মানিনা যে জ্ঞানের কোনো সরলরৈখিক উর্ধগতি আছে। সুতরাং কাউকে, এই কথা বলবার কোনো মানেই নেই যে আপনি আমার থেকে কম জানেন, কম বোঝেন অথবা কিস্যু জানেন না, কিস্যু বোঝেন না। আমাদের বিরোধগুলো বেশিরভাগই জ্ঞানের নয়, দৃষ্টিভঙ্গীর। আমাদের 'চোখের'। এবং 'চোখ' নিয়ত আমাদের প্রতারণা করে। আমাকেও করে, আপনাদেরও করে । চোখ আইনষ্টাইনকেও প্রতারণা করত, মার্ক্সকেও করত, মাওকেও করেছে, রবীন্দ্রনাথকেও বেনো জলে প্রচুর ঘুরিয়েছে। তাই, বস্তু বিশ্বকে আমরা তার যথার্থ রূপে কেউ দেখতেই পারি না। যেই যত বই পড়ি না কেন, যথার্থরূপে কেউ পড়তেই পারিনি। পড়েছি, নিজেদের স্থান কাল এবং চোখ অনুযায়ী। এই নিয়ে হয়তো, অনেকেই আমার থেকে আরো বহু ভালো বিলেতি রেফারেন্স দিয়ে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। তাই যদি সত্য হয়, জ্ঞানের প্রতিযোগিতা করাটাই মিছে। আমার কথাগুলোতে জ্ঞান নিয়ে সেই দৃঢ়তা পাবেন না , যতটা দৃঢ়তা নিয়ে সাধারণত আমাদের বহু পণ্ডিত অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন বা বিরুদ্ধ পক্ষকে আক্রমণ করেন। আমি ভাই সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকি যে আমি ভুল দেখতে এবং দেখাতে পারি।
আমি শুধু এইটুকু জানি, সরলরৈখিক জ্ঞানের প্রতাপ এই বিশ্বকে রীতিমত শাসন করে। যেকোনো সময় সে তার বিকল্প যে কোনোপ্রকল্পকে অন্তর্ঘাত করতে পারে। চিহ্ন নিয়ে আমার কথাগুলোকে চট করে স্পষ্ট করবার মতো বিষয়ও নয়। তবু, আমি চেষ্টা করছি, আমার প্রকল্পকে দুই একবাক্যে রাখতে, আমরা মোটেও 'সস্যুর কথিত চিহ্ন বিশ্বে বাস করি না, যে বিশ্বের ( মানে সস্যুরের) কাজ কেবল মানুষের চেতনা বিশ্ব নিয়ে। বাস করি এমন বিশ্বে যেখানে নিরন্তর বস্তু চেতনাতে, চেতনা বস্তুতে রূপান্তরিত হয়--এমন এক অসীম জগতে যে জগতের আকার প্রকার বাস্তব বিশ্বের মতোই। কিন্তু একে চেতনা বিশ্ব বা কেবল বস্তু বিশ্ব বলবার সমস্যা এই যে এই দুটোই আন্তসম্পর্কে বাঁধা। এই সম্পর্কে জড়িত যেকোনো একক বস্তু বা ভাবকে আমরা চিহ্ন নাম দিতে পারি। আর মহাবিশ্বজুড়া সম্পর্কগুলোর নাম দিতে পারি 'চিহ্নবিশ্ব'। চিহ্নের এক বিশাল প্রবাহ বা শৃঙ্খলা এই চিহ্নবিশ্ব। সে আচরণও করে বাস্তব মহাবিশ্বের মতোই। অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা এবং শৃঙ্খলার এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের মধ্যি দিয়ে ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল এক অসীম বিশ্বে তার পরিণতি।
আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্ক হচ্ছে সেই ঘাট যেখানে চিন্তার এবং বস্তুর রূপান্তরণের কাজটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ, চিহ্ন বিশ্বের কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা আমরা কেউ নই মোটেও। চিহ্নবিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগ পাঁচ ইন্দ্রিয়ে। যারা সারাক্ষণ এই তথ্যবিশ্ব ( বা চিহ্নবিশ্ব থেকে) থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রূপান্তর করে কাজে ও কথায় প্রকাশ করে বের করে দিচ্ছে যেমন, রেখেও দিচ্ছে তার থেকে প্রচুর বেশি কিন্তু বড্ড বিশৃঙ্খল ভাবে। সেগুলো শৃঙ্খলিত হয়ে বেরিয়ে আসে বাক কিম্বা কাজের রূপে আমাদের স্থানকাল এবং উদ্দেশ্য অনুসারে। যাকে একমাত্র আমরা 'জ্ঞান' বলতে পারি। এর বাইরে থাকা জ্ঞানের বিশাল বইকে জ্ঞান বলে কোনো লাভ নেই। কারণ পড়া মাত্র সেগুলো বিশৃঙ্খল তথ্য সংগ্রহে পরিণত হয়ে যায়। গীতা, কোরান থেকে শুরু করে দাস কেপিটেলের যে পৃথিবীতে এতো এতো টীকাভাষ্য, যার ত্রুটিগুলোকে শুধরাবার জন্যেবহু পণ্ডিতের এতো অক্লান্ত শ্রম তা এরই জন্যে। এটি, এক অন্তহীন প্রয়াস। চালিয়ে লাভ নেই--ওমন কথাকিন্তু আমি বলছিনা বা বলিনি। কিন্তু আপাতত যা বলতে চাইব, ঠিক তাই দুটো মানুষের জ্ঞান এবং চিন্তার স্বরূপ যেমন এক হতেই পারে না, তেমনি বহু সাধারণ সংগ্রহের মালিক আমরা হতেই পারি।
এভাবে দেখি বলেই, এমন বহুবার হয়েছে যে অনেকেই আমার মধ্যে সমর্থণ যোগ্য কিছু না পেলেও, আমার কিন্তু তাদের বহু কথাকে সমর্থণ করতে এবং তাদের থেকে সমৃদ্ধ হবার কথা স্বীকার করতে কখনো লজ্জা করেনি।
এই চিহ্নবিশ্বের বাসিন্দা বলেই যেমন এই পৃথিবীতে যথাযথ মুর্খ কেউ নেই, তেমনি যথাযথ পন্ডিতও কেউ নেই। বাস্তব বিশ্বকে জানবার অসীম সম্ভাবনা যেমন আমাদের প্রত্যেকেই রয়েছে, তেমনি এও সত্য যে বাস্তব বিশ্ব আমাদের কারো কাছেই যথযথরূপে ধরা দেয় না। না ধরা দেন স্বয়ং মার্ক্স কিম্বা মাও-ৎসেতুং, মুজিব কিম্বা গান্ধী। কিছু মনে করবেন না এখানেও গুরুদেব সেই রবীন্দ্রনাথ। মানে "বাস্তব বিশ্ব আমাদের কারো কাছেই যথযথরূপে ধরা দেয় না"এরকম কথা তিনিই লিখে গেছেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রাসঙ্গিক কিছু রবীন্দ্র উক্তি এখানে তোলা রইল মুখ্যত মন্তব্যগুলো সাহিত্য নিয়েই বটে, কিন্তু সাহিত্যে রূপান্তরিত হবার আগে বাস্তব জগৎ আমাদের চোখে কীরকম দেখা দেয় তাই নিয়ে রবীন্দ্রমত বুঝতে এগুলো সাহায্য করেঃ
(১) প্রকৃতির এই বিরাট রঙ্গশালায় যখন মানুষের ভাবাভিনয় আমরা দেখি তখন আমরা স্বভাবতই অনেক বাদসাদ দিয়া বাছিয়া লইয়া, আন্দাজের দ্বারা অনেকটা ভর্তি করিয়া, কল্পনার দ্বারা অনেকটা গড়িয়া তুলিয়া থাকি। আমাদের একজন পরমাত্মীয়ও তাঁহার সমস্তটা লইয়া আমাদের কাছে পরিচিত নহেন। আমাদের স্মৃতি নিপুণ সাহিত্যরচয়িতার মতো তাঁহার অধিকাংশই বাদ দিয়া ফেলে। তাঁহার ছোটোবড়ো সমস্ত অংশই যদি ঠিক সমান অপক্ষপাতের সহিত আমাদের স্মৃতি অধিকার করিয়া থাকে তবে এই স্তূপের মধ্যে আসল চেহারাটি মারা পড়ে ও সবটা রক্ষা করিতে গেলে আমাদের পরমাত্মীয়কে আমরা যথার্থভাবে দেখিতে পাই না। পরিচয়ের অর্থই এই যে, যাহা বর্জন করিবার তাহা বর্জন করিয়া যাহা গ্রহণ করিবার তাহা গ্রহণ করা।
