানে গণ্ডগোল হলে কবি নজরুলওনীরব হয়ে যান, আমরা কি ছার ! সেই স্মৃতিও আসলে আমরা কল্পনাও না করতে পারা এক বিশালতথ্যকোষের  জালিকা। সে জালিকা প্রতিদিনপ্রতিমুহূর্ত আকারে বেড়েই চলেছে। আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয়  প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রয়েছে সেই কোষগুলোর আর সেইসঙ্গে জালিকাটির বিস্তারের কাজে। আমৃত্যু সে কাজ ওরা করে চলে।  তথ্যকোষের এই বিশাল জালিকাকে  জ্ঞান নাম দিলেওমহাভারত অশুদ্ধ হয় না। এই জ্ঞানগুলোদিয়েই আমাদের দৈনন্দিন  কাজগুলো বেশ চলে যায়।  এই সম্পদে রাজা ভোজের সঙ্গে গঙ্গু তেলির ,আইনস্টাইনের সঙ্গে হরিদাস পালের, পরীক্ষাতে প্রথম হওয়া ছাত্রের সঙ্গে গোল্লা পাওয়াছাত্রের  কোনো তফাৎ  নেই। তবে ? তফাৎ, সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করাবারপদ্ধতিতে। এখানে ভাগ্য বা অন্য কোনো বাহানা আসতেই পারে না । সে পদ্ধতি যে জেনেছেসে বাজি মাৎ করেছে । যে জানেনি সে হাজার খানা গ্রন্থ হজম করেও গোল্লার সংখ্যাবাড়িয়ে গেছে , সে গোল্লার বাঁদিকটাতে একটাও পূর্ণ সংখ্যা জোটাতে পারে নি। হেনরিব্রুকস আদাম নামে এক বিলেতি পণ্ডিত বলেছিলেন, যারা জানে যেকী করে শিখতে হয় তারা যথেষ্ট জানে এর অর্থ, আমাদের ছাত্ররা যথেষ্ট জানে না। তারাজানে না কী করে শিখতে হয় ।
আমাদের বেশিরভাগ ছাত্র নোট পড়ে, গৃহ শিক্ষকের বাড়ি দৌড়োয়। বেশিরভাগ  ছাত্র ফেল করে । এই দুয়েরমধ্যে যে  যোগ আছে----সেতো স্পষ্ট। তারাকেন  দৌড়োয় , কেন মুখস্থ করে--তারা জানেনা। তাদের কোনো লক্ষ্য নেই । গন্তব্য নেই। তাই তারা কোথাও পৌঁছায় না। তারা ফেল করে। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর এক মহৎ লক্ষ্য ছিল তা আগেই লিখেছি। তাঁরছাত্রদেরকেও  এক মহত্তর লক্ষ্যের দিকেপরিচালিত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ।  আমাদেরপরিচিত বিদ্যালয়গুলোর তেমন কিছু থাকে না। ওগুলো পাশ করা ছাত্র তৈরির কল। সেই কলে মানুষ তৈরির দবি করা হলেও আসলে তৈরি হয় যন্ত্রবৎ   অসংখ্য অকেজো চিনে পুতুল। সেই পুতুল নিয়ে আমাদের সমাজের কারা কেমন নোংরাখেলা করে সে প্রসঙ্গে আমরা আপাতত যাচ্ছিনা। এর মধ্যেও ১৬ জনের মধ্যে যে ২-১ জন ভালো করে পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় তাদেরজিজ্ঞেস করলেও জানা যাবে তাদের জীবনের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য তারা অনেক আগেই ঠিককরে রেখেছে। অনুত্তীর্ণ ১৩ জনের সেরকম কিছু থাকে না। যেটুকু থাকে তা ঐ লেখা পড়া শিখে রোজগার করাবার মত বিমূর্ত কিছু একটা। এতে কোনো কাজহবার নয়।

যে যত বেশি পড়ে সে তত ভালো ছাত্রএমন বিশ্বাস এক কুসংস্কার মাত্রঃ
একের লক্ষ্যটাকে  অন্যে দেখার উপায় নেই। ১৩জন ব্যর্থ ছাত্র শুধুদেখে যে ৩জন সফল ছাত্র প্রচুর বই পড়ে। সুতরাং বই পড়াটাকে এই ১৩জন প্রায়কুসংস্কারের মতো করে তোলে। তাদের এক ভ্রান্ত ধারণা হয়ে যায় যে,  যে যত বেশি পড়ে সে তত ভালো ছাত্র। ঐ ১৩জনের  যারা -----পাঠ্য বই না পড়ে ভীষণভাবে নোট নির্ভর-----তাদের মধ্যেই ঐ কুসংস্কারটি বেশি। কথাটি আপাত বিরোধপূর্ণ হলেও সত্যি! এত্তো এত্তোবই পড়বে কী করে! সে নিয়ে আত্ম বিশ্বাসের অভাবে ওরা অন্যের তৈরি করে দেয়া বাজারের নোটেরপেছনে ছোটে । গৃহশিক্ষকের বাড়িও ওরা ঐ নোট আনতেই যায়। নোট আনা ও মুখস্থ করাটাকেইওরা লক্ষ্য করে ফেলে।  অভিবাবকেরাও মাসেমাসে মোটা অংকের মাইনে সেই শিক্ষককে জুটিয়ে দিয়ে নিশ্চিত থাকেন যে ছেলে বা মেয়েবিদ্যার জাহাজ নিয়ে রোজ ঘরে ফিরছে !! আসলে কিছুই নিয়ে ফেরেনা । বরং দিয়ে আসেশ্রম-সময়-অর্থ এবং মেধা । সর্বস্ব ! বাড়ি ফিরে সেই নোট ওরা মুখস্থ করে ; পরীক্ষারহলে তাই উগরে আসে এবং সবসময়ই ভুল উগরে আসে। কারণ স্মৃতি আমাদের খুব চঞ্চল,স্মৃতিকে ফাঁকি দিলে সেও আমাদের সঙ্গে তাই করে। ছেলেরা যা মুখস্থ করে তাই যদিপরীক্ষার খাতাতে লিখে আসতে পারত তবে ঐ ১৩ সংখ্যাটা কমে অর্ধেকেরো নিচে যেতে পারত ।তা হয় না।  কারণ--  স্মৃতি দুপায়ে নয়, কাজকরে পাঁচ পায়ে।  পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে ।আমাদের ছাত্র এবং বহু শিক্ষক অভিবাবকেও সে কথা বললে নিশ্চয়ই ওঁরা দম ফাটা হাসিররোল তুলে জিজ্ঞেস করবেন, লেখা পড়াতে আবার জিহ্বার কী কাজ !!! সে জবাব আমরা পরে দেব। আপাতত শুধু এটুকূ বললেই বোধহয় আমাদের  ফাঁকির চূড়ান্ত ধরা পড়ে যাবে যে গোটা বছর আমাদেরছাত্রেরা পড়া মুখস্থ করে,  কিন্তু পরীক্ষা দেয় তিন ঘণ্টা ধরে সেই মুখস্থ লিখে। এ অনেকটা গান মুখস্থ করেই  আসর জমাবার চেষ্টা করবার মতো ব্যাপার । অতিসহজে যাদু দেখাবার চেষ্টাতে ওরা যা দেখায় তা পরীক্ষকের জন্যেতোবটেই নিজেদের সারা জীবনের জন্যেও বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিচ্ছুই নয় । সহজে বাজি  জিতাবারনেশাতে ওরা পরীক্ষারতো বটেই গোটা জীবনের বাজিই হেরে বসে। সারা  জীবনটাকেই জটিল করে তোলে।  সে তুলনায় আমরা যে পদ্ধতির কথা লিখব তাতে বেশখাটাখাটুনি আছে । আছে প্রত্যাহ্বান।  
আমাদের পদ্ধতিতে পাঁচ ইন্দ্রিয়কে নিয়ে বেশ নাড়াচাড়া আছে। বছরভর খাটাখাটুনি আছে। তারপরেও যে  আমরাএকে সহজ পদ্ধতি বলছি তার কারণ যে পদ্ধতিকে অত্যন্ত জটিল ভেবে ছাত্রেরা নোট নির্ভর হয়ে পড়ে সে কল্পিত জটিলতার তুলনাতে আমাদের পদ্ধতিসত্যিই সহজ সুন্দর এবং আনন্দদায়ক ।  দ্বিতীয়তঃ নোট নির্ভরমুখস্থ করাবার  পদ্ধতি যখনছাত্রদের  পুরো জীবনটাকেই জটিল করে তুলেআমাদের পদ্ধতি তখন সেই জীবনটাকেই করে তোলে উপভোগ্য ।   আমাদের সে পদ্ধতির নাম দেয়া যেতে পারে পাঁচবার পড়ার পদ্ধতি। যে ছাত্রেরা দশবার পড়ে মুখস্থ করেও কিছুই মনে রাখতে পারেনা, পরীক্ষার হলে বসে কলম কামড়াতে থাকে তাদের অভয় দিয়েতো বলতেই পারি যে তারা একটাবিষয় পাঁচবার পড়েই তাদের স্মৃতির দক্ষতা বাড়াতে পারে পাঁচগুণ বেশি । পদ্ধতিটাআয়ত্বে এলে সে দক্ষতা  যদি  পঞ্চাশগুণও বেড়ে যায়  তালেও অবাক হবার  কিছু থাকবে না।  যে ছেলে জল দেখলে ভয় পেত তার অলিম্পিকে মেডেলজেতার মতো ব্যাপার আর কি । এমন রূপকথার বাস্তব কাহিনি কি আর আমরা শুনি নি ?শুনেছি। যে ছেলে সাইকেল ধরতে ভয় পেত সে যে আশি মাইল  দ্রুতিতে মটর সাইকেল চালায় সেতো আমরা দেখেওছি । 

আ-এ আমটি আমি খাবপেড়ে’—‘আম নিয়ে এখনো আম্ররা জানি না অনেক কিছুঃ
