(ছবি ঋণঃ আনন্দবাজার পত্রিকা) |
সম্প্রতি
দেখলাম, কেউ
কেউ স্টেটাস দিয়ে
জানাচ্ছেন দেখলাম ফেসবুকে আর ভালো লাগছে না। যারা জানাচ্ছেন , তারা যে ফেসবুকের চমকে ধরা কে সরা জ্ঞান করছিলেন , তাও দেখছিলাম। ভালো যদি নাই লেগে থাকে, সে আমাদের কাছে সুসংবাদ। আন্তর্জালে আমার উপস্থিতি এই
ফেব্রুয়ারিতে এক দশক পার করেছে। আন্তর্জালে বাংলা লেখালেখি ভারতেই যারা শুরু
করেছিলেন, খুব অতিশয়োক্তি হবে
না, তাদের প্রথম দিককার মানুষ আমি। তখন
পূর্বোত্তরে কেউ লিখতেনই না। গোটা ভারতে যে কজন হাতগুণা লিখতেন, আমরা বলতে গেলে পরস্পরকে চিনতাম। ফেসবুক থাকলেও সেরকম
জনপ্রিয় ছিল না। তখন ব্লগ ছিল, ছিল ই-মেল গ্রুপ, অর্কুট , ইত্যাদি। অসমিয়াতেও
কেউ লিখতেন না। ২০১০এ ফেসবুক পোষ্ট করলেই ই-মেলে চলে যাচ্ছে, দেখে ব্যবহারকারী হুহু করে বাড়তে শুরু করে। আমরা সেই
সময় অসমিয়ার প্রচারে প্রসারেও কাজ করি যেমন, পূর্বোত্তরে বাংলা
লেখালেখি নিয়েও কাজ শুরু করি। রোমানে বাংলা--অসমিয়া লিখিয়েদের থেকে কত গালি অপমান
যে সইতে হয়েছে বোঝাই কী করে! এক বন্ধু প্রায় বাজিই ধরেছিলেন আন্তর্জালে বুঝি বাংলা
লেখাই যায় না। তাঁকে যখন শিলচরে গিয়ে প্রায় জোরে ধরেই বাংলা লেখা দেখাই, শেখাই---ফিরতে না ফিরতে দেখি তিনি ফেসবুকে গ্রুপ খুলে
বসেছেন, বাংলাতে। ফেসবুকের এতোই চমক। অথচ, তিনি কবি। আশা করেছিলাম, নিজের একখানা ব্লগ করবেন। যেভাবে নিজের খাতাতে
স্থায়ীভাবে লিখে রাখেন, সেভাবেই ব্লগে লিখে
রাখবেন। যেভাবে নিজের সম্পাদিত কাগজ করবেন, সেভাবেই ব্লগ
সম্পাদনা করবেন। কিন্তু সেগুলোতে তো এতো এতো গরম গরম লাইক, আর বাহবা মেলে না। ফলে সমস্যা হলো। তারা লাইকের মোহে
বুঁদ রইলেন। এবং রাতারাতি কেউকেটা বিখ্যাত হয়ে গেলেন (বলে ভেবে নিলেন)। গোঁদের
উপরে বিষফোড়ার মতো এলো স্মার্টফোন। বাংলা লেখালেখি সে আরো সহজ করে তুলল। এখন আর
বলতে হলো না। বা হয় না।ভালোই তো হলো, তাই না? ভাবের আদান প্রদান খুব দ্রুত হতে শুরু করল। ভাবের
তুফান ছুটল। সেই তুফানে বহু বাড়ি ঘর সংসার উড়েও গেল। তুফান সব সময়েই ভালো। তার
মানে বর্ষা এলো। এবারে চাষাবাদ হবে, ফসল ফলবে। কিন্তু
তুফানের আগে পরে বানও ডাকে। বানের তোড়ে সব ভেসে মিশে একাকারও হয়ে যায়। আর তৈরি করে
দলা দলা আবর্জনা। সেই সব আবর্জনা দেখে যদি ঘেন্নাতে কেউ কেউ চলেই যান, বাংলা ভাষার পক্ষে তবে সেই সব সুসংবাদ। কিন্তু আমরা
যাই না কেন? কারণ, পালাবার মধ্যে সুখ নেই। আবর্জনার পুণর্ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে যেটুকু। খুব কম লোকে তাতে হাত দিচ্ছেন।
সেই কম লোকেই আগামীর দিশা দেখাবেন বলে আমার বিশ্বাস। এই যেমন একটিই মাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, একটিই মাত্র কলেজ
কলকাতার সরসুনা কলেজ আন্তর্জালের বিশাল জগতের রহস্য নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, আলো দেখাচ্ছেন--- ভাবা যায় কি সেই সব কাজের একটি অংশ
হলো রবীন্দ্রনাথের নানা পাঠের আন্তর্জাল উপস্থিতি। ফেসবুকের মহাপুরুষ--নারীরা সেসব
