আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Saturday, 4 April 2015

আন্তর্জালে বাংলা ভাষা এবং বুদ্ধিচর্চার প্রজন্মান্তর কাহিনি


(নিবন্ধটি লেখা হয়েছিল সঞ্জীব দেবলস্কর সম্পাদিত 'বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন' প্রকাশিত আকাদেমী পত্রিকার
জন্যে। পত্রিকাটি সংস্থার ২৬তম অধিবেশনে প্রকাশ পাবার কথা থাকলেও, অনিবার্য কারণে এখনো বেরোয় নি, বেরুবে। ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২২ মার্চ, ২০১৫তে শিলচরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের ২৬তম অধিবেশন সম্পন্ন হয় শিলচর বঙ্গ ভবনে। সেখানে দ্বিতীয় দিনে 'প্রত্যাহ্বানের মুখে উত্তর পূর্বের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিঃ উত্তরণের সম্ভাবনার সন্ধানে (বিশেষ প্রেক্ষিত বরাক উপত্যকা)  শীর্ষক আলোচনা চক্রে আমন্ত্রিত হয়ে একই বিষয়ে বক্তৃতা করতে হলো। এবং সেই বক্তৃতাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বরাক বঙ্গ তাদের অধিবেশনের কর্মসূচী  সম্প্রসারিত করে 'আসুন আকাশ জয় করি' শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করেন ২৪শে মার্চ বিকেলে, ঐ একই জায়গাতে। বক্তৃতার বিষয় যখন জানাজানিই হলো, প্রকাশের আগে ব্লগে তোলবার তাড়াও বাড়ল। আশা করছি, সবাই উপকৃত হবেন। একই বক্তৃতা আবার করতে হলো, ২রা মে, ২০১৫তে শিলঙে। ১,২,৩ মে, ২০১৫ শিলঙে ৫ম উত্তর পূর্বাঞ্চল লিটিল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী এবং সম্মেলনী হয়ে গেলো। এবারের আয়োজক ছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, শিলং । )

 [বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের "ভাষা আকাদেমি' প্রকাশিত "আকাদেমি পত্রিকা -২০১৬' তথা 'ভাষা ও সংস্কৃতি বরাক উপত্যকা' সংখ্যাতে প্রকাশিত হলো। ১৯-০৬-২০১৬। সেই সঙ্গে
ত্রিপুরা তথা পূর্বোত্তর ভারতের অন্যতম সাহিত্য পত্রিকা 'স্রোত' তাদের  ২৪ বর্ষ, ৬৮-৬৯ সংখ্যাটিতে লেখাটি আবার প্রকাশ করেছেন ]

আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে , করি বাংলায় হাহাকার :

     শিলচর লক্ষ্মীপুরে বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী যখন সরকারিভাবে অসমিয়া ভাষা ব্যবহারের নির্দেশিকা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন আমরা সবাই জানি একেবারেই ভুল কারণে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে একটা গেল গেল রব পড়েছিল। ‘অসমের ভাষা হবে অসমিয়া’ দীর্ঘদিন লালিত একটা ধারণার থেকেই অনেকে প্রথমে পথে নেমে গেছিলেন। পরে যখন জেনেছেন যে বরাকের ভাষাতো বহু আগে থেকেই সরকারিভাবেই বাংলা হয়েই আছে তখন ধীরে ধীরে তারা নীরব হয়ে পড়েন। এই সব বিভ্রান্ত লোকেদের মধ্যে হীরেন গোঁহাইর মতো বিদগ্ধ ব্যক্তিও ছিলেন। এটাই মজার । এটা হয়, বিদগ্ধ মানুষেরাও সমাজ সভ্যতার সম্পর্কে কিছু গোঁড়ামোকে অজান্তেই লালন করে থাকেন। তিনি যে ভাষারই লোক হোন। তার দিন-কতক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি নির্দেশিকা নিয়েও বেশ হৈচৈ হয়।

   নির্দেশিকাটি সম্ভবত ছিল সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের এবার থেকে সমস্ত যোগাযোগ, এমন কি আন্তর্জালে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমেও করতে হবে হিন্দি ভাষাতে। দক্ষিণের তামিলনাডু সরকার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল। এর বাইরেও অনেকে বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন। সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুক-টুইটারেও এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়েছিল। পরে জানা গেল, এই নির্দেশিকা তো আগের সরকারই দিয়ে গেছিল মার্চ মাসে , নির্বাচনের আগে আগেই। নতুন সরকার এসে তারই পুনরাবৃত্তি করেছে মাত্র। কিন্তু এবারে বিতর্ক হবার কারণ তাদের দর্শনের মধ্যেই আছে হিন্দু আধিপত্যের সঙ্গে হিন্দি আধিপত্যের একটা মানসিকতা। নতুন প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে দেশে বিদেশে হিন্দিতে বক্তৃতা করে হৈচৈ ফেলেছেন। ফলে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন যে এতে করে ইংরেজিকে প্রতিস্থাপিত করবে হিন্দি। বাকি ভারতীয় ভাষা থেকে যাবে আছে যে তিমিরে, সেখানেই। পরে সরকার এই স্পষ্টিকরণ দিয়ে বিতর্কটি থামিয়েছে যে নির্দেশিকাটি শুধুই হিন্দিভাষী প্রদেশগুলোর জন্যে। বাকিরা তাই করবেন, এদ্দিন যা করছিলেন।
   



 বর্তমান সরকারের হিন্দিপ্রেম নিয়ে আমাদেরও কোনো সংশয় নেই।হিন্দিকেই এরা মনে করেন ভারতের ভাষা। ঐতিহাসিক কারণেও গড়ে উঠবার কাল থেকেই উর্দু এবং হিন্দিকে বলা হতো ‘হিন্দুস্তানি’---মানে ‘হিন্দুস্তানে’র ভাষা। এখন উর্দুর আভিজাত্য গেছে। সংস্কৃত জায়গা নেবে। হয় সংস্কৃত, নয় হিন্দি। এই দুই ভাষাকে নিয়েই নতুন শাসকদের যত ভাবনা। কিন্তু কিছু কিছু আখ্যানের ভেতরেই তাকে অন্তর্ঘাত করবার প্রতি-আখ্যান ঢোকে পড়ে কখনো। সেই প্রতি আখ্যানের দিকে নজর ফেললে ঘটনাক্রম আমাদের কাছে বেশ উৎসাহের কারণ হবে। ভাষা নিয়ে আমাদের এদ্দিন অত্যন্ত গোঁড়া একটি অবস্থান কী ছিল? ইংরেজি ছাড়া বিদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন একেবারেই অসম্ভব। ইংরেজি একটি বিশ্বভাষা। এই ভাষার কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। আমাদের ভাষার সবচাইতে জনপ্রিয় কাগজ ‘আনন্দবাজার’ এবং তাদের যাবতীয় প্রকাশনা এই সব তত্ত্ব প্রচার করে যেতো। মাতৃভাষা যতনা, ততোধিক বেশি লড়াই এরা মনে হয় করেছেন ইংরেজি ভাষাটির জন্যে। ইংরেজি দিয়ে ভারতে হিন্দি আধিপত্যকে, অসমে অসমিয়া আধিপত্যকে কিছুদূর ঠেকানো গেছে স্বাধীনতার পর থেকে এতোদিন। কিন্তু বাকি ভাষাগুলোর উত্থান তথা বিকাশের জন্যে করা যায় নি প্রায় কোনোকিছুই। এই সত্য সম্পর্কে কিন্তু আমরা অধিকাংশই উদাসীন। আমাদের অবস্থান যেন অনেকটা নিজের নাক কেটে হলেও ইংরেজিকে দিয়ে হিন্দি-অসমিয়ার যাত্রা ভঙ্গ করবই।অথচ আমাদের কাছে এই তথ্য কিন্তু ছিলই যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কেরা বহুদিন ধরেই দেশে বিদেশের মঞ্চে বাংলায় কথা বলে কাজ চালিয়েছেন। এমনকি ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আনিয়ে দেয়াও তাদেরই কাজ। এছাড়াও বিলেতি উপনিবেশ ছিল না এমন প্রায় প্রতিটি দেশ এখনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের মাতৃভাষাতেই কাজ চালায়, অথবা কাজ চালায় সেই সেই দেশের ভাষায় যাদের তারা উপনিবেশ ছিল এককালে। ঠিক এর জন্যেই ছোট্ট দেশ স্পেনের ভাষা এখনো বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় ভাষা। ইংরেজি নয়। ইংরেজির স্থান তৃতীয়। প্রথম স্থানটি দখলে রেখেছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীন। আন্তর্জালেও এই চীনাদের উপস্থিতি আমাদের থেকে বহু উজ্জ্বল। তারপরেও যে তাদের ভেতরের খবর আমরা খুব একটা পড়তে পারিনা আন্তর্জালে , কারণ একটাই--- আমাদের অধিকাংশ আন্তর্জালীয় অনুসন্ধান চলে ইংরেজিতে, চীনা বা স্পেনীয় ভাষাতে নয়। আমাদের মনে হয়---এই বুঝিবা বিশ্ব। এর বাইরে আর কোনো বিশ্ব নেই। থাকা অসম্ভব। এসব একটা কারণ হতে পারে যে এই কুসংস্কার দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের খুব তীব্র -- এখন এই আন্তর্জালের যুগে সবই ইংরেজিতে চলবে, বাংলাতে সেখানে আমাদের কোনো কাজ নেই। এর থেকেও বড় কারণটি আমাদের ঔপনিবেশিক মন, যা কিনা তৈরি হয়েছে গেল আড়াইশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে। অন্য কী-ই বা আর যুক্তি থাকতে পারে!  যে পিতা ছেলে বা মেয়ের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব চিন্তিত তিনি যে শুধু ইংরেজি মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে পড়ান তাই নয়, নতুন যুগের ইঞ্জিনিয়ার হলেও যেন কম্প্যুটারেই হয় সে জন্যে জীবনের সমস্ত সঞ্চিত ধন বাজি রেখে দেন। কিন্তু সেই পিতা যদি বাংলা ভাষার শিক্ষক বা লেখক হন---তিনি নিত্যদিন কম্প্যুটারকে গালি দিয়ে বলেন---বাংলা ভাষা সাহিত্যের সর্বনাশ ঘটালো এই প্রযুক্তি। অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের উত্তর ঔপনিবেশিকতাবাদ নিয়ে প্রচুর ভাবনা চিন্তা এবং কাজ আছে। সেই তিনিও তাঁর প্রায় প্রতিটি লেখায় বক্তৃতাতে কম্প্যুটার এবং আন্তর্জালকে অভিসম্পাত দিয়ে যান। বিশেষ কোনো উদ্ধৃতি দেয়াই নিরর্থক। বর্তমান উপাচার্যকেও সেদিন একটি বই উন্মোচন সভাতে বলতে শোনা গেল, ‘ইন্টারনেট কখনো ভ্রমণ কাহিনির বিকল্প নয়।’ এই কথা তিনি বললেন কেন? কারণ ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ শব্দটি মাত্র শুনে শুনে আমাদের মজ্জাগত ধারণা হয়ে গেছে যে ওখানে শুধু টুকরো টুকরো তথ্য থাকে। আমাদের অধিকাংশ মধ্যবিত্তের বাড়িতে কম্প্যুটার আছে ‘শ্রেণি-গরিমা’ প্রকাশ করবার জন্যে। একটি টাইপ রাইটারের বেশি মর্যাদা দিয়ে এর ব্যবহার শেখেন নি অধিকাংশই। আর যদিবা আন্তর্জাল আছে তবে ব্যবহার করেন নিতান্ত বাধ্য হয়ে দুই একটা ই-মেল করতে---তাও মনে হয় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক চাপ বাধ্য করে বলেই করেন। অধ্যাপকদের অধিকাংশইতো আজকাল সেমিনার পেপার মাইক্রোসফটের পাওয়ার পয়েন্টে প্রস্তুত করাকে ‘প্রেস্টিজে’র বিষয় করে রেখেছেন। তাও ইংরেজিতে। বাংলাতে করলে অত্যন্ত সেকেলে দৃষ্টিকটু ফন্ট ভৃন্দাতে করেন । এর বেশি এগুবার –ঠিক, সময় করে উঠতে পারেন না। ব্যস্ত মানুষ! বাকি যে কাজ করেন সেই ঐ তথ্য-কণা সংগ্রহ করতে অথবা গান সিনেমা দেখতে শুনতে। অধিকাংশ মানুষ আন্তর্জাল ব্যবহার করেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, পর্ণ সাইট দেখতে। ‘মাল্টিমিডিয়া’ কথাটার এইটুকুনই অর্থ তাদের কাছে। ‘মাল্টিমিডিয়া’ কথাটার মানে যে এই হতে পারে—একটা পাঠ যে একাধারে দৃশ্য,- শ্রব্য , সরব, নীরব, অথবা দুটোই। অর্থাৎ আমরা বিশ্বাসই করতে পারি না যে আন্তর্জালে দুনিয়ার যেকোনো ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষাতে পুরো একখানা ‘ভ্রমণ কাহিনি’ পড়া সম্ভবই নয়, লেখক যদি ছবি , স্বর কিম্বা চলচ্চিত্র যুক্ত করেছেন তবে সেগুলো দেখেশুনেও লেখা পাঠের থেকে বড় মাত্রায় মিলতে পারে ভ্রমণের স্বাদ। আর কিছু না হোক, ডিস্কোভারি বা এনিম্যাল প্ল্যানেটে যে সব বিশ্বমানের ভ্রমণ কাহিনি দেখাশোনা যায়, সেগুলোতো অতি-সহজেই আন্তর্জালেও যখন তখন মেলে। শিলচর শহর থেকে দিলীপ চক্রবর্তী বলে এক লেখকের বই ‘হিউ এন সাঙের দেশে’ বইটি আন্তর্জালে কেন পড়া যাবে না! ক্ষতিটা কী? বরং আমাদের বইয়ের যেহেতু কোনো কেন্দ্রীভূত কোনো বাজার নেই, একটি ছোট শহর বা তার আশেপাশের জেলাগুলোর লোকেরাই শুধু ইচ্ছে থাকলে শিলচরে এসে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন , সেখানে সেটি আন্তর্জালে উঠে গেলে মুহূর্তে শিলচর থেকে সাইবেরিয়া যেকোনো আগ্রহী পাঠক পড়ে ফেলতে পারেন। বা লেখকও বিশাল ডাক খরচ বহন না করেই তাঁর প্রবাসী বন্ধু বা আত্মীয়কে বইটি পড়িয়ে ফেলতে পারেন। হ্যাঁ, তিনি আন্তর্জালেই শুয়ে শুয়ে বুকের উপরে রেখে পাতা উলটে উল্টেই বইয়ের মতোই পড়ে ফেলতে পারেন।
    
          Salute to the martyrs of 19th May, 1961! তবে না অজ্ঞ বিশ্ববাসী জানতে পড়তে পায়, মাতৃভাষার জন্যে আমরা কতনা কি করেছি! প্রাণ দিয়েছি! চাট্টিখানি কথা! দুনিয়াতে আর কেউ এই কাজ করেছে! তারা শুধু তৈরি করেছে মোবাইল, কম্পিউটার। আমাদের Mother Tongue এর বারোটা বাজিয়েছে।
১০মে, ২০১৫ রবিবারের বৈঠক, পৃঃ১০
  আন্তর্জালের এই যে অপব্যবহার কিম্বা অব্যবহার --- আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এ শুধু দেখায় সমাজ হিসেবে আমাদের অসৃজনশীল মনটাকে। সেই মন জড় হয়ে বসে আছে নানা ধরণের ঔপনিবেশিক চাপে। অন্যে এসে না ভাবিয়ে দিলে আমরা ভাবতেও পারি না। নতুন সরকার যখন শুধু হিন্দি ভাষাতে সমস্ত যোগাযোগ করবার নির্দেশিকা দিল, আমাদের শঙ্কিত হবার বহু সঙ্গত কারণ আছে। এদের একটা হিন্দি চাপিয়ে দেবার মন আছে, ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু কেউ কি এই প্রশ্ন করলেন, কেন্দ্রীয় গৃহ-মন্ত্রণালয় ফেসবুকে টুইটারে ব্লগে হিন্দি ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন কেন? এটা কী করে সম্ভব! ওখানে তো শুধু ইংরেজি ব্যবহারই সম্ভব! তাও, কম্প্যুটারে যদিবা কোনো আশ্চর্য যাদু বলে হিন্দি লেখা সম্ভব, মোবাইলেতো কস্মিনকালেও না! নতুন মোবাইল কিনে বন্ধুদের দেখিয়ে বাহবা লুটতে ব্যস্ত আমরা খুলেও দেখি না, এর সেটিঙে ভাষা ব্যবহার সম্পর্কে কী কী কথা লেখা আছে। মোদ্দা কথাটাই হলো, বাংলা দিয়ে কাজটা কী? এই ভাষাতে কি ‘গ্ল্যামার’ বাড়ে? ইংরেজিতে যদি দুই লাইন লেখা যায়
             এটা বাংলাদেশের শাহবাগের আন্দোলনের সময়েও দেখেছি বেশ সকৌতুক নজর ফেলে। আমাদের দুই এক লেখক লেখিকা বেশ সরব হয়েছিলেন কাগজে পত্রে। শাহবাগের লড়াইর সূচনা করেছিলেন যারা সেই ‘ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম’-এর নামোল্লেখ করে নিবন্ধ লিখেছিলেন । কিন্তু এই প্রশ্নটি করেন নি, কারা এই ‘ব্লগার’? ব্লগ মানে কী ? এরা এতো শক্তিশালী হলেন কী করে? কোন ভাষাতে নিজের কথা লেখেন তাঁরা! কোনো প্রশ্ন নেই! আমাদের কাজই বা কী? আমাদের কাজতো ‘মৌলবাদ বিরোধিতা’র এই সুবর্ণ সুযোগ ব্যবহার করে নিজের ভাবমূর্তিকে সামান্য উজ্জ্বল করা---এর বেশি কিছু না। মৌলবাদের বিকল্পে ভাষা জাতীয়তাবাদের কথা লিখব, ভাষা থাকল কি নাই থাকল---তাতে কারই বা কী এসে যায়। অনেকের কাছেই মনে হয়েছে এরা বুঝিবা ফেসবুক ব্যবহারকারী মাত্র।কারণ মোবাইল কোম্পানিগুলোর দৌলতে আন্তর্জাল এখন বিচ্ছিন্ন এপ্লিকেশন নির্ভরও। অর্থাৎ ফেসবুক খুললে আপনি ফেসবুকেই থাকবেন অন্যত্র যেতে হলে ততক্ষণ পারবেন না যতক্ষণ আরেকটা ‘এপ্লিকেশন’ না নামাবেন, আর ফেসবুক মোবাইল কোম্পানি নিজেই নামিয়ে দিয়ে বিজ্ঞাপনে শুধু শুধু আকর্ষণ বাড়িয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। ফেসবুক হয়ে থাকে আমাদের নতুন ফ্যাশন। এক মহিলা, একদিন এক কাফেতে গিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘আফনারার ইনো ফেসবুক খুলিয়া দেইন নি? কত টেকা লাগব!’ শিলচরে এই অভিজ্ঞতা যেদিন হয়েছিল, আন্তর্জালে অভ্যস্ত আমার পিলেও চমকে গেছিল, ভদ্রমহিলা সোজা আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইছিলেন! বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে গেছে তাঁর। ভাটি অসমের এক ছোট কাগজের পেছনে একবার দেখেছিলাম, ই-মেল লিখে দেয়া আছে, ফেসবুক একাউন্টের ইউ আর এল! এই সব অতি উৎসাহের বিপরীতে একবার আমাদের প্রাক্তন উপাচার্যের স্মাম মেল নিয়ে প্রথম পাতাতে সংবাদ শিরোনাম দেখেতো বছর দুই আগে খুব হেসেছিলাম! এই না হলে আমাদের সাংবাদিকতা! ভাগ্যিস এগুলো ইউনিকোডে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে না। লজ্জা রাখবার কারো ঠাই হতো না।
           প্রযুক্তির এই যে বাড়বাড়ন্ত--- এতো এক পুঁজিবাদী বাস্তবতা। সেই বাস্তবতা নিয়ে আমাদের ঔদাসীন্যের নজির দিয়ে দেখালাম সেই পুঁজিবাদী বাস্তবতাতে আমরা নিতান্তই গ্রাহক কিম্বা শ্রমিক । এর মর্মবস্তু কিম্বা গতিপ্রকৃতির উপরে সৃজনশীল হস্তক্ষেপ কিম্বা অন্তর্ঘাত করবার যোগ্যতা আমরা অর্জন করিনি বিশেষ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক মৌলিক সমস্যা হলো যে বস্তুটি গ্রাহক হিসেবে ব্যবহার করছি, সেটি আমি তৈরি করিনি বা উৎপাদন করিনি। আর যদি উৎপাদন করেছি তবে সেটি আর আমি ব্যবহার করছি না বড়ো। সে আমার দখলে থাকে না। কে নিয়ে যায়, কই নিয়ে যায় কেউ জানি না। এই বিচ্ছিন্নতার ব্যামোতে পণ্যের বাজারে তাই ব্যক্তির সৃজনশীলতা বলে বিশেষ কিছু থাকে না। যদি না সেই ব্যক্তির মুনাফা কিছু অর্জনের পথ না থাকে। নতুন কোনো কাজে হাত দিলেই আমাদের প্রথম প্রশ্ন---লাভটা কী হবে? লাভ ছাড়া এখানে মেঘও বৃষ্টি হারিয়ে ফেলে। বৃষ্টি হওয়া না হওয়াটাও এখন আর নিছক প্রাকৃতিক নয়, অর্থনৈতিক পরিঘটনাও। শ্রমিক কী করবে ঠিক করে দেয় প্রত্যক্ষ ভাবেই মালিক । গ্রাহক কী করবে তাও ঠিক করে দেয় মালিক। পরোক্ষে, বিজ্ঞাপনে। অথবা বাজার থেকে আপনার পছন্দের পণ্য তুলে দিয়ে। আমাদের হাতের পণ্যটির সঙ্গে আমাদের বিচ্ছিন্নতা বুঝিবা ব্রহ্মারই কপালে লিখন। তাই,হাওয়া যেদিকে ছোটে এবং ছোটায় আমরা সেদিকেই ছুটতে থাকব , নান্য পন্থা। সৃজনশীলতার বিপরীতে ‘ব্র্যান্ড’ এবং ‘ট্র্যাণ্ড’ই এখানে শেষ কথা। আমাদের কৃষি কর্মী হাল ছেড়ে ট্র্যাক্টর ধরেছেন বহুদিন হলো, ঢেঁকির জায়গা নিয়েছে লোহার মেশিন। ‘ঢেঁকি’ এখন চাষির কম ‘লোকসংস্কৃতি’র গবেষকের আগ্রহের বিষয় বেশি। খাগের কলম, ঝর্ণা কলমের যুগ পার করে বল পেনের যুগ অব্দি এসে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম স্বচ্ছন্দে। কিন্তু যেই কম্প্যুটার কিম্বা মোবাইল এলো, আমাদের হলো বিশাল ফ্যাসাদ। ইংরেজির ভারটা নিয়ে নিলো কম্প্যুটার, বাংলার জন্যে রইল বল পেন। ঝর্ণা কলমও নয় বিশেষ , কেন না বাজারে মেলে না। সুলেখা কালির জমানা গেছে বললেই হয়। এই বলপেনে যারা বাংলা লেখেন, বুকে বই রেখে পড়বার নেশা মনে হয় তাঁরাই ছাড়তে পারেন না। বাজারের ‘ট্র্যাণ্ড’ এসে ছাড়াবে বলে নিজের অজান্তে পথ চেয়ে বসে আছেন।

