আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Wednesday 31 March 2021

মুরগি

 

 

(C)Image:ছবি

হরের জি এন বি রোডে
অশ্বত্থ বটতলা। মূলত বিহারিরা ছোটখাটো মন্দির তৈরি করে রেখেছেন বলে জায়গাটিই পরিচিত অশ্বত্থ নয়, আঁহত নয়, পিপলতলা চারআলি। সেখানে যেদিন প্রথম সাইনবোর্ডটা নজরে এসেছিল চোখ কোঁচকে গেছিল আর কয়েক পা এগোলেই অসমিয়া দুর্গা মন্দির, আরো এগোলে অসমিয়া পাড়া সাইন বোর্ডে লেখা ছিলরমন হিন্দু মিট শপআজকের দিনেও লোকে দোকানের নামে হিন্দু মুসলমান লেখে? তাও যদি বাঙালি বা বিহারি পাড়াতে হত অসমিয়াদের মধ্যে সাধারণ বিশ্বাস হচ্ছে হিন্দু বা মুসলমান পরিচয়টি গৌণ, অসমিয়া পরিচয়টিই গৌণ গেল এক শতকের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এটি অর্জন এমনি এমনি সাইনবোর্ডটি নজরে আসে নি করোনার প্রকোপে তালাবন্দির দিনে যখন সব দোকানপাট বন্ধ তখনই একদিন মাছ মাংসের সন্ধানে পথে ঘুরতে ঘুরতে এই দোকানটির সন্ধান পেয়েছিলাম পরে নজর বুলিয়ে বুঝলাম, দোকানের মালিক অসমিয়া নন নেপালি ওখানে সাধারণ মাংসের বাইরেও ‘নেপালি কাটপাঁঠার মাংস মেলে বলে বোর্ডে লেখা আছে নেপালি কাট মানে হচ্ছে পাঁঠা কেটে আগে আস্ত পাঁঠাকে অল্প আঁচে কিছু ঝলসে নেওয়া হবে। গরম জলে সেদ্ধও করে ফেলা হবে। অনেকটা যেভাবে শুকর কাটা হয়। যাই হোক,  পরে একাধিক দিনে এই দোকান থেকে মাংস কিনেও এনেছি  এর জন্যে নয় যে দোকানের নামেহিন্দুআছে, বরং এর জন্যে যে সাধারণত মাংসের দোকানগুলো বসে খোলা পথের পাশে নালা নর্দমার পাশে এই দোকানটি চার দেয়াল ঘেরা টিনের চালের নিচে ছিল কাছেই গায়ে লেগে আরো কিছু মণিহারী বা মোদীর দোকান রয়েছে, যেমন থাকে তুলনাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন

            দোলের দিনে দেরি করে বাজারে গেছি  সেদিনও মাংস খাওয়াই রীতি বছর ঘুরে গেলেও কোভিডে আক্রান্তের গ্রাফ আবার ঊর্ধ্বমুখী কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে রাজ্যে আবার তালাবন্দি ঘোষিত হতে পারে ভেবেছিলাম পথে না থাকবে দোলোৎসবের ভিড়, না হবে বাজারে ভিড় কিন্তু দোকানে দোকানে ভিড় দেখে সেই দোকানে গিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে থামলাম মানে, বাইক থামালাম সেখানে ভিড় ছিল না দুই দোকানি দোকান সামাল দিচ্ছে ভাই না বন্ধু জানি না দুজনেই তরুণ একজন মাংস কেটে এক গ্রাহককে দিচ্ছিল আর জন নতুন কেনালোকালমুর্গির ঝুড়ি খালি করে নিজের খাঁচা ভরছিল আর বলছিল, “ কী ছোট ছোট মুরগি দিয়েছে রে বাবা! ঠকিয়ে দিল তো!” “আমি তো বলছিলামই তোক্‌ নিবি না! এগুলো বিক্রি করব কী করে?” ভেতর থেকে সেই দোকানি বলল, যে মাংস কাটছিলতুই কখন বললি?” চটে গেল ভেতরের দোকানিগলা চড়িয়ে বলল, “আমি কি বলিনি তোকে, কিনবি না? ছোট ছোট বিক্রি করতে পারবি না! শুনলি কই? এখন কর!” বাইরের দোকানি যে সত্যমিথ্যা দূরে ঠেলে ভয়ে চুপ মেরে গেল স্পষ্ট বুঝা গেল মনের দুঃখে যা করছিল , তাই করতে থাকল মেজাজ দুজনেরই বিগড়ে গেছে ওদিকে আমাকে পাঁঠা কেটে দিচ্ছে 

