আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Sunday 22 April 2012

রবীন্দ্রনাথ এবং দুই-চার পাত কলে ছাঁটা বিদ্যা

মাকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ছাত্রবোধ্য একটা কিছু লিখতে বলা হয়েছিল অনেকদিন আগেই। একেবারে আমিতো লিখি, তায় ছাত্র পড়াই। এই নিয়ে  যদি এক ঘণ্টাতে কিছু না নামাতেই পারলাম, তবে আর আমার মান থাকে বা কিসে! এবারে এই মান রাখাটাই আমার ভাবনা হয়ে দাঁড়ালো, লেখাটা গৌণ। আমার মাথাতে ঘুরছিল রবিঠাকুরেরই একটি ছড়ার ক’টি লাইন, “সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে,/সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।/লেখার কথা মাথায় যদি জোটে/তখন আমি লিখতে পারি হয়তো।/কঠিন লেখা নয়কো কঠিন মোটে,/যা-তা লেখা তেমন সহজ নয় তো।’(উৎসর্গ;খাপছাড়া)সুতরাং যা হয় কিছু , লেখার কথা জুটছিল না মাথায় মোটে!             তারপর না হয় কিছু একটা দাঁড় করানোও গেল, ভাবতে বসলাম, পড়বেটা কে! ছাত্ররা পড়ে আজকাল? কাগজে পত্রে কিম্বা আড্ডাতে যে শুনি বক্তৃতা ভীষণ--- ‘যুবপ্রজন্মের অবক্ষয়!’ ঐ ‘কিশোর প্রজন্ম’ নিয়েও একই কথা। আচ্ছা, না হয় পড়লই বা! কী হবে! মনে থাকবে! জ্ঞান বাড়বে! পড়লে কি জ্ঞান বাড়ে? পড়ে এবং একমাত্র বই/ পত্রিকা  পড়েই যে জ্ঞান বাড়ে এইটেইতো আমাদের সব কুসংস্কারের বাড়া! ফলে আমরা কেমন কাব্যি করি, ‘লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে।” সত্যজিত রায়ের চলচ্ছবিতে একেই খানিক বিদ্রূপ করে বলা হয়েছিল, “লেখাপড়া করে যে গাড়িচাপা পড়ে সে।” ভাবখানা ঐ একই , উল্টোদিক থেকে। যার ছিল গাড়ি চড়ার কথা সে কিনা  পড়ে তলায় চাপা---বেকারদের নিয়ে আক্ষেপ! এই সাকার হওয়া, লিখে পড়ে ভালো বর এবং ঘর পাওয়া একেই যে আমরা বলি ‘মানুষ হওয়া’ এইটেইতো আমাদের সব সংস্কারের বড় সংস্কার। সত্যি কি আর ‘মানুষ’ হই !
            আচ্ছা, এই যে লিখলাম, বই পড়েই যে জ্ঞান বাড়ে এ আমাদের কুসংস্কার মাত্র!—কথাটা খুবই সহজ কিনা। কিন্তু কত সহজেই পাঠক আৎকে উঠবেন। এতো একেবারেই ছেলে মেয়েদের গোল্লায় যাবার পরামর্শ দেয়া! যে ছাত্র বই পত্তরের ধার ঘেঁসে না, নকল করে পাশ দেবার ধান্দাতে থাকে মশগুল-- তার পক্ষে কিনা ওকালতি! কিন্তু ভেবে দেখুন, পরীক্ষাতে নকল করে সেও কিন্তু এই সংস্কারে আচ্ছন্ন একেবারে। বইএর কথা সংগত কারণেই ওর মাথাতে ঢোকে না, অথচ  টোকাটুকিটা সে করে কিন্তু বইএর থেকেই। বাজারে চালু সহজ বই, নোট বই থেকে হলেও সেটি বইইতো!  তাঁর কিন্তু উচিৎ ছিল নকলটি না করে, সোজা আমাদের মতো মাষ্টার মশাইদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে ফেলা , যে বই আপনারা পড়ান, বাংলা কিম্বা ইংরেজিতে, তাতে আমার জীবনের কথা কিছু নেইতো! নেইতো নদী লঙ্গাই কিম্বা ডিহিঙের কথা। নেইতো, আমার গ্রামে গেল বর্ষার ঝড়ের কিম্বা বানের কথা! নেইতো, পাশের গায়ের চড়ক মেলার শিবদুর্গার নাচের কথা! আছিমগঞ্জের গেল উরুসের কথা! পাথারকান্দির রাশের কথা! নেইতো, ফুটো নৌকা আর ভাঙা লাঙল সারাইর কথা!  বলে যে না, কারণ বই নিয়ে যে সংস্কার তার প্রতি ভয়টা আমাদের ভূতের চেয়ে  কিছু কম না।