          
 আর শীঘ্রই বাজার তা ছাড়াবেও বটে । এর জন্যে আদৌ কোনো সামাজিক বিপ্লবের দরকার পড়বে না। গৃহ-মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকার পেছনেও আসল অনুপ্রেরণা এই বাজারই। হিন্দির বাজারটি বিশাল। বেসরকারি এবং অবাণিজ্যিক উদ্যোগেই সেই বাজারে ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ ঢোকে গেছে বহুদিন হলো। অর্থাৎ ভাষার প্রতি ভালোবাসার থেকেই আন্তর্জালে হিন্দি সাহিত্যের এক বিশাল সমুদ্র বহুদিন আগেই গড়ে তুলেছেন ব্লগার এবং লেখকেরা। সেই তৈরি জমিতে এবারে ঢুকছে বাজার। এবং সরকার। তামিল, তেলেগু বাজারেও সে ঢুকেছে দিন হলো। কেন্দ্র-সরকারের নির্দেশিকার প্রতিবাদ তাই দক্ষিণের রাজ্যগুলো করেছে সবার আগে। বাংলা বা অসম বলবেটা কী? ইংরেজির হয়ে নির্লজ্জ ওকালতিটাতো করতে পারে না, এদিকে এও বলবার সাহস কিম্বা যোগ্যতা অর্জনই করতে পারে নি, আমরা আমাদের ভাষাতেই করব যা করবার। তাই চুপ থেকেছে। চুপ থেকেছে ১৯শে মে’র বরাক উপত্যকাও। কিন্তু তাই বলে বাজার চুপ থাকবার নয়। পুঁজিবাদী প্রতিযোগিতা বিষয়টি এতোই তীব্র যে সে পুঁজিবাদীদেরকেও শান্তিতে শ্বাস ফেলতে দেয় না। সে গতকাল যে পণ্য এবং সম্পর্কগুলো তৈরি করে আজ তাকে ধ্বংস করে।  আগামীকাল আবার কোন নতুন বিষয়কে সামনে এনে আজকের দিনটিকেও বারোটা বাজাবে সেই সিদ্ধান্তও নিয়ে রাখে। সুতরাং সে যদি দেখছে আপনি এখনো বল পয়েন্ট পেনেই বাংলা লিখে চলেছেন তবে ততক্ষণই লিখতে পারবেন যতক্ষণ সে চাইবে---যে দিন চাইবে না   ছোঁ মেরে সেটি কেড়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেবে ই-পেন--- আজ কিম্বা কাল। এদ্দিন যদি তার চলে গেছিল ইংরেজির বাজার দিয়ে সেটি ফুরিয়ে যেতেই অন্যান্য ভারতীয় ভাষাতে হাত দেবেই, কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান কিম্বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ। বাংলার বাজারেও সে ঢোকে বসে আছে, নইলে বাংলাদেশে দুই দশক ধরে এতো ব্লগার এলেন কী করে যারা শাহবাগে "ব্লগার এবং অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম’ গড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ভারতে শুধু সমস্যা ছিল চাহিদার তৈরির। চাহিদাটিও যদি গ্রাহক নিজেই গড়ে তোলেন তবে ভালো, অন্যথা বাজার নিজেই করে। গোগোল এই কাজে বড় সড় পা ফেলেছে । ভারত সরকারের তথ্য এবং সম্প্রচার দফতর তাতে হাত মিলিয়েছে। নভেম্বর, ২০১৪র প্রথম সপ্তাহে গোগোল ভারতে Indian Language Internet Alliance (ILIA) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেছে। এই এলায়েন্স বা জোটে ইতিমধ্যে হাত মিলিয়েছে সরকারি C-DAC, বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম এবিপি নিউজ, এনডি টিভি, নেটওয়ার্ক ১৮-এর মতো বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্স্টটাচ, লিঙ্গুয়ানেক্ট ইত্যাদি। এই জোটের কাজ হবে ২০১৭র মধ্যে মোবাইলে কম্প্যুটারে আন্তর্জাল ব্যবহার করেন এমন আরও তিনকোটি ভারতীয়কে নিয়ে আসা এবং তাদের ব্যবহার এবং বোঝার মতো করে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা বিষয়ে আন্তর্জাল ভরিয়ে তোলা। যারা বই এবং বল পয়েন্ট পেনের মোহ ছাড়তে পারছেন না, তারা গোগোলকে ঠেকাবেন কী করে তারাই জানেন। সে একরকম অসম্ভব কাজ। গোগোলের এই উদ্যোগে বহু বড় বড় সংবাদ মাধ্যম ইতিমধ্যে অস্তিত্বের সংকট আশংকা করছে, ব্যক্তিতো সামান্য মাত্র। ৩ নভেম্বর যে দিনটিতে এই নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছে, সেদিনই ফার্স্টপোষ্টের মতো অত্যন্ত জনপ্রিয় বৈদ্যুতিন কাগজ একটি সংবাদ করেছে, যার শিরোনাম: Google will destroy local newspapers with Indian language Internet Alliance । ফার্স্টপোষ্ট সম্পর্কে এই তথ্য জানানো ভালো আন্তর্জাল দুনিয়াতে এই সংবাদপত্রটি এই মুহূর্তে অত্যন্ত জনপ্রিয় কাগজ এবং আই এল আই এ-র জোট শরিক নেটওয়ার্ক এইটিন-এর শাখা সংবাদপত্র। মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্সের পরিবারের বিশাল শেয়ার রয়েছে এই কাগজে । সুতরাং এটা মনে করা যেতেই পারে তারা চাইছেও ছাপা মাধ্যম ধ্বসে পড়ুক, অথবা পড়বে জেনেই আন্তর্জাল বাণিজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রশ্নে নিজেদের সচেতনতার পরিচয়ও প্রকাশিত লেখালেখিতেই এরা দিচ্ছেন। এতোদিন আন্তর্জাল ইউরোপ আমেরিকাতে বহু পুরনো ছাপা সংবাদপত্রের দফতরের তালা ঝোলালেও এশিয়া, লাতিন আমেরিকার মতো বহু দেশকে ছুঁতে যায় নি, তারা নিরাপদেই নিজেদের বাণিজ্য বাড়িয়ে চলেছিলেন। এবারে ‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’ জমানাতে এ আর হবার নয়। যে দৈনিক কাগজগুলো ‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’ তথা উন্নয়নের বিশ্বায়নের মডেলের প্রশংসাতে পঞ্চমুখ তারা নিজেরাই ডেকে আনছেন তাদের নিজেদের মৃত্যুদূত।
        এই ‘মৃত্যুদূত’ই এবারে আমাদের শেখাবে কী করে ভালোবাসতে শিখতে হয় আন্তর্জালে মাতৃভাষার ব্যবহার। গোগোল কর্তা অমিত সিঙ্ঘলের ভাষাতে, “Google is not a company that caters only to the English speaking crowd. We are truly a global company and feel a sense of responsibility to every Internet user in the world,” তিনি আরও বলেছেন, “Hindi Voice search is just one of the many steps Google is taking to empower the Indian language users and advertisers to take advantage of the Web’s huge economics ad social potential,” হ্যাঁ, যারা স্মার্ট-ফোন মোবাইল ব্যবহার করছেন তারা জানেন যে এখন আর লেখা পড়া জানাও খুব জরুরি বিষয় নয়। মুখে বললেই গোগোল দরকারি বিষয়টি সার্চ ইঞ্জিনে এনে হাজির করে, ইতিমধ্যে সেই কাজটি হিন্দিতেও শুরু হয়েছে। এরই নাম ‘ভয়েস সার্চ’। ধীরে ধীরে বাংলা অসমিয়া ইত্যাদি বাকি ভারতীয় ভাষাতেও শুরু করবেন। পশ্চিমাদেশে টাইমস, ন্যু ইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ানস এর মতো কাগজের বাণিজ্য দ্রুত পড়ছে। গার্ডিয়ান এবছরের জুলাই মাসে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল, যার শিরোনাম , ‘Latest ABCs show newspaper market decline running at 8% a year’ । stateofthemedia.org নামে একটি সাইটে ‘The state of the news media’  নামে মার্কিন সংবাদ-শিল্পের উপরে একটি প্রতিবেদনে পশ্চিমাদেশের ছাপা সংবাদমাধ্যমের পতন এবং ভারতের মতো দেশে উত্থান অব্যাহত থাকবার কারণ নিয়ে বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ভারতের মতো দেশে নব্য শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে সংবাদ পত্র কিনে পড়তে  পারাটা একটা সামাজিক সম্মানের বিষয়, ‘...Once people learn to read, they are proud of their new skill, Kalra said, and “the first thing you want to do is be seen to be reading a newspaper.”’ সেই প্রতিবেদনে বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তাতে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের ছবিটি স্পষ্ট ধরা পড়ে।
 
ছবি -০১
 

এই যে বামে উপরে ওঠানো কালো রেখ-ছবিটা দেখছেন ছবিতে, সেখানেই এখন বাজার দখল করতে চাইছে আন্তর্জাল। পাঠক আন্তর্জালে ঝুঁকছেন, বিজ্ঞাপনও সেদিকে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশে সংবাদপত্রগুলোর পতনের এটাই মূল কারণ। ভারতেও এখন একই ঘটনা ঘটতে চলছে। সেই সম্ভাবনার কথাও সেই প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, “There are still signs in India’s newspapers face problems that afflict other modern societies. The percentage of readers who read the paper everyday is declining; the growth is in casual or occasional readers. Younger people who can read prefer the Internet. Costs are rising dramatically: Newsprint jumped in price by 50% in 2008, softening since then. But rising population, rising literacy rates and rising income levels are enough to mask those problems, or delay their reckoning. “We do see a big potential in emerging markets,John Ridding, chief executive of the London-based Financial Times told The New York Times in 2008। ( বড় লাল অক্ষরগুলো আমাদের।) শীঘ্রই যে চাপ বাড়বে এইসব ছাপা-মাধ্যমগুলোর উপরে তা হলো সরকারি ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়া, সে বিজ্ঞাপন কিম্বা স্বল্পমূল্যে নিউজপ্রিন্ট কাগজের যোগান---যাই হোক। যারা নিজেরা সরকারী বিজ্ঞাপনে ফুলে ফেঁপে অন্য শিল্পে উদারীকরণের পক্ষে ওকালতি করেন, তারা নিজেদের উপরে এই চাপ ঠেকান কী করে দেখবার বিষয় হবে। কিন্তু পাঠকই যদি সরে দাঁড়ায় তারা অস্তিত্ব রাখবেন কী করে! বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতারাতো সরেই যাচ্ছেন। ভারতে ছাপা-মাধ্যমের এখনো এক বিশাল বাজার আছে এটা সত্য, তাতে অনেকে নতুন বিনিয়োগ করতে আসছেন, এও সত্য। ছাপা পত্রিকার সংখ্যা ভারতে এখনো ৭০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু ২০১১এর , ৮ জুলাই তারিখে ফার্স্টপোস্টে অনন্ত রঙ্গস্বামী একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল, ‘The Economist is wrong, print media is declining in India too’ এই প্রতিবেদনের শুরুতেই দিন তিনেক আগে ৫ জুলাই বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হয়ে জী-গ্রুপের কর্ণধার সুভাষ চন্দ্রের নেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিনীতা কোহলির করা মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন। সেখানে বিনীতা বলছেন ৫০২৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে ১৯ বছরের জী-গ্রুপ এখন ভারতের সব চাইতে বড় সংবাদ মাধ্যম , টেক্কা দিচ্ছে ১৭৩ বছরের প্রাচীন টাইমস গোষ্ঠীর সঙ্গে। তাই বলে টিভি মাধ্যমকেও তুষ্ট হবার কোনো কারণ নেই। টিভিতেও আজকাল কেউ সংবাদ দেখেননা বিশেষ। তাই দেখবেন, এরাও ‘রাশিফল’ থেকে শুরু করে ‘সনসনি’ জাতীয় অনুষ্ঠান দিয়ে টি আর পি বাড়াচ্ছে তথা রাজস্ব আদায় করছে। উপায় না থাকলে অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ করে হনুমান যন্ত্র কিম্বা হনুমান চালিশার ঘণ্টা ধরে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে । একটি মার্কিন গবেষণা সংস্থার তথ্য দিয়ে মার্কিন আন্তর্জাল সংবাদ মাধ্যম mashable.comর ৫ জানুয়ারি, ২০১১র প্রতিবেদন শিরোনাম ছিল এরকম, ‘Internet Surpasses Television as Main News Source for Young Adults [STUDY]’ সেখানে একটি ছবি দিয়েছে এমনতর,  ছবি ০২ দেখুন।
 
(ছবি-০২)


         আমরা সংবাদমাধ্যমের সংক্ষিপ্ত ছবিটা দিলাম। কিন্তু গোটা ছাপা-মাধ্যমেরই দশাটা এইরকমই। বই প্রকাশনা শিল্পও এখন আর আগের মতো নেই। http://publishingperspectives.com নামে একটি সাইটের মুখ্য-সম্পাদক এডোয়ার্ড নাওটকা একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন মার্চ, ২০১৩তে। যার শিরোনাম, ‘There’s a General Global Decline in Book Sales, Why?’ সেখানেও তিনি পশ্চিমা দেশে বইবাজার দ্রুত পড়ে গেলেও ভারতীয় বাজারের সম্ভাবনা যে এখনো উজ্জ্বল সেই কথা লিখেছেন। কিন্তু, সেই ভারতেও গতিপ্রকৃতি পাল্টাচ্ছে। যে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট নিয়ে ভারতীয় , বিশেষ করে বাঙালির গৌরবের শেষ নেই---খুব কম বাঙালি জানেন যে ‘নবজাগরণের’ দম্ভভার তাদেরকে আন্তর্জালের প্রতি যে ঔদাসীন্যের যোগান দিয়েছে, সেই সুযোগে ভারতের সবচে’ বড় বই বাজারটিকে আর সে ধরে রাখতে পারে নি। সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে বাঙালুরু। ফ্লিপকার্ট, আমাজন সেই বাজারের সব চাইতে বড় বিক্রেতা। মনে করবার যথেষ্ট সংগত কারণ আছে যে আন্তর্জালে অভ্যস্ত হবার ফলে সেখানকার পাঠক দ্রুত জানতে পান, কোন বই কার থেকে কী মূল্যে কিনতে হবে। তাই আপাতত সেখানে বইবাজার জমে উঠছে বটে, কিন্তু সেই পাঠকেরাও বেশিদিন আর বই কিনবেন না যদি মোবাইল ট্যাবলেট ল্যাপটপে কিম্বা ই-রিডারে বই পড়বার জন্যেই পেয়ে যান। আর ইতিমধ্যে তা পাওয়াও যাচ্ছে, সে হোক মার্ক্সের ক্যাপিটাল, কিম্বা রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী কিম্বা এডওয়ার্ড গেইটসের আসাম ইতিহাস। একটা দেয়াল ভরা বইয়ের তাক তৈরিতে একজন গ্রাহক যে মূল্য চুকোন তার এক দশমাংশের থেকেও কমে এখন বাজারে এসেছে ছোট্ট বইয়ের মতো দেখতে বৈদ্যুতিন রিডার, যেখানে আন্তর্জাল সংযোগ থাকলেই এককালীন গ্রাহক চাঁদা দিয়ে অথবা না দিয়ে তিনি হাজারো বই পড়ে ফেলতে পারেন। হ্যাঁ, আরাম কেদারাতে বসে বসে, অথবা বিছানাতে শুয়ে শুয়ে , পাতা উলটে উল্টেই। শীঘ্রই সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য লিখবার জন্যে বৈদ্যুতিন কলম আসছে কিম্বা এসেই গেছে। কল্পনা করুন খাগের কিম্বা পাখির পালকের কলমের যুগ থেকে এক শতকের মধ্যেই সভ্যতা বৈদ্যুতিন কলমের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। (ছবি ০৩)।
(ছবি-০৩)
 

(ছবি -০৪)
(ছবি-০৫)


 ছবি ০৪এর মতো বৈদ্যুতিন কলমটি আমাজন ভারতীয় বাজারে দিচ্ছে মাত্র  ১০,৯৯৯টাকাতে। ছবি ০৫এর মতো বৈদ্যুতিন বই পাঠক (ই রিডার) দিচ্ছে মাত্র ৫,৯৯৯টাকাতে।



বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান , ক্ষিপ্ত তীর ধনুক :

         মানে দাঁড়ালো এই যে আন্তর্জালে চলে আসার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দৈনিক কাগজের মতো ছবিতে নয়, বাংলাদেশের কাগজগুলোর মতো ইউনিকোডে। এ শুদ্ধমাত্র নীতি কথা নয়। আর এমন কোনো সামাজিক বিপ্লব হতে যাচ্ছে না, যেখানে এই প্রযুক্তিকে রুখে দেয়া হবে। বরং এটা হতে পারে যে এই প্রযুক্তি নিজেই একদিন মানুষের সংঘবদ্ধতা এবং বুদ্ধির মাত্রাকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাবে যে  পুঁজি নিজেই  তার আধিপত্যের অবস্থান থেকে বিদেয় নেবে। ঠিক যেমন ভারতীয় রেল সম্ভব একদিন সম্ভব করেছিল ‘সত্যাগ্রহে’র মতো একটি রাজনৈতিক রণকৌশলের উদ্ভাবন এবং বাস্তবায়ন । এহেন বিপদ আঁচ করে, বিশ্বজুড়েই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো নিজেই তাই আন্তর্জালের এক নৈতিক মানদণ্ড স্থির করতে উঠে পড়ে লেগেছে, এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কথা সব দেশেই কম বেশি উঠে, ভারতও ব্যতিক্রম নয়। তাই বলে সে যে মানুষের বৌদ্ধিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসরের বৃদ্ধিতে অকল্পনীয় মাত্রাতে বিশাল ভূমিকা রাখছে এবং বাংলা কেন, বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষাকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষার কাজটিও করছে এই বাস্তবকে অস্বীকার করাটাকে একুশ শতকীয় কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই বলা যেতে পারে না। পরিণামে এই সব কুসংস্কারাচ্ছন্নদেরকেই হারিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষা এবং বিদ্যাচর্চার সামনে সুদিন আসন্ন এবং অকল্পনীয় ভাবে প্রশস্ত। আর্থার ফেল্ডম্যানের একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প আছে। ‘দ্য মেথেমেটিশিয়ান '। আমার কিশোরী কন্যার পাঠ্যসূচীতে পড়েছিলাম। তাই বলে, আপনাদের পড়াতে কোনো অসুবিধে নেই, আন্তর্জালে পড়তে পাবেন। বাবা ছেলেকে দুহাজার এগারো বছর আগেকার ১৯৮৫ খৃষ্টাব্দে মানুষের সঙ্গে ভিনগ্রহীদের যুদ্ধের গল্প বলছেন। সশস্ত্র-সহিংস যুদ্ধে মেতেছিল মানুষ। ছেলে জিজ্ঞেস করছে, এই সব অস্ত্র গুলো দেখতে কেমন ছিল? বাবা বলছেন, ওহ! সেসব অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। মানুষ এই সব দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করত! ছেলেতো বিস্ময়ে অভিভূত, তাঁর প্রশ্ন , এরা কি বাবা আমাদের মতো ভাবাদর্শ দিয়ে লড়াই করত না!"And not with ideas, like we do now, father?" (http://www.gutenberg.org/files/29140/29140-h/29140-h.htm) একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, আমাদের মনে হয় না এমন একটা জগতের জন্যে আদৌ আমাদের দুই হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে যারা নিত্য আসেন তাদের এই কল্পনাতো করতে পারাই উচিত যে সেরকম এক জগতের জন্যে আমাদের দুই শত বছরের অপেক্ষাও খুব বেশি কল্পনা হয়ে যেতে পারে! ইতিমধ্যে এই স্বরে এবং সুরে ভাবছেনও অনেকে। ৬ মার্চ, ২০০৪এ বিখ্যাত ইংরেজি সাময়িক ‘দ্য উইক’-এ ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন আজিজ Don't worry: World War III will almost certainly never happen এই শিরোনামে এক নিবন্ধ লিখে বড় সড় সশস্ত্র বিশ্বযুদ্ধ সম্ভাবনাকে একেবারে নাকচই করে দিয়েছেন। লেখাটি পত্রিকার আন্তর্জাল সংস্করণেও পড়তে পারেন। অন্য বহুর মধ্যে তিনি একটি কারণ হিসেবে কিন্তু উল্লেখ করেছেন এই আন্তর্জালের । লিখেছেন, “More importantly, violent incidents and deaths can be broadcast to the world much more easily. Public shock and disgust at the brutal reality of war broadcast over YouTube and Facebook makes it much more difficult for governments to carry out large scale military aggressions.” আমাদের সমর্থন করতেই হবে এমন কোনো কারণ নেই। কারণ প্রযুক্তির মূল নিয়ন্ত্রণটা এখনো যুদ্ধবাজদেরই হাতে রয়েছে। কিন্তু ভাবতেতো অসুবিধে নেই! তাঁরই একটি লেখাতে এই রেখচিত্রও দিয়ে রেখেছেন তিনি এরকম , ছবি ০৬ দেখুন।