          একটা সহজ কথা আমরা জেনেও না জানার ভানকরি যে বই পড়ে আমরা জীবনের সবটা শিখি না। আমটি আমি খাবপেড়ে পড়েই আমরা আম কাকে বলে তা জেনে যাইনি। তার জন্যেআমাদের আমবাগানে লুকোচুরি খেলতা হয়েছে; ডাল ভেঙ্গে কখনো বা পা ভেঙ্গে আম পাড়তেহয়েছে। পরের গাছের আম চুরি করে বকুনি খেতে হয়েছে। নিদেন পক্ষে বাজারে গিয়ে নানাদেশের নানা জাতের আম দেখে বাছাই করে  কিনতেহয়েছে । বাড়ি এনে কবজি ভিজিয়ে  আম খেতে হয়েছে।আম নিয়ে এমন আরো বহু বহু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেয়ে আমাদের আমকে জানতে হয়েছে । চোখে দেখে, জিহ্বে চেখে তবে একটু একটুজানা হয়েছে আম কথাটার মানে কী ।  সে ঐ শুধু বর্ণ পরিচয়ের ছড়া কেটেই কাজ চলে নি ।  তার পরেও তাকে জানা আমাদের শেষ হয় নি । আম নিয়েনা জানা কথা বহু প্রাচীন বৃদ্ধেরও এখনও অনেক আছে। যেমন তিনি হয়তো জানে না  যে ব্রাজিলে আদৌ আম পাওয়া যায় কিনা । অথবা হয়তোজানেন না যে আম আসলে ‘Anacardiaceae’  পরিবারের ‘Mangifera’ প্রজাতির ফল যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘Mangifera indica’ । তিনি হয়তো জানেন যে আমকে ইংরেজিতে Mango বলে , কিন্তুজানেন না যে ওটিও এক ভারতীয় শব্দ। মালয়ালম মাঙ্গা থেকে পোর্তুগীজ হয়ে ইংরেজিতে এসছে। অর্থাৎ আমের ইতিবৃত্তের গায়ে গা জড়িয়ে ভারতবর্ষের সমাজ ও পৃথিবীর ভাষার ইতিহাসও পথহাঁটছে ।  একে আমরা নাম দিতে পারি আম নিয়েআমাদের চেতনা বিশ্ব। বিশ্বের মতোই তা ক্রম প্রসারমান।অত্যন্ত বিশৃঙ্খল তার গতি।  চতুর্দিকে।স্থান-কালের বিস্তারে ও গভীরে। অনুভূমিক ও উলম্বে ।  অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতে । তাই সেবিশ্বকে পুরোটা কখনোই জানা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছেন, আমরা আমাদেরপ্রকৃতিকে সবটা জানি না। আমাদের স্বপ্ন-কল্পনা এমন আরো বহু  কিছু মিশিয়ে আমরা মনের ভেতরে তাকে এক পূর্ণ রূপদিই। যে রূপকে আবার ক্রমাগত বাড়িয়ে চলি । তাই নিয়ে থাকি আমরা । একে তিনি বলেছেন মানসিক জগৎ। আমরা একেই বললাম চেতনা বিশ্ব।  শুধু আম কেন, ঐ যেবললাম তার সঙ্গে মিশে আছে ভারতের ইতিহাস, পৃথিবীর ভাষার তত্ব। এমন হাজার হাজারোক্ষুদ্র বিশ্ব মিলে কত বিশাল চেতনা বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে  যে আমরা বাস করি তার খবর আমরা নিজেরাও সবসময়রাখিনা। যখন যেটির কাজ পড়ে সে তখন সামনে চলে আসে। এবং আসে ক্রমান্বয়ে সুশৃঙ্খলচেহারা নিয়ে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলা, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের এক দ্বান্দ্বিকনিয়ম মেনে চলে চেতন বিশ্ব। যে শৃঙ্খল রূপটি কাজের বেলা সামনে চলেআসে   মনোবিদরা তাকে নাম দিয়েছেন  চেতন মন আর যে বিশ্বটাপেছনে থাকে বিশৃঙ্খল রূপে  তাকে অবচেতন মন।
এই যে চেতন বিশ্ব এর যেমন একভেতরের দিক আছে --- সেখানে সে আমাদের নিজস্ব----তেমনি তার এক বাইরের দিকআছে---সেখানে সে এই পৃথিবীর সব্বার।  মানুষ,প্রাণি বা বস্তু---- সব্বার। সব্বাই এই বাইরেরে চেতন বিশ্বকে বয়ে বেড়ায় । যেখানে থেকে আমরা আমাদের নিজেদের জন্যে তথ্য সংগ্রহ করি এবংযেখানে আমরা তথ্যের সরবরাহও করি । অর্থাৎ, আমার থেকেও লোকে জেনে অথবা না জেনে বহুতথ্য সংগ্রহ করছে। এভাবে বাইরের পৃথিবীতেও আমরা এক বিশাল চেতনা বিশ্বনিয়ে বাস করি।  প্রতিদিন যে অসংখ্যছোট বড় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো যায়---- এমন কি ঘুমের ঘোরেস্বপ্নের দেশেও--- তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাকেও ওরা ছেড়ে কথা বলে না। সবটুকুকেএনে আমাদের স্মৃতিকোষে জমা করে আর নিরন্তর সৃষ্টি করেআমাদের নিজস্ব চেতন বিশ্ব। নিরন্তর সমৃদ্ধ করে আমাদের মেধা।  এতো বড় এক স্মৃতি সম্পদকে সঙ্গে নিয়ে  আমাদের নিজের মেধাহীন মনে করবার আর হীনমন্যতাতে কষ্ট পাবার কোনো সঙ্গত কারণতো নেই । সে সঙ্গে এইকথাটাও মনে রাখা ভালো যে চেতন বিশ্বটা সব্বারইঅসম্পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথেরও তাই ছিল, আইনস্টাইনেরও তাই। সুতরাং এ নিয়ে বড়াই করাবারসুখও স্থায়ী হবার নয়।  কেউ যদি বড়াই করে তবেসে মুর্খের কাছে লজ্জা পাবারও বিশেষ কিছু নেই । দাঁড়ালো এই যে, আমাদের টেনেটুনেতৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ন ছাত্রটিও ইচ্ছে করলে প্রথম শ্রেণির সেরা ছাত্রটিকে টেক্কাদিতে  পারে । চাই নিজের চেতন বিশ্বের উপর,তাকে গড়বার দক্ষতার উপর বিশ্বাস আর লক্ষ্যে দৃঢ়তা । হ্যাঁ , লক্ষ্য একটা থাকা চাই। চেতন  বিশ্ব সেই লক্ষ্যের হাত ধরে গড়ে উঠে।

সুশিক্ষিত লোক মাত্রেই স্বশিক্ষিতঃ
লক্ষ্য আমাদের সব্বার জীবনেই রয়েছে। প্রতিদিন আমরাঅসংখ্য ছোটো বড় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে দিনানিপাত করি। এমন কি চূড়ান্ত যেকুড়ে সেও হাত পা গুটিয়ে  ঘুমিয়ে পড়ে এইলক্ষ্যকে সামনে নিয়ে যে তার ক্লান্ত শরীর ও মনকে সে শান্ত করতে চায়। এও একটা কাজ।আমাদের ইন্দ্রিয় তখনো কাজ করে। চোখ নইলে বন্ধ হয়ে থাকবে কেন। মাথা তাকে নির্দেশদিয়েছে যে এখন তাকে বন্ধই থাকতে হবে , যতক্ষণ শরীরটির ঘুম চাই। তা নইলে আমরা ডলফিনবা হাঁসের মতো একটা চোখ খোলা রেখেও ঘুমোতাম নিশ্চয়। ইন্দ্রিয়গুলো যে কাজই করুক তারথেকে কিছু না কিছু তথ্য সংগ্রহ করবেই। এমন কি ঘুমিয়ে দেখা স্বপনের থেকেও! কাজেরসঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন তথ্যও সংগ্রহ করে। এবং সেরকম  অসম্পর্কিত  তথ্যের পরিমাণ প্রায়সই সম্পর্কিত তথ্যের থেকে বহু বেশি হয় । তুমি যখন স্কুলে যাও তখন পথেএমন বহু  মানুষ ঘটনা বস্তু বা  মানুষ দেখো যারা নতুন এবং যাদের তোমার স্কুলেযাওয়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই । কিন্তু পরে কখনো সেই  নতুন দেখা বস্তু বা মানুষই তোমার কাজে এসে যায়।অর্থাৎ , অসম্পর্কিত তথ্যগুলো সম্পর্কিত তথ্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এবারে, তুমি যদি লেখাপড়া করবার জন্যে একটাস্থির লক্ষ্যকে সামনে স্থির করে নাও তাহলে এটা বোঝা একেবারেই সহজ যে তোমারইন্দ্রিয়গুলো সেই লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজে নেমে পড়বে এবং সরাসরি অসম্পর্কিত---- এমন বহু তথ্যেও তোমার স্মৃতিকোষকে সমৃদ্ধ করে যাবে। বা জীবনের এ পর্যন্ত পথ হেঁটে যতকিছু অসম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছ তার বহু কিছুই সম্পর্কিত তথ্যে  রূপান্তরিত হয়ে তোমারলেখাপড়ার কাজে লেগে যাবে।  এনিয়ে তোমারকোনো সংশয় বা সন্দেহ থাকা উচিত নয়। লক্ষ্যটি নেজেই তোমাকে তার প্রয়োজনীয় কাজের পথে টেনে নিয়ে যাবে। তোমার ঘুমছুটিয়ে দেবে।  ইন্দ্রিয়গুলো অনেক বেশিদ্রুত  পরিচালিত তথা সক্রিয় হবে , অন্য সময়থেকে   অনেক বেশি তথ্যে তোমার ভাঁড়ার সমৃদ্ধ হবে । আমাদের  দৈনন্দিন জীবনযাপনে হাজারো কাজের উদ্দেশ্য আপনি এসে ধরা দেয়। সবসময় তারজন্যে কোনো সচেতন উদ্যোগের দরকার পড়েনা। কিন্তু জীবনের এমন অনেক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে যেগুলোর স্থান-কাল অর্থাৎ  কবে--কোথায় কেন করব তা আমরা বেশ ভেবে চিন্তেই স্থির করি। যেমন, জীবনের একটা সময় লেখা পড়াকরতে স্কুল-কলেজে সবাই যায়। যাবার একটা সামাজিক নিয়ম আছে বলেই যায়। কিন্তু তারমধ্যে একজন বড় অভিনেতা হতে চায়, পরে সে দিল্লীর জাতীয় নাট্য বিদ্যালয়ে ( NSD) নাম লেখাতে   চায় । এর জন্যে এখনই উচ্চতর মাধ্যমিকে বাংলা বাঅসমিয়া বা হিন্দি ( যেটি তার মাতৃভাষা) ঐচ্ছিক হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং পাড়াতে একটানাটকের সংস্থাও খুলে বসেছে ---এ কাজটা একজন ছাত্র বা ছাত্রী নিজে করে । সচেতনউদ্যোগ নিয়ে করে । এমন সচেতন উদ্যোগই আমাদের শিক্ষিত করে। প্রমথ চৌধুরী তাইলিখেছেন, সুশিক্ষিত লোক মাত্রেই স্বশিক্ষিত ।    