         আমরা কি রবীন্দ্রনাথ থেকে সরে এসছি? মোটেও না। কথাগুলোতো রবীন্দ্রনাথই লিখে গেছেন! সেই যে,     “... বইপড়াটা  যে শিক্ষার একটা সুবিধাজনক সহায়মাত্র, তাহা আর আমাদের মনে হয় না; আমরা বইপড়াটাকেই শিক্ষার একমাত্র উপায় বলিয়া ঠিক করিয়া বসিয়া আছি। এ সম্বন্ধে আমাদের সংস্কারকে নড়ানো বড়োই কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। মাস্টার বই হাতে করিয়া শিশুকাল হইতেই আমাদিগকে বই মুখস্থ করাইতে থাকেন। কিন্তু বইয়ের ভিতর হইতে জ্ঞানসঞ্চয় করা আমাদের মনের স্বাভাবিক ধর্ম নহে।” (আবরণ/ শিক্ষা) তবে স্বাভাবিক ধর্ম তথা সুসংস্কারটি কী?  আমরা লিখব একেবারে শেষে । আপতত এইটুকুন লেখা যাক যে ছেলেমেয়েরা তার পরিবার, চারপাশের সমাজ প্রকৃতির সঙ্গে খেলায়, লীলায় এবং ছোঁয়ায় যা কিছু শিখে আসে বইএর পাতা সেগুলো তাকে ভুলতে বলে। তাকে জানায় আর সবই অবিদ্যা, বইতেই শুধু জমানো আছে বিদ্যা!   এই সংঘাতের জ্বালা সয়ে সয়েই তার  মনের ধর্মের বিরুদ্ধে যেতে হয় বলেই   শুধু ছাত্র স্কুল পালায় না। বেচারারা দুর্বল বলেই দোষ চাপানো সহজ। স্কুল-কলেজ পালান শিক্ষক, অভিভাবক, সরকার প্রশাসন সব্বাই।  প্রত্যেকের শুধু পালাবার ধরণ আলাদা! এও পালাবারই একটি ধরণই বটে,  “কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের মাস্টাররা বই পড়াইবার একটা উপলক্ষমাত্র; আমরাও বই পড়িবার একটা উপসর্গ। ইহাতে ফল হইয়াছে এই, আমাদের শরীর যেমন কৃত্রিম জিনিসের আড়ালে পড়িয়া পৃথিবীর সঙ্গে গায়ে-গায়ে যোগটা হারাইয়াছে এবং হারাইয়া এমন অভ্যস্ত হইয়াছে যে, সে-যোগটাকে আজ ক্লেশকর লজ্জাকর বলিয়া মনে করে-- তেমনি আমাদের মন এবং বাহিরের মাঝখানে বই আসিয়া পড়াতে আমাদের মন জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগের স্বাদ-শক্তি অনেকটা হারাইয়া ফেলিয়াছে। সব জিনিসকে বইয়ের ভিতর দিয়া জানিবার একটা অস্বাভাবিক অভ্যাস আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল হইয়া গেছে। পাশেই যে-জিনিসটা আছে, সেইটেকেই জানিবার জন্য বইয়ের মুখ তাকাইয়া থাকিতে হয়। নবাবের গল্প শুনিয়াছি, জুতাটা ফিরাইয়া দিবার জন্য চাকরের অপেক্ষা করিয়া শত্রুহস্তে বন্দী হইয়াছিল। বইপড়া বিদ্যার গতিকে আমাদেরও মানসিক নবাবি তেমনি অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিয়াছে। তুচ্ছ বিষয়টুকুর জন্যও বই নহিলে মন আশ্রয় পায় না। বিকৃত সংস্কারের দোষে এইরূপ নবাবিয়ানা আমাদের কাছে লজ্জাকর না হইয়া গৌরবজনক হইয়া উঠে, এবং বইয়ের ভিতর দিয়া জানাকেই আমরা পাণ্ডিত্য বলিয়া গর্ব করি। জগৎকে আমরা মন দিয়া ছুঁই না, বই দিয়া ছুঁই।” (ঐ)