(ছবি ০৬)

           আন্তর্জালের এই সব ক্ষমতার কথা জেনেছিলেন ২১শে ফেব্রুয়ারির দেশ বাংলাদেশের বন্ধুরা বহু আগেই। সেই সংবাদ খুব একটা রাখিনি। আমরা বিশেষ করে ভারতের বাঙালিরা। ২০১০ অব্দিও আন্তর্জালে ভারতীয় বাঙালির উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। উত্তর পূবের কথাতো বলেই লাভ নেই, এখনো অতি নগণ্য। আমরা সেদেশের সঙ্গে সীমা-বিবাদ কিম্বা ‘মৌলবাদ’ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি বেশি। তাই ‘ব্লগার এন্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদে’র চেহারা চরিত্রও আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে। নজর কিন্তু ছাপাখানার থেকেও আমাদের সরে থেকেছিল বহুদিন , আঠারো কিম্বা উনিশ শতকে। আজ আমরা সেই প্রযুক্তির প্রতি যতই মোহ দেখাই না কেন, আমাদের পূর্বসূরিদের কাহিনি ছিল ঠিক একই রকম রক্ষণশীল । জটিলতা ছাপা প্রযুক্তিরও ছিল। কী করে অ-আ –ক-খ কে প্রকাশ করা হবে ধাতুতে ঢালাই করে সে এতোই বিশাল সমস্যা ছিল যে আঠারো শতকের তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের জনক স্যর উইলিয়াম জোন্স থেকে শুরু করে বিশ শতকের তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের পুরোধা সুনীতি চট্টোপাধ্যায় অব্দি বহু বিদগ্ধ পণ্ডিত কিম্বা রাজনেতা ভারতীয় ভাষাসমূহের জন্যে রোমান লিপি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিলেন। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রপতি আয়ুবখানও সেরকম প্রস্তাব করেছিলেন একবার। আমরাতো অনেকে এও জানি না যে আজ যাকে ‘বাংলা লিপি’ বলে আমাদের বড়াইর কোনো অন্ত নেই তাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল ছাপাখানাই শুধু। বাংলার লেখার জন্যে আর যেসব লিপি এর আগে ব্যবহৃত হতো সেগুলো মুদ্রণ শিল্পে এলো না, বা তার জন্যে দরকারি সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেল না বলে অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে পারল না। শুধু সিলেটি নাগরি কিছুদিন চেষ্টা করেছিল মাত্র। যারা এই বাংলা লিপিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর সহ অজস্র ব্যক্তিত্ব তারা শুধু ‘বর্ণপরিচয়’এর মতো বই লিখে দায় সারেন নি, রীতিমত ছাপাখানার কাজ শিখেছিলেন, বর্ণ এবং বানান সংস্কারের জন্যে সুদীর্ঘ লড়াই লড়েছিলেন । আর সেই লড়াই সেকালেও ছিল না খুব সম্মানজনক কিছু। আমাদের সংস্কারাচ্ছন্ন মন এখন যেমন ছেলেমেয়েকে বারোটা বাজাচ্ছে আন্তর্জাল বলে সতর্কবাণী শুনিয়ে থাকে, সেকালেও দেখাতো ধর্ম যাবার ভয়। সাহেবরা বাদ দিলে ছাপাখানার বিস্তারে নিম্নবর্ণ হিন্দু ছুতোর, কর্মকার আর মুসলমানেরাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। পঞ্চানন কর্মকারের ইতিহাস কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বামুনেরা ‘পুথি সাহিত্যে’র আধিপত্য না ধ্বসে যায় তাই জাত যাবার ভয় দেখাতেন। রাজা রামমোহন রায়, ভবানী চরণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা যখন বই পত্র লিখছেন, কাগজ বের করছেন ভালো নজরে নেয় নি তখনকার নাগরিক বনেদী সমাজ । ১৮৩০শে ‘শ্রীমদভাগবতের’ মতো বই ছাপিয়ে ভবানী চরণকে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে তাঁর এই বইয়ের কম্পোজিটাররা সবাই ব্রাহ্মণ আর ছাপার কালি গঙ্গাজলে শুদ্ধ করে নেয়া হয়েছে। শতকের মাঝামাঝি যখন ঢাকাতে ব্রাহ্মসমাজের জনাকয় অগ্রণী পুরুষ ‘বাংলা যন্ত্র’ নামে প্রথম ছাপাখানা খোলেন তখন ‘ভদ্রঘরের সন্তান হইয়াও ইহারা এমন দুষ্কর্ম করিলেন’ বলে শহরের বহু বামুন-কায়েত রুষ্ট হয়েছিলেন। বহুদিন এরা অনেকে ছাপা-মাধ্যমকে প্রতিহত করে ‘পুঁথিসাহিত্য’কে রক্ষা করবার জন্যে লড়েছিলেন। ‘কলকাতার সমাচার’ প্রবন্ধে বিনয় ঘোষ উল্লেখ করেছিলেন, “ ছাপাখানার প্রথম যুগে আমাদের দেশের বড় বড় জমিদারেরা অনেকে যে তার বিরোধিতা করেছিলেন, তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ সাধারণ লোকের মধ্যে বিদ্যা ও জ্ঞান বিতরণ করতে তাদের আপত্তি ছিল, তাছাড়া গোঁড়ামিও ছিল। ধর্মগ্রন্থ ছাপা হবে , এ তাঁরা ভাবতেও পারতেন না। তাই তাঁরা পাল্লা দিতে আরম্ভ করেছিলেন প্রেসের সঙ্গে। দলবদ্ধ হয়ে তাঁরা পেশাদার অনুলেখকদের দিয়ে ধর্মগ্রন্থ কপি করিয়ে দল করতে শুরু করতে আরম্ভ করলেন। হঠাৎ এই সময় বোস্টম-বোস্টমী কপিস্টদের কিছু রোজগার বাড়ল বটে, কিন্তু পাল্লা দেওয়া সম্ভব হলো না। বটতলার প্রকাশকদের অভিযানের সামনে জমিদারদের পাণ্ডুলিপি ষড়যন্ত্র টিকল না। বটতলার জয় হলো, তথা ছাপাখানার ও লোকসাধারণের।” (আলোর ফাঁদ ও বটতলার সাহিত্য নামে অনুষ্টুপ বটতলা বিশেষ সংখ্যা, ২০১১তে প্রকাশিত শর্বরী নন্দীর লেখাতে উদ্ধৃত, পৃঃ১০৫)
           বাংলাভাষাকে যে জন বীমসের গবেষণা উদ্যোগ নেবার আগে অব্দি এবং বঙ্কিমের ‘বাঙ্গালা ভাষা’ প্রবন্ধের আগে অব্দি সংস্কৃত প্রায় করে তোলা হয়েছিল সেই অনেকটা ঐ রক্ষণশীলদের সঙ্গে আপস করবার জন্যেও। অর্থাৎ ভবানী চরণ কালিকে গঙ্গাজলে শুদ্ধ করুন চাই নাই করুন, পরের কালের লেখক প্রকাশকেরা ভাষাকে অবশ্যই দেবভাষা-প্রায় করে তোলে ‘শুদ্ধ’ করে তুলছিলেন। লড়াইটা শুরু হয় বঙ্কিমের ঐ প্রবন্ধ থেকে । তুঙ্গে উঠে রবীন্দ্রনাথ , রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীদের নেতৃত্বে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠাতে এসে। ভাষাকে এই শুদ্ধিকরণ অভিযান থেকে মুক্ত করবার। কিন্তু ব্যামো আমাদের এখনো যায় নি সবটা। আন্তর্জাল বাংলা ভাষার প্রচলন যদিও বা বাড়ায় তার ‘বিশুদ্ধ’তা কতটা রক্ষা করবে সেই নিয়ে পণ্ডিতদের রাতের ঘুম ছুটে বসে আছে। এবং সেই আশংকা অহেতুকও নয়। স্মরণ করুন পুঁথির যুগে ব্রাত্যজনেরা লিখতে পারতেন না। মুখে মুখে রচনা করতেন। তাদের লিখতে পড়তে দেয়াও হতো না। গুরু শিষ্য পরম্পরাতে এগুলো মুখে মুখেই ছড়াতো। ভাষাশুদ্ধির কোনো বালাই ছিল না। যে যেখানে যেমন খুশি কথা পালটে দিতেন। এখনো সাহিত্যের ইতিহাসের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে এদের পাতে নেয়া হয় না । দীনেশ সেন চেষ্টা করেছিলেন নেবার, প্রতিষ্ঠান তাঁকেই ব্রাত্য করে ফেলে দিয়েছে। ছাপার যুগে সেই ব্রাত্যজনেও যখন সাহস করলেন বই ছাপাতে , তাদের ‘বটতলা’র লেখক বলে ব্রাত্য করে রেখে দেয়া হলো। স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে এসব বই এলো না বিশেষ। ‘ভদ্রজনে’র বইয়ের তাকে এসব শোভা পেল না। কিন্তু আন্তর্জালে এদের আটকে রাখার ‘এন্টিভাইরাস' হবেটা কী? এখানেতো রাষ্ট্রসীমাটা অব্দি অর্থহীন, জাতের সীমা রক্ষা করে কোন ‘ব্রাহ্মণ’! এতো গেল ‘সমস্যা’র একটা দিক। আরেকটা দিক হলো পুথি সাহিত্যের স্থানান্তর কিম্বা কালান্তরে যাত্রার গতি ছিল অতি ধীর। লিখিত কিম্বা অলিখিত যে সাহিত্যই হোক শেষ অব্দি সেগুলো গান করেই, পারলে অভিনয় সহ স্রোতা-দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হতো । অর্থাৎ লেখক-গায়ক এবং স্রোতাকে এক স্থানে কালে বসে সেসব উপভোগ করতে হতো। ছাপা বই কিন্তু স্থান-কাল বদলের গতি বাড়িয়ে দিল। লেখা পড়া জানলে যে কেউ বই ছাপাতে পারেন। এবং অন্য স্থানে কালে যে কেউ সেটি পড়তে পারেন। তিনি হোন ব্রাহ্মণ কিম্বা শূদ্র, ধনী কিম্বা দরিদ্র, হিন্দু কিম্বা মুসলমান। লেখকে পাঠকে ছোঁয়াছুঁয়ির কোনো ভয় নেই। এমন কি, বিশ শতকে এসে এক পশ্চিমা পণ্ডিততো ঘোষণাই দিয়ে দিলেন , ‘লেখকের মৃত্যু হয়ে গেছে।’ কিন্তু সেখানেও সমস্যা আছে। বই যেখানে খুশি ছাপা হলে পাঠকের দিকে যাত্রা করে না। একটি দৃশ্যমান, ক্রম-বিকশিত এবং প্রতিষ্ঠিত স্থির বাজার ব্যবস্থার থেকে তাকে প্রকাশিত হতে হবে। সেই বাজার যেখানে ছাপার জন্যে পুঁজি বিনিয়োজিত হয়। যেখানে কেন্দ্রীভূত হয়। যে বাজারে ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি হয়। বাংলাভাষার জন্যে এই কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল কলকাতাতে প্রথমে। কলেজ স্ট্রিট তথা বটতলা বললেই চেনেন সব বাঙালি। এভাবে কলকাতা নিজেই একটা ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে গেল বাংলা বিদ্যাচর্চার। দ্বিতীয় কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছিল উনিশ শতকেরই মাঝভাগে ঢাকার চকবাজারের ‘কেতাবপট্টি’তে। এখন এই দুই কেন্দ্র দুই দেশের মহানগর। দুই কেন্দ্রর দুই স্বতন্ত্র পরিধিও। পরিধিতে প্রকাশিত বই পত্র কেন্দ্রের বাজারে বিকোয় না বিশেষ, কেন্দ্রের বাজারে প্রকাশিত বই পরিধিরও স্বাতন্ত্র্য ঢেকে ফেলে। ছাপা বইয়ের স্থানান্তর কিম্বা কালান্তর ঘটতে পারে, কিন্তু ছাপানোর স্থান তথা কেন্দ্রটি নড়াচড়া করবে না কিছুতেই। ফলে লেখক লেখিকারও কেন্দ্রীভবন ঘটে সেখানে। জন্মভূমি ছেড়ে কর্মভূমিতে বাসা বাঁধা তাদের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায় ঠিক সেরকম যেরকম স্বপ্ন হতো রাজসভাতে গিয়ে ঠাই নেবার প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজে। অর্থাৎ পুথি জমানার মতো ছাপার যুগে লেখককে ব্রাহ্মণ বা বনেদী হতেই হবে এমন কথা বিশেষ নেই বটে, কিন্তু তাঁকে কেন্দ্রের মানুষ হতেই হবে। না, যদি হন সেখানে পাড়ি দেবার আর্থিক এবং বৌদ্ধিক ক্ষমতা থাকতে হবে । অন্যথা তিনি লিখতে পারেন, বই/পত্রিকা ছাপতেও পারেন। কিন্তু সেই ছাপা বই যে গতিতে কেন্দ্রাভিমুখী যাত্রাটি করবে, কেন্দ্র থেকে ছাপা যে কোনো বই বা পত্রিকা পরিধি মুখে যাত্রা করে তার থেকে সহস্রগুণ বেশি দ্রুতিতে। তাই আমাদের আমজনতার এখনো এই সংস্কার ঘুচে যায় নি যে বিশ্বের সেরা গ্রন্থগুলো লেখা হয় মূলত পশ্চিমা কিছু মহানগরেই, আর বাংলাতে যা কিছু হয় সবই কলকাতায় । কলকাতার কোনো কাগজে লেখা বেরুলে আমাদের অসমেরও বহু লেখকের এখনো উল্লাসের কোনো সীমা থাকে না। তাতে করেই তৈরি হয় রণজিৎ দাস এবং শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর পাঠকপরিচিতি ভেদ। এই উল্লাস শুধু প্রকট করে ‘ছাপা বই যুগে’র বৌদ্ধিক সীমারেখাকে। আন্তর্জাল সেই সীমারেখাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। কোনো রেখাই রাখে নি দাবি করা যাবে না বটে, অধিকাংশ মানুষের হাতে এখনো কম্প্যুটার কিম্বা মোবাইল পৌঁছায় নি। পৌঁছালেও ভাষাজ্ঞান পৌঁছায় নি। কিন্তু যে দ্রুতিতে পৌঁছোনো শুরু করেছে সে দুই শতকের ছাপা বইয়ের দ্রুতি থেকে অকল্পনীয় ভাবে বেশি। বইয়ের দুই শতকের দৌড় কম্পিউটার দুই দশকে পার করেছে বললে কিছুই অত্যুক্তি করা হয় না। আপাতত বইয়ের বাজার হিসেবে বেঙালুরু হয়তো কলকাতাকে পেছনে ঠেলেও দিয়েছে, কিন্তু সে স্থায়ী হবার নয়, আর লেখককেও বেঙালুরু দৌড়োবার কোনো কারণ নেই। একটা নজিরতো দিতেই পারি। রোহণ কুদ্দুস বাংলা ভাষার সুপরিচিত কবি। থাকেন বাঙালুরু। সেখান থেকে ‘সৃষ্টি’ বলে একটি বৈদ্যুতিন সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন বহুদিন ধরে। সম্প্রতি তিনি বই ব্যবসাতে নেমেছেন। ‘সৃষ্টিসুখ’ তাঁর প্রকাশনার নাম। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই থাকুন লেখক রোহণকে টাইপ করে পাঠিয়ে দিলে তিনি সেটি ছেপে আন্তর্জালেই বিক্রির ব্যবস্থাটিও করে দিয়ে থাকেন। অতিসম্প্রতি শুধু তিনি কোলকাতাতেও একটি বিক্রয় কেন্দ্র খুলেছেন। বুঝিবা আছেই যখন কলেজ স্ট্রিট, তার সুবিধেটি নিচ্ছেন আর কি। না থাকলেও তাঁর অসুবিধে কিছু হতো বলে মনে হয় না।

আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর- মানুষের কাছে আসি :