সম্ভবত দেখেনও নি, কল্পনাও করতে পারেন
না। বাংলা ওয়েবজিন, ওয়েবপত্রিকাক্রমেই
বাড়ছে। এমন কি পূর্বোত্তরেও। ঈশানের পুঞ্জমেঘ, কাঠের নৌকার বয়সতো
হচ্ছেই। (জনপ্রিয় নয় যদিও, অনেকে ঘেন্নাও করেন।
সেসব ভালো)। বেশ কিছু ইউনিকোড পত্রিকা এখন আসাম ত্রিপুরার থেকে বেরোচ্ছে। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্যের মতো তরুণ কবিরা এখন ব্লগজিনে মজেছেন। একা একাই আলোর
মশাল হাতে তুলে নিয়েছেন। খুব কম। তাতেই আশা জাগছে। রাতের আকাশের আঁধার কণাদের
সংখ্যাই তো বেশি। অগুনতি তারারাও রয়েছে বটে। দেখা গেলে বোঝা যায় আকাশ পরিষ্কার।
সুতরাং তাদেরও ফেলা যাবে না। কিন্তু আলো করে তো একা চাঁদ। আমাদের এই নবীন চাঁদদের
অভিনন্দন... তাঁদের পক্ষ বদল ঘটুক। রাহু-কেতুর ভোগে না পড়লেই হলো। আমাদের জন্যে
সেই সুসংবাদ। ফেসবুকে অনেকেই প্রশংসা প্রশস্তি করেন, আসলে নিজেরা বিনিময়ে
তোল্লা পাবেন বলে। কিন্তু এই তরুণেরা জানেন, আমাদের প্রশস্তি
নির্ভেজাল। কেবলই ভাষা এবং ভাবের
সমবেত স্বার্থে।
আজ সকালে প্রবীণ কথাশিল্পী মিথিলেশ ভট্টাচার্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আন্তর্জালের 'আবর্জনা' নিয়ে নিজের উষ্মা জানাতে। আমিও সমবেদনা জানালাম। কিন্তু সঙ্গে করে মনে হলো, আমাদের এই সব শুক্লপক্ষ সংবাদও এই প্রবীণদের কাছে পৌঁছানো চাই। তাঁরা আন্তর্জালে আসবেন না। তাঁদের সসম্মানে অন্যরকম করে নিয়ে আসা চাই। আমাদের দৈনিক কাগজের আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী 'অসভ্য' সম্পাদক যখন সাহিত্যের পাতাতে রাশিফল ছেপে যাচ্ছে, আর ভগীরথ মিশ্র, আবুল বাসার, অমর মিত্রদের 'জয়পতাকা' আমাদের দেখিয়ে বিদ্রূপ করে যাচ্ছে, তখন আমাদের অনুপস্থিত পূর্বসূরিদের সসম্মান উপস্থিতি সম্ভব করাটা হোক আমাদের পরবর্তী রণকৌশল। সেই কাজ একা কারো দ্বারা সম্ভব নয়। সমবেত 'ভাবান্দোলনে'র দ্বারা সেসব সম্ভব। আমাদের 'রিফিউজি লতা' জীবনের অন্ত পড়ুক। তৃণ গজাক , তার ফাঁকে ফাঁকে মহীরুহ অঙ্কুর মেলুক।
আজ সকালে প্রবীণ কথাশিল্পী মিথিলেশ ভট্টাচার্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আন্তর্জালের 'আবর্জনা' নিয়ে নিজের উষ্মা জানাতে। আমিও সমবেদনা জানালাম। কিন্তু সঙ্গে করে মনে হলো, আমাদের এই সব শুক্লপক্ষ সংবাদও এই প্রবীণদের কাছে পৌঁছানো চাই। তাঁরা আন্তর্জালে আসবেন না। তাঁদের সসম্মানে অন্যরকম করে নিয়ে আসা চাই। আমাদের দৈনিক কাগজের আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী 'অসভ্য' সম্পাদক যখন সাহিত্যের পাতাতে রাশিফল ছেপে যাচ্ছে, আর ভগীরথ মিশ্র, আবুল বাসার, অমর মিত্রদের 'জয়পতাকা' আমাদের দেখিয়ে বিদ্রূপ করে যাচ্ছে, তখন আমাদের অনুপস্থিত পূর্বসূরিদের সসম্মান উপস্থিতি সম্ভব করাটা হোক আমাদের পরবর্তী রণকৌশল। সেই কাজ একা কারো দ্বারা সম্ভব নয়। সমবেত 'ভাবান্দোলনে'র দ্বারা সেসব সম্ভব। আমাদের 'রিফিউজি লতা' জীবনের অন্ত পড়ুক। তৃণ গজাক , তার ফাঁকে ফাঁকে মহীরুহ অঙ্কুর মেলুক।