          ভাবছিলাম এই বইপত্তর, লেখা পড়া এইসব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী লিখে গেছেন, তাই নিয়েই দুটো কথার জাল ফাঁদব। কিন্তু সেওতো হবে বই দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ছোঁয়া এবং ছোঁয়াবার প্রয়াসমাত্র। নাহয় আমার রবীন্দ্রনাথ পড়াই আছে, কিন্তু যাদের জন্যে লিখছি-- সেইসব ‘সর্বশিক্ষার’ যুগের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়েতো নেই কোনো অধ্যয়ণ কিম্বা অনুশীলন। ফলে আমার লেখাগুলো চোখের ভেতর দিয়ে মর্মে গিয়ে না যদি পৌঁছোয় তবে লজ্জাটা আমার শুধু, আর কারো না। এই কথাটা শুরুতেই বলে রাখলুম। এবারে “কে হায় হৃদয় খুঁড়ে ‘লজ্জার’ বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?” আমার কাছে তাই কাজটা সহজ ছিল না কেন কিছুতেই, আশা করছি এবারে বোঝানো গেল।
            বই দিয়ে জগৎ ছুঁয়ে ছুঁয়েই আমরা ‘গাড়িঘোড়া’ চড়বার স্বপ্ন যখন দেখি, ‘মানুষ’ হবার প্রকল্পটা সজ্ঞানেই মুলতুবি করে রাখি যখন  তখন ঐ ‘অবক্ষয়’ ব্যাপারটা যে একেবারেই ছেয়ে যাবে, ‘আজকালকার ছেলেমেয়ে’দের নিয়ে বিপন্ন বোধ করবেন সেকালের লোকজন সে আর ওমন অবাক করা কথা কী? তাঁরা তখন আমাদের নীতিশিক্ষা দেবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, লেটেষ্ট ফ্যাসন হলো, স্কুলে কলেজে ‘ভ্যালু -এডুকেশন!’ ওখানেও রবীন্দ্রনাথ আমাদের,  মানে  সেকালের লোকজনদের,  হতাশ করেছেন। তিনি সত্যি ‘গুরুদেব’!  ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা জেনে আনন্দে হুল্লোড় করতে পারেন যে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “ব্রহ্মচর্যপালনের পরিবর্তে আজকাল নীতিপাঠের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। যে-কোনো উপলক্ষে ছাত্রদিগকে নাতি-উপদেশ দিতে হইবে, দেশের অভিভাবকদের এইরূপ অভিপ্রায়।ইহাও ঐ কলের ব্যাপার। নিয়মিত প্রত্যহ খানিকটা করিয়া সালসা খাওয়ানোর মতো খানিকটা নীতি-উপদেশ-- ইহা একটা বরাদ্দ; শিশুকে ভালো করিয়া তুলিবার এই একটা বাঁধা উপায়।নীতি-উপদেশ জিনিসটা একটা বিরোধ। ইহা কোনোমতেই মনোরম হইতে পারে না। যাহাকে উপদেশ দেওয়া হয় তাহাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। উপদেশ হয় তাহার মাথা ডিঙাইয়া চলিয়া যায়, নয় তাহাকে আঘাত করে। ইহাতে যে কেবল চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহা নয়, অনেক সময় অনিষ্ট করে। সৎকথাকে বিরস ও বিফল করিয়া তোলা মনুষ্যসমাজের যেমন ক্ষতিকর এমন আর কিছুই নয়-- অথচ অনেক ভালো লোক এই কাজে উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়াছেন, ইহা দেখিয়া মনে আশঙ্কা হয়।সংসারে কৃত্রিম জীবনযাত্রায় হাজার রকমের অসত্য ও বিকৃতি যেখানে প্রতিমুহূর্তে রুচি নষ্ট করিয়া দিতেছে সেখানে ইস্কুলে দশটা-চারটের মধ্যে গোটাকতক পুঁথির বচনে সমস্ত সংশোধন করিয়া দিবে ইহা আশাই করা যায় না। ইহাতে কেবল ভুরি ভুরি ভানের সৃষ্টি হয়, এবং নৈতিক জ্যাঠামি যাহা সকল জ্যাঠামির অধম, তাহা সুবুদ্ধির স্বাভাবিকতা ও সৌকুমার্য নষ্ট করিয়া দেয়।” (শিক্ষাসমস্যা/ শিক্ষা) তাই বলে কি, ছেলেমেয়েদের জাহান্নমে পাঠাবার ব্যবস্থা বাৎলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ? মোটেও না, শুধু জাগাতে চাইছিলেন কর্তব্যবোধ। সে ঐ ‘গুরুজনের আদেশ অমান্য করতে নেই’ জাতীয় কর্তব্যবোধও নয়। এই জীবন নিয়ে সে করবেটা কী, সেই কাজের বোধ। আমরা শুধু জাগিয়ে চলি পড়ার বোধ! নীতিকথাটাও পড়ার জিনিস!নীতিকথার বই বাজারে বিক্রির জিনিস!
