( ১৯শে মে, ভাষা শহিদ দিবসকে মনে রেখে এই অনুবাদ)
ঋতুরাজ কলিতা
আমাদের ভারতবর্ষের এই অংশটির এই যে মাতৃভাষাগুলোঃ
অসমিয়া,মণিপুরি, বাংলা, বডো, ভোজপুরি, মিশিং, সিলেটি,নেপালি, খাসি, হিন্দি,রাজস্থানী,
কার্বী,তিওয়া, ডিমাসা,জেমি নাগা, তাংখুল, আংগামি, কুকি, মিজো,মনপা,ককবরক...
আমাদের অত্যন্ত প্রিয় তথা পূজনীয়। ইতিহাস আর ভাষাবিজ্ঞান আমাদের জানিয়েছে যে
হাজার হাজার বছর ধরে বিকশিত আমাদের এই সমস্ত ভাষাই
সমস্ত সামাজিক এবং মানবিক ভাব প্রকাশ তথা বিনিময় করবার জন্যে পুরোপুরি উপযুক্ত
জীবনের সমস্ত আনন্দ বেদনা, দয়া করুণা, ক্ষোভ প্রীতি সবগুলো অনুভূতির পরিপূর্ণ বাহন
তবুও , কাগজের পৃষ্ঠা তথা দূরদর্শনের পর্দাতে নানারকম খবরগুলো দেখে শুনে
জায়গায় জায়গায় অহরহ যে সব ছোট বড় আন্দোলন হচ্ছে সেগুলোর স্লোগান পড়ে শুনে
আমাদের মনে কেন জানি এই সন্দেহ জাগে যে
আমাদের এই ভাষাগুলো
সত্যি বুঝি একই রকম করে নানা রকম মানুষের মর্মবেদনাকে প্রকাশ করতে পারে?
একই রকম প্রকাশ করতে পারে কি সেনা আতিশয্যের বলি নিরীহ অসমিয়া কৃষকের যন্ত্রণাকে?
আর উগ্রপন্থীর মাইন আক্রমণে পা কাটা পড়া তেলেগু সেনার দুর্ভাগ্যকে?
( যদি তাই হয়, তবে কেন অসমিয়া বর্ণমালাতে এক বিশেষ ধরণের খবরই দেখি বেশি বেশি করে?)
একই রকম বর্ণনা করতে কি পারে থৌবাল গ্রামে পুলিশের হাফাজতে মৃত কাঠ মিস্ত্রি ছেলেটির
তথা ইম্ফলে সন্ত্রাসবাদি বোমা বিস্ফোরণে মৃতা মণিপুরি ব্যাবসায়ী মায়ের কাহিনিকে?
( যদি তাই হয়, তবে কেন মণিপুরি স্লোগানগুলোতে আমরা এক বিশেষ ধরণের প্রতিবাদই দেখি
বেশি বেশি করে?)
মা বাবাকে হঠাৎ করেই হারিয়েছে যে ডিমাসা বা জেমি নাগা বা মাড় কিংবা ভোজপুরি কিশোরীটি
তার হৃদয়ের হাহাকারকে কি সেই একই রকম ব্যক্ত করতে পারে?
(যদি তাই হয়, তবে কি জেমিনাগা গণহত্যার বিরুদ্ধেও একই রকম প্রতিবাদে সোচ্চার হতো না ডিমাসা নারী?)
উদ্যত অস্ত্রের সামনে হতবাক নাগা বা কুকি বাসযাত্রীদের হাহাকারকে কি একই রকম বোঝাতে পারে?
একই রকম বোঝাতে পারে কি উগ্রপন্থীর আকাশছোঁয়া টাকার দাবিতে বিভ্রান্ত
অসমিয়া আর রাজস্থানী মূলের ব্যবসায়ীদের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তাকে?
যদি প্রতিটি ভাষা সবার সুখ দুঃখ একই সমান করে প্রকাশ করে পারত
তিনসুকিয়ার গ্রামবাসিদের কন্ঠে কি আর শুনতে পেতাম সেই সংগঠন আর সেই ব্যক্তির জন্যে
জিন্দাবাদ ধ্বনি, যাদের নির্দেশে গণহত্যাতে মারা গেছে তিনসুকিয়ারই শতাধিক অন্যভাষী
যার সন্ত্রাসবাদি আক্রমণে হতাহত হয়েছে নিম্ন অসমের শহর গুলোর শত সহস্র আম জনতা
( অর্থাৎ তোমরা সেদিন স্লোগান দিয়েছিলে গণহত্যা জিন্দাবাদ, বোমা বিস্ফোরণ জিন্দাবাদ)
ধরা বাঁধা কতকগুলো শব্দ এবং শব্দজোড়কে গেঁথে গেঁথে
আজ আমরা আমাদের ভাষাগুলোর যে অবস্থা করেছি...
সেগুলো কি আর বোঝাতে পারল গুয়াহাটির বেলতলাতে
দুর্বৃত্তের অপ্ররোচিত আক্রমণে জীবিকা হারানো শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বেদনাকে?
বোঝাতে পারল কি অসমের চর অঞ্চলের থেকে উজানের ইটভাটাতে ট্রাকে করে যাবার বেলা
বিদেশি আখ্যা দিয়ে যেখানে সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা খিদে তৃষ্ণাতে আবদ্ধ করে রাখবার যাতনা?
ঠিক ঠিক করে কি বোঝাতে পেরেছে গ্রামে গ্রামে বাঁদরের দলে
আর শোনিতপুর-নগাঁও-গোলাঘাটের গ্রামাঞ্চলে হাতিতে দলিত মথিত করে
যাদের খেত খামার ধ্বংস করেছে সেই জনতার ভবিতব্যকে?
রাষ্ট্রযন্ত্র, নিপীড়িত জাতিসত্তা, নারী-নির্যাতন, সন্দেহযুক্ত বিদেশী, হাতি মানুষের সংঘাত
ইত্যাদি কিছু শব্দবন্ধের অকারণ আধিক্য তথা অহরহ চাপে
আমাদের পূজনীয় মাতৃভাষাগুলো কি তাদের স্বাভাবিক ন্যায় অন্যায় বোধ হারিয়ে ফেলেছে
এমন কি আমাদের ...এই ভাষাগুলোর প্রিয় সন্তানদের--- জীবন মৃত্যুর পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা?
এগুলো কি চমস্কি যেমনটি বলেছেন,
মানুষের সত্য সন্ধানের পথে জীব বৈজ্ঞানিক ভাবে অপ্রতিরোধ্য এক একটা সিড়ি...
না, হয়ে পড়েছে আমাদের অহরহ আত্ম প্রবঞ্চনার নীরব সাক্ষী এবং অসহায় সহায়ক ?
( কবিতাটি ড০ হীরেন গোঁহাই সম্পাদিত ‘নতুন পদাতিক’ কাগজের এপ্রিল,২০১০ সংখ্যাতে প্রকাশ পেয়েছে। ঋতুরাজ নিজেও কাগজটির সহ সম্পাদক।)
অনুবাদঃ ১৫-০৫-১০
3 comments:
:( :( :(
ফন্ট সাইজ খুব ছোট। কিছুই দেখতে পেলাম না। দুঃখিত।
তাইতো! দাঁড়ান ঠিক করে দিচ্ছি!
Post a Comment