একজন ছাত্রের সচেতন উদ্যোগ হবে বহুমুখী এবং বিচিত্র। তারসবটা লিখে বোঝাবার মতো আমাদের এখানে পরিসরের অভাব আছে। আমরা অতোদিকে পা বাড়াব না।আমরা শুধু তার বই পড়বার ব্যাধি ঘোচাবারচেষ্টা নেব। পঞ্চাশবার নয় , পাঁচবার পড়ে একটা বই আয়ত্ব করবার যাদু শেখাব ।

বছরের শুরুতে একটা রুটিন করো, তাতে সময় নষ্ট করার সময় রেখোঃ
বছরের শুরুতেই একটা ছাত্রের উচিত তার পাঠ্য সমস্ত বইযোগাড় করে নেয়া। বছরের শেষ অব্দি তার হাতে যেটুকু সময় আছে তাকে বই এবং বিষয়অনুযায়ী ভাগ করে স্কুলে যেমন রুটিন থাকে তেমনিবাড়ির জন্যেও একটা রুটিন তৈরি  করে নেয়াউচিত। সে রুটিনের রোববার এবং অন্য বন্ধবারগুলো থাকবে পুনঃপাঠের (revision ) এবং সিনেমা দেখা, ক্রিকেট খেলার মতো বিনোদনের জন্যে। অন্য কাজের দিনেও বিনোদনেরএকটা সময় ধরাই থাকবে, থাকবে বাড়ির ঘরোয়া কাজের জন্যেও সময় নির্দিষ্ট করা। তার উপররোজই বা প্রতি মাসেই কিছু সময় ধরা থাকবে নষ্ট করবার জন্যে। সময় নষ্ট না করাটা  সবসময়খুব কাজের কথা নয়। সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের অনেক কাজ হঠাৎ এসে পড়ে। কেবল মাত্রএক অসামাজিক স্বার্থপর  প্রাণীই সেগুলোএড়িয়ে যেতে পারে। সারা বছরে একটা মাস অন্তত নষ্ট করাবার  জন্যেই রাখা উচিত। মামাতো বোনের  বিয়েতে যাবার জন্যে!! রুটিনে সেটি পরীক্ষার আগেরএকমাসেই ধরা থাকবে। বিয়েটা এগিয়ে এলে, পড়াটা সে অনুযায়ী পিছিয়ে যাবে, এইমাত্র।রুটিনটা তৈরি হয়ে গেলে কবে হাতে কতটা সময় পড়বার জন্যে আছে, তার এক স্পষ্ট ছবিথাকবে সোখের সামনে। দিনে যদি এক ঘণ্টাও মেলে, তাই সই ।
বই এবং পাঠ্যক্রমের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলেই  একদিকে শুরু হবে বইগুলো পড়া এবং অন্যদিকে পুরনোপ্রশ্ন যোগাড় করা । পাঁচ বা তার বেশি, নিদেন পক্ষে তিন বছরের প্রশ্ন যোগাড় করা চাই । এর মধ্য যদি পাঠ্যক্রমপাল্টে গিয়েও থাকে তবে সেই পুরোনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নও।  কেননা সেখানেও এমন অনেক কিছু থাকতেও পারে যানতুনটিতে পাল্টায়নি । একদিকে যখন বইগুলো পড়ার কাজ চলবে অন্যদিকে তখন বিষয় অনুযায়ীআলাদা আলাদা খাতাতে শুরুতেই সেই প্রশ্নগুলো লিখে নিতে হবে। তাতে তোমার গন্তব্য তথালক্ষ্য অনেক বেশি নির্দিষ্ট এবং ছোট হতে থাকবে। এটা জরুরি। যে কোনো বড় কাজকে ছোট ভাগেভাগ করলে কাজগুলো অনেক  সহজ হয়ে পড়ে। খাতাগুলোরমলাট তথা প্রচ্ছদ সাদা হওয়া চাই। যাতে পরে ওখানে খাতার ভেতরে যা লেখা হলো সেগুলোরএক সূচীপত্র লেখা যায়। সেই সূচীপত্রের ডানদিকে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত মন্তব্য লিখেরাখবার জায়গা থাকা  চাই। তাতে কোন খাতায় কীআছে পরে খোঁজে পাওয়া সহজ হবে।  

পাঁচবার পড়ার পদ্ধতি :
প্রথম পাঠঃ   বইগুলো পড়ে যাওয়া চাই। কিছু নাবুঝতে পেলে আতংকে থাকার কারণ নেই, প্রয়োজন বোধ করলে অপেক্ষাকৃত কঠিনজায়গাগুলো  চিহ্নিত করে যাওয়া যেতে পারে।বেশির ভাগ ছাত্র এখানেইও আটকে থাকে। ভাবে, পৃথিবীর আর সব পণ্ডিতেরাও বোধহয় প্রথমপাঠেই সব পাঠোদ্ধার করে ফেলে। না, এরকমটি কদাচিৎ হয় । সুতরাং প্রথম পাঠে ভয় পাবার তথা সবটা বোঝার দরকার নেই। কিন্তুসে বইতে ঠিক আছে কী কী তার সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাবার জন্যে পুরোটা পড়াজরুরি। গবেষণার ছাত্রদেরতো বইয়ের মূল্য থেকে শুরু করে সংস্করণ,প্রকাশকের নাম অব্দিপড়ে যেতে হয় ।  এ হলো বইগুলোর প্রথম পাঠ ।  
দ্বিতীয় পাঠঃ   এবারে একটাবিষয় বেছে নিয়ে তার প্রথম অধ্যায়ের প্রথম সবচে বড় প্রশ্নটি হাতে নিয়ে উত্তরেরসন্ধানে দ্বিতীয়বার পড়ে যেতে হয়। সবচে বড় প্রশ্নটি, কেননা এতে অধ্যায়টিশুরুতেই ভালো করে বোঝার কাজ হতে থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে ছোটো প্রশ্নগুলোর উত্তর বেরকরাটা সহজ হয়ে আসবে। এবারে বোঝা যাবে , প্রথমবারে কিছু না বুঝে হলেও পড়ে যেতে কেনবলেছিলাম। দেখা যাবে, এই উত্তর খোঁজতে গিয়ে পুরো বইটা এবারে পড়তে হবে না। উত্তরটাআছে কোথায় ---তার সম্ভাব্য স্থান জানা হয়ে গেছে আগেই। এবারেও সবটা বোঝার দরকারনেই। কিন্তু দেখা যাবে আগের থেকে ভালো হৃদয়ঙ্গম করা যাচ্ছে। এ হলো বইটি বা বইগুলোরদ্বিতীয় পাঠ। এই দ্বিতীয় পাঠে প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বইও ঘাটানো যেতে পারে।যেমন রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার উপর উত্তর তৈরি করতে গেলে তাঁর কবিতা নিয়ে কোনোভালো আলোচকের বই পড়া যেতে পারে। কিন্তু সেটিও ভালো করে বোঝার জন্যে থেমে থাকার মানেনেই। সে কাজের জন্যে পরেও সুযোগ পাওয়া যাবে।
তৃতীয় পাঠঃ  এবারে উত্তরটালেখা শুরু করা যেতে পারে।  তার জন্যেযেটুকু দরকার সেটুকু অংশই পড়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক বইগুলোও। নিজে কী করেউত্তর তৈরি করতে হয় যে নিয়ে কোনো ধারণা না থাকলেও সমস্যা নেই। এই উত্তরগুলো যেহেতুবিবরণধর্মী প্রবন্ধ আকারের হয়ে থাকে তাই ব্যাকরণের যে অংশে প্রবন্ধ লেখার উপায় বলেদেয়া থাকে সে অংশটি একটু পড়ে নেয়া যেতে পারে  এবং সেখান থেকে সহায় নেয়া যেতে পারে। প্রবন্ধেরমতই এ ধরণের যে কোনো উত্তরের ভূমিকা, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ এবং উপসংহার অংশ থেকেইথাকে। প্রথমবার  লিখতে গিয়ে বানান বাক্যঠিক হলো কিনা এসব নিয়েও মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। নিশ্চিন্তে, নির্দ্বিধায়, নির্বিকারযে ভাবে লেখা যেতে পারে লিখে নেয়া উচিত। ছেলেবেলা থেকে মা-বাবা গুরুজনেরা যেমনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে বলে গেছেন সেই মনযোগ এভাবে আসে। কেননা, এভাবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোঅনেক বেশি সক্রিয় হয়ে পড়ে।  লিখতে গেলেবানান-বাক্যে এবং গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো এমনিতেই একটু বেশি নজর পড়ে। পঞ্চাশবারমুখস্থ করে গেলেও যা কিনা নজর এড়িয়ে যেতে পারে। যেখানে বানান-বাক্য নিয়ে সংশয় দেখাদেবে সে জায়গাগুলোকে  চিহ্নিত করে গেলেইআপাতত কাজ চলে যাবে। এই হলো তৃতীয় পাঠ।