          কিন্তু আমরা বই লেখা, বই ছাপা, বই বিপণনের কথা লিখছি কেন? আন্তর্জালের অধিকাংশ বিষয়ই তো প্রায় বিনামূল্যে। আপনার যদি একটি মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিম্বা কম্পিউটার আছে আর কোনো এক সেবাদায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক সেবামূল্য দিয়ে আন্তর্জাল সংযোগ দিয়ে রেখেছেন, তবে আপনাকে আর একটিও পয়সা খরচ না করে লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক এবং পাঠক হতে বাধা দিচ্ছে কে? এখনতো আপনিই কেন্দ্র---কলকাতা নয়। বাকি দুনিয়া আপনার পরিধি । ঘটনা এরকমই অনেকটা। যে মঞ্চগুলো আপনি ব্যবহার করবেন যেমন গোগোল প্লাস, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি বহু সামাজিক মাধ্যম ---সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ হয়তো হয়ে থাকে পশ্চিমা বা পূব এশিয়ার কোনো দেশ কিম্বা শহর থেকে-----কিন্তু তারাতো আপনার থেকে পয়সা নিচ্ছে না। ফেসবুকের মতো নিম্নতর মানের কিন্তু জনপ্রিয়তম সাইটের যেকোনো ব্যবহারকারী সেটি জানেন। এ অনেকটা টিভি দেখার মতো ব্যাপার। দেখার জন্যে যে সেবামূল্য আপনার থেকে মাসে মাসে দাবি করা হয়, সেটি স্থির । আপনি দেখেন বলে চ্যানেলগুলো তার ব্যয় তোলে নেয় বিজ্ঞাপন দাতাদের থেকে। এই সব আন্তর্জালিক মঞ্চগুলোও তাই করে থাকে। কিন্তু বিনিময়ে আপনাকে স্বাধীনতা দেয় টিভির থেকেও বহু বেশি। সেখানে আপনি শুধু রিমোটের সুইচ বদল করছেন না, রীতিমত অংশভাগী হয়ে উঠছেন। এমন কি চাই যদি আপনি সেই মঞ্চকে নিজের মতো করে সাজিয়ে উন্নত করে ফেলতে চান সেই আমন্ত্রণও খোলাখুলি আপনাকে দেয়াই থাকে। ইচ্ছে করলেই মার্ক জুকারবার্গ আপনিও হয়ে উঠতে পারেন। তার জন্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি জুবেরকারেরও দরকার পড়ে নি, আপনারও পড়বে না। ডিগ্রি কিম্বা লেখা পড়া নিয়ে যে মধ্যবিত্ত অহমিকা---এসবই আসলে ছাপাবই যুগের দান। স্মরণ করুন, প্রাক-পুঁজিবাদী যুগে ‘জ্ঞানী’ শুধু তাঁকেই বলা হতো যিনি ঈশ্বরকে জানেন। এবারে শুরু হলো জ্ঞানী তাঁকেই বলা---যিনি লিখতে পড়তে পারেন । কিন্তু জ্ঞান কি শুধু অক্ষরজ্ঞানেই বাড়ে? তবে কি প্রাক-ছাপা যুগের গেয় সাহিত্যের স্রোতারা সবাই অজ্ঞানীই ছিলেন? কিম্বা একালের চলচ্চিত্র কি দর্শকদের বোধ বুদ্ধি সত্যি ভোতা করে দেয়? রামায়ণ –মহাভারত কিম্বা মনসা মঙ্গলের কাহিনি একাল অব্দি পৌঁছুলো কী করে! সে কি শুধুই গুরুশিষ্য পরম্পরা ধরে? নির্বাক কিম্বা সবাক, লিপি কিম্বা চিত্র, নৃত্য কিম্বা অভিনয়, গান কিম্বা আবৃত্তি----মানবী বিদ্যার যত মাধ্যমকে মানুষ তার পুরো ইতিহাস জুড়ে আয়ত্ত করেছে, অর্জন করেছে কম্পিউটার তথা আন্তর্জাল এর সবগুলোকে আবার একত্রে এনে এক মঞ্চে জড়ো করেছে । আমরা আগেই লিখেছি, আমাদের বই পড়বার অভ্যাস কিম্বা হাতে কলমে লিখবার অভ্যেসের সঙ্গেও সে বৈরিতা রাখেনি কোনো, সবার থেকে শিখেছে, সবার থেকে নিয়েছে। এবং সবার থেকে উন্নত এক প্রযুক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করেছে। তার থেকে দূরে সরে থাকবার বুদ্ধি যে ব্যক্তি কিম্বা সমাজের হবে বুঝতে হবে জরা এবং জড়তা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। তার যাবার জায়গা নেই কোনো। গন্তব্য বলে কিছু নেই। অসম তথা পূর্বোত্তরে বাঙালি সমাজ অনেকটা সেরকম অবস্থান নিয়েই বসে আছে। সম্ভবত তার উপরে এখনো কাজ করে ‘কলেজ স্ট্রিটে’র চাপ।
          বাংলাদেশের মানুষের উপরেও ছিল। কলেজ স্ট্রিটের চাপ ছিল। দেশভাগের আগেও ছিল, পরেও এখনো আছে। এখনো সে দেশে ক্ষোভ আছে কলকাতার প্রকাশিত বই পত্রিকা ছায়াছবি তাদের বাজারে যতটা বিকোয়, উল্টোটা হয় খুবই কম। মাঝে মধ্যে তাই সে দেশের বইমেলাতে কলকাতার বই নিষিদ্ধ করবারও দাবি উঠে। তাদের উর্দুভাষারও চাপ ছিল। আশরাফেরা কিছুতেই স্বীকার করবেন না উর্দু তাদের মাতৃভাষা নয়। আর উর্দু একটি সুমিষ্ট উন্নত ভারতীয় ভাষাও বটে। তো নিজেদের ভাষা সাহিত্যকে দাঁড় করাতে হলে, জ্ঞানে বুদ্ধিতে স্বমর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু একটা বাহান্নর ভাষা আন্দোলন কিম্বা মুক্তি যুদ্ধই তাদের কাছে যথেষ্ট ছিল না। আরও বহু কিছু তাদের করবার ছিল, তারা করছেনও । তারমধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জালে বাংলার ব্যবহারে ঠিক সেরকম অগ্রণী ভূমিকাতে লেগে পড়া যেমন মুদ্রণ প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল পশ্চিম বাংলা , তথা কলকাতা ।
          আন্তর্জালে বাংলা ব্যবহারের হেলহ্যাড-পঞ্চানন কর্মকার যাই বলুন তিনি ভাষাবিজ্ঞানী শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনির চৌধুরী। ১৯৬৮তে আইয়ুব খান সরকার পাকিস্তানের সব ভাষাকে রোমান হরফে লিখবার ফরমান জারি করবার ইতিহাস অনেকেই এখন ভুলে বসে আছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আলোচনাতে সেই প্রসঙ্গ প্রায় আসেই না। রোমানের পেছনে যুক্তি ছিল হরফটি প্রযুক্তি তথা ব্যয়-বান্ধব। যারা বিরোধিতা করেছিলেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। তিনি তার আগেই ১৯৬৫তে ‘মুনির অপটিমা’ নামে টাইপরাইটারের জন্যে একটি কি- বোর্ড তৈরি করেন। ছাপাখানার বাইরে বাংলা ভাষা প্রযুক্তির ছোঁয়া পেল এই প্রথম । ১৯৭১এর মুক্তি যুদ্ধে পাকসেনা তাঁকে হত্যা করে।
          মুনির চৌধুরীর পরে বাংলাদেশে ভাষার প্রায়োগিক বিকাশ রুদ্ধ হয়ে থাকে নি। বৈদ্যুতিন কম্প্যুটার এলে সেখানেও এই বাংলা কি-বোর্ড যুক্ত হয়। পরে কম্প্যুটারে যিনি এর বিকাশ ঘটান তিনিও আরেক মুক্তিযোদ্ধা মুস্তফা জব্বার। তাঁকে অনেকটা বাংলা মুদ্রণ জমানার উইলিয়াম কেরি, মার্সম্যানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সাংবাদিকতা দিয়ে জীবনের দেড় দশক পার করে ১৯৮৭ সাল থেকে কম্প্যুটার ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন । সেই বছরের ১৬ মে তিনি কম্প্যুটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। কম্প্যুটারে প্রকাশিত আদি বাংলা পত্রিকাগুলোর সম্ভবত এটিই প্রথম। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে, তিনি প্রকাশ করেন ‘বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার’। প্রথমে এটি মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য তৈরি হয়েছিল। পরে ১৯৯৩ সালে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও উপযোগী সংস্করণ তৈরি করেন। সেই থেকে বাংলাদেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশে তিনি নিবেদিত প্রাণ। একাধিকবার বাংলাদেশের বাংলাদেশ কম্প্যুটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এখনো এই পদে আছেন। বাংলাদেশ সরকার মূলত তাঁকে সঙ্গে নিয়েই ২০২১এর মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়বার পরিকল্পনা করেছে। এই নামে বহু বিক্রিত একটি বইও আছে তাঁর। এছাড়াও কম্প্যুটার প্রযুক্তি নিয়ে আরো বহু বইয়ের এই লেখক, প্রযুক্তিবিদ এবং তাঁর সহযোগীদের কাজকর্ম দেখতে হলে যে কেউ এই সাইটটি ঘুরে আসতেই পারেন: www.bijoyekushe.net
          তবে বিজয়ের একটি সমস্যা হলো, এই সেদিনও তাদের কোনো ইউনিকোড ভিত্তিক ছিল না। এবং ব্যবহার করতে হলে মূল্য চুকোতে হতো। ফলে আন্তর্জালের প্রচারে প্রসারে এরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছিলেন না বলেই মনে হয়। এর পরে আরও অনেকে ময়দানে নামেন। আন্তর্জালে ঘাঁটলে উকিপেডিয়াতে বাংলার বেশ কিছু ইনপুট পদ্ধতি পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো কার পরে কোনটি, কে কোথায় নির্মাণ করেছেন স্পষ্ট বোঝাটা কঠিন। উপায় নেই। তবু তথ্য গুলো আমরা তুলে দিচ্ছি। ১) জাতীয় কি-বোর্ড লেআউট। এটি তৈরি করেছেন সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সেদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় একটি লেআউট এবং এটিকে প্রমিত লেআউট হিসেবে ধরা হয়। ২) বাংলা ইনস্ক্রিপ্ট । এটি ভারতে তৈরি লে আউট। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘ভারতীয় ভাষার জন্যে প্রায়োগিক বিকাশ’ । গেল শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই ভারতে কম্প্যুটারকে জনপ্রিয় করবার কথা মাথাতে রেখে প্রধান সব ভারতীয় ভাষাতে কি- বোর্ড তৈরির পরিকল্পনা করে। তার মধ্যে বাংলাও আছে। ক্রমে এটি ইউনিকোডে উন্নীত করা হয় এবং মাইক্রোসফট কর্পোরেশন একে গ্রহণ করে তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ডিফল্ট রূপে দিয়ে রেখেছে । আপনার কম্প্যুটারে পৃথিবীর বহু ভাষার সঙ্গে বাংলার সমর্থনও আছে। এবং আপনি অন্য কোনো কি- বোর্ড বা সফটওয়ার না নামিয়েই দিব্বি বাংলা লিখতে পারেন। শুধু ব্যবহারটা শিখতে হবে, শিখবার আগ্রহ থাকতে হবে। ৩) প্রভাত। বাংলাদেশে তৈরি অত্যন্ত জনপ্রিয় লেআউটগুলোর একটি।বিশেষ করে লিনাক্সে বহুল ব্যবহৃত ইউনিকোড ভিত্তিক লেআউট। এটি ফোনেটিকের কাছাকাছি, কিন্তু পুরোপুরি নয়। ফোনেটিক মানে হচ্ছে উচ্চারণ ভিত্তিক লেআউট। আমরা যেহেতু এখনো ‘কি-বোর্ড’ বলে যে কম্প্যুটার হার্ডওয়ারকে বুঝি , সেটি ভারতীয় উপমহাদেশে রোমানেই আসে, তাই রোমান L টিপলে ল এলেই আমাদের সুবিধে । বাংলা ইনস্ক্রিপ্টের মতো ত বা থ নয়। এই কথাটি ভেবেছেন বাংলাদেশেরই প্রয়োগবিদেরা। ৪) তেমনি একটি লেআউটের নাম ‘অক্ষর বাংলা’ । উইকিপিডিয়াতে আছে। এর বেশি এই সম্পর্কে আর কোথাও কিছু পাই নি। বাংলা লেআউটকে একাধারে ইউনিকোড, ফোনেটিক এবং মূল্যবিহীন মুক্ত করে দিয়ে যিনি আন্তর্জালে বাংলা ভাষার বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন তাঁর নাম অনেকে জানেন না । কিন্তু তার নির্মিত কি- বোর্ডটিকে সবাই চেনেন। ৫) সেটি অভ্র। এর উদ্ভাবক মেহেদী হাসান খান মোটেও পেশায় প্রযুক্তিবিদ নন। তরুণ বয়সে যখন এটি তৈরি করেন তখন তিনি ময়মন সিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এই মুহূর্তে এর মতো ব্যবহার বান্ধব এবং জনপ্রিয় বাংলা কি- বোর্ড আর দ্বিতীয়টি নেই বললেই চলে। মেহেদী হাসান খানকে তাই আন্তর্জালে বাংলা ভাষার ব্যবহারে ছাপা-প্রযুক্তির যুগের বিদ্যাসাগরই বলা যেতে পারে। বাংলা মুদ্রণ শিল্পে বিদ্যাসাগরের অবদান অনেকে জানেন না। বস্তুত লেটার প্রেস যদ্দিন ছিল সে বিন্যাসে বাংলা অক্ষরগুলো ছাপাখানাতে সাজানো থাকত সেটিও বিদ্যাসাগরই প্রবর্তন করেন । মেহেদি হাসান ছাড়াও “রিফাতুন্নবি, তানভিন ইসলাম সিয়াম, রাইয়ান কামাল, শাবাব মুস্তফা, নিপুণ হক– এই কয়েকজন বন্ধু গত ছয় বছর ধরে অভ্র নিয়ে কাজ করছেন। ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’ এই শ্লোগান নিয়ে ‘অভ্র’র এগিয়ে চলা। এর সমস্ত সংস্করণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারকারীর ইউনিজয়, প্রভাত ও ফোনেটিক কি-বোর্ড বাছাই করারও সুযোগ রয়েছে। এমন কি যিনি কম্প্যুটারে বাংলা লিখতে অভ্যস্ত নন, তিনি যেন অন্তত কিছু বাক্য বাংলায় লিখতে পারেন, সে জন্য মাউস চেপে (ভার্চুয়াল কিবোর্ড) বাংলায় লেখার অপশনও তৈরি করেছেন অভ্রর কোডাররা। বাংলা উইকিপিডিয়া, সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিনে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে অভ্র-ফোনেটিক অপশন। মেহেদী হাসানের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পাই, অভ্রর কোডাররা এখন কাজ করছেন, কি-ভাবে অফলাইনে ফোনেটিক অপশন ব্যবহার করা যায়, সে সুবিধা তৈরি করতে। এই গুরুতর বিষয়টি সম্ভব করে তোলা গেলে বাংলা টাইপিং একেবারে ছেলেখেলা হয়ে দাঁড়াবে বৈকি।” লিখেছেন বাংলাদেশের লেখক সাংবাদিক সমাজকর্মী এবং ব্লগার বিপ্লব রহমান। (তথ্য-প্রযুক্তিতে কতদূর এগোল বাংলা?; https://www.amarblog.com/index.php?q=Biplob-Rahman/posts/139774) অভ্রের সব চাইতে বড় সুবিধে হলো, আপনি যদি সামান্য শ্রম করতে রাজি থাকেন তবে এর আগে যে লেআউটে অভ্যস্ত, সে যদি ডিটিপি লে আউটও হয়, যেমন শ্রীলিপি বা রামধেনু ---আপনাকে সেই লে আউট পাল্টাবার দরকার নেই । আপনি নিজের মতো করে অভ্রের জন্যে সেরকম একটি লেআউট বানিয়ে নিতে থাকেন। উপায়টিও পেয়ে যাবেন উপরে ভাসতে থাকে যে অভ্র বার তার ‘হেল্প’ মেনুতে।

আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায় :