একটু বাড়াইতেও হয়। আমাদের পরমাত্মীয়কেও আমরা মোটের উপরে অল্পই দেখিয়া থাকি। তাঁহার জীবনের অধিকাংশ আমাদের অগোচর। আমরা তাঁহার ছায়া নহি, আমরা তাঁহার অন্তর্যামীও নই। তাঁহার অনেকখানিই যে আমরা দেখিতে পাই না, সেই শূন্যতার উপরে আমাদের কল্পনা কাজ করে। ফাঁকগুলি পুরাইয়া লইয়া আমরা মনের মধ্যে একটা পূর্ণ ছবি আঁকিয়া তুলি। যে লোকের সম্বন্ধে আমাদের কল্পনা খেলে না, যাহার ফাঁক আমাদের কাছে ফাঁক থাকিয়া যায়, যাহার প্রত্যক্ষগোচর অংশই আমাদের কাছে বর্তমান, অপ্রত্যক্ষ অংশ আমাদের কাছে অস্পষ্ট অগোচর, তাহাকে আমরা জানি না, অল্পই জানি। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই এইরূপ আমাদের কাছে ছায়া, আমাদের কাছে অসত্যপ্রায়। তাহাদের অনেককেই আমরা উকিল বলিয়া জানি, ডাক্তার বলিয়া জানি, দোকানদার বলিয়া জানি—মানুষ বলিয়া জানি না। অর্থাৎ আমাদের সঙ্গে যে বহির্বিষয়ে তাহাদের সংস্রব সেইটেকেই সর্বাপেক্ষা বড়ো করিয়া জানি; তাহাদের মধ্যে তদপেক্ষা বড়ো যাহা আছে তাহা আমাদের কাছে কোনো আমল পায় না।...মন প্রকৃতির আরশি নহে, সাহিত্যও প্রকৃতির আরশি নহে। মন প্রাকৃতিক জিনিসকে মানসিক করিয়া লয়; সাহিত্য সেই মানসিক জিনিসকে সাহিত্যিক করিয়া তুলে।
(২)মন আমাদের সহজগোচর নয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া দেখিলে অবিশ্রাম গতির মধ্যে তাহার নিত্যানিত্য সংগ্রহ করিয়া লওয়া আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়। এইজন্য সুবিপুল কালের পরিদর্শনশালার মধ্যেই মানুষের মানসিক বস্তুর পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হয়; ইহা ছাড়া নিশ্চয় অবধারণের চূড়ান্ত উপায় নাই।
(৩)সদ্য-তৈরি নতুন মন্দির, চুনকাম-করা। তার চার দিকে গাছপালা। মন্দিরটা তার আপন শ্যামল পরিবেশের সঙ্গে মিলছে না। সে আছে উদ্ধত হয়ে, স্বতন্ত্র হয়ে। তার উপর দিয়ে কালের প্রবাহ বইতে থাক্, বৎসরের পর বৎসর এগিয়ে চলুক। বর্ষার জলধারায় প্রকৃতি তার অভিষেক করুক, রৌদ্রের তাপে তার বালির বাঁধন কিছু কিছু খসতে থাক্, অদৃশ্য শৈবালের বীজ লাগুক তার গায়ে এসে;তখন ধীরে ধীরে বনপ্রকৃতির রঙ লাগবে এর সর্বাঙ্গে, চারি দিকের সঙ্গে এর সামঞ্জস্য সম্পূর্ণ হতে থাকবে। বিষয়ী লোক আপনার চার দিকের সঙ্গে মেলে না, সে আপনাতে আপনি পৃথক; এমন-কি, জ্ঞানী লোকও মেলে না, সে স্বতন্ত্র; মেলে ভাবুক লোক। সে আপন