এরকম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাঠের পুরাবৃত্তি করতে করতে  একটা অধ্যায় বা বিষয়ের সব কটা প্রশ্নের  উত্তরই লিখে ফেলাউচিত। দেখা যাবে একেবারে শেষের দিকের ছোটো প্রশ্নের  উত্তরগুলো তৈরি  করবার বেলা আর প্রায় বই খুলে চোখ ফেরাবার দরকারইপড়ছে না। বিষয়ের অনেক গভীরে ইতিমধ্যে চলে গেছ এবং রপ্ত করে ফেলেছো। আগে লিখে আসাউত্তরের অনেক ভুল ততক্ষণে এমনিতেই ধরা পড়বে । যখনই সেরকম ভুল নজরে আসবে চিহ্নিতকরে যাওয়া উচিত । পারলে সংক্ষেপে তখনই পাশে পাশে লিখে রাখা উচিত। তাতে যদি উত্তরখাতা নোংরা হয়ে যায় তাও সই। যদি সে খাতা এতোটাই নোংরা হয়ে যায় যে আর কাঊকে দেখালেওসে পাঠোদ্ধার করতে পারবে না তবে তখনই চতুর্থ পাঠ শুরু করা উচিত। আর যদি অন্যকেদেখানো যাবে বলে মনে হয় তবে বন্ধুদের এবং শিক্ষককে দেখিয়ে তাদের মত নেয়াটা ভালো।যে কথা তুমি জানোনা বা বোঝনি তারা সে কথাটা বুঝতে তোমাকে সাহায্য করতে পারেন।  তৃতীয় বা চতুর্থ পাঠের পর বন্ধু বা শিক্ষকেরমততো অবশ্যই নেয়া উচিত। বন্ধু বলেও কাউকে অবহেলা করা উচিত নয় । তোমার বন্ধুরাসবসময়ই অনেক বিষয় তোমার থেকে ভালো জানতে ও বুঝতে পারে। অথবা অনেক বিষয় তুমি তাদেরথেকে ভালো বুঝতে  পারো । সেখানে তোমার তাদেরসাহায্য করা উচিত। অন্যকে বোঝাতে গেলেও একটা বিষয় নিজের আরো ভালো আয়ত্বে আসে। যারাতা করে না তারা স্বার্থপর। জীবনে তাদের বহু ব্যর্থতা লেখা আছে।
            চতুর্থ পাঠঃ যাই হোক চতুর্থ পাঠের কাজ হলো নোংরা সাফাই করা । ভুলগুলো শুদ্ধ করা। সে কাজ করতে গিয়ে আবারও প্রয়োজনীয়বইগুলো পড়ে যাওয়া এবং আবার শুদ্ধ সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা। এই সময় ব্যাকরণ এবংঅভিধান অত্যন্ত জরুরি দুটো প্রাসঙ্গিক বই। যার তা নেই তার ভালো ছাত্র হবার স্বপ্নদেখা ছেড়েই দেয়া উচিত।  
            পঞ্চম পাঠঃ পঞ্চম পাঠে তোমার কাজ হলো তুমি যে নোটগুলো তৈরি  করলে সেগুলো আবারো পড়ে দেখা, কাজটা ঠিকঠাক হলোকিনা। না হলে আবারো ঠিক করা ।
          প্রথমপাঠে তুমি শুধু  অন্যের লেখা বইগুলোপড়ছিলে। বিষয়ের উপর উপর অনুভূমিক ( horizontal)  সাঁতার  কাটছিলে । পঞ্চম পাঠে এসেদেখবে তুমি পড়ছ মূলত তোমার নিজের লেখা নোট । তোমার সৃষ্টি এগুলো।  শুধু কি তাই ! এতোক্ষণে তুমি যেনে গেছ সাগরেরগভীরে কী করে ডুব দিতে হয়। এবার তুমি দক্ষ সাঁতারুর মতো  সাঁতার দিচ্ছ বিষয়ের গভীরে------উলম্বে ( vertical) ।  তুমি দেখবে যেবিষয়টি নিয়ে তোমার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-আতংকের শেষ ছিল না সে বিষয়ে এতোক্ষণে তুমি একছোটখাট পণ্ডিত  হয়ে পড়েছ।  কখন, তা নিজেও টের পাওনি । এর পর  তোমার আর মুখস্থ করে সময়ের অপচয় করাবার দরকারইপড়বেনা । বিষয়টি তোমার স্মৃতিতে যে শুধু থাকবে তাই নয়, যাকে বলে হজম হয়ে যাওয়া---- তাই হবে।  এর পর  তুমি যদি আর নোটগুলো খুলে দেখবার সময় নাও পাওতবুও মুখস্থ করবার থেকে এই অর্জিত বিদ্যা তোমাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে। তবে কিনাএগুলো যেহেতু তোমার নিজের সৃষ্টি, তুমি এগুলোর থেকে নজর ফিরিয়ে থাকতেই পারবে না।মাঝে মধ্যেই চোখ বুলোতে ইচ্ছে করবে। মাঝে মধ্যে তা করাও উচিত। সপ্তাহের বা মাসেরশেষে। অথবা তিন মাসে একবার। চোখ ফেরানো উচিত । রুটিনে সে কাজের কথা লিখে রাখাউচিত।  কেননা আমাদের স্মৃতি সবসময়েই চঞ্চল।সে সবসময়েই বিশৃঙ্খল হবার জন্যে তৈরি। সে সবসময়েই সম্প্রসারিত হচ্ছে। নতুন নতুনতথ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আমাদের চেতনবিশ্বকে গড়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা সংক্রান্তযেটুকু চেতনবিশ্বকে আমরা একটা সময় অব্দি ( পরীক্ষা অব্দি) স্থির রাখতে চাই তাকেনিয়ে চোখ কান সজাগ রাখা উচিত। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বারে হলেও পঞ্চম পাঠের পুনরাবৃত্তিকরে যাওয়া উচিত। তাতে যদি তিন চারবার নোটখাতা পাল্টে নতুন খাতা তৈরি করেতে হয় ,তাই করা উচিত। পরীক্ষা শেষ হবার  আগে অব্দিতো  বটেই। তাতে হাতের লেখারও ভালো অভ্যেস হবে। বহুজানা পুরোনো নোটে যদি চোখ ফেরাতে বিরক্তি আসে তবে  প্রধান শব্দগুলো বেছে নিয়েএরকম কিছু  চিত্র-নোটেও তৈরি করা যেতে     পারে।( চিত্র-০৩ । এটি আমি তৈরি করেছিলাম আমার সম্পাদিত কাগজ প্রজ্ঞানে প্রকাশিত এক লেখার জন্যে। এখানেপরিসরের কথা ভেবে সেটি আর ব্যাখ্যা করছি না।)
মনে রেখো, পরীক্ষার হলে হাতে লিখেই উত্তর দিতে হবে। সেলেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হতে হবে , যাতে পরীক্ষক পড়ে বুঝতে পারেন। সে লেখাতে মার্জিন  থাকতে হবে যাতে বাইরের ফাঁকা জায়গাতে পরীক্ষকতোমাকে ভালো মার্ক দিয়ে পুরস্কৃত করতে পারেন । সে লেখা দ্রুত হতে হবে যাতেনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তুমি তোমার জানা উত্তর লিখে  খাতা জমা দেবার আগে পঞ্চম পাঠের রীতি মেনেএকবার পড়ে নিতে পারো এবং শোধরাতে পারো।  

পড়াশোনা ছেড়ে দাও,  শুরুকরো  লেখা পড়া  :
দাঁড়ালো এই যে, আমরা বই পড়বার উপায় বলতে  গিয়ে যা বললাম তাতে পড়তে কম হয় , লিখতে বেশি হয়। তাই আমরা একে বলছি পড়াশোনার নয় লেখা পড়ার সহজপদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ছাত্র শুধু একা বন্ধ ঘরে পড়ে না। সে লেখে, সে সৃষ্টি করে, সেবন্ধুত্ব করে , সে আড্ডা  দেয়  , সিনেমা দেখতে যায় , গান শোনে, সামাজিক আরদশটা দায় পালন করে । তা নইলে  যে ছাত্রের  নিজেরই চেতনা তথা জ্ঞান -বিশ্ব সংকীর্ণ হয়েযাবে।  এভাবে আমাদের এ পদ্ধতি হয়ে পড়েবৈচিত্র আর আনন্দময় ! সব কাজের শেষে এ দেয় কিছু পাওয়া নয়, অর্জন করাবার এক অনাস্বাদিত তৃপ্তি।  পাওয়া জিনিস ফিরে যায়, হারিয়ে যায় । যা তুমিঅর্জন করেছ তা যাবে কোথায় ! সারা জীবন তোমাকে পথ দেখাবে ! আরো আরো  বড় বিশ্বে পা বাড়াতে এ তোমাকে সাহস যোগাবে !  সুতরাংএবারে নেমে পড়ো। শুরু করে দাও। পড়াশোনা নয় লেখাপড়া. . .!!!   


( লেখা শুরুঃ ০৮-০৮-০৯, শেষঃ ১৪-০৮-০৯ রাত ১২টা ৫৪; )










From Lekha Porar Sohoj Poth
From Lekha Porar Sohoj Poth
From Lekha Porar Sohoj Poth