         আরও কিছু লে আউটের ইতিবৃত্ত আমাদের বলতে হবে। তার আগে এই যে ‘ইউনিকোড’ কথাটা লিখছি এর মানে ব্যাখ্যা করা দরকার। অভ্র চেনেন এমন অনেকেও ‘ইউনিকোড’ বোঝেন না। ফন্ট সবাই চেনেন , ডিটিপির সৌজন্যে। কিন্তু সেই ফন্টের সঙ্গে কী-বোর্ড, লে আউট, ইউনিকোডকে গুলিয়েও ফেলেন। আপাতত আমরা ইউনিকোড নিয়ে কথা বলব। কেননা, অভ্র-বিপ্লবের মূলে আছে এই ইউনিকোড। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আমরা সব কথা বুঝিয়ে বলতে পারব না। একেতো প্রতিটি পরিভাষাই তবে , ব্যাখ্যা দাবি করবে। দ্বিতীয়ত বিজ্ঞানের অন্য যেকোনো শাখার মতো, অনুশীলন ছাড়া শুধু পড়ে এগুলো বোঝা দুষ্কর। সেই চেষ্টাও হবে ভীষণই নিরস । ছাপাখানার বাইরে, লেখক –প্রকাশকদের বাইরেও যে কাউকে কম্প্যুটারে বাংলা লেখা সম্ভব করিয়েছে এই ‘ইউনিকোড’ । বাংলাতে একে নাম দিতে পারি ‘অনন্য সংকেত’। কম্পিউটার কিন্তু কোনো ভাষাই বোঝে না, তাকে না বোঝালে। ইংরেজিও নয়। সে বুঝে ডট আর ড্যাশের ভাষা। যেমন টেলিগ্রাফ বুঝত। ডট আর ড্যাশের ভাষাতে টেলিগ্রাফের বার্তা পাঠানো আমরা অনেকেই দেখেছি। কিন্তু সেই বার্তাকেতো পড়তে হবে। টেলিগ্রাফ যেহেতু সাধারণ মানুষের দখলে ছিল না, তাই তার ভাষা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় নি। মার্কিন চিত্রশিল্পী স্যামুয়েল মোর্স এবং তাঁর সঙ্গীরা টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেন। এবং সেটির ড্যাশ-ডটের ভাষা পড়বার জন্যে নিজের মাতৃভাষাতেই একটি সংকেত মানচিত্র তৈরি করেন। যেমন • - মানে রোমান A, - • • • মানে রোমান B ---এই রকম। এটি পরে আন্তর্জাতিক ভাবেই পরিচিত হয় মোর্স কোড বা সংকেত নামে। প্রায় এক শতকের পরে ১৯৬০এ আবার সেই মার্কিন দেশেই মোর্স কোড থেকে তৈরি হয় American Standard Code for Information Interchange কম্প্যুটারের জন্যে। সংক্ষেপে বলে ASCII , বাংলাতে ‘আসকি’ও বলেন অনেকে । এবারে ডট-ড্যাশের জায়গা নিলো শূন্য আর দাড়ি বা ইংরেজিতে ziro-one. 0 আর 1 . এবারেও এই সংকেতকে অনুবাদের কাজ চলল মূলত ইংরেজিতে। চিনা জাপানি কোরিয় ইত্যাদি কিছু ভাষাতে মোর্স সংকেতের বিস্তারও হয়েছিল। আসকিরও হলো। কিন্তু সেই সব সংকেত স্থান ব্যবহার করে যেগুলো ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে। ফলে অন্য ভাষাতেও ডিটিপি ব্যবহার সম্ভব হলো। বাংলা সহ দুনিয়ার সব কম্পিউটারেই লেখা পড়া এবং ছাপা কাজ সম্ভব হলো। প্রায় সব দেশ নিজের মতো করে আসকির দেশীয় সংস্করণও বের করল। যেমন ভারতীয় সংকেত মানচিত্রের গাল ভরা নাম হলো Indian Script Code for Information Interchange(ISCII) , বাংলাতে বললে ‘ইস্কি’। কিন্তু একের কম্প্যুটার অন্যের ভাষা পড়তে পারছিল না। সবাই ইস্কি , পাসকি (আরবি এবং সম্পর্কিত ভাষার জন্যে) ব্যবহার করছিলেন তাও নয়। যে যার মতো সংকেত-মানচিত্র তৈরি করে বাজারে ছড়ালো। শ্রীলিপি, রামধেনু ইত্যাদি হাজারো ‘কি-বোর্ড’ নিজস্ব লে আউট এবং ফন্ট নিয়ে এভাবেই বাজারে এলো, বাণিজ্যও হলো। কিন্তু ব্যবহার যতই বাড়ল আরেকটা সমস্যা হলো যে আপনার কম্প্যুটার আমার লেখা পড়তে পারছে না। আপনি প্রেসে একটা লেখা ছাপতে দিয়েছেন, নিজের কম্প্যুটারে সেটিকে এনে আর পড়তে বা সংশোধন করতে পারছেন না। দূর দেশের বন্ধুকে মেইল করে পড়ানোতো দূরই। তাঁকেও বাজার থেকে সেই ‘কি-বোর্ড’ কিনে এনে ইন্সটল করতে হবে। বাজারে মিলতে হবে। তারপরেও সমস্যা হবে লে আউট নিয়ে। অর্থাৎ আপনিতো আর ওই শূন্য-দাড়ির কম্প্যুটারীয় ভাষা বোঝেন না। আপনি তাকে রোমান হরফ দেগে দেয়া ফাইবারে তৈরি ‘কি-বোর্ড’-এর ‘কী’টিপেই নির্দেশ দেন। এই কি- বোর্ডের বাংলা-হিন্দি রূপান্তর এখনো বেরোয় নি বিশেষ। এটা কম্প্যুটারের ডিফল্ট কি- বোর্ড। এর সঙ্গে দেখবেন পুরোনো টাইপরাইটারের সম্পর্ক আছে। টাইপরাইটারে অভ্যস্ত হলে কম্প্যুটারের চাবি টিপতে আপনার কোনো অসুবিধে হবে না। ফ্যাক্টরিতেই এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যে কম্পিউটার ইংরেজিতে এর নির্দেশ বোঝে। এবারে আপনি যে ইস্কি, বা শ্রীলিপি বা রামধেনু ইত্যাদি ব্যবহার করবেন সে কোন চাবির কোন অর্থ করবে। তার এক এক নির্মাতার এক এক ব্যবস্থা। কেউ ব্যবস্থা করে রেখেছে A টিপলে এ দেখাবে, কেউবা ল। আলাদা আলাদা বাংলা ‘কি- বোর্ড’ কিনে ব্যবহার করাটাও এক মহাঝক্কি। ফলে ভাবনা চলল এমন এক সংকেত ব্যবস্থা উদ্ভাবনার যেখানে কম্প্যুটার দুনিয়ার সব ভাষা বুঝতে পারবে, এবং দুনিয়ার সব ভাষাতে যত হরফ আছে তার জন্যে একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট সংকেত ব্যবহার করবে। ঘটে গেল আরেক বিশাল বিপ্লব। মোর্স কোড থেকে ইউনিকোডে যাত্রা সম্পূর্ণ হলো। মোর্স কোড যাত্রা শুরু করেছিল ২৬টি ইংরেজি হরফ আর দশটি সংখ্যা দিয়ে। আসকিতে ছিল মাত্র ২৫৬টি সংকেত। আর ইউনিকোডে ? ভাষাবিদদেরও হৃদকম্পন বাড়াবার পক্ষে অকল্পনীয় ভাবে যথেষ্ট। সংখ্যাটি ১ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি। এবং বেড়েই চলেছে। এখন এত্তোসব সংকেত তৈরি এবং ব্যবস্থাপনাতো আর কোনো একক ব্যক্তি বা বন্ধুগোষ্ঠীর দ্বারা করা সম্ভব নয়। তাই গড়ে উঠল অবাণিজ্যিক সেচ্ছাসেবী সঙ্ঘ। তারই নাম ইউনিকোড কনসর্টিয়াম। এদের সাইট দেখুন এখানে: http://unicode.org/ । বহু কম্প্যুটার হার্ডওয়ার –সফটওয়ার তৈরির প্রতিষ্ঠান সহ কিছু সরকারও হয়েছে এর স্থায়ী সদস্য । যেমন: এডোব, অ্যাপেল, গোগোল, আই বি এম, মাইক্রোসফট, ওরাকল কর্পোরেশন, ইয়াহু, ওমান সুলতানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইত্যাদি। ১৯৮৭ সালে ইউনিকোডের কাজ শুরু করেছিলেন জেরক্স-এর জো বেকার এবং অ্যাপল এর লি কলিন্স ও মার্ক ডেভিস । ১৯৮৯ সালে মেটাফোর -এর কেন হুইস্লার এবং মাইক কার্নাগান, আর.এল.জি -র ক্যারেন স্মিথ-ইয়োশিমুরা ও জোয়ান আলিপ্র্যান্ড এবং সান মাইক্রোসিস্টেমস্ -এর গ্লেন্ রাইট ইউনিকোডের গ্রুপে যোগদান করেন। এমনি করে দল ভারি হতে থাকে। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে ইউনিকোডের খসড়া প্রস্তাবনা সম্পন্ন হয়। ১৯৯১ এর অক্টোবরে ইউনিকোডের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালের জুনে ইউনিকোডের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এর পরে এর বিশ্ববিজয় অব্যাহত থাকে। ইতিমধ্যে ইউনিকোড UCS-2, UTF-8 ধাপগুলো পেরিয়ে UTF-16 অব্দি পৌঁছেছে। UTF কথার পুরোটা হচ্ছে Unicode Transformation Format । এর বেশি আপাতত বলবার সুযোগ নেই। ইউনিকোড কনসর্টিয়ামে এই যে বিশাল স্বেচ্ছাবাহিনী নিত্য যোগ দিচ্ছেন, তাতে আরেকটা ধারণা বিকশিত হতে সুবিধে হলো---তার নাম ‘মুক্ত উৎস’ বা open source । ১৯৯৮তে মুক্ত উৎস প্রচেষ্টা বা Open Source Initiative নামের সংগঠনটি অস্তিত্বে এসে যায়। এটি রীতিমত এক আন্দোলনের নাম নিয়েছে। এদের সাইট দেখুন এখানেঃ www.opensource.org। কল্পনা করুন এক দশক আগেও আপনি ফোনে কথা বলতে গেলে মিনিট সেকেন্ড হিসেব করতেন। ইন্টারনেট কাফেতে গেলেও দরকষাকষি করতে ভুলতেন না। এখন আপনি ফেসবুক, হোয়াটস আপ, গোগোল প্লাসের হ্যাঙ্গ আউট ইত্যাদি ব্যবহার করে রীতিমত বিনামূল্যে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা ভিডিও চ্যাট করতে পারেন। এই যে বিনামূল্যে সেবাগুলো পাচ্ছেন এই সংস্কৃতি ‘মুক্ত-উৎস আন্দোলনে’র দান। বিনে পয়সাতে আপনি লিনাক্সের যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম কম্প্যুটরে নামিয়ে দিয়ে কাজ করতে পারেন। বেকার পড়ে থাকবে আপনার প্রিন্টার-স্ক্যানার সিডি। এসব ছাড়াই যন্ত্রগুলো কাজ করবে লিনাক্সে। ভাইরাস ভীতি বলেও আপনার অবশিষ্ট কিছু রাখবে না। যেকোনো অসুবিধেতে কম্প্যুটার মেরামত করবার কারিগর ডেকে গাঁটের কড়ি ঢালতে হবে না। আন্তর্জালেই সাহায্য করবার জন্যে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা বন্ধু পাবেন। হ্যাঁ, বিনিময়ে আপনার শুধু নিজেও কিছু প্রযুক্তিবিদ হয়ে উঠার আগ্রহ আর ধৈর্যটা থাকতে হবে। এই ভাবে আপনি নিজেও হয়ে উঠবেন ‘মুক্ত উৎস আন্দোলনে’র এক কর্মী। এরা দাবি করেন তাদের যাবতীয় প্রয়াস অলাভজনক। অন্তত আপনিও কোনো পারিশ্রমিক পাবেন না। আপনি কাউকে দেবেনও না। কিন্তু পুরো মুনাফা বিহীন জগত এখনো বহুদূর। এরা বাণিজ্য করেন অন্য বহু জটিল উপায়ে, সেখানে আপনি অজান্তেই একজন শ্রমদাতা এবং উৎপাদন উপকরণও। সামান্য নজির বিলেতের টেলিগ্রাফ কাগজে ‘উইপেডিয়া’র স্রষ্টা জিমি ওয়েলসের সাক্ষাৎকার ভিত্তিতে লেখা একটি নিবন্ধে দিয়েছেন কেট ডে ২০১১র নভেম্বরে! ২০০১এ জন্ম নেয়া এই উকিপেডিয়া হচ্ছে ‘মুক্ত উৎস’ সংস্কৃতির এক বিস্ময়কর সংযোজন। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকার থেকেও বিশাল তথ্যকোষ কিনা ক্রমেই আয়তনে বাড়ছে দৃশ্যতঃ কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই! কেট লিখছেন, “But free-flowing information still needs someone to pay for it. Wikipedia, which Wales started after a successful career as a financial trader, is funded by donations. Earlier this year, a fund-raising campaign carrying a message from Wales and his photo raised more than £9 million from 500,000 donations. Wales also runs Wikia, a separate, for-profit company that brings together enthusiasts with shared passions, such as television shows, food or events, and is funded by advertising.” এই তহবিল কিছুতেই আসত না, যদি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সামনে হুমকী হতো উইকিপেডিয়া। যদিও দাবি করতে পারেন, "Wikipedia can topple tyrants'। এটা নিরাপদ দাবি। হ্যাঁ, নিবন্ধের শিরোনামও এটাই। বিপরীত চাল দিলে দুনিয়ার সবচাইতে প্রাচীন গণতন্ত্রও কেমন ব্যবহার করে রীতিমতো অর্থকষ্টে ফেলে দেয় তা আমরা দেখেছি আরো একটি মুক্ত সংস্কৃতির সাইট উকিলিক্সের বেলা। তবে, একটি লক্ষ্য করবার মতো পুঁজিবাদী পরিঘটনা হচ্ছে এখানে জলে বায়ুতে বিনিময় মূল্য যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু প্রযুক্তির থেকে দৃশ্যত সেটি উঠে যাচ্ছে। এই অদ্ভুত পরিঘটনা নিয়ে বাংলাভাষাতে এখনো সমাজবৈজ্ঞানিক কোনো অধ্যয়ন হয় নি, হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক, আপনি সেবাগুলো বিনা মূল্যে পাচ্ছেন। এবং ইচ্ছে করলে দিতেও পারছেন। বাংলা ভাষার এই মুহূর্তে সবচাইতে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় উপকরণ ‘অভ্র’ সেরকমই এক বিনামূল্যের তথা ‘মুক্ত-উৎস’ সেবা। একেও উন্নীত করবার জন্যে মেহেদী হাসান ছাড়াও লেগে আছেন আরও অনেকে। ওদের সাইটে গিয়ে ব্যবহারকারীদের ‘ফোরামে ’ নিয়মিত যোগ দিলে আপনিও হয়ে যাবেন সহকর্মী। এখানে দেখুন: http://forum.omicronlab.com/
          ‘অভ্র’ যাত্রা শুরু করে ২০০৩এ। এর আগে যারাই ফন্ট, লে আউট বা দু’টো মিলিয়ে বাংলা ‘কি-বোর্ড’ তৈরি করেছিলেন তারা সবাই চলে আসতে শুরু করলেন ‘অনন্য-সংকেত’ তথা ইউনিকোড ব্যবস্থাতে। অভ্র নিজেই অন্য সবার ফন্ট এবং লে আউট দিয়ে তার কী-বোর্ড ব্যবহার সম্ভব করে তুলল ধীরে ধীরে। নইলে পুরোনো ব্যবহারকারীরা অভ্রে আসতে চাইতেন না। কিন্তু আমরা আগেই লিখেছি, অভ্রের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ফোনেটিক , মানে উচ্চারণ ভিত্তিক । এতে আর রোমান L টিপলে ত কিম্বা থ আসবে না। ল-ই আসবে। A টিপলে ক আসবে না, আসবে আ। ফলে নতুন ব্যবহারে যারাই নামছেন তাদের পক্ষে টাইপ করা হয়ে গেছে খুবই সহজ। অতএব অন্যদেরও ইউনিকোড ফন্ট তৈরি ছাড়া উপায় রইল না। এমন কি মুস্তফা জব্বারের ‘বিজয়’ও বাদ পড়ল না।
            কিন্তু এই অভ্রেরও এক প্রাক কাহিনি আছে। সেটি বাঙালি এবং বাংলার পক্ষে খুব একটা সম্মানের নয়। এই কথা দুঃখের সঙ্গে লিখেছেন রবিন আপটন একুশে ডট অর্গে। উইলিয়াম কেরি , মার্সম্যানদের মতো তাঁকেও একধরণের ‘মিশনারি’ই বলা যাতে পারে। বিলেতের অ্যালট্রুইস্ট ইন্টারন্যাশনাল সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বাংলাতে অ্যালট্রুইজমকে কী বলা যেতে পারে আমরা  মাথা ঘামাইনি। ‘হিতবাদ’ বলা যেতে পারে। তাদের সাইটে লেখা আছে, ‘Working for Love Not Money’। তিনি বাংলাদেশ এসেছিলেন বিলেতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ সেরে ১৯৯৮ নাগাদ। বাংলা ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে অধ্যয়ন করবার আগ্রহ নিয়ে। এসে অবাক হন দেখে যে অনন্য সংকেত ব্যবস্থার আবির্ভাবের প্রায় এক দশকের মাথাতেও ১৯৯৮ অব্দি আন্তর্জালে বাংলার জন্যে কোনো মুক্ত উৎস কী-বোর্ড ছিল না। না আছে কোনো ফন্ট। খুলনার এক গ্রামের অনাথালয়ে শিশুদের কম্প্যুটার শেখাবার কাজ করতে গিয়ে দেখেন কিছু বাংলা ফন্ট ইন্সটল করা আছেতো বটে, কিন্তু কেউ বিশেষ ব্যবহার করা জানেন না বা করেন না। ২০০১ অব্দি তিনি আরও কিছু ফন্ট জোগাড় করে কাজ করবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পছন্দ হলো না। কিছু মেরামতি করবার চেষ্টাও করে গেলেন অবসরে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। পরে নিজেই তৈরি করে তুলতে শুরু করলেন বাংলা ফন্ট। তাঁর মূল সংগঠন অ্যালট্রুইস্ট ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কথা বলে দাঁড় করিয়ে দিলেন এক ওয়েবসাইটও। সেখানে এই সব ফন্টও উঠিয়ে দিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন বিনামূল্যেই লোকে নামিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন সেই ব্যবস্থা করে দিতে। ওয়েবসাইটটির নাম ‘একুশে’ । এখনো বাংলা আন্তর্জাল প্রযুক্তির জন্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সাইট এখানে দেখুন:http://ekushey.org । এইটুকু করে তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং কিছু জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে ই মেইল করে দিলেন। কেউ বিশেষ সাড়াতো দিলেন না, উল্টো কেউ কেউ কপি রাইট নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এতে লাভ হলো এই যে তিনি নিজেই একটি ‘লে আউট’ সঙ্গে ‘এডিটর’ জুড়ে দিলেন যাতে যে কেউ নিজের পছন্দ মতো সেই ‘লে আউট’ সম্পাদনা করে ফেলতে পারেন। কপি রাইটের ঝুঁকি নিলে নেবেন ব্যবহার কারী নিজে। এই ভাবনাই পরে সমৃদ্ধ করেছে ‘অভ্র’কে । অভ্রতেও এই সুবিধে আছে। এবারেও তিনি বাংলা একাদেমী এবং বাংলাদেশ কম্প্যুটার কাউন্সিল ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে গিয়ে কথা বললেন। তাঁরা চা-টা খাইয়ে খুশ গল্প করলেন। কিন্তু এই বিনামূল্যে ওয়েবসাইটে বাংলা ফন্ট, লে আউট তথা ‘কী-বোর্ড’ ছেড়ে দেবার কথাতে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কিন্তু তাঁর প্রয়াস বৃথা গেল না। আন্তর্জালে দুনিয়া ময় ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের যেসব লোক তাঁরা যেন নতুন মুক্তি স্বাদ পেলেন। তাঁরা ব্যাপক হারে সাড়া দিলেন।আন্তর্জালে শুরু হলো বাংলার জন্যে স্বেচ্ছাসেবার সংস্কৃতি। তাঁর সাইটে তিনি অবাক হয়ে লিখেছেন, “It is a strange world system that spends billions on projects for the 'developing world' and on mass production of computer hardware, but which leaves the development of Bangla language software to a team of enthusiastic volunteers।” এই স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেই কিন্তু কম্প্যুটার সংক্রান্ত বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন এখন। কোম্পানি নিজে কিছু করুক না করুক , তাঁরা করছেন বাংলা ভাষার জন্যে। উইন্ডোজ ছাড়াও ম্যাক, লিনাক্সের জন্যেও। ‘একুশে’র স্বেচ্ছাসেবীদের একজন জামিল আহমেদই মজিলা ফায়ারফক্সের বাংলা সংস্করণ তৈরি করেন। এদের সাইটে এখন যেসব লে আউটের নাম পাচ্ছি সেগুলো এরকম , প্রতিটি নামের আগে "একুশের স্বাধীনতা ' এবং পরে "লে-আউট' পড়ে যান, ‘ বাংলা ইউনিকোড ’, "রূপালি' , ‘ ইউনিজয়' , ‘ ইনস্ক্রিপ্ট ’, ‘প্রভাত' , ‘ জাতীয় ’, ‘ মুনির ’। এর মধ্যে কিছু মৌলিক ভাবে ‘একুশে’রই তৈরি। যেমন রূপালী লে আউট ছিল বুঝি তাদের পরীক্ষামূলক উদ্ভাবনা । কিন্তু তাতেই সেটি এতো জনপ্রিয় হলো যে রয়ে গেল। কিছু নামেই বোঝা যায় অন্যের তৈরি, তাঁরা সম্পাদনা করে উন্নত সংস্করণ করে মূল নির্মাতাদের পেছনে ফেলে ছড়িয়ে দেবার দায়িত্ব পালন করছেন। তাতে আশির দশকে ভারত সরকারের তৈরি বাংলা "ইনস্ক্রিপ্ট’ও রয়েছে।

মিশে তেরো নদী , সাত সাগরের জল গঙ্গায় -পদ্মায় :

        বাংলাদেশের কাহিনি এইখানে রেখে আমরা এবারে ভারতে প্রবেশ করি। আগেই লিখেছি ইনস্ক্রিপ্টকে ইউনিকোডে উন্নীত করণ ভারত সরকারের অতি সাম্প্রতিক প্রয়াস। এর প্রচার প্রসারও আটকে আছে আমলাতান্ত্রিকতার জালে। তবে অন্য অনেকে এই নিয়ে কাজ করেছেন এবং ভারতীয় ভাষাগুলোকে ইউনিকোডে লেখা সম্ভব করে তুলবার উপায় সন্ধান করে ফিরেছেন। এই মুহূর্তে অসমিয়া সহ সমস্ত ভারতীয় ভাষাতে ঠিক কতগুলো লে আউট আছে সেও এক স্বতন্ত্র অন্য সন্ধানের বিষয় হতে পারে। সংখ্যাটা শতাধিক তো হবেই। তবে এই নিয়ে দক্ষিণী রাজ্যগুলো অবশ্যই অগ্রণী। সেরকমই এক কি- বোর্ড বরহ। কন্নড় ভাষাতে শব্দটির অর্থ ‘লেখা’। ২০০৮এর বর্তমান লেখক আন্তর্জালে প্রবেশ করে মাস খানিক পরেই সার্চ দিয়েছিলাম এই লিখে, ‘How to write Bengali or Assamese on Net’ শুরুতেই দেখা হয়েছিল এই বরহের সঙ্গে। নামিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা খুবই সহজ ছিল। এমনকি নিজের নামকে সহজে ভারতের বিভিন্ন ভাষাতে দেখারা আলাদা এক রোমাঞ্চ ছিল। নিজের ব্লগগুলোতেও বেশ কিছু লেখা তখন বরহতেই লিখে তুলেছিলাম, যেগুলো এখনো আছে। কিন্তু একটা সীমাবদ্ধতা দেখেছিলাম ফন্ট বৈচিত্র্য বেশি নেই, লে আউট বৈচিত্র্যতো নেইই। বাংলাদেশের একুশের সঙ্গে একই বছরে যাত্রা শুরু করে ‘বরহ’। শুরুতে শুধু কন্নড ভাষা নিয়েই। পরে পরে সব ভারতীয় ভাষাতেই সফলতা অর্জন করে। দেশজুড়ে জনপ্রিয়তায় পায়। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তাই সম্ভবত এদের প্রাতিষ্ঠানিকতার কাছে আত্মসমর্পণেও বাধ্য করে। ঠিক কারণটি আমরা জানি না, শুধু এই জানি যে ২০১০ থেকে বরহ আর মুক্ত উৎস সফটওয়ার থাকে নি। আপনি নামিয়ে নিতে পারবেন, বরহতে টাইপ করা পাঠও পড়তে পারবেন এখান থেকে www.baraha.com। কিন্তু লিখতে পারবেন না। বারে বারে আপনাকে আটকে দিয়ে বলতে থাকবে , কিনে নিন। তার উপরে সমস্যা ছিল বরহ না নামালে আপনি বরহ লেখা কিছুতেই পড়তে পারবেন না। এটা ঠিক কোন কারণে হতো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু একটি কথা স্পষ্ট। সামান্য সফলতাতেই বরহের মাথা ঘুরে গিয়েছিল। ‘বাংলাদেশে’র একুশে তার থেকে অনেক মুক্ত মনা ছিল। একই দম্ভ আমাদের বহুল প্রচারিত কাগজ আনন্দ বাজারের ছিল। বছর দুই আগেও আনন্দবাজার পত্রিকাটি আপনি পড়তে পারতেন না, যদি ওদের বলে দেয়া ফন্ট না নামিয়েছেন। তাতে যে লোকসান ওদেরই হচ্ছিল এটি বুঝতে সময় লেগেছে। এবং পরে আন্তর্জালের আন্তর্জাতিক চরিত্রের কাছে হার মেনেছে। এখন আপনি আনন্দবাজার কেন, পশ্চিমবাংলার বহু দৈনিকের সাইট খুলে নির্বিঘ্নে পড়তে পারেন । গোগোল সার্চে বাংলা সংবাদ শিরোনাম বা প্রাসঙ্গিক বিষয় টাইপ করলেই ওদের আনন্দবাজার, আজকাল, চব্বিশ ঘণ্টাকে আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন। পাবেন না, আমাদের দৈনিক যুগশঙ্খ, সাময়িক প্রসঙ্গ, নববার্তা প্রসঙ্গকে। কেননা , তারা নিজেদের পৃষ্ঠাগুলোকে এখনো ছবি বা পিডিএফ- কাঠামোতে তুলে থাকেন আন্তর্জালে। যার অন্তর্বস্তু পড়তে পারেনা আন্তর্জাল। ফলে সার্চ ইঞ্জিনে তাদের অন্তর্বস্তু দেখায়ও না, এই নিয়ে আমাদের পশ্চাৎপদ এলাকার পশ্চাৎপদ সম্পাদকেরা মাথাও ঘামান না। তবে এই ব্যাপারে পূর্বোত্তরের বাইরের কাগজগুলোর মধ্যে সবচাইতে এগিয়ে ছিল অরিন্দম চৌধুরীর সম্পাদিত দ্য সানডে ইন্ডিয়ান । অসমিয়া সহ ভারতের প্রায় চৌদ্দটি ভাষাতে সর্বজন-পাঠ্য ইউনিকোডে প্রথম কাগজ করেন এরাই। বাকিরা পরে এদের অনুসরণ করেন। কিন্তু ২০১২র পরে এরা আর নিজদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। সব চাইতে পিছিয়ে আছে এখনো স্পষ্টতই ‘হিন্দুত্ববাদী’ বাংলা কাগজ ‘বর্তমান’ এবং বামপন্থী দৈনিক গণশক্তি