            মূল্যবোধটা সেই কাজের বোধ  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দেখা যে দেয় না, এই বোধই আমরা হারিয়ে বসে আছি।  যে ছেলে কবি হবে বলে ঠিক করেছে সে হয়তো  নদীর টানে পাড়ে গিয়ে একান্তে বসে থাকতে  ভালোবাসবে, থাকবে অন্যমনস্ক। কিন্তু যে ছেলে সমাজসেবা করবে বলে ঠিক করেছে তাকেতো জানতেই হবে কী করে বন্ধু বাড়াতে হয়, জয় করতে হয় শত্রুর মন। তিনি লিখছেন, “মানবহৃদয়ে সুখস্পৃহাই একমাত্র চালক-শক্তি। ইচ্ছা করিয়া কেহ কখনো দুঃখ সহ্য করে না। কথাটা শুনিবামাত্রই অনেকে তাড়াতাড়ি প্রতিবাদ করিতে উঠিবেন, কিন্তু একটু বুঝাইয়া বলি। কর্তব্যপালনের জন্য অনেক সময় কষ্ট সহ্য করিতে হয় বটে, কিন্তু কর্তব্যপালনেই আমার যে আন্তরিক সুখ হয়, সেই সুখ ওই কষ্ট অপেক্ষা বলবান বলিয়া, কিংবা পরকালে অধিক পরিমাণে সুখ পাইবার অথবা ততোধিক দুঃখ এড়াইবার আশায় আমরা কর্তব্যের অনুরোধে কষ্ট সহ্য করিয়া থাকি। এ স্থলে আমি ফিলজফির নিগূঢ় তর্ক তুলিতে চাহি না; কিন্তু সকলেই বোধ হয় নিদানপক্ষে এ কথাটা স্বীকার করিবেন যে, লোকে সুখের প্রলোভনেই অন্যায় পথ অবলম্বন করে, এবং কর্তব্যের প্রতি আন্তরিক টানই এই প্রলোভন অতিক্রম করিবার একমাত্র উপায়।” (ছাত্রদের নীতিশিক্ষা / শিক্ষা)
     
     আমি আশা করছি, স্কুল পালানো ছেলেমেয়েরা যদি বা পড়ছে এই লেখা, এইবারে একটু নড়েচড়ে বসেছে। স্কুল না ভালো লাগাটা এক্কেবারেও অপরাধ কিছু নয়! স্কুল নিয়ে ইনি যা লিখেছেন তা হচ্ছেগে সব লেখার বাড়া, “ইস্কুল  বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা  খোলে। কল চলিতে আরম্ভ হয়, মাস্টারেরও মুখ চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়, মাস্টার-কলও তখন মুখ বন্ধ করেন, ছাত্ররা দুই-চার পাত কলে ছাঁটা বিদ্যা লইয়া বাড়ি ফেরে। তার পর পরীক্ষার সময় এই বিদ্যার যাচাই হইয়া তাহার উপরে মার্কা পড়িয়া যায়।কলের একটা সুবিধা, ঠিক মাপে ঠিক ফরমাশ-দেওয়া জিনিসটা পাওয়া যায়-- এক কলের সঙ্গে আর-এক কলের উৎপন্ন সামগ্রীর বড়ো-একটা তফাত থাকে না, মার্কা দিবার সুবিধা হয়।কিন্তু এক মানুষের সঙ্গে আর-এক মানুষের অনেক তফাত। এমন-কি, একই মানুষের একদিনের সঙ্গে আর-একদিনের ইতর-বিশেষ ঘটে।তবু মানুষের কাছ হইতে মানুষ যাহা পায় কলের কাছ হইতে তাহা পাইতে পারে না। কল সম্মুখে উপস্থিত করে কিন্তু দান করে না। তাহা তেল দিতে পারে কিন্তু আলো জ্বালাইবার সাধ্য তাহার নাই।”(শিক্ষাসমস্যা/ শিক্ষা) এইবারে, জীবনে যারা আলো জ্বালাতে চায়, তারাতো স্কুল পালাবেই, রবীন্দ্রনাথও পালাতেন। এবং নিজের ছেলেমেয়েদের কাউকেই লেখাপড়া করবার জন্যে কোনো প্রতিষ্ঠিত স্কুলে পাঠান নি। সেই শিলাইদহের গাঁয়ে প্রজাদের পড়াবার ব্যবস্থা করতে নিজের মতো একটা পাঠশালা করেছিলেন, সেখানেই ওদের হাতে খড়ি। তাঁর সেইসব প্রয়াসই পরে শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন, বিশ্বভারতীতে ডানা ডালপালা মেলে, যেগুলোকে আমরা ছেঁটেছি প্রচুর পরে , যতই তাঁর নামে দোহার দিইনা কেন, ছড়াইনি কিন্তু তেমন! কারণ তাতে বৃটিশও বিপদ দেখত প্রচুর, এক্কেবারে নির্দেশিকা জারি করে আদেশ দিয়েছিল কোনো সরকারি কর্মচারী যেন শান্তিনিকেতনে ছেলে না পাঠান। আমরাও এখনো বৃটিশ থেকে কম কিছু না। বিলেতি নেশার ছাড়িনিতো কিছুই। গেল দুই দশকে নতুন করে