Tuesday 4 August 2009

অসমিয়া ভাষার এক বিশেষ প্রেক্ষাপটঃ অসমিয়া 'স' (X) ধ্বনিটি রক্ষা করবার জন্যে একটি আবেদন

অসমিয়া ভাষার এক বিশেষ প্রেক্ষাপটঃ
অসমিয়া 'স' (X) ধ্বনিটি রক্ষা করবার জন্যে
একটি আবেদন 


 মূল ইংরেজিঃ রাজেন বরুয়া
বাংলা অনুবাদঃ সুশান্ত কর
[ অনুবাদকের মন্তব্যঃ       

 আশীর্বাদম ন গৃহ্নিয়াত পূর্ব দেশ নিবাসিনাম ।
শতায়ুর' ইতি বক্তব্যে, 'হতায়ুর' ইতি ভাষিনাম ।।
এই শাস্ত্র বাক্যটির উল্লেখ করেছেন সুনীতি চট্টপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত বই ODBL-এ । আমরা পূর্বদেশবাসীদের থেকে আশীর্বাদ নিতে মানা করা হচ্ছে। কেন না আমরা 'শতায়ু' হবার আশীর্বাদ দিতে গিয়ে 'হতায়ু' হবার শাপ দিয়ে বসি। আমরা মানে অসমিয়ারা আর পূব বাংলার লোক বিশেষ করে সিলেটিরা আর কাছাড়িরা । এই শাস্ত্রবাক্য প্রমাণ করে আমরা বহু আগে থেকেই এই 'হ' উচ্চারণ করি । কেন ? ---এই প্রশ্নের উত্তরই খুব কম লোক সন্ধান করেছেন । সুনীতি চট্টপাধ্যায়ও তাঁর গ্রন্থে খুব নিশ্চিত হয়ে কিছু উত্তর দেন নি। লিখেছেন , “. . . The presence of a large Tibeto-Burman element in the population of Assam and East and North Bengal may have something to do with this....” (p79;Second Rupa Edition,1993) । সুনীতি চট্টপাধ্যায়ের দৌলতেই আমরা আমাদের জননি ভাষা মাগধি প্রাকৃতের কথা শুনেছি । কিন্তু তিনিই যে হিঊয়েন সাঙের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, “ … it is curious to find that, according to him, the language of the Kāmā-rūpa people 'deferred a little' from that of Mid-India.” (p78;Second Rupa Edition,1993) এই তথ্যে আমরা কেউই এখনো বিশেষ জোর দিইনি । অনেক অসমিয়া ভাষাতাত্বিক তাই প্রাকৃতের এক কামরূপী শাখার কথাও বলে থাকেন । আমরা সেদিকে এখনই এগুব না। আমি অনেকদিন ধরেই পূব বাংলার তথা সিলেটি বিভাষাতে শিষ ধ্বনিগুলোর (শ,স এবং ষ ) বদলে ব্যবহৃত 'হ'-এর উৎস সন্ধান করছিলাম । আমার পাঠ যদিও সীমাবদ্ধ তবু প্রধান কোনো গ্রন্থে এখন অব্দি সদুত্তর পাইনি। সুকুমার সেনেও না। সম্প্রতি প্রকাশিত জগন্নাথ চক্রবর্তীর 'বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান ও ভাষাতত্ব' বইটিতেও লেখক এদিকটাতে চোখ দিয়েছেন বলে মনে হলো না। তিনিও হকারী-ভবন, অন্ত্যধ্বনি লোপের মতো কিছু ধ্বনিতাত্বিক পরিবর্তনের মধ্যি দিয়ে ব্যখ্যা দিয়েছেন । কিন্তু আমার দীর্ঘদিন ধরে মনে হচ্ছিল এই 'হ' ধ্বনি এবং এমনতর আর কিছু ভাষিক উপাদান ইংগিত করে মাগধি প্রাকৃতের বাইরেও অসমিয়া ও আমাদের পূব বাংলার ভাষাগুলো বিশেষ করে সিলেটি ও কাছাড়ি বিভাষার এক সাধারণ উৎস ভাষা থাকতে পারে। হিউয়েন সাঙের মন্তব্যেও তার সমর্থন আছে।
আর এখন বর্তমান প্রবন্ধে শ্রী রাজেন বরুয়া একটি উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন । তিনি যদিও মূলত অসমিয়া পাঠকের কথা মনে রেখে এই প্রবন্ধ লিখেছেন, কিন্তু এতে সিলেটি বিভাষা, আমাদের 'হ' উচ্চারণ ও তার উৎসের কথাটিও আছে । তাই এর বাংলা অনুবাদ। শ্রী বরুয়ার অভিমত মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে মেনে নিতে হলে প্রমাণিত হবে অসমিয়ার সঙ্গে আমাদের পূব বাংলার ভাষাগুলোও ভারতীয় আর্যভাষা পরিবারের অত্যন্ত প্রাচীনতম সদস্য। সে প্রাচীনতার সময় কুমার ভাষ্কর বর্মার কামরূপের সময় থেকেও দুই সহস্রাব্দ পিছিয়ে নরকাসুরের সময় বা তারো আগে গিয়ে পৌঁছায় । তাই, এই প্রবন্ধ যদি অসমের বাংলা ভাষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের চিন্তাকে উস্কে দিতে পারে তবেই আমার এই শ্রম সার্থক বলে মনে করব। শ্রী বরুয়া ইংরেজিতে লিখবার বেলা এই অনন্য ধ্বনিটির জন্যে /x/ বর্ণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সিলেটিতে বর্ণটি /h/ । সিলেটিতে আমরা সাধারণত নাটকের সংলাপ বা কিছু লোকগীতির বাইরে লিখিনা। লিখলে বোধহয় আমাদেরো /x/ ব্যবহার করতে হোত । কেননা সুনীতি চট্টপাধ্যায় তাঁর গ্রন্থের শুরুতে যে আন্তর্জাতিক ধ্বনি প্রতিলিপির উদাহরণ দিয়েছেন তাতে /x/ সম্পর্কে লিখেছেনঃ “velar spirant, unvoiced=German ch in ach, Persian خ : found in dialectical East Bengali.. .” (p.xxxiii; Second Rupa Edition,1993)
শ্রী রাজেন বরুয়ার মূল এই লেখাটি ছেপে বেরোয় তিনসুকিয়া কলেজ থেকে প্রকাশিত আমারই সম্পাদিত সাময়িকী 'প্রজ্ঞানে'র জুন,০৯ সংখ্যাতে ইংরেজিতে। শ্রী বরুয়া দেশে বিদেশের বিভিন্ন কাগজে ( বৈদ্যুতিন মাধ্যম সহ) অসমিয়া ইংরেজি সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও দর্শন বিষয়ে নিয়মিত লিখে থাকেন। পেশায় তিনি বাস্তুকার তথা ইঞ্জিনিয়ার, থাকেন আমেরিকার টেক্সাস প্রদেশের হিউস্টনে। সেখানে থেকেও তিনি মুহূর্তের জন্যেও ভুলেন না তাঁর মাতৃভূমি অসম তথা পূর্বোত্তরকে । পরিচালনা করেন Friends of Assam and Seven Sister            ( FASS) নামে এক স্বয়ংসেবী সংগঠন । সম্প্রতি মহাকাশচারী মাইক ফিঙ্কের ( Mike Finke ) সঙ্গে পূর্বোত্তরের শিলং, গুয়াহাটি, ইম্ফল ও ডিব্রুগড় ইত্যাদি শহরের বিভিন্ন বিদ্যানিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীদের বার্তালাপের সু্যোগ করে দিয়ে সংগঠনটি সংবাদ শিরোনামে এসছিল। তাঁর কাজের আরো বিবরণ জানতে গেলে যে কেউ www.friendsofassam.org এই ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন। ]
*******
এই বিশাল ভারতীয় উপমহাদেশে অসমিয়া ভাষার এক অনন্য নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে যার চেহারা চরিত্র বাকি ভারতের থেকে একেবারেই আলাদা। অসমিয়া সংস্কৃতির নানা দিক থেকে এর প্রমাণ দেয়া যায় । বিশেষ করে , এটা দেখা যায় অসমিয়া ভাষাতে যেখানে এক নিজস্ব বৈশিষ্ট সহ কণ্ঠ্য 'স' (X) ধ্বনি রয়েছে। এই ধ্বনিটি , যেটি কিনা ইংরেজি /s/ এবং /h/ মাঝামাঝি উচ্চারিত হয় সাধারণত আর কোনো আধুনিক ভারতীয় ভাষাতে দেখা যায় না। অসমিয়া ভাষা আমাদের শুধু আলাদা পরিচিতি দেয়নি ,আমাদের মতো এক অস্ট্রো-তিব্বতি-বর্মি-মোঙ্গলীয়-আর্য মিশ্রিত জাতিকে এক দারুণ ঐক্যও দিয়েছে।
নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর (NIA) সবচাইতে পূর্ব-প্রান্তীয় সদস্য হচ্ছে অসমিয়া । মূলতঃ অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার লোকেরা এই ভাষাতে কথা বলে । একই সঙ্গে ভাষাটি ইন্দো-ইউরোপীয় (IE) ভাষাগুলোরও একেবারেই পূর্ব-প্রান্তীয় সদস্য । এই ইন্দো-ইউরোপীয় (IE) ভাষাগোষ্ঠী হচ্ছে পৃথিবীর সবচে' বড় ভাষাগোষ্ঠী। পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ এই ভাষাতে কথা বলে। সমস্ত আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাগুলোর সঙ্গে আধুনিক ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের ভাষাগুলো এই গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে । আর্যদের প্রব্রজনের একেবারে দূরবর্তী পূবপ্রান্তীয় উপনিবেশ হবার জন্যে অসমিয়া একেবারে পরিধির বা প্রান্তীয়ভাষা ।