        
(ছবি-০৭)
বর্তমান পড়তে আপনাকে এখনো তাদের নির্দিষ্ট ফন্ট নামাতে হবে (ছবি -০৭)। আর গণশক্তি পাবেন আমাদের অসমের কাগজগুলোর মতো ছবিতে। যাই, হোক কথা হচ্ছিল বরহ নিয়ে। বরহ ‘মুক্ত উৎস’ ব্যবস্থা থেকে সরে যেতেই আসে আরেকটি ভারতীয় কি- বোর্ড ‘প্রমুখ’। লে আউট এবং বাকি ব্যবস্থাপনা একই রকম। এণ্ড্রোয়েড মোবাইলে ভারতীয় ভাষা লেখাও এরা সম্ভব করে রেখেছেন। মজিলা ফায়ার ফক্সে প্রমুখের এড অন যুক্ত করেও কাজ সহজ করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা আগেই লিখেছি, বাংলাদেশের বন্ধুরা মজিলা ফায়ার ফক্সের পুরো বাংলা সংস্করণই নামিয়ে দিয়েছেন। পুথি সাহিত্যের যুগের সঙ্গে আন্তর্জালের একটা মিল হলো, এখানে অনেকেই নিজের পরিচয় টুকু বিস্তৃত দিয়ে রাখেন না, বিশেষ করে ‘মুক্ত-উৎসে’ যারা স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে থাকেন। ফলে বরহ কিম্বা প্রমুখ করেছেন কে বা কারা স্পষ্ট জানা কঠিন হয়। প্রমুখের এই সাইটের www.vishalon.net এর ডান দিকে দেয়া তিনটি ‘কুইক লিঙ্কে’ ক্লিক করে অনুমান করতে পারি প্রমুখের স্রষ্টা বিশাল মনপারা একজন গুজরাটি কবি। যদিও বা একুশের মতো বিশাল এবং ব্যাপক নয় এদের সংগঠন, কিম্বা অভ্রের মতো সুন্দর এবং ব্যবহার-বান্ধব নয় তবু বডো, অলচিকি মতো অপ্রধান ভারতীয় ভাষাকে নিয়ে এই বিশাল কাজ যদি একক ব্যক্তির হয়, তিনি আমাদের নমস্য ব্যক্তি। ভারতীয় ভাষা সমূহের মুক্তি সেনানী। নিজের সাইটে তিনি এইটুকুন লিখে রেখেছেন, “After 3 years of continous development efforts, I have released Pramukh Type Pad V 3.0, PramukhIME JavaScript library, PramukhIME TinyMCE plugin and PramukhIME CKEditor plugin. The core scripts have been drastically changed. ...।” কিন্তু লেখেন নি কবে থেকে তিনবছর!
         একই রকম বোঝা কঠিন ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ, কলকাতা ঠিক কবে থেকে কাজ শুরু করেছে। নিজেদের সাইটে এরা লিখে রেখেছেন, “কম্প্যুটারে ইউনিকোড-সম্মত উপায়ে বাংলা ভাষায় কাজ করার জন্য বেশ কয়েকটি কি-বোর্ড লে-আউট ডিজাইন করেছে ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ, কলকাতা। প্রচলিত টাইপিং লে-আউটে অভ্যস্ত কর্মীদের কথা মনে রেখেই পরিষদ কি-বোর্ডের বিভিন্ন রকম লে-আউট তৈরি করেছে। কি-বোর্ডগুলি নিত্য সংশোধনশীল। এই কি-বোর্ডগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই যে এগুলি ইউনিকোড ৬.৩ মানক সম্মত। সেই কারণে ঐ কি-বোর্ডগুলির সাহায্যে প্রস্তুত নথি আন্তর্জাতিকভাবে মান্য পরিসরে গ্রহণযোগ্য এবং যে কোনো ইউনিকোড সম্মত লিপির সাহায্যে পাঠযোগ্য । পরিষদ একটি নতুন লে-আউট ডিজাইন করেছে যার নাম “বৈশাখী কি-বোর্ড”। বাংলা ভাষার সমস্ত লিপি এবং সংকেত যথার্থভাবে টাইপ করার জন্য ত্রি-স্তরীয় (স্বাভাবিক, শিফট এবং রাইট-অল্ট) এই কি-বোর্ড নির্মিত হয়েছে। এই লে-আউটের প্রধান বৈশিষ্ট্য – এটি স্বভাবে ধ্বনি-বৈজ্ঞানিক। ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে, ইনস্ক্রিপ্ট ও গীতাঞ্জলি নামের আরও দুটি জনপ্রিয় কি-বোর্ড লে-আউটকে ইউনিকোড ৬.৩ সম্মত করা হয়েছে। তাদের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে বৈশাখী ইনস্ক্রিপ্ট এবং ইউনি-গীতাঞ্জলি। ঠিক একইভাবে সরকারী কর্মীদের সুবিধার্থে যৎসামান্য পরিমার্জনের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ওয়েবেল লে-আউট’। উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে বৈশাখী কি-বোর্ড সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে অনলাইন সাহিত্য সম্ভার এই বৈশাখী কি-বোর্ডের সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে রবীন্দ্র-রচনাবলী, শরৎ রচনাসমগ্র, বঙ্কিম রচনাবলী, গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং বিবেকানন্দ রচনাবলী উল্লেখযোগ্য।” এখানে দেখুন, www.keyboards.nltr.org/bangla-keyboard-bn.php কিম্বা ছবি ০৮।

    এদের কাজ কর্মের বিস্তৃত বিবরণ পেতে এখানে দেখুন:  www.nltr.org/ অথবা ছবি -০৯। ২০১০এ এরা রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকল্প মুক্ত করেন। অন্য সব প্রকাশনার তারিখও ২০১০ বা তার পরের কার। সুতরাং বোঝাই যায় ‘বৈশাখী কি- বোর্ড’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিন বিভাগের অধীনে  একটি অতি সাম্প্রতিক প্রয়াস।
(ছবি ০৮)

একুশের মতো কাজে বৈচিত্র্য আনবারও চেষ্টা করছেন। শুরু মনে হয় করেছিলেন ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে। এখন লিনাক্স, উইন্ডোজ, এমন কি এণ্ড্রোয়েডের জন্যেও কি- বোর্ড তৈরি করেছেন। উইন্ডোজ লে আউটে বৈচিত্র্য আনবার ব্যবস্থাও করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী সম্ভারগুলোকে আন্তর্জালে মুক্ত করে এরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের স্বরলিপিকেও এরা অনন্য-সংকেতে ব্যবহারের সুবিধে করে দিয়েছেন। এর জন্যে স্বর-বিতান নামে একটি স্বতন্ত্র ফন্টও তৈরি করেছেন।
(ছবি -০৯)

            পুরো প্রকল্পের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিটি হচ্ছেন আই আই টি খড়গপুরের অধ্যাপক অনুপম বসু। তিনিই এর সঞ্চালক। তাঁর অধীনে এক বড়সড় সহকর্মী বাহিনী এতে কাজ করেন। সঞ্চালনা সমিতিতে আরো আছেন অধ্যাপক দ্বিজেশ দত্ত মজুমদার,এমেরিটাস অধ্যাপক, আই. এস. আই., কলকাতা; অধ্যাপক পবিত্র সরকার, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য;          অধ্যাপক বি. বি. চৌধুরী,প্রধান, সি. ভি. পি. আর. ইউনিট আই. এস. আই., কলকাতা;      সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ: তমাল সেন,          প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ওয়েবেল ইনফরম্যাটিক্স লিমিটেড; প্রমুখ অনেকে । কিন্তু এতো সব ভারি ব্যক্তিত্বদের চাপ নিয়ে মুক্ত উৎস আন্দোলন এগুবার নয়। হয় বাণিজ্যিক নতুবা সৃজনী নৈরাসক্তি ছাড়া যে কাজের গতি ধীর হয় তার নজির চরিত্রগত ভাবে অভ্রের বহু কাছাকাছি এসেও তাকে অতিক্রম করে যেতে পারে নি, "বৈশাখী ' এখনো । সেই সম্ভাবনাও নজরে আসছে না। ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪তে গার্গী গুহঠাকুরতা আনন্দবাজারে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন এই শিরোনামে, "ই গভর্ন্যান্স নিয়ে রাজ্যের দাবি ভিত্তি হীন'। সেখানে সঞ্চালক অনুপম বসুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, যে রাজ্যে প্রশাসনিক কাজে মাতৃভাষার ব্যবহার ব্যাপক সেই রাজ্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়ায় বেশি। পশ্চিম বাংলা এ ব্যাপারে দেশের মধ্যে অনেক পিছিয়ে আছে। কারা এগিয়ে আছেন সেই তথ্য আমাদের উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুপম বসুর সেই হতাশাটি জানানো, যেখানে তিনি সরকারি কাঠামো এবং তাগিদের অভাবের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এই ক্ষোভ সংগত। কিন্তু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের কী হবে? সরকারী প্রতিষ্ঠানের একজন হয়ে তিনি যে এইটুকুন বলেছেন সেই অনেক, এর বেশি কিছু করতে পারেন না। আমাদের শুধু বক্তব্য এই-- যেটুকু কাঠামো বিকশিত হয়েছে, যে কাঠামোকে ব্যবহার করে ছোট ছোট শহরগুলোতেও আন্তর্জালের ব্যবহার বাড়ছে, গ্রাম স্তরেও মোবাইলে আন্তর্জাল বাণিজ্য করে ফেসবুক লুটে নিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা---সেই বাস্তবতাতে বসে বাংলা ভাষার প্রচার প্রসারের জন্যে যদি আমাদের শুধু সরকারের উপরে নির্ভর করতেই হয় তবে ঈশ্বর ভরসা বাংলা ভাষার । বিশেষ করে অসম তথা বরাক উপত্যকার-তো কোনো ভবিষ্যতই নেই বলতে হবে। আমাদের কাছে বাংলাদেশই পথ। রবিন আপটন কিম্বা মেহেদী হাসান আমাদের পথপ্রদর্শক । ২১শে ফেব্রুয়ারিই আমাদের প্রেরণার ঠাঁই। ‘ঈশ্বরানুরাগী’রা আমাদের বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশী’ হবার অভিযোগ না তুললেই রক্ষা। শুধুই কি-বোর্ড নির্মাণে নিজেদের আটকে রাখেনি ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ, ধ্রুপদী সাহিত্য সম্ভারের আকর সাইট হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলেছে। এবং বাংলা ভাষার প্রচার প্রসারে এখন হয়তো কাজ করছে সহস্রাধিক বাংলা ব্লগ, ওয়েবসাইট ; সম্মিলিত ব্লগের সংখ্যা হবে শতাধিক। এর মধ্যে বারোটির কথা তাঁরা নমুনা হিসেবে তাদের সাইটে লিঙ্ক দিয়ে রেখেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ যে এর মধ্যে দু’টিই আমরা পরিচালনা করি অসম তথা পূর্বোত্তর থেকে। আমাদের অবিকল্প সম্মিলিত ব্লগ ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ , যেখানে পূর্বোত্তরের লেখকের লেখালেখি করেন, এবং ‘কাঠের নৌকো’ , যেখানে আমরা এখন অব্দি পঞ্চাশের বেশি বই পত্রিকা তুলে রেখেছি।
        এতোক্ষণ আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে গড়ে তোলা কি- বোর্ড নিয়ে কথা বললাম। এর মধ্যে অনেকগুলোরই মোবাইল সংস্করণও তৈরি হয়ে গেছে বা হবার প্রক্রিয়াতে আছে। যেমন অভ্র, প্রমুখ, বৈশাখী। অর্থাৎ আপনি এখন হাতের মোবাইলেও বাংলা লিখতেই পারেন। এগুলো ছাড়াও আমরা যে উইকিপেডিয়া সূত্রের কথা বলছিলাম সেখানে আরও দু’টি লে আউটের কথা রয়েছে, যেগুলো বিশেষ ভাবেই মোবাইলের জন্যে তৈরি। তার প্রথমটি ‘রিদমিক কি- বোর্ড’ । এণ্ড্রোয়েড মোবাইলে অত্যন্ত জনপ্রিয়গুলোর একটি। এণ্ড্রোয়েডের নিজেরই দুনিয়ার অগুনতি ভাষার সঙ্গে বাংলার অসমিয়ার জন্যেও ইনবিল্ট কি- বোর্ড রয়েছে। তবু ব্যবহারী যদি ‘অভ্র’, ‘ইউনিজয়’ বা ‘জাতীয়’ লে আউটে অভ্যস্ত হন গোগোল প্লে হাউস থেকে ‘রিদমিক’  নামিয়ে নিতে পারেন। দ্বিতীয় যে কি- বোর্ডের সন্ধান রয়েছে সেটি ‘মায়াবী কি- বোর্ড লাইট’। মায়াবীর লে আউট টিও ফোনেটিক । মায়াবীর সাইটে গেলে মোবাইলে বাংলা লেখার অনুরূপ একাধিক সংযোগ পেয়ে যাবেন। এখানে দেখুন: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.mayabi.mayabikeyboard।  আলাদা করে নামোল্লেখ বাহুল্য বলে মনে হচ্ছে। যারা মোবাইলে থাকেন বলে বাংলা লিখতে অসামর্থ্যের কথা জানিয়ে থাকেন, তাদের মানসিক দারিদ্র্যকে উজ্জ্বল করতে এই ছবিই যথেষ্ট। ছবি ১০ ক –খ-গ দেখুন:

(ছবি ১০ ক)

(ছবি ১০ খ)


(ছবি ১০-গ)

(ছবি ১১ )
নোকিয়া মোবাইলের জন্যে একটি ভালো কি- বোর্ড হচ্ছে ‘পাণিনি কী প্যাড’। এখানে পাবেন:http://ovi.sigma.apps.opera.com/bn_in/bengali_paninikeypad.html?pos=1 আপাতত শুধু আস্থা বাড়াবার জন্যে আমরা একটি ছবিতে দেখাবার চেষ্টা করব, নকিয়া মোবাইলের যেকোনো হ্যাণ্ডসেটে যদি আন্তর্জাল সংযোগ আছে, তবে আপনার হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। ছবি ১১ দেখুন।

            http://www.google.com/intl/bn/inputtools/try/ অথবা ছবি -১৩তে তাকান, যেখানে আমরা টাইপ করছি, আমি বাংলায় গান গাই...। মাইক্রোসফটের কথা আমরা আগেই লিখে এসেছি । 'ইনস্ক্রিপ্ট' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরে আরও লিখবো, আপাতত এখানে দেখুন মাইক্রোসফট কতটা ভারতীয় ভাষা সমর্থন করে এবং কী ভাবে। http://www.bhashaindia.com/ilit/BengaliFAQs.aspx
(ছবি-১২)
আর আপনি যদি এতো শতো সফটওয়ার নামাতে আগ্রহী না হন, তাহলেও বাংলার জন্যে পথ খুলে রেখেছে গোগোল কিম্বা মাইক্রোসফট। বহু আগেই। আমরা নিবন্ধের শুরু করেছিলাম এই সংবাদ দিয়ে যে গোগোল ভারতীয় ভাষার সংবাদপত্র জগতের সামনে এক হুমকি হাজির করেছে ILIA প্রতিষ্ঠার মধ্যি দিয়ে। কিন্তু এমনতো নয় ভারতীয় ভাষার প্রদেশে গোগোল এই মাত্র প্রবেশ করছে। বহু আগে থেকেই আপনি গোগোল সার্চ ইঞ্জিন খুললেই এই ছবিটা (১২) দেখতেন, যেখানে ইংরেজি ছাড়াও নটি ভারতীয় ভাষার সমর্থন দেখাতো।  অধিকাংশ ব্যবহারকারীর মনে এই নিয়ে কোনো প্রশ্নই দেখা দেয় না, কোনোদিন ‘বাংলা’ শব্দটিতে ক্লিক করেও দেখেন না, তাতে দেখায় কী। বস্তুত গোগোল আপনাকে শুধু বাংলাতে সার্চ করা নয়, ইমেইল করা, ব্লগ লেখার সুবিধেও দিয়ে রেখেছে বহুদিন হলো। আপনি সরাসরি গোগোলের ইনপুট পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলা লিখতে পারেন। এখানে দেখুন: http://www.google.com/intl/bn/inputtools/try/ অথবা ছবি -১৩তে তাকান, যেখানে আমরা টাইপ করছি, আমি বাংলায় গান গাই... মাইক্রোসফটের কথা আমরা আগেই লিখে এসেছি 'ইনস্ক্রিপ্ট' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরে আরও লিখবো, আপাতত এখানে দেখুন মাইক্রোসফট কতটা ভারতীয় ভাষা সমর্থন করে এবং কী ভাবে। http://www.bhashaindia.com/ilit/BengaliFAQs.aspx

(ছবি ১৩)
             তাহলে এতো ক্ষণ আমরা দেখাবার চেষ্টা করলাম, কী বিশাল সব আয়োজন হচ্ছে আন্তর্জালে শুধু বাংলা সহ ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্যে। কী হয়ে এখানে ভাষা দিয়ে?

আমি বাংলায় ভাসি , বাংলায় হাসি ,
বাংলায় জেগে রই :

          বস্তুত এতোক্ষণে পাঠকের বুঝে যাওয়া উচিত কম্প্যুটার নিছক টাইপরাইটার, জেরক্স মেশিন কিম্বা ডাকঘরের বিকল্প নয়। আন্তর্জালতো নয়ই। আমাদের ভারতীয় বাঙালি পাঠক বিশেষ করে পূর্বোত্তর ভারতের বাঙালি ব্যবহারকারীদের ধারণা মেইল করা , ইংরেজি হরফে চ্যাট করা, অরকুটে, ফেসবুকে বন্ধু বাড়ানো ছাড়া আর কিছু ওয়েব সাইট খোঁজে বেড়ানোই এর কাজ। আসলে কম্প্যুটার তথা ইন্টারনেট এখন আপনার সিনেমা-থিয়েটার হল, সঙ্গীত মঞ্চ, রেডিও, লেখার ঘর, পড়ার ঘর, লাইব্রেরী, বইয়ের দোকান, বাজার , স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি যদি ব্লগ লিখতে পারেন তবে সেখানে আপনি লেখক সম্পাদক প্রশাসক সবটাই। কলেজ স্ট্রীট এতো দ্রুত আপনাকে ঢাকা কিম্বা টোকিওর পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না, যতটা পারে ইন্টার নেট। ফলে যে নগর কলকাতা এতোদিন শুধু লিখত বাকি বাংলা পড়ত, নগর কলকাতা গাইত বাকি বৃহত্তর বাংলা শুনত, নগর কলকাতা অভিনয় করত বাকি বাংলা তা দেখতো--বৌদ্ধিক আধিপত্যের এই সমীকরণ যাচ্ছে উলটে। হাজার পৃষ্ঠার চারশ টাকার লিটিল ম্যাগ শুধু বুদ্ধিজীবিদের জন্যে প্রকাশ করেও যারা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বড়াই করেন বা করতেন তাদের দিকে চোখটি না ফেলে গট গট করে  বিশ্বজয়ের পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে  "উড়ালপুল', "খোয়াব', "সৃষ্টি', "কৌরব', "গুরুচন্ডালী', "ইচ্ছামতি', "কঁচিকাচা', "কর্ণিকা', "দ্রোহ', "অলসদুপুর' ‘ক্ষেপচুরিয়ান্স’, ‘অন্য নিষাদ’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘কালিমাটি’, "বাঙালনামা'র  মতো শতাধিক ওয়েব কাগজ কিম্বা ব্লগগুলো। গেল দুই শতকে মুক্ত উৎস আন্দোলনের এই আরেক বিশাল অবদান ব্লগ সংস্কৃতি। শব্দটি অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু ধারণা স্পষ্ট নয়। আমাদের লিটিল ম্যাগাজিন সম্পাদক যেমন ইমেল ঠিকানার যায়গাতে ভুলভাল ফেসবুক ইউ আর এল লিখে দেন, তেমনি বহু ‘প্রতিষ্ঠান’ বিরোধী লেখকও ‘ফেসবুক’ বাণিজ্য মোহে বাঁধা পড়ে ফেসবুক গ্রুপকেই বলে বসেন ‘ব্লগ’। মূলে কথাটা ‘ওয়েবলগ ’ । এরও যাত্রা শুরু পশ্চিমে, সেই ১৯৯৭তে। মূলত আন্তর্জালে দিনলিপি লেখার প্রয়াস দিয়ে দেড় দশক আগে যে সংস্কৃতি যাত্রা শুরু করেছিল, তার এখন বৈচিত্র এবং ভাণ্ডার বিশাল। দশ বছরের মাথায় উকিপেডিয়া জানাচ্ছে ডিসেম্বর, ২০০৭-এ ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন টেকনোরাট্টি প্রায় এগারো কোটি বার লাখেরও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছিল। ফেসবুক বাণিজ্যের ধাক্কাতে তার বৃদ্ধিতে ভাটা পড়লেও সংখ্যাটা এখন আরো কয়েক কোটিতো হবেই। কারণ বর্তমান লেখকই ২০০৮এর পরে ব্লগ লিখতে শুরু করে আরো সাতটি ব্লগ তালিকাতে যুক্ত করেছেন। এবং তার পর থেকে লেখা একটিও গদ্য নেই যার কোনো আন্তর্জালীয় উপস্থিতি নেই! এই লেখাটিও থাকবে। ব্লগ হতে পারে ব্যক্তিগত, হতে পারে সম্মিলিত যেখানে অগুনতি লেখক নিয়মিত লেখেন, অথবা সম্পাদিত পত্রিকা। উকিপেডিয়াও নিজেকে ব্লগ বলেই দাবি করে। বাংলাদেশে এর সব বৈচিত্র্য থাকা সত্তেও এই তথ্যটি বাঙালির পক্ষে খুব গৌরব জনক নয় যে উকিপেডিয়াতে গেল দশবছরে বাংলা নিবন্ধের সংখ্যা ৩৩, ৬৩৩এর বিপরীতে , হিন্দির সংখ্যা ১,১৬, ৬৮৭। অন্যদিকে একটি ছোট্ট ভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি নিবন্ধের সংখ্যা বাংলার থেকে সামান্য পেছনে। ২৫, ৬২৬! বাংলা উইকি শুরু হয় ২০০৪এ। চার বছর পর ২০০৮এ বাংলার থেকে অনেক এগিয়েছিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি। সংখ্যাটা ছিল ২৩, ৪০২! বিপরীতে বাংলার সংখ্যা ছিল ১৮, ২২৫। হিন্দিতেও সংখ্যাটা তার চেয়ে কম ২১ , ৪৯০! এখন এই ছয় বছরে কল্পনা করুন কী দ্রুত হিন্দি এগিয়ে গেছে! বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরির প্রগতিটাও ফেলনা নয়! পাশাপাশি তামিলের প্রবিষ্টিও এখন বাংলার চাইতে বেশি। প্রায় দ্বিগুণ। ৬৬,০০২। মালয়ালম ৫৩, ৩৭৫! এমন কি আমাদের প্রতিবেশী ভাষা অসমিয়ার প্রবিষ্টি ২০০৮এ ছিল মাত্র ১৯১। কিন্তু ২০১০এর পরে যে জোয়ার এরা তোলেছেন তাতেই সংখ্যটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০৬। অসমিয়া উইকির অন্যতম কর্মী প্রভাকর শর্মা নেওগ শিলচর "নিটে'র অধ্যাপক। মনে হয় না, সেখানে বাংলার জন্যে কাজ করেন এমন একজন ছাত্র বা অধ্যাপকও পাওয়া যাবে। তথ্যগুলো উল্লেখ করা গেল এর জন্যে যে শুধুই প্রায়োগিক সুবিধে অসুবিধে এবং জনগোষ্ঠীর শিক্ষাচেতনার উপরে যদি এই সংখ্যা নির্ভর করত তবে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরির সংখ্যা এতোটা বেশি হতো না। তাও , মূলত বাংলাদেশে থাকেন যে হাজার চল্লিশেক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি-- এই সব তাঁরাই করেন। তবে, এই তথ্যটি সুখের যে ২০০৮এর পরে বাংলার সংখ্যা যেটুকু বেড়েছে তাতে পশ্চিম বাংলার যোগদানও রয়েছে। এবারে তার দশম বর্ষ পূর্তিতে ৯ ও ১০ জানুয়ারি,১৫ কলকাতাতেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে উৎসব অনুষ্ঠান।
            বাংলাদেশের  ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত ব্লগই বাংলাতে ‘ব্লগ’ সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে। ২০১০এর আগেও ভারত থেকে আমরা যারাই ব্লগ লিখতাম আমাদের আশ্রয় ছিল সেই সব বাংলাদেশের সম্মিলিত ব্লগ। যেমন ‘আমার ব্লগ’, "সামহোয়ার ইন', "সচলায়তন', "চতুর্মাত্রিক', "লোটাকম্বল ' ইত্যাদি। আমাদের প্রায়োগিক পরামর্শদাতাও ছিলেন তাঁরাই। "কফি হাউসের আড্ডা'র মতো গুটি কয় ভারতীয় সম্মিলিত ব্লগ ছিল। ব্যক্তিগত ব্লগের সংখ্যাও খুব বেশি ছিল না। কিন্তু সম্পাদিত পত্রিকা ছিল অনেকগুলো। যেমন "কৌরব', "পরবাস'। "গুরুচণ্ডালী'র মতো একাধারে সম্মিলিত এবং সম্পাদিত ব্লগও ছিল। এখনও এই সম্পাদিত ব্লগ বা ওয়েব-জিনই সংখ্যাতে বাড়ছে। ফেসবুকের দাপটে ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত ব্লগে আগ্রহ দেখান অতি অল্প। বোঝা যায়, আন্তর্জাল সংস্কৃতির যুগেও আমরা গর্বের লিটিল ম্যাগাজিন সংস্কৃতি ছেড়ে বেশিদূর এগুতে প্রস্তুত নই। সম্পাদকেরা নাকচ করতে থাকেন লেখকদের, তবু তারা সম্পাদকদের কৃপা দৃষ্টির জন্যে তাকিয়ে থাকেন তীর্থের কাকের মতো। অথবা উলটো , উৎসাহী বৈদ্যুতিক কাগজের সম্পাদককে যশোকামী কবিরা ধমকে দেন অখ্যাতদের পাশে তাঁকে ঠাই দেবার অপরাধে। সেরকমি কিছু ধমকে ‘অন্যনিষাদে’র প্রকাশনা দিন কয় বন্ধ করে দিয়েছিলেন কবি সম্পাদক ফাল্গুনী মুখার্জি। ভাগ্যিস, আবার ফিরে দাঁড়িয়েছেন। না দাঁড়িয়ে পথ কী? একটি মার্কিন কবিতার কাগজ ছিল "পোয়েট্রি'। এলিয়ট সহ বিশ শতকের দুনিয়া কাঁপানো কবিরা সেখানে লিখতেন। সেই কাগজের প্রেরণাতে নিজের কাগজের নাম " কবিতা' রেখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। বুদ্ধদেব বসু নেই হলো কয়েক দশক। তাঁর জীবৎকালেই "কবিতা' বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু "পোয়েট্রি'! এখনো শতবর্ষ পার করেও সমানে চলছে এক বিশাল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে। এখন "পোয়েট্রি' আন্তর্জালে আছে। এখানে দেখুনঃ http://www.poetryfoundation.org/poetrymagazine/। পুঁথি জমানার কথক যেমন কবিতা গেয়ে শুনিয়ে শ্রব্য শিল্প করে রেখেছিলেন, "পোয়েট্রি' এখন কবি কণ্ঠে কবিতা শোনায়, শুধু পড়ায় না। আমরা এতো শতো স্বাস্থ্যের খবর জানি কম, তাদের "ব্যাধি'কেই স্বাস্থ্য ভেবে যেচে গিয়ে সংক্রমিত হই ।
           আন্তর্জাল যে স্তরভেদের পুরোনো সংস্কৃতি ভেঙ্গে দিচ্ছে , বা দেবে সেই সত্য এখনো অনুমান করতেই পারেন না বহু লেখক লেখিকা। তাদের কাছে এখনো সম্পাদকের বাছাই পর্ব পার করে ছাপাটাই সম্মানের ব্যাপার। সেই সম্মানের জন্যে মুখিয়ে থাকেন। সেই তারাই আবার ফেসবুকের খোলা আসরে ভিড় জমান। হয়তো বা ‘লাইকে’র মোহে। অথচ, ফেসবুক টুইটারকে অনেকেই সঙ্গত ভাবেই ‘মাইক্রোব্লগ’ বলেন। আপনি ভাবগম্ভীর বিষয়ে ওখানে বিস্তৃত বেশি কিছু লিখতে পারবেন না। লিখলেও কাগজ বা বইয়ের মতো সাজাতে পারবেন না। পারলেও সেগুলো তলিয়ে গিয়ে ফেসবুকের ভাণ্ডারে জমা হবে, আপনি দরকারে খুঁজে পাবেন না। আর পেলেও গোগোল বা বিং সার্চ ইঞ্জিনে এগুলো দেখাবে না। তাতে ফেসবুক বাণিজ্য মার খায়। ফেসবুকের বাণিজ্য বাঁচিয়ে আমরা ভারতীয় বিশেষ করে পূর্বোত্তরের বাঙালি নিজেদের মেধাকে মার দিতে প্রস্তুত! এটা ঠিক যে খুচরো আলাপে উৎসাহী করিয়ে ফেসবুক তার জন্মের বহু পরে, মূলত ২০১০এর থেকে বাংলা, অসমিয়া ইত্যাদি ভারতীয় ভাষা প্রচারে প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তখন থেকে ফেসবুকের যেকোনো বার্তা ই-মেলে চলে যেতে শুরু করে। এবং তখন অব্দি জনপ্রিয় ই-মেলের আধিপত্য খসিয়ে নিজের দিকে লোক টানতে শুরু করে। ফলে অরকুটের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। গেল বছর অরকুট চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