মাতাল হয়েছি বরং। শুধু কি বই পড়লেই হলো! পড়তে হবে ইংরেজিতে! তবেই বুঝি, কার কত জ্ঞান! আপনাকে যদি অচেনা কেউ কখনো মুখ্যু সুখ্যু কিছু ভেবে উপেক্ষা করে, মুখের উপর দুটো ইংরেজি ঝেড়ে দিন, টুক করে সেলাম ঠুকে দেবে, চায়ের আড্ডাতে ডাক দেবে। যে শুধু উচ্চারণ করতে জানে, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর/আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী/বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,/যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে/উচ্ছ্বসিয়া উঠে …”ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি  সে তেমন জানে না কিছুই। কিন্তু যে জানে গুরুগম্ভীর স্বরে আবৃত্তি করতে, “Where the mind is without fear and the head is held high/Where knowledge is free/Where the world has not been broken up into fragments/By narrow domestic walls/Where words come out from the depth of truth “ ...etc. etc. etc… তার সত্যি সত্যি কদর ভীষণ ‘the head is held high’! আজকাল ইংরেজি স্কুলেও ঘটা করে রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী পালিত হয়ে থাকে। একমাত্র রবীন্দ্রনাথ কেটে ছেঁটেই সেটি করা সম্ভব। অনুবাদ করেও তাঁর সত্য কথাগুলোর সবটা যে উচ্চারিত  হবে সেখানে সে প্রায় অসম্ভব! জন্ম জয়ন্তী তাই আড়ম্বড় যতটা, আন্তরিকতা নয় ততটা মোটেও। 
          সে যে কী ভীষণ মেকি, কী ভীষণ নকল ‘শিরে’র আস্ফালন আমরা আঁচ করেও যেন অসহায়! যারা ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়ছেন না তাদের মধ্যেই যেন এই নিয়ে লজ্জাকে সংক্রমিত করে দেয়া হয়েছে ভীষণ রকম। সেই সব ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয় কলেজে , তাই চিনি তাদের লজ্জার চেহারাটা।  কোনো বিদ্বেষ ছিল না, রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি ভাষাটির প্রতি, তাঁর        ‘  ইংরেজি সহজ শিক্ষা’ নামে একাধিক পাঠ্য বইও আছে। ওমন ইংরেজি শেখার সহজ বই সত্যি, আমাদের চোখে পড়ে নি আজো। পড়ে দেখবেন, সেই বইগুলোতে ছাত্রদের পড়ে মুখস্থ করবার একটিও লাইন নেই। কিন্তু শিক্ষকের করবার আর করাবার নির্দেশ রয়েছে শুরু থেকে শেষ। কিন্তু বাংলা তথা মাতৃভাষার প্রতি যে বিদ্বেষ এবং উপেক্ষা তার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন নিরলস সংগ্রামী আজীবন! এক জায়গাতে লিখছেন, “এক তো, ইংরেজি ভাষাটা অতিমাত্রায় বিজাতীয় ভাষা। শব্দবিন্যাস পদবিন্যাস সম্বন্ধে আমাদের ভাষার সহিত তাহার কোনোপ্রকার মিল নাই। তাহার পরে আবার ভাববিন্যাস এবং বিষয়-প্রসঙ্গও বিদেশী। আগাগোড়া কিছুই পরিচিত নহে, সুতরাং ধারণা জন্মিবার পূর্বেই মুখস্থ আরম্ভ করিতে হয়। তাহাতে না চিবাইয়া গিলিয়া খাইবার ফল হয়। হয়তো কোনো-একটা শিশুপাঠ্য রীডারে hay makingসম্বন্ধে একটা আখ্যান আছে, ইংরেজ ছেলের নিকট সে-ব্যাপারটা অত্যন্ত পরিচিত, এইজন্য বিশেষ আনন্দদায়ক; অথবা snowball খেলায় Charlieএবং Katielমধ্যে যে কিরূপ বিবাদ ঘটিয়াছিল তাহার ইতিহাস ইংরেজ-সন্তানের নিকট অতিশয় কৌতুকজনক, কিন্তু আমাদের ছেলেরা যখন বিদেশী ভাষায় সেগুলা পড়িয়া যায় তখন তাহাদের মনে কোনোরূপ স্মৃতির উদ্রেক হয় না, মনের সম্মুখে ছবির মতো কিছু দেখিতে পায় না, আগাগোড়া অন্ধভাবে হাতড়াইয়া চলিতে হয়।