ভাবরসে বিশ্বের দেহে আপন রঙ লাগায়, মানুষের রঙ। স্বভাবত বিশ্বজগৎ আমাদের কাছে তার বিশুদ্ধ প্রাকৃতিকতায় প্রকাশ পায়। কিন্তু, মানুষ তো কেবল প্রাকৃতিক নয়, সে মানসিক। মানুষ তাই বিশ্বের উপর অহরহ আপন মন প্রয়োগ করতে থাকে। বস্তুবিশ্বের সঙ্গে মনের সামঞ্জস্য ঘটিয়ে তোলে। জগৎটা মানুষের ভাবানুষঙ্গে অর্থাৎ তার অ্যাসোশিয়েশনে মণ্ডিত হয়ে ওঠে। মানুষের ব্যক্তিস্বরূপের পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির মানবিক পরিণতির পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটে। আদিযুগের মানুষের কাছে বিশ্বপ্রকৃতি যা ছিল আমাদের কাছে তা নেই। প্রকৃতিকে আমাদের মানবভাবের যতই অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছি আমাদের মনের পরিণতিও ততই বিস্তার ও বিশেষত্ব লাভ করেছে।
আমাদের জাহাজ এসে লাগছে জাপান-বন্দরে। চেয়ে দেখলুম দেশটার দিকে— নতুন লাগল, সুন্দর লাগল। জাপানি এসে দাঁড়ালো ডেকের রেলিং ধরে। সে কেবল সুন্দর দেশ দেখলে না; সে দেখলে যে-জাপানের গাছপালা নদী পর্বত যুগে যুগে মানবমনের সংস্পর্শে বিশেষ রসের রূপ নিয়েছে সেটা প্রকৃতির নয়, সেটা মানুষের। এই রসরূপটি মানুষই প্রকৃতিকে দিয়েছে, দিয়ে তার সঙ্গে মানবজীবনের একান্ত সাহিত্য ঘটিয়েছে। মানুষের দেশ যেমন কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নয়, তা মানবিক, সেইজন্যে দেশ তাকে বিশেষ আনন্দ দেয়— তেমনি মানুষ সমস্ত জগৎকে হৃদয়রসের যোগে আপন মানবিকতায় আবৃত করছে, অধিকার করছে, তার সাহিত্য ঘটছে সর্বত্রই। মানুষেরা সর্বমেবাবিশন্তি।
বাহিরে তথ্য বা ঘটনা যখন ভাবের সামগ্রী হয়ে আমাদের মনের সঙ্গে রসের প্রভাবে মিলে যায় তখন মানুষ স্বভাবতই ইচ্ছা করে, সেই মিলনকে সর্বকালের সর্বজনের অঙ্গীকারভুক্ত করতে। কেননা, রসের অনুভূতি প্রবল হলে সে ছাপিয়ে যায় আমাদের মনকে। তখন তাকে প্রকাশ করতে চাই নিত্যকালের ভাষায়; কবি সেই ভাষাকে মানুষের অনুভূতির ভাষা ক’রে তোলে; অর্থাৎ জ্ঞানের ভাষা নয়, হৃদয়ের ভাষা, কল্পনার ভাষা। আমরা যখনই বিশ্বের যে-কোন বস্তুকে বা ব্যাপারকে ভাবের চক্ষে দেখি তখনই সে আর যন্ত্রের দেখা থাকে না; ফোটোগ্রাফিক লেন্সের যে যথাতথ দেখা তার থেকে তার স্বতই প্রভেদ ঘটে।...বিশ্বের সঙ্গে এই মিলনটি সম্পূর্ণ অনুভব করার এবং ভোগ করার ক্ষমতা সকলের সমান নয়। কারণ, যে-শক্তির দ্বারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের মিলনটা কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়ের মিলন না হয়ে মনের মিলন হয়ে ওঠে সে-শক্তি হচ্ছে কল্পনাশক্তি; এই কল্পনাশক্তিতে মিলনের পথকে আমাদের অন্তরের পথ ক’রে তোলে, যা-কিছু আমাদের থেকে পৃথক এই কল্পনার সাহায্যেই তাদের