       

 "উজান' নববর্ষ ১৪২৮ বিশেষ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত

বাইরে এক জোড়া নরনারী ছোট্ট রঙিন মুরগিগুলো দেখে দামদর করতে শুরু করল দেখেই বোঝা যাচ্ছিল দরিদ্র আদিবাসী দোলের ফুর্তির আয়োজন করতে এসেছে এরা দম্পতি না কোনো ঠিকাদারের অধীনে সহকর্মী বোঝা যাচ্ছিল না পুরুষটি একটি মুরগি ওজন করিয়ে বলছিল, “কাটবে না, আমার জ্যান্ত চাইতখনও ও দরদাম করে যাচ্ছিল ওর পোষাচ্ছিল না দামে-- বোঝাই যাচ্ছিল কিন্তু দোকানি দ্রুত বৈদ্যুতিন পাল্লা থেকে মুরগি তুলেই ঘাড় মটকে দিল ভেতরে কাটতে নিয়ে গেল মহিলাটির মুখ কালো পুরুষটি চেঁচিয়ে গেল, “মারবে না বললাম না! আমি জ্যান্ত নিয়ে যাব! দরদামই হলো না কাটতে নিয়ে গেছ কেন?” দোকানির মেজাজ এমনি বিগড়ে ছিল চটে গেল,  মেরে ফেলেছি তো কী করব? ঠিক আছে কাটব না, নিয়ে যাওপুরুষটি বলল, “নেব না ! অন্য দাও, জ্যান্ত দাওদোকানি বলল, “মজা পেয়েছিস? তুই কি জ্যান্ত চিবিয়ে খাবি? মেরে ফেলেছি তো এখন নিবি না কেন?” আদিবাসী নরনারী সুতরাং তুই তোকারি করাটাই হচ্ছেসভ্যতা  আমার মনে হচ্ছিল, এদের হয় সেদিনই খাবার পরিকল্পনা নেই, অথবা খাবার জন্যে নিচ্ছেই না পালন  করতেও তো নিতে পারেকথাটা কেবল স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। আদিবাসীদের বহু সময় শহরের বাজারে এমন দ্বিধাভয়ের জড়তা কাজ করে। কিন্তু এত সব ভাবার সময় কে নেয় আর কেই বা দেয় ? তুই তোকারির চোটে বেচারিরা ভয় পেয়ে গেল নীরবে টাকা দিয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে কালো মুখ আরো কালো করে পা চালাল  

          আমারও মনে , এরা তো ঘাড় মটকায় না মুসলমান হলে রগ কেটে ড্রামে ফেলে দিয়ে মরবার জন্যে ক্ষণ গুনবে হিন্দু হলে সরাসরি গলা কাটবে মটকাল কেন? প্রশ্নটি করেছিলাম আপনার এই রীতি তো হিন্দু রীতি হল না বলল, আমাদের এটাই রীতি আমরা আগে মারি, পরে কাটি এমন চটে গিয়ে বলল, যে মনে হল সেটাও মিথ্যে বলছে সত্য প্রমাণ করা কঠিন ছিল পাপপুণ্যের সামান্য ভয়টুকু নেই নামেইহিন্দু মিট শপের মোড়ক আমাকেও অগত্যা মুখ কালো করেই নীরবে বেরিয়ে আসতে হল  নিজে যে ধোঁকাটি খেয়েছে কসাইটি সেই ধোঁকা জাতিতে -শ্রেণিতে দুর্বল গ্রাহক পেয়ে তাদের ঘাড়েই চালাকি করে তা চালান দিয়ে দিলনির্বিকার।  

Tuesday 16 March 2021

চাষ তো ভালো শিখতে পারে চাষাই কেবল!