আবার নীচের ক্লাসে সে-সকল মাস্টার পড়ায় তাহারা কেহ এন্ট্রেন্স পাস, কেহ বা এন্ট্রেন্স ফেল, ইংরেজি ভাষা ভাব আচার ব্যবহার এবং সাহিত্য তাহাদের নিকট কখনোই সুপরিচিত নহে। তাহারাই ইংরেজির সহিত আমাদের প্রথম পরিচয় সংঘটন করাইয়া থাকে। তাহারা না জানে ভালো বাংলা, না জানে ভালো ইংরেজি; কেবল তাহাদের একটা সুবিধা এই যে, শিশুদিগকে শিখানো অপেক্ষা ভুলানো ঢের সহজ কাজ, এবং তাহাতে তাহারা সম্পূর্ণ কৃতকার্যতা লাভ করে।বেচারাদের দোষ দেওয়া যায় না। Horse is a noble animal--বাংলায়  তর্জমা করিতে গেলে বাংলারও ঠিক থাকে না, ইংরেজিও ঘোলাইয়া যায়। কথাটা কেমন করিয়া প্রকাশ করা যায়। ঘোড়া একটি মহৎ জন্তু, ঘোড়া অতি উঁচুদরের জানোয়ার, ঘোড়া জন্তুটা খুব ভালো-- কথাটা কিছুতেই তেমন মনঃপূতরকম হয় না, এমন স্থলে গোঁজামিলন দেওয়াই সুবিধা। আমাদের প্রথম ইংরেজি শিক্ষায় এইরূপ কত গোঁজামিলন চলে তাহার আর  সীমা নাই। ফলত অল্পবয়সে আমরা যে ইংরেজিটুকু শিখি তাহা এত যৎসামান্য এবং এত ভুল যে, তাহার ভিতর হইতে কোনোপ্রকারের রস আকর্ষণ করিয়া লওয়া বালকদের পক্ষে অসম্ভব হয়-- কেহ তাহা প্রত্যাশাও করে না। মাস্টারও বলে ছাত্রও বলে, আমার রসে কাজ নাই, টানিয়া-বুনিয়া কোনোমতে একটা অর্থ বাহির করিতে পারিলে এ যাত্রা বাঁচিয়া যাই, পরীক্ষায় পাস হই; আপিসে চাকরি জোটে। সচরাচর যে-অর্থটা বাহির হয় তৎ-সম্বন্ধে শঙ্করাচার্যের এই বচনটি খাটে :অর্থমনর্থং ভাবর নিত্যং/নাস্তি ততঃ সুখলেশঃ সত্যম্।অর্থকে অনর্থ বলিয়া জানিয়া, তাহাতে সুখও নাই এবং সত্যও নাই।” (শিক্ষার হেরফের/ শিক্ষা)
             সেই কবে, এক শতাব্দি আগে পরাধীন ভারতে শিক্ষাকে আমরা চাকরি জোটাবার অস্ত্র হিসেবে পেয়েছি এবং সেভাবেই নিয়েছি। ইংরেজকে বিদেয় দিলেও চাকরির বাজারে তার ভাষাটিকে বিদেয় করিনি তো বটেই, বরং তাকেই আরো ঘসে মেজে সাফসুতরো করে করে মরচে না পরে সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি। এবারে সেটি ঠিক না বেঠিক কাজ যে আরেক বিশাল তর্ক। ইংরেজি নইলে আজকের দিনে ঠিক আন্তর্জাতিক মানুষ হয়ে ওঠা যাবে না, এই বিশ্বাসও যে মূলত বিলেতিদের দিয়ে যাওয়া  এবং তোতাপাখির মতো মুখস্ত করতে করতেই পাওয়া সে আমাদের ভুলেও মনে হয় না। হতো যদি , আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোও এককালের বিলেতি উপনিবেশ না হতো, তাদের থেকেও শেখা যেত। আছে বটে চিন, যারা চিনা ভাষাতেই বিশ্বজয় করেছে। কিন্তু হিমালয়ের প্রকৃতি এবং রাজনীতি আমাদের চোখ আড়াল করে রেখেছে। সে আড়ালও ভেদ করা যেত হয়তো, যদি চিন্তা করতে পেতাম, পেতাম কল্পনা করতে। মুখস্থ করবার ফাঁকে ফাঁকে পেতাম কিছু অবসর। যত দিন যাচ্ছে, বাজারের ইংরেজির দাপটে সেইসব অবসরগুলোও আমাদের জীবন থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