অসমিয়া যে খুব প্রাচীন ভাষা এই তথ্য অনেক অসমিয়াও জানেন না । নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট অসমিয়াতে রয়েছে যা আর অন্য কোনো ভাষাতে নেই। অসমিয়া ভাষার ধ্বনিরূপ মূলত চারটি কারণে অন্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর         ( সংস্কৃত, হিন্দি, বাংলা, পাঞ্জাবি ইত্যাদি ) থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণগুলো হলোঃ ১) প্রাচীন কাল থেকে ভারতের অন্য আর্য ভাষাগুলোর থেকে অসমিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে বিকশিত হয়েছে। ২) পূর্বোত্তরের তিব্বতি-বর্মি ও অন্যান্য ভাষাগুলো দিয়ে অসমিয়া ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যা কিনা মূল ভারতের অন্য আর্য ভাষাগুলোর বেলা হয় নি। ৩) মূল ভারতের অন্য ভাষাগুলো দ্রাবিড়ীয় ভাষা দিয়ে ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছে, যা কিনা অসমিয়ার বেলা হয় নি। ৪) অসমে আর্যদের যে শাখাটির প্রব্রজন ঘটেছিল তারা ছিল প্রাগৈতিহাসিক-প্রাকবৈদিক কালের। যার ফলে দেখা যায় যে অসমিয়াতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মূল কতকগুলো বৈশিষ্ট এখনো থেকে গেছে, যেগুলো ভারতের অন্য আর্য ভাষাতে মেলে না অথবা তারা হারিয়ে ফেলেছে।
এক অন্যতম পার্থক্য হলো অসমিয়াতে মূর্ধণ্য (স্বর বা) ধ্বনি নেই , সংস্কৃত ও অন্য নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাতে আছে। মূল প্রাক বৈদিক আর্য ভাষাতে এই মূর্ধণ্য ধ্বনিগুলো ছিল না। বলা হয়ে থাকে যে সংস্কৃতে এই ধ্বনিগুলো দ্রাবিড় ভাষাসমূহের প্রভাবে এসছে । এ ছাড়াও অসমিয়াতে অনন্য 'স' ধ্বনিটি রয়েছে যেটি সংস্কৃত ও অন্য নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাতে নেই ।এই অসমিয়া 'স' ধ্বনিটির চরিত্রটি কী ? কখন আর কোত্থেকে অসমিয়া এই ধ্বনিটি পেয়েছে ? চলুন, আমরা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন দেখে নিই ।
ধ্বনিতত্বের দিক থেকে অসমিয়া ''স' (X)ধ্বনিটি জার্মান Bach এবং স্কটিশ Loch শব্দের /ch/ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়।এভাবে সংস্কৃত ও অন্য সমস্ত নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার বিপরীতে অসমিয়াতে সব ক'টি ভারতীয় আর্যের শিষ ধ্বনি-- s (স), ş (ষ) এবং ś (শ ) উচ্চারিত হয় 'স' (X)-এর মতো, /so/ এর মতো নয় । অসমিয়ার এটি অনন্য বৈশিষ্ট ।
বাপ্টিষ্ট মিশনারিরা যখন উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রথম অসমিয়ার সংস্পর্শে এলেন সংগত কারণেই অসমিয়া 'স' (X) ধ্বনিটি তাদের নজরে এলো এবং সঠিকভাবেই তাঁরা মত দিলেন যে অসমিয়াতে গ্রীকের মতোই অনন্য 'স' (X) ধ্বনিটি রয়েছে । এখানে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে যে পূর্বোত্তরের কোনো অনার্য ভাষাতেই ( বডো, তাই, মৈতেই, কুকি এবং তিব্বত-বর্মি বা নাগা -কুকি ভাষাগুলোতে ) এই অসমিয়া 'স' (X) ধ্বনিটির মতো কোনো ধ্বনি নেই । বস্তুতঃ পূর্বোত্তরের বহু নৃগোষ্ঠিরই শুদ্ধ করে এই 'স' (X) ধ্বনি উচ্চারণে অসুবিধে রয়েছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে এ কথারও উল্লেখ করা উচিত হবে যে বাংলার সিলেটি উপভাষাতে এই X ধ্বনিটি রয়েছে, সেখানে এটি উচ্চারিত হয় /h/ এর মতো । বেনুধর রাজখোয়া যখন সিলেট জেলা মেজিষ্ট্রেট ছিলেন, তিনি তখন ১৯১৩তে একটি বই লেখেন যার নাম ছিলঃ Notes on the Sylheti Dialect . তিনি দেখিয়েছিলেন যে সিলেটি উপভাষাটি আদর্শ বাংলার থেকে অসমিয়ার অনেক কাছের ভাষা । তিনি বিশেষ করে উল্লেখ করেছিলেন যে সিলেটিরা শিষ ধ্বনি স (s) কে অসমিয়াদের মতো 'স' (X) উচ্চারণ করে । সে যাই হোক, এরা অল্প /h/-এর দিকে হেলে পড়ে, আদর্শ বাংলার -'সে', 'ঐ',' সেইটি'---র বদলে তারা বলে, 'হি' /he/ ( অস. সি /xi/), হউ /hou/ (অস. সৌ /xou/) , হেইটো ( অস. সেইটো /xeito/)☻ ইত্যাদি । বেনুধর রাজখোয়া অসমিয়া লিপিতে লেখা এক পুরোনো সিলেটি 'পদ্মাপুরাণে'র পাণ্ডুলিপিও দেখেছিলেন ।
ভারতের অগ্রণী ভাষাতাত্বিক সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায় এই 'স' (X) সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন এরকম, “ The Change of initial, intervocal and final (sibilants) to the gluteral spirant X (স) in Assamese is something remarkable and is paralleled by what we see in Singhalese and Kashmiri. This is also noticeable in Iranian, Hellenic and Celtic.” বহু ভাষাতেই মূল ইন্দো-ইউরোপীয় স' (X) ধ্বনিটি হারিয়ে গিয়ে স, খ বা হ-তে রূপান্তরিত হয়ে গেছে । মহান অসমিয়া পণ্ডিত কালিরাম মেধির মতে, “ The Assamese pronunciation of the sibilants is peculiar in Assamese, and evidently a relic of pre-Vedic Aryan pronunciation.” আরেকজন অসমিয়া বিশেষজ্ঞ ডিম্বেশ্বর নেওগও সহমত পোষণ করে লেখেন, “ Next to the above peculiarities is the Asamiya X (স) pronunciation of the sibilants which also must have been brought by Early Aryans called the Mediterranean.” ধ্রুপদী সংস্কৃত ভাষা দেখা দেবার আগে প্রাক-বৈদিক আর্যভাষাতে এই 'স' (X) ধ্বনিটি ছিল । ড০ সুনীতি চট্টপাধ্যায় লিখেছেন, “It seems that in certain forms of OIA( Old-Indo-Aryan) languages the X (স) sound was the actually one employed for S as can be inferred from a medieval pronunciation of S as /kh/ being the nearest approximation to the traditional X(স).” ডিম্বেশ্বর নেওগ আরো লিখেছেন , “ When the Nordic of Vedic Aryan immigration into India took place in the second millennium B.C., the X (স) sound as in Asamiya was prominent. Chatterjee thinks that 'tatax kim' was the actual pronunciation at the time of Rig Veda. It came to be pronounced as 'tatah kim' in later times owing to non-Aryan influence predominating over the Aryan. But it remained almost intact in the Dardic or Pisaci speech which like the Asamiya is a language of the outer band.”
