আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Wednesday, 13 June 2018

শরাইঘাটের শেষ রণ এবং নাগরিক বিল

(C) NorthEast Now
( এটি একটি বক্তৃতা। মনে করুন দিয়েছেন, সুকুমার দত্ত।এক কল্পিত সভার।ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোনো এক শহরে নাগরিক বিল বিরোধী প্রতিবাদী সভা। মনে করুন সভাটি হয়েছে এমন এক সংগঠনে--যেখানে নানা মত এবং পথের লোকজন রয়েছেন। রয়েছেন নানা ভাষা-বর্ণ-ধর্মের মানুষ।  বন্ধু রয়েছেন, বান্ধবী রয়েছেন। রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী , এমন কি শত্রুও। যেমন হয় আর কি... )
      দু'বছর আগে আপনারা শরাই-ঘাটের শেষ যুদ্ধ লড়ছিলেন। জাতি-মাটি-ভেটি রক্ষার সংগ্রাম। আপনারা পরিবর্তন' আনতে চাইছিলেন। আমরা ক'জন তখন নীরব, চুপ-চাপ। নিঃসঙ্গ এবং বিচ্ছিন্ন। কথা বলতে পারছিলাম না। এক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী বরুণ শইকীয়া বলছিলেন, আক্ষেপে, দেখছেন কি দত্ত, আপনি আমি-- এমন দুই চারজন ছাড়া আজ কারো সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। যুক্তি বুদ্ধির আর কোনো বালাই নেই।” এখন আমার সামনে বসা মুখগুলো দেখছি, আপনাদের মুখ। আপনারা কি তখন জানতেন না, একটি রাজপত্র এসেছে। একটি বিল আনবার প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে? আমরা তো জানতাম। এবং হাসছিলাম, আপনাদের উন্মাদনা দেখে। আপনারা তো তখন শরাইঘাটের যুদ্ধের বড় বড় সেনানী। ভীষণ ব্যস্ত। তখন কই গেছিল, ধর্মনিরপেক্ষতা? 
        সুতরাং গায়ে না পড়লে কেউ ধর্মনিরপেক্ষ হয় না। এই বিল সংসদে টিকবে না, এই কারণেই। অন্তত বিরোধী কোনো পক্ষই এর রাস্তা খুলে দেবেন না। ভাষা-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে। তামিলরাও প্রশ্ন করছেন, শ্রীলংকাতে নিপীড়িত তামিলদের কথা নেই কেন এই বিলে? এমন হাজারো প্রশ্ন উঠবে। আর যথাসময়ে বিল উড়ে যাবে। আর এই বিল তত নয় অসমিয়া বিরোধী, যতটা মুসলমান সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিরোধী, আর গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রমূল্য বিরোধী। এই বিল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বদলে একে হিন্দু রাষ্ট্র করে তুলবার সামাজিক ভিত্তি তৈরি করতে চায়, কাঠামোগত পরিবর্তনে'র প্রস্তুতি চালাবার স্বীকৃতি আদায় করে নিতে চায়।
        কিন্তু কোথাও আন্দোলন হচ্ছে না, হচ্ছে আসামে। কারণ আর কিছু না, অসমিয়ার গায়ে পড়েছে। অসমিয়া ভাবছেন, বাংলাদেশ থেকে এতো এতো লোকজন চলে এলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। পড়বেই তো। অসমে যত অসমিয়া আছেন, তার সমানে বা বেশি সংখ্যাতে বাংলাদেশে শুধু বাঙালি হিন্দুই আছেন। বাকি অমুসলমানদের কথা নাই বা বললাম। কিন্তু অবাঙালি তো কোনোদিনই আসেন নি। আসেন যে নি, তা এই তথ্যেই স্পষ্ট যে আপনারা কোনো ডি-ভোটার অবাঙালি পাবেন না, ডিটেনশন ক্যাম্পে কোনো অবাঙালি পাবেন না। তবে সব কি বাঙালি হিন্দু চলে আসবে? 