                    সেই একশতাব্দী আগে রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ এখনো আরো ভয়াবহ সত্য বই কম কিছু করিনি আমরা, “আমরা বাল্য হইতে কৈশোর এবং কৈশোর হইতে যৌবনে প্রবেশ করি কেবল কতকগুলা কথার বোঝা টানিয়া। সরস্বতীর সাম্রাজ্যে কেবলমাত্র মজুরি করিয়া মরি, পৃষ্ঠের মেরুদণ্ড বাঁকিয়া যায় এবং মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ হয় না। যখন ইংরেজি ভাবরাজ্যের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আর  সেখানে তেমন যথার্থ অন্তরঙ্গের মতো বিহার করিতে পারি না। যদি বা ভাবগুলা একরূপ বুঝিতে পারি কিন্তু সেগুলাকে মর্মস্থলে আকর্ষণ করিয়া লইতে পারি না; বক্তৃতায় এবং লেখায় ব্যবহার করি, কিন্তু জীবনের কার্যে পরিণত করিতে পারি না।...... অসভ্য রাজারা যেমন কতকগুলা সস্তা বিলাতি কাচখণ্ড পুঁতি প্রভৃতি লইয়া শরীরের যেখানে সেখানে ঝুলাইয়া রাখে এবং বিলাতি সাজসজ্জা অযথাস্থানে বিন্যাস করে, বুঝিতেও পারে না কাজটা কিরূপ অদ্ভুত এবং হাস্যজনক হইতেছে, আমরাও সেইরূপ কতকগুলা সস্তা চকচকে বিলাতি কথা লইয়া ঝলমল করিয়া বেড়াই এবং বিলাতি বড়ো বড়ো ভাবগুলি লইয়া হয়তো সম্পূর্ণ অযথাস্থানে অসংগত প্রয়োগ করি, আমরা নিজেও বুঝিতে পারি না অজ্ঞাতসারে কী একটা অপূর্ব প্রহসন অভিনয় করিতেছি এবং কাহাকেও হাসিতে দেখিলে তৎক্ষণাৎ য়ুরোপীয় ইতিহাস হইতে বড়ো বড়ো নজির প্রয়োগ করিয়া থাকি।” ( শিক্ষার হেরফের/শিক্ষা)
            এই আমাদের মানুষ হওয়া। এই কাজ যে ভালো করতে পারে আমরা তাকেই বলি শিক্ষিত এবং সমীহ করি। এমন শিক্ষিতের দেখা যে কেবল  আজকালকার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গুলোতেই মেলে তাতো নয়, বাংলা তথা ভারতীয় ভাষামাধ্যমের স্কুলগুলো এই ব্যামো থেকে কোনোকালেই মুক্ত ছিলনা বলেই সুযোগ পেতেই সেই সব স্কুল থেকে পাশ করা ছাত্ররাই গেল দুই দশকে ইংরেজি মাধ্যমের বাজার খুলে বসেছেন দেশজুড়ে। আমাদের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা, মণিপুরি, সাদ্রি   হবেটা কি, তার ভেতরকার ভাবখানাতো সেই বিলেতি ভিক্ষের দানে পাওয়া। তাই ‘বাংলা ভাষা’ কথাটা উচ্চারণ করলেই আমাদের মনে পড়ে বাংলা সাহিত্যের কথা, কিন্তু ‘ইংরেজি’ বললেই জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি আরো কত কী? বাংলা ভাষার বই বললে বুঝি সাহিত্যের বই, পত্রিকা বললে বুঝি সাহিত্যের পত্রিকা। সেই পত্রিকাতে যে  হাডু-ডু-ডু, কবাডি খেলা থেকে শুরু করে গ্রহান্তরের জীবের ইতিহাস চর্চা করা যেতে পারে সে  আমাদের দূর দূর অব্দিও কল্পনাতেই আসে না। তাই স্কুলের মারের ভয় কেটে যাবার পর আর ঐ সব বই পত্রিকার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। তখন আবার সেই সব লিখিয়েদের মুখেই শোনা যায়  ভাষার বিপন্নতা নিয়ে হাহাকার! সে হাহাকার করতে হয় বলেই করা। হাহাকারের ভেতরকার রহস্য নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না, কারণ আমাদের মাথা ঘামাতে শেখানো হয় নি,  আমরা কল্পনার মানুষই নই, মানুষ মুখস্থবিদ্যার।
             সেই যে পাঠশালাতে ‘মিথ্যেবাদী রাখাল বালকে’র গল্প মুখস্থ দিয়ে আমাদের সাহিত্যের এবং নীতিকথার পাঠ শুরু হয়, শেষ হয় ‘তোতা-কাহিনী’র সপ্রসঙ্গ ব্যাখা  উগরে দিয়ে। মাঝের দিনগুলোতে কেউ আমাদের  রাখাল বালকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়া তো দূর, ‘তোতাকাহিনী’র নাট্যরূপান্তর করে অভিনয় করতেও পরামর্শ দেবেন না। দেনও যদি, সেই ঐ গ্রীষ্মের কিম্বা পুজোর ছুটির  আগের দিনে কিম্বা রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তীতে। রুটিনের বাইরে। তার জন্যে পরীক্ষাতে মার্ক্স দুটো কমলেও কমতে পারে, বাড়বার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ছেলে স্কুলে নাটক করবে জানলে বহু বাবা ছেলেকে বাড়ি আটকে রাখতে এখনো ভালোবাসেন!  আমাদের মনের  সৃজনী সম্ভাবনাও  যেটুকু ছিল তাও উবে যায়, থাকে শুধু অনুকরণ আর  অনুরণন।