সঙ্গে আমাদের একাত্মতার বোধ সম্ভবপর হয়, যা আমাদের মনের জিনিস নয় তার মধ্যেও মন প্রবেশ ক’রে তাকে মনোময় ক’রে তুলতে পারে। এই লীলা মানুষের, এই লীলায় তার আনন্দ। যখন মানুষ বলে ‘কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে’ তখন বুঝতে হবে, যে-মানুষকে মন দিয়ে নিজেরই ভাবরসে আপন ক’রে তুলতে হয় তাকেই আপন করা হয় নি— সেইজন্যে ‘হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে।’ মন তাকে মনের ক’রে নিতে পারে নি ব’লেই বাইরে বাইরে ঘুরছে। মানুষের বিশ্ব মানুষের মনের বাইরে যদি থাকে সেটাই নিরানন্দের কারণ হয়। মন যখন তাকে আপন ক’রে নেয় তখনই তার ভাষায় শুরু হয় সাহিত্য, তার লেখনী বিচলিত হয় নতুন গানের বেদনায়। মানুষও বিশ্বপ্রকৃতির অন্তর্গত। নানা অবস্থার ঘাত প্রতিঘাতে বিশ্ব জুড়ে মানবলোকে হৃদয়াবেগের ঢেউখেলা চলেছে। সমগ্র ক’রে, একান্ত ক’রে, স্পষ্ট ক’রে তাকে দেখার দুটি মস্ত ব্যাঘাত আছে। পর্বত বা সরোবর বিরাজ করে অক্রিয় অর্থাৎ প্যাসিভ্ভাবে; আমাদের সঙ্গে তাদের যে-ব্যবহার সেটা প্রাকৃতিক, তার মধ্যে মানসিক কিছু নেই, এইজন্যে মন তাকে সম্পূর্ণ অধিকার ক’রে আপন ভাবে ভাবিত করতে পারে সহজেই। কিন্তু, মানবসংসারের বাস্তব ঘটনাবলীর সঙ্গে আমাদের মনের যে-সম্পর্ক ঘটে সেটা সক্রিয়। দুঃশাসনের হাতে কৌরবসভায় দ্রৌপদীর যে-অসম্মান ঘটেছিল তদনুরূপ ঘটনা যদি পাড়ায় ঘটে তা হলে তাকে আমরা মানবভাগ্যের বিরাট শোকাবহ লীলার অঙ্গরূপে বড়ো ক’রে দেখতে পারি নে। নিত্যঘটনাবলীর ক্ষুদ্র সীমায় বিচ্ছিন্ন একটা অন্যায় ব্যাপার ব’লেই তাকে জানি, সে একটা পুলিশ-কেস রূপেই আমাদের চোখে পড়ে— ঘৃণার সঙ্গে ধিক্কারের সঙ্গে প্রাত্যহিক সংবাদ-আবর্জনার মধ্যে তাকে ঝেঁটিয়ে ফেলি। মহাভারতের খাণ্ডববন-দাহ বাস্তবতার একান্ত নৈকট্য থেকে বহু দূরে গেছে— সেই দূরত্ববশত সে অকর্তৃক হয়ে উঠেছে। মন তাকে তেমনি ক’রেই সম্ভোগদৃষ্টিতে দেখতে পারে যেমন ক’রে সে দেখে পর্বতকে সরোবরকে। কিন্তু, যদি খবর পাই, অগ্নিগিরিস্রাবে শত শত লোকালয় শস্যক্ষেত্র পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, দগ্ধ হচ্ছে শত শত মানুষ পশুপক্ষী, তবে সেটা আমাদের করুণা অধিকার করে চিত্তকে পীড়িত করে। ঘটনা যখন বাস্তবের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কল্পনার বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিতে উত্তীর্ণ হয় তখনই আমাদের মনের কাছে তার সাহিত্য হয় বিশুদ্ধ ও বাধাহীন।
EINSTEIN: One tries to understand in the higher plane how the order is. The order is there, where the big elements combine and guide existence, but in the minute elements this order is not perceptible.