      কী ভাবছেন? বাংলাদেশ গেট খুলে রেখেছে? বিল হবে আর লাইন দিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালিরা অসমে ঢুকে যাবেন? মুসলমানের তাড়া খেয়ে? তবে আর ধর্মনিরপেক্ষতা রইলটা কই? এতোদিন এই তত্ত্ব তো হিন্দুত্ববাদীরা বলে বেড়াতেন। আমরা কি তাদের প্রচারে এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি?  সবাই মিলে মুসলমান ভীতি দাঁড় করাচ্ছেন, আর এই বিলের এটাই উদ্দেশ্য।
       এই বিল যখন ভারতীয় সংসদে প্রথম আসে সেই জুন, ২০১৬তেই বিবিসির কাছে বিবৃতি দিয়ে প্রথম বিরোধিতা করেছিলেন, রাণা দাসগুপ্ত।  তিনি সেই দেশের  হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা। তিনি বলেছিলেন, “ আমাদের আশংকা, ভারতের এ ধরনের ঘোষণায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়বে।... এমন কোন সিদ্ধান্ত ভারতের নেয়া উচিত নয়, যা এদেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের দেশত্যাগে উৎসাহিত করবে।...নাগরিকত্ব দেবার যে সিদ্ধান্ত তারা (ভারত) ঘোষণা করেছে এ সিদ্ধান্তে আমরা ক্ষুব্ধ , আমরা বিচলিত।
          অধিকাংশ বাঙালাদেশীই সংখ্যালঘু অত্যাচারের মুখে সেই দেশেই নিজেদের মর্যাদা আর অধিকারের জন্যে লড়বেন। পালাবেন কেন?  ১৯৭১এর ২৪মার্চ অব্দি চলে আসবার পথ খুলাই ছিল। ১৯৫০ আর ১৯৭০এর  পাকিস্তান রাষ্ট্রের মদতে ভয়াবহ গণহত্যার দিনগুলোতে যারা আসেন নি, তারা এখন সবাই চলে আসবেন ভাববার যুক্তিটা কী? আর আসছেন না যে, অন্তত আসামে না---তার পরোক্ষ প্রমাণ হচ্ছে ডি-ভোটার বলে অভিযুক্তের সংখ্যা দেখুন, আর এই তিনদশকে ঘোষিত বিদেশীর সংখ্যাটি মিলিয়ে দেখুন। ঘোষিতরাও পরে মামলা লড়ে স্বদেশী প্রমাণিত হচ্ছেন।
      বরং আমাদের কাছে উলটো নথি আছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এতো বাণিজ্যিক বন্ধুত্ব করে, আজকাল গুয়াহাটিতেও বাংলাদেশের দূতাবাস খোলা হয়েছে। কোনোদিন কি শুনেছেন, বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নেবার জন্যে কোনো কথা হয়েছে? কেউ কি সেরকম দাবিও তুলল? কথা বলবে কী করে? তুললেই বাংলাদেশও কম করেও পাঁচ লাখ অবৈধ ভারতীয়, যাদের অধিকাংশই পশ্চিম বাংলা সহ এই পূর্বোত্তর ভারত থেকে সেই দেশে গিয়ে সস্তা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন --- তাদের তালিকা ধরিয়ে দেবেন। বাংলাদেশ তাদের থেকে লাভ তুলছে, তাই তাড়াবার কথা এখনো বলছে না। এমন কি বাংলাদেশের প্রশাসনে হিসেব করে দেখবেন, জনসংখ্যার তুলনাতে বহু বেশি হিন্দু নিয়োজিত আছেন। এবং তা উঁচু উঁচু পদে। যারা মন্দির ভাঙার সত্যটা চড়া গলায় বলে, তারা মিহি গলাতেও সেই সব উচ্চারণ মাত্র করে না। এবং বাংলাদেশী মুসলমানেরাও সেই নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন তুলে না। আপনারা আন্তর্জাল ঘাটলেই একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে সেই সব তথ্য পাবেন। আমরা ২০১৪র একটি সংবাদ প্রতিবেদনে দেখেছি  ভারত থেকে অবৈধ বাংলাদেশীরা সেদেশের জিডিপিতে ৬,৬০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, মানে প্রায় ৬.৬ বিলিয়ন। তার বিপরীতে  অবৈধ ভারতীয়রাও দেশে পাঠিয়েছেন ৩৭০ কোটি ডলার। মানে ৩.৭ বিলিয়ন। মনে রাখবেন পরিমাণটি ডলারে। টাকাতে নয়। এই সব সুখস্বপ্ন ছেড়ে মন্দির ভেঙে দিচ্ছে বলে, জোকার দিতে দিচ্ছে না কোথাও কোথাও বলে---লোকে দেশ ছেড়ে চলে আসবে---অর্থনীতির কোন শাস্ত্র সেসব স্বীকার করে? শুধু গেরুয়া অর্থশাস্ত্র ছাড়া? 