         
(ছবি ১৪)
  ফেসবুকের বাংলা সংস্করণও আছে। ছবি ১৪তে সমস্ত মেনু দেখুন বাংলাতে লেখা। কিন্তু ভাবে বিষয়ে গভীর কোনো অনুশীলন ফেসবুকে হতে পারে না। ফেসবুককে বড়জোর আপনার বাড়ি থেকে বইমেলা পৌঁছুবার, কিম্বা ফিরে আসার দ্রুতযান কিছু বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। এখানে এই ভিড়ে যোগাযোগটিই হয়, আসল নির্জনে লেখা পড়া প্রকাশনা ব্লগে কিম্বা সাইটেই শুধু সম্ভব। সেখানে দিন বছর মাস যাবে, ভালো যদি লিখেছেন দুনিয়া ভর থেকে পাঠক পড়তে থাকবেন । গোটা পূর্বোত্তর থেকে এখনো একটিও সম্পাদিত ব্লগ নেই। যদিও ব্যক্তিগত ব্লগ রয়েছে বেশ কিছু। দু’টি মাত্র সম্মিলিত ব্লগ সামান্য হলেও কিছু পরিচিতি লাভে সমর্থ হয়েছে -- ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’, অন্যটি তারই সহ-ব্লগ ‘কাঠের নৌকো’ আন্তর্জালের ভারত বাংলাদেশের ব্লগারদের মধ্যে ইতিমধ্যে ব্লগ দু’টি পরিচিত, আলোচিত। আগেই লিখেছি ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদের সক্রিয় আন্তর্জালীয় উপস্থিতি নেই বিশেষ, তারাও নিজেদের ব্লগে যে বারোটি ব্লগ তালিকাভুক্ত করে রেখেছেন তার মধ্যে এই দুটি রয়েছে। কিন্তু বাংলা ব্লগের সংখ্যা বারো নয়, বারোশ’র কাছা কাছি তো হবেই! তবে ভারতে এতো শত নজরে পড়ে না, পূর্বোত্তরেতো না-ই!
            অথচ পূর্বোত্তরে অসমিয়ার ছবিটা বাংলার থেকে অনেক ভালো। একই অর্থনীতি এবং পরিকাঠামোতে থেকেও তাঁরা পারছেন, আমরা কেন পারছি না, ভাববার বিষয় বটে।পূর্বোত্তর ভারতে প্রথম ইউনিকোড সম্পদ বহুভাষিক অভিধান "শব্দ' । ২০০৬ সনে আবুধাবীতে কর্মরত প্রবাসী অভিযন্তা বিক্রম মজিন্দার বরুয়া তাঁর আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে অসমিয়া ভাষা দিয়ে সেটি শুরু করেন। পরে সেটি পূর্বোত্তরের প্রায় সব ভাষার অভিধানে পরিণত হয়। ২০১০ থেকে এতে বাংলা, হিন্দি, নেপালিও ঢুকে গেছে । পূর্বোত্তরের ভাষাগুলোর এক তুলনামূলক অধ্যয়নের দুর্দান্ত আকরে পরিণত হচ্ছে এই অভিধানটি। বিক্রমেরা বিহু ডট ইন বলে একটা সন্মিলিত ব্লগও চালাতেন। কিন্তু তাতে তাঁরা লিখতেন খুব কম, লিখলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিখতেন ইংরেজিতে। ২০১০এর জানুয়ারিতে ফ্রেন্ডস অব আসাম এন্ড সেভেন সিসটার্স সংক্ষেপে "ফাস' আয়োজিত প্রবাসী পূর্বোত্তরীয়দের সম্মেলন "নেইমস ২০১০'র পাশাপাশি "শব্দে'র এক সভা বসে গুয়াহাটিতে। সেখানে আলাপ শুরু হয়েছিল "শব্দে' সক্রিয় কর্মী বাড়াবার সমস্যা নিয়ে। সেখানেই ঠিক হয়, বন্ধুদের নিজেদের মাতৃভাষাতে ব্লগ লিখতে উৎসাহিত করতে পারলেই একটা অভিধানের দরকার বাড়বে। বাড়বে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী। তার পর দীর্ঘ ছ'মাস নেদারল্যন্ড প্রবাসী অসমীয়া লেখক সমাজকর্মী ওয়াহিদ সালেহ, বছর দুই আগে যিনি কেন্দ্র সরকারের জানানো প্রবাসী ভারতীয় সম্মানে ভূষিত হলেন , তাঁর নেতৃত্বে এক জিমেলগ্রুপে আলোচনা চলে কী করে অসমিয়া উপকরণ নেটে বাড়ানো যায়। এই আন্দোলনের শেষে গড়ে উঠল একটা সাইট যার নাম "ই-জোনাকি' যুগ, ফেসবুক গ্রুপ যার নাম "অসমীয়াত কথা বতরা'। তাতে লাভ হয়েছে এই যে এখন শব্দের প্রায় প্রত্যেকের একটি করে সুদৃশ্য অসমীয়া ব্লগ আছে। "সুগন্ধী পখিলা', "শতদল', "আমি অসমীয়া, "খার নোখোয়ার কলম' "জালপঞ্জী', "জীবনর বাটত, "মই আরু মোর পৃথিবী' "সুগন্ধী পখিলা' ‘বাওঁপন্থী বতৰা’, ‘ এনাজরি ডট কম’ এমন অসংখ্য অসমিয়া ব্লগের নাম এই কয় বছরেই নেবার মতো অবস্থা হয়েছে। পরে অসমিয়াত কথা বতরা ‘সাহিত্য ডট কম’ নামে একটি স্বতন্ত্র বৈদ্যুতিন পত্রিকা করেন। এখন অসমিয়া ফেসবুক গ্রুপও আছে অগুনতি। তাদের অনেকরই নিজস্ব পত্রিকাও আন্তর্জালে প্রকাশিত হচ্ছে। গীতার্থ বরদলৈ, একজন নিষ্ঠাবান ব্লগার, তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগ ‘বিক্ষিপ্ত’তে (http://gitartha.blogspot.in) এমন প্রায় ১৩২টি অসমিয়া ব্লগের তালিকা করে রেখেছেন। প্রথম ইউনিকোড ব্যবহারকারী সাইট হিসেবে ‘শব্দ’ অভিধান অসমিয়া ইন্সক্রপ্ট ব্যবহার করতেন, পরে বিক্রম মজিন্দার বরুয়া এবং তাঁর বন্ধুরা এর একটি ‘ফোনেটিক’ সংস্করণের বিকাশ ঘটান। এছাড়া সবাই ‘অভ্র’তেই কাজ করতেন। ‘বরহ’ও জনপ্রিয় ছিল অনেকের কাছে। ২০১০এর পরে ছবিটি পাল্টাতে শুরু করে। শব্দ এবং অসমিয়াত কথা বতরার উদ্যোগে রাজ্যের বহু জায়গাতে কর্মশালা করে অসমিয়া ব্যবহারের প্রচার প্রসার ঘটাবার চেষ্টা হয়। তখন শব্দ অভ্রের ‘লে আউটে’র একটি শব্দ সংস্করণও তৈরি হয়। গুয়াহাটির এক তরুণ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎক বনজিৎ পাঠক গেল ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে "কুঁহিপাত' নামে একটি অসমিয়া ফন্ট নির্মাণ করেন। এখন রোদালি, লুইত ইত্যাদি নামে একাধিক ‘কি- বোর্ড’ লিনাক্স, ম্যাক সহ বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করবার যোগ্য করে এই রাজ্যে বসে অসমিয়া বন্ধুরা গড়ে তুলেছেন। গুয়াহাটি আই আই টি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের পাশে টেনেছেন এই কাজে। এই রামধনু, শ্রীলিপির মতো ডিটিপি কি- বোর্ডে ইউনিকোড কনভার্টার সংযোজনও মূলত তাঁদের কাজ। অনেকেই এরা বাংলার জন্যে সহযোগী চেয়েও হতাশ হয়েছেন। এদের অনেকেই কিন্তু বনজিতের মতোই প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ছাত্রও নন।এই প্রশ্নে রাজ্যে বা ভিন প্রদেশে হাজারো বাঙালি ছেলে যে হায়দ্রাবাদ , বাঙালুরু যাচ্ছেন কম্প্যুটার প্রযুক্তি পড়তে ---তাদের ভূমিকা প্রায় শূন্য। এমন কি আমাদের পক্ষে সবচাইতে লজ্জার বিষয় হলো www.unishemay.org নামের সাইটটির ভাষা মূলত ইংরেজি। এটি মোটেও ‘মুক্তউৎস’ আন্দোলনের শরিক নয়। সম্ভবত টাকা দিয়ে কেনা ডোমেইন, টাকা দিয়ে সাজানো। সদস্যদের কেউ প্রযুক্তি বোঝেন না।তাই হালনাগাদ করা হয় না, ছড়ানোতো দূর। একই দশা ‘একা এবং কয়েকজন’ (http://ekaebongkoekjan.org/); ব্যতিক্রম তথা ভিকি পাব্লিসার্স (www.byatikramgroup.com), ত্রিপুরার ‘উন্মেষ’ (http://unmesh.co.in/), মুখাবয়ব (http://mukhabayab.com/), কিম্বা ‘দ্বাদশ অক্ষর’ (www.dwadashakshar.com/)। দ্বাদশ অক্ষরের ফেসবুক গ্রুপও খুলেছিলেন সম্পাদক। পরে দেখা গেল, তিনি নিজের দেয়ালে আড্ডা দিচ্ছেন, গ্রুপ চালাচ্ছেন বাংলাদেশের বন্ধুরা। সম্ভবত ফেসবুক  আড্ডাতে বিরক্ত হয়ে এখন সরে গেছেন। নিজের ব্লগে লেখেন নিরলে। কিন্তু দ্বাদশ অক্ষর কাগজটিকেই যে চালানো যেতো আন্তর্জালে সেই ভাবনা আসে নি। এমন বহু কাগজের সম্পাদক আছেন যারা নিজের কাগজের প্রচার করবেন বলে ফেসবুকের জনপ্রিয়তার সুবিধে নেবার জন্যে গ্রুপতো খুলে বসেন, চালাতে আর পেরে উঠেন না। সম্ভবত যে প্রতিক্রিয়া আশা করেন, না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। আর আমাদের বাণিজ্যিক কাগজগুলোর কথাতো আগেই লিখেছি। ইউনিকোডে আসবার পরে থেকে পশ্চিম বাংলার কাগজগুলোরও পাঠক বেড়ে গেছে বহু পরিমাণে। এর থেকে অসমিয়া বাংলা কোনো কাগজই শিক্ষা নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। পুঁজি একটা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তিতে অনাগ্রহ যে মূল কথা সে কথা অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিকগুলোতেও ই-মেল করে চারদিন পরে সম্পাদক জানাচ্ছেন মেইল খুলেন নি ----এমন অভিজ্ঞতা বর্তমান লেখকের রয়েছে। গোগোল নিউজে "বাংলা সংবাদ’ লিখে সার্চ করে দেখুন, একটিও পূর্বোত্তরের কাগজ পাবেন না। সব বাংলাদেশের। গোগোল সার্চে একই কথা লিখে সার্চ করলে পশ্চিম বাংলারও অনেকগুলো পাবেন, অসম-ত্রিপুরার একটিও না। এর চেয়ে ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ নাম লিখে দিন, রবীন্দ্র কবিতাটি ছাড়া আর যা কিছুই পাবেন সবই আমাদের সম্পদ! একটিই শুধু ব্যতিক্রম আছে, ত্রিপুরার ‘ফোকাস ত্রিপুরা’- (www.focustripura.com/)এরা অন্তবর্স্তুর সবই ইউনিকোডে হাল নাগাদ করে থাকেন।

বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক :

      এই ছবিটা পাল্টাবার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছিলাম। আমাদের বই, পত্রিকারতো কেন্দ্র বলে বিশেষ কিছু নেই। আমাদের কোনো পাতিরাম নেই। প্রকাশিত বই পত্রিকাগুলো পাওয়া কঠিন হয়। এগুলো কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যদি আন্তর্জালে ছড়ায় তবে ভালো কথা। কিন্তু সেও সহজে হবার নয়। আরো বহু কারকের উপরে নির্ভর করে। তাই ভাবা গেছিল যদি সম্পাদকদের বলে কয়ে পিডিএফ আনিয়ে নিজেরাই একটা সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারি। জন্ম নিয়েছিল ‘কাঠের নৌকো’ http://kathernouko.blogspot.in/ । ২০১০এর জুন মাসে বিজয় কুমার ভট্টাচার্যের গদ্য গ্রন্থ ‘১৯শের খোঁজে’ দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই পাঁচ বছরে ৫৫টি বই পত্র পত্রিকার একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাতে পরিণত হয়েছে এই ব্লগ। সংগ্রহের মধ্যে আছে ‘প্রতিস্রোত’, ‘মহাবাহু’, ‘সেবা’, ‘বর্ণমালার রোদ্দূর’, আর্ট ইকো, অভিনয় ত্রিপুরা, উন্মেষ এর মতো বহু কাগজ। এবং সমর দেব অঞ্জলি লাহিড়ি, তপন মোহন্ত, অমিতাভ দেবচৌধুরী প্রমুখ কবি লেখকদের বই পত্তর। কিন্তু আশার থেকে গতি ধীর। বহু সম্পাদকতো দূর , আমাদের ছাপাখানাও পিডিএফ কথার মানে বোঝেন না। সম্পাদক লেখকেরা আন্তর্জালের গুরুত্ব বোঝেন না। সেই প্রায়োগিক সমস্যা দূর করতে প্রথমে ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ এবং পরে একই নামে একটি ব্লগ (http://ishanerpunjomegh.blogspot.in) শুরু করি আমরা। সেই ব্লগ এখন ছয় শতাধিক গল্প কবিতা প্রবন্ধের এক বিশাল সংগ্রহ। নির্বাচিত সংকলন প্রকাশ করতে হলেও কয়েক খণ্ডে বের করতে হবে। পূর্বোত্তরের লেখক লেখিকাদের যারাই আন্তর্জালে আছেন তাদের প্রায় সবাই ঈশানের ফেসবুক গ্রুপে আছেন। এই যোগাযোগ বহু লেখক সম্পাদকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছে , বহু লেখক গড়েও তুলছে এই দাবিও করাই চলে। যদি এই কাজ করতে গিয়ে আজ অব্দি আমরা কোনো কাগজে বিজ্ঞাপনও দিইনি, সাংবাদিক সম্মেলনও করিনি। যারা করেছেন তারা অচিরে ঝরে গেছেন আমরা নীরবে দেখেছি। নীরবে আমাদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সহস্র ছাড়িয়েছে। কিন্তু এখনো শ্লাঘা করবার মতো অবস্থা আমাদের নয়। অসম, ত্রিপুরা তথা বরাক উপত্যকার নামে অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ আছে, যাদের সদস্য সংখ্যা আমাদের থেকে বহুগুণ বেশি। কিন্তু চর্চার ভাষা ইংরেজি, চর্চার বিষয় দৈনিক কাগজের সম্পাদকীয় । এর বেশি গভীরে যাবার যোগ্যতা ইংরেজি বলিয়ে কইয়েদের আছে বলে আমাদের নজরে আসেনি। এই পাঁচ বছরে শুধু ‘অসমিয়াত কথা বতরা’ ফেসবুক গ্রপের সদস্য সংখ্যা ১৯, ২৩১। রোমান হরফে মন্তব্য করা মাত্রে এই গ্রুপে মুছে দেয়া হয় শুরু থেকেই, তারপরেও। আমাদের সদস্য সংখ্যা মাত্র ১, ১৩৩! সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশেরই আগ্রহের বিষয় সাহিত্য। বাংলা ভাষাতে চর্চা হলে হবে শুধু সাহিত্য কিম্বা সমাজ----আমাদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা এবং ‘লিটিল ম্যাগাজিনে’র অর্জন এই কুসংস্কৃতি। অসমিয়াতে কিন্তু চিত্রটি এরকম নয়, নয় বাংলাদেশেও। এই কুসংস্কৃতির বাইরে বেরুবার চেষ্টা করছে ঈশানের পুঞ্জমেঘ। গ্রুপ উদ্দেশ্যতে লিখে রেখেছে, “আমাদের ফেসবুক গ্রুপে বা ব্লগে লিখবেন শুধু ঈশান ভারতের লেখকেরাই। ... লিখবেন সাহিত্য, বিজ্ঞান, বিশ্বাস, ভূগোল,ইতিহাস, গণিত --যা তাদের মনে ধরবে তাই নিয়ে।” আশা করা যেতেই পারে, ঈশানের যে দৃঢ়তা , প্রতিশ্রুতি এবং আন্তরিকতা এই ক’বছরে যে আন্তর্জাল সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে তাতে একদিন সূর্যের ভোর... এই ঈশান কোনেও আসবেই। সেই ভোর দেখার সহযাত্রী এসে জুড়বেন অনেকেই । একদিন, হয়তো সবাই ।

আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন , আমি বাংলায় বাঁধি সুর :

         শেষ করবার আগে কিছু কাজের কথা লিখে যাই, নতুবা কম্প্যুটারের চিঁড়ে এতো সহজে ভিজবার নয় । আপাতত যাদের আগ্রহ বাড়ছে, বাড়ছে বলেই আমাদের ধারণা, তাদের জন্যে কিছু সংক্ষিপ্ত শলাপরামর্শ এখানে রইল। মূলত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কথা বলব। শুধু মনে রাখলে চলবে যে ম্যাক আর লিনাক্স বলেও আরো দু'টো জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমে কিন্তু অনেকেই কাজ করেন ।

১) কী করে বাংলা লিখবেন ?
       ক) বাংলা ইন্সক্রিপ্টঃ আগেই লিখেছি, আপনার কম্প্যুটারে ইতিমধ্যে এই সম্পদ রাখাই আছে। আপনি শুধু চেনেন না। কন্ট্রোল প্যানেলে যান। region and language লেখা অংশে ক্লিক করুন। যে ট্যাব খুলবে সেখানে keyboard and languages-এ ক্লিক করুন। change keyboardএ ক্লিক করুন। উপরে মেনু দেখে general-এ ক্লিক করুন। add বোতাম পাবেন। দুনিয়ার সব ভাষা আপনার সামনে এসে হাজির হবে। সেখানে আপনার মাতৃভাষাটিও পড়ে আছে দেখবেন অনাদরে। Bengali (Bangladesh) এবং Bengali (India) লেখা আছে দেখবেন। ডানে + চিহ্ন দেখে আপনার পছন্দেরটিতে ক্লিক করুন। নিশ্চয় আপনি দ্বিতীয়টিতেই করতে চাইবেন। Keyboard লেখা আছে দেখবেন। সেখানে অনেকগুলো বিকল্প দেখাবে। Bengali inscript লেখা দুই বিকল্পের ডানে বাক্সে ক্লিক করুন। টিক
টিক চিহ্ন বসবে
চিহ্ন বসবে। inscript  লেখাটার উপরে দু’বার ক্লিক করুন। আপনাকে লে আউট দেখাবে। আপনি পড়তে পারবেন না। ছবি ১৫ দেখুন। তাই আমরা সেটি আলাদা করে গোগোলে Bengali inscript layout লিখে ইমেজ সার্চ করে , একটা ইমেজ নামিয়ে প্রিন্ট আউট নিয়ে আপনার টেবিলের সামনে সেটে অভ্যাস করতে বলব। যাই হোক, এই ট্যাবে OK তে ক্লিক করুন। এই ট্যাব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ট্যাব খোলা আছে, সেখানে Language Bar মেনুতে ক্লিক করে যান। floating on Desktopএর ডানের বৃত্তে ক্লিক করুন । নিচের যে ক’টা মেনুর ডানে বর্গক্ষেত্র দেখবেন সবগুলো ক্লিক করে Apply, OKতে ক্লিক করে বেরিয়ে আসুন। আপনি এবারে বাংলাতে ওয়ার্ডে, ই-মেলে, ফেসবুকে বা ব্লগে লিখতে পারবেন। আপনার কম্প্যুটারের উপরে একটি কালো বার ভাসতে দেখবেন, যেখানে ইংরেজি লেখা। সেখানে ক্লিক করুন। BN (Bengali India) লেখা দেখবেন। ছবি -১৬- দেখুন , সেখানে ক্লিক করে বাংলা লিখুন। অথবা Shift , Ctrl বোতাম এক সংগে টিপেও আপনি ভাষা বদল করতে পারবেন।
(ছবি ১৫)

    খ) অভ্রঃ কিন্তু আপনি যদি আন্তর্জালেই থাকেন সবচাইতে ব্যবহার-বান্ধব "অভ্র' কেন ব্যবহার করবেন না। অনেকেই www দিয়ে ইউ আর এল লিংক জানতে চান। সে আরেক দুষ্কর কাজ মনে রাখা। সোজা Avro Keyboard লিখে গোগোলে সার্চ মারুন। আপনি অভ্র সংক্রান্ত হাজারো লিঙ্কে পৌঁছে যাবেন। শুরুতেই তাদের সাইট পাবেন। ওমিক্রণ ল্যাবের। অভ্র নামিয়ে নিন। সেট আপ কে কোথাও সেভ করুন। ভালো হয় D বা E ড্রাইভে আপনি Open Source Software লিখে একটি ফোল্ডার তৈরি করে রেখে দিন। আপনি "মুক্ত উৎস আন্দোলনে ' র শরিক হচ্ছেন , এই ফোল্ডার এবারে ভরতে থাকবে । সেট-আপে দু’বার ক্লিক করে ইন্সটল করুন। কম্প্যুটার বন্ধ করে আবার চালু করুন। আপনার কম্প্যুটারে "উন্মুক্ত হবে' বাংলা ভাষা। দেখবেন একটা লোক দৌড়ে দৌড়ে এরকমই একটা কথা বলতে বলতে ডেস্কটপের উপরে একটি বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেবে। একটি কালো বার ভেসে উঠবে। সেই বারের বিভিন্ন রং এবং চেহারা আছে আপনি বদল করতে পারেন সেটিঙে গিয়ে, আমরা করে রেখেছি Avro Royal ছবি ১৬-তেই দেখা যাচ্ছে। আপনি F 12 টিপে এখানে ভাষা বদল করতে পারবেন । অভ্রবার মেনুটা সামান্য দেখে নিন। আয়তনে খুবই ছোট, আসলে কিন্তু মহাভারত থেকে সামান্য ছোট । যেখানে English লেখা দেখবেন , সেটিতে ক্লিক করলেও বাংলা চলে আসবে। তার বায়ে দেখুন একটি নিম্নমুখী তির চিহ্ন আছে। ক্লিক করুন, আপনি বিভিন্ন লে আউটের নাম পাবেন। কিন্তু Avro Phonetic সিলেক্ট করা পাবেন। না থাকলে করে নিন। ছবি ১৬-খ দেখুন।       
(ছবি ১৬)
        

(ছবি ১৬-খ)
 আপনি যেটি সিলেক্ট করবেন সেই অনুযায়ী লে-আউট দেখাবে । পরের বোতাম, যেখানে একটি কী- বোর্ডের ছবি দেখাচ্ছে -- ক্লিক করে দেখুন। আপনি সেটি ইচ্ছে মতো ছোট বড় করতে পারবেন। বোতামগুলো টিপে দেখুন। এমনকি, Show on Top বোতামে টিপলে এই ছবি আপনার ডেস্কটপে সেটে থাকবে আপনি যখন লিখবেন। আলাদা করে দেয়ালে সেটে নিতে হবে না। এখানেই দেখে দেখে অভ্যাস করতে পারবেন। টাইপ করতে অসুবিধে হচ্ছে? তার পরের মাউসের ছবিতে ক্লিক করুন। আপনার জন্যে একটি কি- বোর্ড খুলে যাবে, সেখানে শুধু ক্লিক করে করে আপনি পুরো একখানা নিবন্ধ লিখে ফেলতে পারবেন। এমনকি আপনার লেখাতে ৠ, ৡ, ৵, ৶ এই সব ফেলে আসা দিনগুলোর হরফ দরকার পড়লেও নিশ্চিন্তে ইনসার্ট করে যেতে পারেন। বস্তুত মাঝে মধ্যে অসমিয়া লিখবার দরকার পড়তে আমি ৰ, ৱ এখান থেকেই নিই। এর পরের সেটিং বোতামটাও দেখে নিন। সময় নিয়েই দেখুন। ভালো করে। আমরা শুধু বলব, যদি অসুবিধে মনে করেন, তবে এখানে Avro phonetic মেনুতে ক্লিক করে, Show  Preview Window ক্লিক করে বন্ধ করে দিন। নইলে যেখানেই টাইপ করবেন, সেখানেই আপনি কোন রোমান চাবির কপালে টিপ দিলেন নিজে নিজেই দেখাতে থাকবে, অস্বস্তি বোধ করলেও করতে পারেন। আপনার কাজ কি শেষ হলো? মোটেও না! আপনি কি এমন বিচ্ছিরি বাংলা হরফে লিখতে চাইবেন? অভ্র নামালে সঙ্গে আদ্যিকালের "ভৃন্দা' ফণ্ট নামে, সঙ্গে "সুলেইমান লিপি'। অথচ অভ্র প্রচুর সুন্দর দৃষ্টি- নন্দন ফণ্টের সম্ভার নিয়ে বসে আছে। আবার ওদের সাইটে আসুন। তার জন্যে আপনাকে ব্রাউসার খুলবার দরকারই নেই। সেটিঙের পরের বোতামে টিপ দিন। ওমিক্রণল্যাবের একাধিক দরকারি পাতার লিঙ্ক পাবেন। এর মধ্যে একটি More free downloads হয়ে  Free Bangla Fonts এ চলে আসুন। সব ক’টা ফণ্টই নামিয়ে নিতে পারেন। তবে শুরুতে "আদর্শলিপি' এবং "বেন সেন' নামিয়ে আপনার কম্প্যুটারে ইন্সটল করে নিন। এবারে লিখতে থাকুন।
       ২) আপনার ব্রাউজারে বাংলাঃ   আপনি কি আন্তর্জালে লিখতে চান? দাঁড়ান, সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে দৌড়োবেন না। ব্রাউসারকে তৈরি করুন। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করেন ? ‘উনিশ শতকীয়’ ব্রাউসার। ভুলে যান। গোগোল ক্রোম ব্যবহার করেন? দৌড়োয় খুব। দেখে ভুলেন যারা, তাদের ব্রাউসার । ভুলে যান। বাংলা তথা ভারতীয় ভাষার জন্যে সবচাইতে ব্যবহার বান্ধব ব্রাউসার মজিলা ফায়ারফক্স। এখানে দেখুন, দুনিয়ার সব ভাষাতে মেলে ফায়ার ফক্সঃ www.mozilla.org/en-US/firefox/all/। (ছবি ১৭ )




(ছবি ১৭)
   আমাদের ব্রাউসারের মেনু অব্দি বাংলাতে দেখাচ্ছে,দেখুন। যদিও বাংলা আপনি যে কোনো ব্রাউসারেই পড়তে পারবেন। শুধু সেটিঙে গিয়ে তাকে তৈরি করে নিতে হবে। আমরা আগুন শেয়াল নিয়েই কথা বলব।  আপনি যদি আগুন শেয়ালের ইংরেজি সংস্করণ নামিয়েছেন, তাই সই । চলবে। যাই নামান, আপনাকে Tools, Options, Content, Advanced এই ক্রম অনুসারে ভাষা বদলের পাতাতে যেতে হবে, সেখানে ডানে বায়ে দীর্ঘ পাঁচটি ড্রপ ডাউন মেনু পাবেন, শুরুতেই। প্রথমটিকে বাংলা বা Bengali করুন। দ্বিতীয়টি ছুঁবেন না। তৃতীয় , চতুর্থ আর পঞ্চমে আপনার পছন্দের ফণ্ট বাছাই করুন। বেনসেন বা আদর্শলিপিই ভালো। ডানে দেখুন size লেখা আছে, সব ক’টাকে ১৬ বা তার উপরে করে বেরিয়ে আসুন। আসবার পথে OK বোতামে টিপতে ভুলবেন না। এবারে গোগোল সার্চে আপনার নাম লিখে দেখুন বাংলাতে। আপাতত কিছু না পেলে ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ই লিখুন না হয়। সার্চ দিন। আপনি বাংলার জগতে এসে গেলেন। (ছবি ১৭-খ)

(ছবি ১৭-খ)

    ৩) মোবাইলে বাংলাঃ মোবাইলে লিখবার অনেকগুলো উপায়ের কথা আমরা লিখেছি আগে। এণ্ড্রোয়েড সমর্থিত অপারেটিং সিস্টেমের সেটিঙে গিয়ে আপনি এমনিতেই বাংলা সন্ধান করে ফেলে সেটি সিলেক্ট করে আসুন। লিখতে পারবেন । আমরা এর চেয়েও ভালো একটি কি-বোর্ড নামাতে পরামর্শ দেবো। গোগোল প্লে স্টোর্সে যান। Multiling লিখে সার্চ করুন। নামিয়ে ইন্সটল করে নিন। ছবি ১৭-গ দেখুন।


(ছবি ১৭-গ)
(ছবি ১৮)

(ছবি ১৯)

(ছবি -২০)
(ছবি ২১)
আপনার স্ক্রীণটপে এর আইকন ছুঁয়ে খুলে ফেলুন। Enable Languages এ ছুঁয়ে ভেতরে যান। ছবি ১৮ দেখুন। প্রচুর ভাষা পাবেন। স্ক্রল করে নিচে যান। ‘বাংলা’ দেখে সিলেক্ট করে বেরিয়ে আসুন। ছবি ১৯ দেখুন। মোবাইল সেটিঙে যান। Languages and input দেখুন।  যে ট্যাব খুলবে সেখানে Multiling Keyboard সিলেক্ট করুন। ছবি -২০ দেখুন। Defaultএর ডানে কোনটাকে স্পর্শ করুন। দুটো বিকল্প পাবেন। Samsung keyboard কে অনির্বাচিত করুন। তথা বন্ধ করুন। দু’টো কি- বোর্ডকে এক সঙ্গে কাজ করতে দেয়া যাবে না। এবারে বেরিয়ে আসুন । আপনি এবারে এস এম এস থেকে সবই বাংলাতে লিখতে পারবেন। আন্তর্জালেও। ছবি ২১শে যেমন দেখানো আছে, আপনার কি-বোর্ডে নিচে কালো বাক্সে চিহ্নিত বোতামে টিপুন ইংরেজিতে ফিরে যাবার পথ-বিকল্পও পেয়ে যাবেন। অথবা, ইংরেজি লেখা থাকলে এখানে টিপেই আপনি বাংলাতে আসতে পারবেন।


       ৪) ব্লগ : আপনি বাংলা ভাষাতে আড্ডাই দেন শুধু? তবে আপনার পাঠ্যক্রম সাঙ্গ। ছুটি নিতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি হন কবি, কথাশিল্পী, নিবন্ধকার, বিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানী---আপনি কেন আপনার গুরুগম্ভীর রচনাগুলো আন্তর্জালে লিখে ছড়াবেন না। এমন এক জায়গাতে লিখবেন না যেখানে লেখা মানেই দুনিয়ার সামনে আপনি প্রকাশিতও হয়ে গেলেন। ব্লগ একাধারে হতে পারে আপনার লেখার খাতা, এবং সম্পাদিত ছাপা সংস্করণ।  সম্পাদক-প্রকাশকদের ইচ্ছে করলেই ছুট্টি দিয়ে দিতে পারেন। বর্তমান লেখক অসমিয়া উপন্যাস ‘ফেলানি’ পুরোটাই আগে একটি ব্লগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন, পরে এটি এখন ধারাবাহিক ছাপা হচ্ছে মাসিক "ব্যতিক্রমে'। আপনার কম্প্যুটারকে করুন, আপনার লেখার টেবিল এবং একাধারে বইমেলা । ব্লগ লিখুন। তাও বিনামূল্যে যত খুশি। আপনি টাকা দিয়ে নিজস্ব ডোমেইন কিনতে নিতে পারেন। কিন্তু পাঠশালার পাঠ সাঙ্গ না করে চাকরি চাইলে হবে টা কী? সেই পাঠ এই মুক্ত উৎসের দিনে বিনামূল্যে কেন নেবেন না! অনেকগুলো মঞ্চ আপনাকে সেই সেবা দেবার জন্যে তৈরি। যেমন,  গুগলের ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস, টেকনোরাতি, ব্লগ ডট কম, হোপব্লগ ইত্যাদি অন্যতম। তার মধ্যে প্রথম দু’টি সবচাইতে জনপ্রিয়। আমরা প্রথমটির কথা বলব। কেননা, ধরে নিচ্ছি যে আপনার জি-মেইল আছে। তবে আর আপনারা আলাদা করে ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড নিতে হবে না।   যেটি আছে, সেটিতেই হবে। আপনি শুধু গোগোলের মেনু গুলো সামান্য দেখে নিন। ওখানে গোগোল ডক, ড্রাইভ, ইউ ট্যুব, পিকাসা, গোগোল প্লাস এমন অনেক সেবা আছে যা শুধু ইমেইলে সাইন ইন করেই আপনি ব্লগেও ব্যবহার করতে পারবেন। ব্লগারে যাবার জন্যে আপনার ইমেল খুলে ক্রমানুসারে ছবি ২২ থেকে ২৫ দেখুনঃ ।
(ছবি ২২)

(ছবি ২৩)

(ছবি ২৪)
(ছবি ২৫)

  ছবি ২৫শে আপনি ব্লগার ড্যাসবোর্ডে চলে যাবেন। যেখান থেকে আপনি আসলে ব্লগটি নিয়ন্ত্রণ করবেন, লিখবেন, সম্পাদনা সবই করবেন। এই পাতা আপনি ছাড়া আর কেউ দেখবেন না। এটা আমাদের ড্যাসবোর্ড । তাই দু’টো ব্লগের নাম দেখাচ্ছে। আপনার দেখাবে আপনি ব্লগ তৈরি করে নিলে। অথবা আমাদের ব্লগে এসে প্রবেশ করলে , তবে। অন্যথা শুধু ঐ বায়ে দেখাবার মতো করে New Blog দেখাবে। সেখানে ক্লিক করে আপনি নতুন ব্লগ তৈরি করে নিতে পারেন। ইচ্ছেমতো নাম দিতে পারেন। বিনামূল্যে বলে সেই ব্লগের ইউ আর এল –এ blogspot.in কথাটা দেখাবে। আপনি ওদের থেকে ডোমেইন কিনে নিলে, সেটিও দেখাবে না। চাইলে আপনার বন্ধুদের নিয়ে সম্মিলিত ব্লগও করতে পারেন। তার জন্যে আপনাকে ড্যাসবোর্ড থেকে সেটিংসে যেতে হবে। blog authors এর ডানে নিচে দেখুন সামান্য নিচে Add authors লেখা আছে। সেখানে আপনার বন্ধুর ই-মেল দিয়ে দিন, তাঁর কাছে আমন্ত্রণ চলে যাবে। তিনি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেই হয়ে গেল আপনার বন্ধু গোষ্ঠীর সম্মিলিত ব্লগ। অগুনতি বন্ধু যোগ করতে পারেন, যদি তারা আপনার এই লিটিল ম্যাগাজিনের থেকেও কম মূল্য বা বিনামূল্যের প্রকাশনাতে লিখতে আগ্রহী হোন। ছবি -২৬ দেখুন।

( ছবি -২৬ )

    আমরা মুক্ত সংস্কৃতির কর্মী। আপনার দিকে হাত  বাড়িয়ে দিতে সদাই প্রস্তুত। শুধু বাংলা ভাষা এবং বাংলা বৌদ্ধিক সংস্কৃতির প্রচার এবং প্রসারের স্বার্থে। তাকে প্রযুক্তি বান্ধব করে তুলতে। এই সুদীর্ঘ নিরস লেখাটি ধৈর্য রেখে পড়বার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। যেতে যেতে ছবি-২৭শে  আমাদের অলঙ্কৃত ব্লগের মুখচ্ছবিগুলো সামান্য না দেখবেন কেন! এই ব্লগের নাম প্রেরণা আমরা নিয়েছিলাম, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনেরই প্রকাশিত,  কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী এবং তাঁর অধ্যপক ছাত্র বিশ্বতোষ চৌধুরী সম্পাদিত একটি কবিতার সংকলন থেকে। সেই আদ্যিকালের লেটার প্রেসে ছাপা হয়েছিল। আমাদের ব্লগের নাম শুধু এই কথাকেই চিহ্নায়িত করে যে তিনদশকে প্রজন্মান্তর ঘটে গেছে। বহু দূর এগিয়ে গেছি আমরা। এখন আর দাঁড়িয়ে থাকবার, পিছুটান দেবার কোনো মানেই হয় না।
(ছবি-২৭)

(ছবি ২৭-খ)



ধন্যবাদ!

1 comment:

rahul ganguli said...

খুব ভালো লাগলো আলোচনাটি