নেওগ দেখিয়েছেন যে এই 'স' (X) ধ্বনিটি আঠারো শতক অব্দি বাংলাতেও ছিল । ১৭৪৩এ লিসবনে প্রকাশিত এক বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের শিরোনামের বানানে 'স' (X) ধ্বনির জন্যে 'x' বর্ণটির উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেছেন, “ … the Asamiya X(স) pronunciation lingered in Bengal until at least the middle of eighteenth century from the earliest times even through the 'Charyas' and 'Krishna Kirtan' etc. Perhaps even today the state of Bengal has two distinct cross currents of their speech—the lower and deeper being that of old Asomiya or Kamrupi , and the upper and the surface current being that of modern or standard Bengali So called. As for the X (স) pronunciation, it has mostly changed to H as in East Bengal”
এই ধ্বনিটি অসমে এলো কী করে ? এক তত্ব অনুসারে , একে প্রথম যুগের প্রব্রজিত ভূমধ্যসাগরপার থেকে আসা আলপাইন আর্যরা নিয়ে এসছিল। “During the third millennium B.C. The Alpine immigration poured into India, one branch of them moving towards the western coast of India through the Indus Valley and the other branch pushing towards Eastern India.” তারা নিশ্চয়ই মূল ভারতের সমতল এড়িয়ে হিমালয়ের নিচে নিচে এদিকটাতে এসছিল। অসমিয়া ভাষার সঙ্গে হিমালয় এবং তরাই অঞ্চলের ভাষাগুলোর কিছু চিত্তাকর্ষক সম্পর্ক রয়েছে। এটিও সম্ভব যে এদের কেঊ কেউ সে সময়কার বহু ব্যবহৃত উত্তরের বাণিজ্যপথ ধরে তিব্বত ভুটান হয়ে অসমে এসে ঢুকেছে। রাজস্থানের মতো পশ্চিমের কিছু কিছু প্রদেশের লোকও এই 'স' (X)টিকে অক্ষত রেখেছে।
এভাবে আমরা দেখছি যে এই 'স' (X) ধ্বনিটি অসমে উদ্ভব হওয়া কোনো ধ্বনি নয়, না এই ধ্বনিটি অসমের কোনো অনার্য ভাষা থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে এসছে। বরং এটি আমাদের প্রাকবৈদিক ইন্দো ইউরোপীয় ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করে ।
এরজন্যেই আমাদের অসমিয়া ভাষা সেই মুষ্ঠিমেয় ভাষাগুলোর মধ্যে এক অনন্য ভাষা যে কিনা এখনো 'স' (X) ধ্বনিটিকে অক্ষত রেখেছে। এটি স্পষ্ট যে অসমে এই ধ্বনিটি নরকাসুর ( Narakaxura) বা তাঁর আগের থেকেও ছিল, যারা প্রাকবৈদিক অসুর (Axura. Sans: Asura) আর্য লোক ছিলেন । আর্য গোষ্ঠির এই শাখাটি পারস্য অব্দি এসছিল, ওখানে তারা নিরাকার সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অহুর মেজদার (Ahura Mejda) পূজা প্রচলন করে । উল্লেখ করবার পক্ষে এটি খুব আকর্ষণীয় তথ্য যে এমন কি আজো অসমিয়াদের সঙ্গে 'জেন্দ আবেস্তা'তে উল্লেখিত প্রাচীন পার্শি সংস্কৃতির সম্পর্ক খোঁজে পাওয়া যায় । পার্শিদের ভাষার সঙ্গেও অসমিয়া ভাষার বেশ কিছু সম্পর্ক সূত্র মেলে--এই 'স' (X) ধ্বনিটি সহ । সেখানে ধ্বনিটি সিলেটির মতো 'হ' /h/ উচ্চারিত হয় ।
পণ্ডিতেরা এখন সঠিকভাবেই এই অনন্য অসমিয়া ধ্বনিটিকে 'কণ্ঠ্য -ঊষ্ম' (velar fricative) ধ্বনি বলে চিহ্নিত করেছেন। ড০ বাণিকান্ত কাকতি বলেন যে অসমিয়াতে এটি এক ' অঘোষ কণ্ঠ্য উষ্ম' ধ্বনি । ড০ গোলক চন্দ্র গোস্বামী একে 'কণ্ঠ্য অঘোষ মহাপ্রাণ' ( velar voiceless aspirant ) বলে ব্যাখ্যা করেছেন । আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক সংস্থা (IPA) পৃথিবীর সমস্ত ভাষার সমস্ত ধ্বনিকে চিহ্নিত করেছে এবং প্রতিটির জন্যে কিছু অনন্য চিহ্ন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। অসমিয়া এবং অন্য যে সব ভাষাতে 'কণ্ঠ্য উষ্ম' ধ্বনি পাওয়া যায় তার জন্যে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাতে নির্দিষ্ট করে দেয়া চিহ্ন হলো রোমান বর্ণ X . (IPA তালিকা দেখুন) ।

কিছু কিছু ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা আজ অব্দি এই ধ্বনিটিকে অক্ষত রেখেছে, যদিও উচ্চারণ প্রতিটি ভাষতেই কিছু পৃথক ।ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে ধ্বনিটিকে হয় x নতুবা ch দিয়ে বানান করা হয় । গ্রীক ভাষাতে x দিয়ে লেখা হয়। যেমন Xarish ( অর্থঃ অনুগ্রহ) । রুশিতেও Xrushchev বা Chexov শব্দে যেমন ধ্বনিটির বানান x দিয়েই লেখা হয় । জার্মানে এর বানান লেখা হয় ch দিয়ে --Dach ( অর্থঃ ছাদ) বা Bach ( অর্থঃ ছোট নদী ; Eng: Brook) শব্দে যেমন । স্কটিশ ভাষাতেও এই ধ্বনিটি আছে এবং সেখানে ঐ জার্মানের মতোই ch দিয়ে বানান লেখা হয়---Loch ( অর্থঃ ছিদ্র) শব্দে যেমন ।
যাইহোক, ভাষাতাত্বিকেরা আমাদের বলেন যে এই 'স' (X) টি আমাদের সুপরিচিত ভাষা ইংরেজিতেও ছিল। এই ধ্বনিটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে রবার্ট ক্লেইবোর্ন বলেছেন, “Just as English syntax has changed over the centuries, so have English phonetics and English vocabularies. Thus the sound we write as ch ( as in 'church') appeared in English only about Fifteen hundred years back, while the guttural sound /kh/ disappeared about five hundred years ago ( except in Scotland where it is spelled ch as in : It's a braw, bricht, moonlight nicht.” (Our Marvellous Native Tongue p17)] . অন্য ভাষাতাত্বিকেরাও ক্লেইবোর্নের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। “ There were other changes as well, most notably the loss of the Old English sound /x/, which in technical terms, was a voiceless labiodental fricative—or to you and me the throught-clearing sound of /ch/ in Scottish 'Loch' or German 'Ach'. ('The Mother Tongue: English & How it Got That Way'---Bill Bryson; p93).