       বাংলাদেশ থেকে হিন্দু আনার জন্যে তো নয়, দেশকে হিন্দু ভারত গড়বার  দূরগামী লক্ষ্যে একটি প্রতীকী যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া হলো। তাও আবার ইসরায়েল মডেলে। তা ইহুদিরা তো তবু বহু হাজার বছর ধরে ইসরায়েল ছাড়া, আর সারা বিশ্বে তাদের শুধু তাড়াই দেওয়া হয় নি, ইসরায়েলে ফেরার জন্যে বহু প্রলোভনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয়রা তো পালটা প্রলোভনেই বিশ্বময় ছড়িয়েছেন। তাড়া খেয়ে বিদেশে যান নি। দুবাই সহ মধ্যপ্রাচ্য শুধু শ্রমিকদের জন্যেই নয়, ভারতীয় বণিকদের জন্যেও লোভনীয় ব্যবসা আর বিলাসের জায়গা। এমন কি বিলে যে দুই দেশের নাম আছে সেই বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে এখন বৈধ উপায়েও লাখো ভারতীয় কায়িক এবং বৌদ্ধিক শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে, পুঁজির সঙ্গে করে। আমরা কার গল্প কাকে শোনাচ্ছি? 
       যাই হোক, একটা প্রতীকী যুদ্ধ সারা দেশের জন্যে শুরু হলো, আর তাৎক্ষণিকভাবে একটি শুরু হলো অসমের জন্যে। এন আর সি তর্কটিকে চাপা দিয়ে দেওয়া হলো। কেবল যে এই নাগরিক বিলকেই এক তরফা অসমিয়াদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই নয়, আসাম চুক্তি করবার বেলা, আই এম ডি টি বাতিলের বেলা, এমন কি এন আর সি প্রক্রিয়া শুরুর বেলাও সব জনগোষ্ঠীর অভিমত নেওয়া হয় নি। এমন কি যদিও বা বলা হচ্ছে, ১৯৭১এর আগে আসা পূর্ববঙ্গ মূলের বাঙালি হিন্দু-মুসলমান আসামেরই মানুষ, তাদের সমানাধিকার এবং মর্যাদা স্বীকার করে নেওয়া হবে, বা হয়েছে---তাদের কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করে নি---তারা কী চাইছেন। বিদেশী খুঁজতে গিয়ে যে তাদেরই হয়রানিটা হচ্ছে সবচাইতে বেশি সেই সত্য কেউ শুনতেও রাজি নন।  তবু প্রতিবাদ যখন হয় নি, তারা যখন এই প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাই করছেন---ধরে নেয়াই যেতে পারে তাঁরাও আশা করছেন, যে এন আর সি-তে এসে তিন দশক আগেকার অসম আন্দোলনের একটি যুক্তিসঙ্গত পরিসমাপ্তি ঘটবে। কে বিদেশী আর কে তা নয়---সেই তর্কের মীমাংসা হয়ে যাবে।
      তাহলে এখন আমাদের তর্কের বিষয় কী হওয়া উচিত ছিল? ১) এন আর সি-তে বাদ পড়া মানুষের কী হবে? বাংলাদেশে পাঠানো হবে? সেই দেশের সঙ্গে চুক্তি কই? ২) বাংলাদেশীদের লাথি মেরে তাড়ানো হবে? যেভাবে মায়ন্মার তাবৎ রোহিঙ্গিয়াদের বাংলাদেশী বলে তাড়াচ্ছে? আমি আশা করছি, কোনো স্বাভিমানী অসমিয়া মায়ন্মারের মানে'র মতো আচরণ করবেন না। তাতে বিশ্বজুড়ে মান বাড়বে না। ৩) জেলে রাখবো? এতো জেল কই? আর অসমের মানুষ এতো বিশাল অনুৎপাদনী ব্যয়ভার বইবে কেন? 