              আমরা একটি প্রশ্নের উত্তর মুলতুবি রেখে এগিয়েছিলাম,  মনের স্বাভাবিক ধর্ম তথা সুসংস্কারটি কী? রবীন্দ্রনাথ লিখছেন,  “প্রত্যক্ষ জিনিসকে দেখিয়া-শুনিয়া নাড়িয়া-চাড়িয়া সঙ্গে সঙ্গেই অতি সহজেই আমাদের মননশক্তির চর্চা হওয়া স্বভাবের বিধান ছিল। অন্যের অভিজ্ঞাত ও পরীক্ষিত জ্ঞান, তাও লোকের মুখ হইতে শুনিলে তবে আমাদের সমস্ত মন সহজে সাড়া দেয়। কারণ, মুখের কথা তো শুধু কথা নহে, তাহা মুখের কথা। তাহার সঙ্গে প্রাণ আছে; চোখমুখের ভঙ্গি, কণ্ঠের স্বরলীলা, হাতের ঈঙ্গিত-- ইহার দ্বারা কানে শুনিবার ভাষা, সংগীত ও আকার লাভ করিয়া চোখ কান দুয়েরই সামগ্রী হইয়া উঠে। শুধু তাই নয়, আমরা যদি জানি, মানুষ তাহার মনের সামগ্রী সদ্য মন হইতে আমাদিগকে দিতেছে, সে একটা বই পড়িয়া মাত্র যাইতেছে না, তাহা হইলে মনের সঙ্গে মনের প্রত্যক্ষ সম্মিলনে জ্ঞানের মধ্যে রসের সঞ্চার হয়।” (আবরণ/ শিক্ষা) সোজা কথাটা হলো বইএর সঙ্গে নয়, জীবনের সঙ্গে চারপাশের সমাজ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সহজ যোগের   সাধনাটাই হলো শিক্ষা। বাল্মিকি মুনি লব-কুশকে রামায়ণ পড়িয়েছিলেন বটে, কিন্তু সে মুখস্থ করতে দিয়ে নয়---গাইতে দিয়ে।   শুনেছি, আজকাল সর্বশিক্ষা অভিযানে তেমন ভাবনা কিছু কিছু ভাবা হচ্ছে। জানি না, আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তেমন নেই। কিন্তু মহাবিদ্যালয়ে যে ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয় তাতে এই বিশ্বাস বাড়ে যে পাশের হার বেড়েছে হয়তো, ‘মানুষে’র হার এখনো বাড়েনি বিশেষ। এখনো ছেলেমেয়েরা জানেনা, এই জীবন নিয়ে করবেটা কী! দুই একজন চটপটে জবাব দেয় , সে হবে ডাক্তার কিম্বা ইঞ্জিনিয়ার! ওরকম জবাব কানে পড়লেই বুঝি সে ঐ পুতুলের অনুরণন মাত্র। মানবিক  স্বাতন্ত্র্যে ভর করে তাতে  অনুযোজন নেই কোনো। আর  সে ব্যর্থতা ছোটদের নয়, আমরা যারা বড় বলে বড়াই করি –সেই তাদের । আমাদের হাঁটতে হবে আরো দূর বহু দূর। রবীন্দ্রনাথ আমাদের পথ দেখাতে পারেন। সেই বিশ্বাস উস্কে দিতেই এ ক’লাইন লেখার প্রয়াস নিলাম। এই মানুষটিকে আমরা স্মরণ করেছি প্রচুর, কিন্তু কাজকে করেছি ‘বিস্মরণ’।




4 comments:

mani said...

পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, মানুষ এত গভীরভাবে ভাবতে পারে কি করে? আপনি শিক্ষক মানুষ, আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ধৃষ্টতা আমার নেই। আপনি সত্যিই ভাল লেখেন।

সুশান্ত কর said...

ওমা! তাই বুঝি! সে আপনার বদান্যতা আপনাকে লেখাটা মুগ্ধ করেছে, নইলে এতো সবি তাঁরই ভাবনা, আমি পুনরুপস্থাপন করলাম মাত্র! হ্যা,আমি একটু নুন ঝাল মিশিয়ে দিই আরকি, নিজের মতো করে।

mustafezur390 said...

"রবীন্দ্রনাথ এবং দুই-চার পাত কলে ছাঁটা বিদ্যা" আপনার লেখাটি পড়ে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলাম না।ভাইয়া খুবই ভাল পোস্ট।ধন্যবাদ।আমার একটা ক্ষুদ্র ব্লগ bangla newspaper আছে সুযোগ পেলে দেখবেন আশা করি।
bangladeshi newspaper

সুশান্ত কর said...

আপনার ভালো লাগা, আমাকে অনুপ্রাণিত করল মুস্তাফা ভাই। নিশ্চয়ই আপনার ব্লগ দেখব।