এভাবে দেখা যাচ্ছে , সেই প্রাচীন কাল থেকে অসমিয়া ভাষা তার আর্য মূল রূপকে রক্ষা করে এসছে। এটা সে করেছে তিব্বতি-বর্মি গোষ্ঠীর অন্য ভাষাগুলোর সঙ্গে মহান সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার পরেও । যাইহোক, ১৮২৬এ ব্রিটিশ আসার পর থেকে গেলো দুশো বছরে আমরা এই অনন্য ধ্বনিটিকে দ্রুত হারাতে বসেছি। নানা কারণে এটি ঘটছে । একদিকে ইংরেজির মধ্যদিয়ে পশ্চিমা প্রভাব আর অন্যদিকে আধুনিক কালে অসমিয়ার অতি-সংস্কৃতায়নের ফলে বহু শিক্ষিত অসমিয়াও এই 'স' (X) ধ্বনিটির প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে বিভ্রান্ত । অসমিয়ারা তাই যখন ইংরেজিতে অসমিয়া শব্দ লেখেন তখন কোন আদর্শ রোমান বর্ণ এই ধ্বনিটির জন্যে ব্যবহার করেবেন তা স্থির করে উঠতে পারেন নি । এই ব্যর্থতা কিছু সাংঘাতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে । রোমান বর্ণ দিয়ে যথার্থ অসমিয়া ধ্বনি বোঝাতে অসমিয়াদের সংকটে পড়তে হয় । ফলস্বরূপে, আজকাল সমস্ত অসমিয়া নামপদ লেখা আর উচ্চারণ করা হয় ইংরেজিকৃত রূপে , যেভাবে ব্রিটিশেরা এগুলো আমাদের দিয়ে গেছে । আমরা তাই অভ্যাসবশে লিখে চলিঃ Sibsagar, Hukanguri,Simaliguri এবং Hapekhati, এমন আরো হাজারো অন্য অসমিয়া শব্দের কথা নাই বা বললাম । শুধু তাই নয়, এই ইংরেজি অভ্যেসের বশে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আমরা আজকাল অসমিয়া শব্দের এমন বানানও লিখিঃ Asom, Parishad, Satra ইত্যদি । এটি লেখাই বাহুল্য যে এর কোনোটাই প্রকৃত অসমিয়া উচ্চারণকে ব্যক্ত করে না। Das, Sharma, Saikia, Sibsagar, Satyen-এর মতো শব্দে আমরা ইতিমধ্যে ধ্বনিটিকে হারিয়েছি। যদি না পরিস্থিতিটি নিয়ে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে সচেতন হই, তবে আমার ভয় হয় আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই আমরা সম্ভবতঃ নিজেদের সগৌরবে Oxomiyaর বদলে Osomiya বলে অভিহিত করব।
এই অনন্য ধ্বনিটিকে রক্ষা করতে অসমিয়াদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। প্রথমতঃ আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্বিক বর্ণমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইংরেজি লিখবার বেলা ধ্বনিটির জন্যে বানানে X ব্যবহার করা উচিত। যে শব্দেই এই উচ্চারণটি আছে সেখানেই এই বর্ণটি দিয়ে বানান লেখা শুরু করা উচিত অসমিয়াদের । ইংরেজি বর্ণমালাতে যদি অসমিয়া 'অসম' শব্দটি লিখতে হয় তবে তার বানান হবে       OXOM ।অনেকেই একে ASOM –এভাবে লেখেন। এটি লেখাই বাহুল্য যে ASOM বানানে মোটেও শব্দটির অসমিয়া উচ্চারণ ধরা পড়ে না , এই বানান শুধু অসমিয়ার নিজের ভাষাকে হত্যা করে --এটি নিশ্চিত । Sankaradava, Satriya ইত্যাদি অন্য আরো বহু শব্দ সম্মন্ধেও কথাটা একই , এগুলো লেখা উচিত এভাবেঃ Xongkordeb, Xotriya ইত্যাদি । আশা করছি, এর পর থেকে শিক্ষিত অসমিয়ারা 'স' ধ্বনিটি রক্ষা করাবার জন্যে /x/ বর্ণটি ব্যবহার করবেন এবং এরকম বহু শব্দে 'স' বর্ণটি সঠিকভাবে উচ্চারণ করবেন ।
গ্রন্থসূত্রঃ
১ । Assamese Grammar And Origin of the Assamese Language---Kaliram Medhi.
২। The background of Assamese Culture---R.M.Nath
৩। অসমিয়া ভাষার মৌলিক বিচার –দেবানন্দ ভরালি ।
৪। Assamese—Its Formation and Development—Dr Banikanta Kakaty.
৫। Structure of Assamese---Dr Golok Ch Goswami.
৬ । Origin And Development of Bengali Language---S.K.Chatterjee.
৭। The Origin and Growth of Asomiya Language—Dimbeswar Neog.
৯। A History of India---A.F.Rudolf Hoernle & Herbert A. Stark.
১০। অসমিয়া বর্ণ প্রকাশ – ড ০ গোলকচন্দ্র গোস্বামী ।
১১। The Mother Tongue: English & How it Got That Way---Biull Bryson .
১২। Our Marvellous Native Tongue—Mr Robert Claiborne.
অনুবাদকের টীকাঃ
 প্রজ্ঞান, জুন ০৯; পৃঃ ৪১; সাময়িকীটির ওয়েব সংস্করণও পাঠক দেখতে পারেন এখানেঃ http://sites.google.com/site/pragyan06now
☻ শব্দগুলোতে শিষ ধ্বনির রূপ শ্রী রাজখোয়া ঠিকই ধরতে পারলে শব্দগুলো ঠিক এই রূপে সিলেটিতে নেই আছেঃ সে< হে, ঐ< হউ এবং সেইটি < হকটা বা হটা বা হিটা ।
 আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্বিক সংস্থা (International Phonetic Association) পৃথিবীর সমস্ত ভাষার সমস্ত ধ্বনিকে চিহ্নিত করেছে এবং প্রতিটির জন্যে কিছু অনন্য চিহ্ন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এগুলোকে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা ( International Phonetic Alphabet ) বলে। সংক্ষেপে দুটোই IPA .
 শ্রী বরুয়া ইংরেজিতে অসমিয়া শব্দ 'অসম' লিখবার বেলা 'OXOM' লিখবার পরামর্শ দিলেও ইংরেজি 'ASSAM' নাম বদলের তীব্র বিরোধী । তাঁর মতে India ও Bharat-এর মতো 'OXOM' ও 'ASSAM' দুটোই ইতিহাস ও ঐতিহ্যসূত্রে লাভ করা অসমের দুটো নাম । চন্দ্রপ্রসাদ সইকিয়া এবং তেমন কারো কারো মতো তিনি মোটেও বিশ্বাস করেন না যে 'ASSAM' শব্দটি ইংরেজি থেকে এসছে। এ নিয়ে সম্প্রতি তিনি অসমিয়া সাময়িকী 'প্রান্তিকে' লিখেওছেন। ('আচাম, অসম আরু আহোম নামর উৎপত্তি'--রাজেন বরুয়া; 'প্রান্তিক ,১ জুলাই; পৃঃ১৭ ) আমরা সম্ভবতঃ এর পরে কখনো সে লেখাটিও অনুবাদ করব । যাদের প্রতিবাদে অসম সরকার নাম বদলের প্রয়াস থেকে সরে দাঁড়ায় তাঁদের মধ্যে শ্রী রাজেন বরুয়া অন্যতম । আপাততঃ তিনি বর্তমান অনুবাদককে এ নিয়ে ই-মেলে যে কথাগুলো লিখেছেন আমরা এখানে তা হুবহু ইংরেজিতে তুলে দিলামঃ “Late Chandra Prasad Saikia, the Assamese writer, wrote in one of his Editorials, in the Assamese monthly magazine, “The Gorioxi”, prescribing to change the spelling of the name ASSAM to ASOM. In his writing, Sri Saikia commented that ASSAM is an anglicized pronunciation coined by the British and therefore we should change it to ASOM which he thought would represent the proper local pronunciation which is OXOM. However, his writing has two great fallacies. First the pronunciation ASSAM is not an anglicized one, but it is rather a local Assamese pronunciation which was in vogue since pre colonial days. Second, his contention that spelling ASOM would represent proper local pronunciation OXOM is completely erroneous. This Saikia himself admitted in the same writing when he commented that although people may pronounce the word ASOM not as OXOM but rather as OSOM, at least they would not pronounce it as ASSAM.  It is obvious that if the Assamese follow his suggestion, Assamese will eventually loose both the pronunciations: ASSAM as well as OXOM. This type of writings by educated Assamese like Chandra  Prasad Saikia, who was an editor of a prestigious Assamese magazine, simply shows the depth and extent of our ignorance as well as of the problem that we have inherited from our colonial past.”
*******************