     তবে কী হবে? আরে, সেই নিয়ে কথাটাই তো চাপা দিয়ে দিল এই নাগরিক বিল।  
    এন আর সি-র প্রথম খসড়াতে বরাকের এবং ভাটি অসমের বেশি মানুষের নাম বাদ পড়ল। বরাক ক্ষুব্ধ হলো। তাদের খুশ করতে বরাকে জেপিসি-কে পাঠানো হলো দু'দিনের জন্যে। বরাক এন আর সি গেল ভুলে। তো অসমিয়া পক্ষ গেলেন খুব রেগে। ব্রহ্মপুত্রের উত্তাল তরঙ্গ সামাল দেওয়া কঠিন হলো। অতএব দুর্বল নথির প্রশ্ন এলো, ডি-ভোটারদের আত্মীয় স্বজনকে এন আর সি থেকে বাদ দেবার প্রশ্ন এলো। প্রশ্ন এলো সারা রাজ্যে তাদের চিহ্নিত করবার। সারা রাজ্যেই হঠাৎই শুরু হলো ছেলে ধরবার মতো করে বিদেশী ধরা। এবং চরিত্রগতভাবে সেই প্রক্রিয়া একেবারেই ধর্ম নিরপেক্ষ। হিন্দু -মুসলমান সবাইকে ধরছে। কিন্তু কাউকে জেলে পুরেনি। পুরল কই? না তিনসুকিয়াতে। উজান অসমে। যেখানে বিল বিরোধী আবেগ অতি তীব্র। বেছে বেছে কিছু বাঙালি হিন্দু গেলেন জেলে। কেন? এখনি কেন? কেউ প্রশ্ন করলেন? বরং অনেকেই আশ্বস্ত হলেন,  শরাইঘাটর যোজারু --জাতির বিরুদ্ধে নে যায়। 
     কিন্তু কার্বি আংলঙে আমরা যে মহড়া দেখলাম, খিলঞ্জিয়া ঐক্যের ফাঁপা রূপটা তো দেখলাম। এখন কার্বি জনগোষ্ঠীর সপক্ষে দাঁড়িয়ে দুই চার কথা বললেও অনেকে বলছেন, এই সব কমনিষ্টি কথা। 
      ত্রিশ জুনের পরে যদি এভাবে কেউ মুসলমান পেটানো শুরু করে, তবে সব হিন্দু এক হবে।  মাদানি পার্টিকে' দেখে নেবার কথা দেখি বলেই রাখা আছে। বিল থাকল কি না থাকল--তাতে কার কী আসে যায়?
        বাঙালি হিন্দু বার্তা পেল কারা তাদের রক্ষক। অসমিয়া বার্তা পেলেন, ঘরর ল'রা জাতির বিরুদ্ধে নে যায়। 
      বহু বছর আগে আশির দশকে প্রান্তিকে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক পরাগ কুমার দাস। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, "...আগামীর দিনগুলোতে যদি আমরা ভাষিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই তবে পমুয়া মুসলমানদের সঙ্গে হাত মেলাতেই হবে; আর যদি ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাই তবে বাঙালি হিন্দুদের কাছে টেনে নিতে হবে... উভয় পক্ষকে ছেড়ে দিয়ে খুব বেশি দিন আমরা টিকে থাকতে পারব না। এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শস্বরূপ অসমিয়া জাতি নিশ্চয় সবসময় ধর্মের থেকে ভাষার উপরেই বেশি গুরুত্ব দেবে।” হিন্দু অথবা মুসলমান পূর্ববঙ্গ মূলের মানুষের দুই পক্ষকেই বাদ দিয়ে অসমিয়া টিকে থাকতে পারবে না বলেই মত দিয়েছিলেন পরাগ কুমার দাস। এই সত্য এখন স্কুল পড়া ছেলেমেয়েরাও বোঝে। তিনি শুধু আশা করেছিলেন,ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শস্বরূপ অসমিয়া জাতি নিশ্চয় সবসময় ধর্মের থেকে ভাষার উপরেই বেশি গুরুত্ব দেবে।” কিন্তু শরাইঘাটের শেষ রণে যোগ দেবার ঘটনাতো তাঁর আশাকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেই।  