TAGORE: Thus duality is in the depths of existence, the contradiction of free impulse and the directive will which works upon it and evolves an orderly scheme of things.
EINSTEIN: Modern physics would not say they are contradictory. Clouds look as one from a distance, but if you see them nearby, they show themselves as disorderly drops of water.
TAGORE: I find a parallel in human psychology. Our passions and desires are unruly, but our character subdues these elements into a harmonious whole. Does something similar to this happen in the physical world? Are the elements rebellious, dynamic with individual impulse? And is there a principle in the physical world which dominates them and puts them into an orderly organization?
EINSTEIN: Even the elements are not without statistical order; elements of radium will always maintain their specific order, now and ever onward, just as they have done all along. There is, then, a statistical order in the elements.
TAGORE: Otherwise, the drama of existence would be too desultory. It is the constant harmony of chance and determination which makes it eternally new and living.
EINSTEIN: I believe that whatever we do or live for has its causality; it is good, however, that we cannot see through to it.
TAGORE: There is in human affairs an element of elasticity also, some freedom within a small range which is for the expression of our personality. It is like the musical system in India, which is not so rigidly fixed as western music. Our composers give a certain definite outline, a system of melody and rhythmic arrangement, and within a certain limit the player can improvise upon it. He must be one with the law of that particular melody, and then he can give spontaneous expression to his musical feeling within the prescribed regulation. We praise the composer for his genius in creating a foundation along with a superstructure of melodies, but we expect from the player his own skill in the creation of variations of melodic flourish and ornamentation. In creation we follow the central law of existence, but if we do not cut ourselves adrift from it, we can have sufficient freedom within the limits of our personality for the fullest self-expression.................................................
TAGORE: Once I asked an English musician to analyze for me some classical music, and explain to me what elements make for the beauty of the piece.
EINSTEIN: The difficulty is that the really good music, whether of the East or of the West, cannot be analyzed.
TAGORE: Yes, and what deeply affects the hearer is beyond himself.
EINSTEIN: The same uncertainty will always be there about everything fundamental in our experience, in our reaction to art, whether in Europe or in Asia. Even the red flower I see before me on your table may not be the same to you and me.
TAGORE: And yet there is always going on the process of reconciliation between them, the individual taste conforming to the universal standard.
(৫)১৭ মার্চ, ১৯৩৯ অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন: ‘ডিক্টেটরি বুদ্ধি যতই গরম হয়ে ওঠে ততই একেশ্বর নেতারা ভুলে যায় যে, বিধাতার অন্যমনস্কতায় তারা সর্বজ্ঞ হয়ে জন্মায় নি। মানুষকে চালনা করবার নেশা এমনি তাদের পেয়ে বসে যে সকল বিষয়েই মানুষকে নাকে দড়ি দিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে উগ্রভাবে উদ্যত হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যে ডিক্টেটররা কেবল রাষ্ট্রিক ব্যাপারে নয়, সামাজিক বিধানে নয়, সাহিত্যে আর্টেও আপন শাসন রুদ্ররীতিতে প্রচার করছে। মানুষের এই বিভাগটা ছিল বিশেষভাবে গুণীদের হাতেই, পালোয়ানদের হাতে নয়। আকবর বাদশাও গানের আসরে তানসেনকে মেনে চলেছেন, সেখানে যদি তিনি বাদশাহী করতেন তাহলে সে হত সাংগীতিক ভুতের কীর্তন।’
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রাসঙ্গিক আরো দুটি বিদেশি লিঙ্কঃ
১)Activity and Knowledge।
২)Elements of Semiology
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রাসঙ্গিক আরো দুটি বিদেশি লিঙ্কঃ
১)Activity and Knowledge।
২)Elements of Semiology
No comments:
Post a Comment