সেদিন হায়ার সেকেণ্ডারি ক্লাসে 'অশুদ্ধি সংশোধন',  মানে বানান পড়াচ্ছিলাম! তো শুরুতেই সহজ করে বলেদিলাম, তোমাদের কটি ভুল শব্দ দিয়ে বলা হবে শুদ্ধ কর! সেরকম কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া আছে, মুখস্ত করে ফেল। কপাল ভালো থাকলে মার্ক পেয়ে যাবে! এর পরে তোমরা ভুলেও যাবে! এটাই নিয়ম! ফলে ভুলো না - এহেন আবান্তর উপদেশ আমি দেব না। তার জন্য স্বতন্ত্র প্রজাতির শিক্ষক আছেন, তাঁরা নিজেরাও ভুল করেন! কিন্তু তোমাদের ভুল দেখলে মার্ক কেটে দেন! সে জন্য বাংলার ছাত্ররা খুব কম মার্ক পায়! ভয়ে বাংলা লেখা পড়া ছেড়ে দেয়! তোমরাও দেবে হয় তো। কী আর করা যাবে? এই পোড়া দেশে আমাদের জন্ম! কিন্তু তোমরা ভয় করো না, যদি আগ্রহ জন্মায় তবে ভুলে ভালে লেখো বলো! সেই ভাষা যেন বাংলাই হয়! মাস্টারদের হুমকি ধমকিতে ভয় পেয়ো না, কারণ পরীক্ষার বাইরে তাঁদের কিচ্ছুটি করবার ক্ষমতা নেই! ভুল করতে করতেই লোকে শেখে, ভাষাকে ধরে রাখে, বাঁচায় এবং এগিয়ে নিয়ে যায়! বাংলার জন্ম ও বিকাশ এভাবেই হয়েছে। পণ্ডিতেরা বাংলার জন্ম দেন নি, তাঁরা সংস্কৃতের জন্ম দিয়েছিলেন। সে ভাষার কী গতি হয়েছে আমরা সবাই জানি! তাঁরা উনিশ শতকে সংস্কৃতের নকলে 'সাধু ভাষা ' বলে একটি ভাষা গড়তে গিয়ে হাজার বছরের বাংলা লিখিত সজীব ভাষাকে আসলে শ্মশানে পাঠিয়েছেন! কবরেও বলতে পারি এই অর্থে যে বুদ্ধিটি কিছু মিশনারি পণ্ডিতদের ছিল! তৎসম শব্দে বাংলার লিখিত ভাষা ভারাক্রান্ত করে তুলেছিলেন! এখন যে প্রমিতভাষাতে আমরা কথা বলি আর লিখি তার আয়ু ১০০ একশ বছর মাত্র, রবীন্দ্রনাথের হাতে এর জন্ম! কিন্তু সংস্কৃত বা প্রমিত বাংলা যারাই তৈরি করুন এরা মালমশলা উপকরণগুলো নিয়েছিলেন অপণ্ডিত মানুষের মুখে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি ভাষার থেকে! ধরে নিলাম, সে ভাষা খুবই বাজে, খুবই বিশ্রি, অনেকটা ভাষার জঙ্গল! সে কোনো শৃঙ্খলা মানে না, মানে না বিধান।  কিন্তু যে দুনিয়াতে জঙ্গল নেই সেই দুনিয়াতে পণ্ডিতেরা দুই চারটি যত্নের বাগিচা করে দেখান তখন জঙ্গলকে অপমান করবেন! ফলে জঙ্গল আমাদের চাই! চাঁদে অরণ্য নেই, তাই সেখানে সভ্যতা নেই! নেই বাবুদের সাধের বাগান! কিন্তু 'বৈপরীত্যের মধ্যে ঐক্য ' বলে একটি কথা আছে! বাবু পণ্ডিতরাও সেসব ভুলে থাকেন, তাঁরা আশা করেন দুনিয়ার সর্বত্র তাঁদের সাধের বাগান হবে! যা অসম্ভব! কিন্তু দুনিয়ার সর্বত্র যদি অরণ্যই থাকত? যদি কোথাও চাষাবাদ না হত? যদি কোথাও না থাকত সাধের বাগান? আমরা তো বানরের সঙ্গে গাছে ঝুলতাম, কলেজে কি ক্লাস করতাম বসে আজ? সেই কথাও মনে রাখা দরকার, যখন তুমি লিখছ পড়ছ! যত বেশি লিখবে পড়বে তত বেশি সেটা মনে রাখা দরকার! আর যদি তুমি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে যাও তবে তুমিই হবে ভাষার মান!    তোমাকে লোকে অনুসরণ করবে! ভাষার মান রপ্ত করবার এটিই বিজ্ঞান! স্থির মান বলে কিছু হয় না!যারা হয় বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা অনৈতিহাসিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোক!   এর পরে চাষাবাদের,  মানে 'বানান বিধি'র কিছু নিয়ম কানুন বলে বললাম, এগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাষাবাদ শেখাবার মতো বিষয়! শিখলে ভালো! কিন্তু কেউ ভালো শেখে না, পরীক্ষার পর মনেও রাখে না! চাষ তো ভালো শিখতে পারে চাষাই কেবল!