তার সঙ্গে আছে বিশ্বায়ন পরবর্তী যুগের ভারতীয় শাসক শ্রেণির ছোট সহযোগী হিসেবে সুযোগ সুবিধেগুলো আদায় করবার প্রশ্ন। ফলে বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড়ে- ভৈয়ামে গেরুয়া ঐক্যের রাজনীতিটি চালিয়েও অসমিয়া সম্পন্ন থাকতেই পারে। ভারতীয় শাসক শ্রেণি অসমিয়া মধ্যবিত্তকে বিপন্ন করে ফেলে কিছু করে ফেলবে, এমনটা আমরা বিশ্বাস করি না। বাঙালি হিন্দুর বা মুসলমানের ভোটের কথাটাও তাকে সেই অসমিয়া মধ্যবিত্তেরই স্বার্থে মনে রাখতে হয়। আপাতত সে মনে রাখছে, হিন্দু বাঙালি ভোটের কথা বেশি বেশি---এই মাত্র। হিন্দু রাষ্ট্রের জন্যে সেই সব দরকার। আর তাই অনেকেই, বিশ্বাস রেখেছেন, ঘরর লরা—জাতির বিরুদ্ধে নে যায়। 
        ধর্মনিরপেক্ষতা তার পরেও বিপন্ন হতেই পারে। মানে বিল বাতিল হলেও।  বিপন্ন হতে পারে, সেই সব মানুষ---যাদের শ্রমের বাজারে দরকষা কষি করতে হয়। যাদের খেটে খেতে হয়, যাদের  কাজিরাঙ্গা থেকে উচ্ছেদ করলে হিন্দুত্বে আচ্ছন্ন মন বলে, বেশ করেছে। বাংলাদেশী তাড়িয়েছে। কিন্তু আমচাঙে উচ্ছেদ করলে প্রশ্ন -- খিলঞ্জিয়াকে কেন উচ্ছেদ করা হবে! উচ্ছেদিত মানুষগুলো এক হতে পারে না। কিন্তু জমি তাদের হারাতেই হয়, সেই জমি নাখিলঞ্জিয়া' বণিকেরই হাতে যায় নির্বিবাদে। ‘খিলঞ্জিয়া’ বণিক হয় তাদের ছোট সহযোগী।
 তারা বানে বিধ্বস্ত হয়, নদীভাঙনে বাড়ি হারায়, ঘর হারায় --হারায় তাবৎ লিগ্যাসি ডাটা। কোনো মধ্যবিত্তও যদি প্রশ্ন করে গিয়ে লিগেসি ডাটা এরা পাবে কই? তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়া চলছে চলবে---বেটা, বাংলাদেশীর দালাল -- বলে। এরা মাদানি পার্টি'র লোক। তাদের দেখে নেওয়া হবে। সেই সব মানুষকে মানতেই হবে তার প্রতিবেশী সমাজের মানুষটি দানব। এবং আপাতত  ‘মাদানি পার্টি’রও কেউ কেউ সেটি বিশ্বাসও করছেন। বাঙালি হিন্দু বড় হিন্দুত্ববাদী হয়ে গেছে বলে নিন্দে মন্দও করছেন। হয়ে আছেন অনেকে এটা সত্য। সেই অসম আন্দোলনের দিন থেকে তাদের মধ্যে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে গেছে হিন্দুত্ববাদী শিবির। গড়ে তুলেছে, এই জনপ্রিয় আখ্যান, "নির্বোধ অসমিয়া। টের পাবে যখন অসম মুসলমানে নিয়ে যাবে।' এবং সেই আখ্যানে বহু "বুদ্ধিমান অসমিয়ার'ও অবদান প্রচুর। নিত্যদিন কাগজ খুললেই পড়া যায়। কিন্তু তার বিপরীতে যদি কেবল  হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর অমলেন্দু গুহের আদর্শই সামনে দাঁড় করানো হয়, তবে তো তা বুদ্ধির পরিচয় বলে মনে করতে পারি না।  কিছু গান করা , কবিতা লেখা বামুন কায়েত নন।বাঙালি হিন্দু মানে রামা কৈবর্ত আর নরহরি বিশ্বাসও। অর্জুন নমঃশূদ্র।  বিদেশী নোটিশ পেয়ে যিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মারা যাবার পরে প্রমাণিত হয়েছিল যে তারা মা-ভাই-বোনে সবাই ভারতীয় -স্বদেশী।  নির্বাচনে ইস্যু হয়েছিল সেই মৃত্যু। তারপরেও  তাঁর বৃদ্ধা মাকে বেরুতে হয়েছিল বৌ নাতি-নাতিনীর জন্যে দুমুঠো ভাতের জোগাড় করবেন বলে।
‘মাদানি পার্টি’ কি কিছু শুনছেন? বন্ধুকে চিনতে পারছেন? শত্রু শিবিরে বন্দি তাদেরই বন্ধু।  সেই শিবিরে হানা দেবেন কবে? না কি শিবির ভেঙ্গে তারাই বেরিয়ে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়া অব্দি দিন গুনবেন? বাকি ভারতে যারা জয়ভিম-লালসেলাম করছেন---তারা কিন্তু ঠিক সেই কাজটাই করছেন।