দুপুর মিত্রের গল্পগুলো পড়ে ফেললাম। একটানে পড়া যায়। বেশ হাসলামও। কিন্তু 'এন্টি-গল্প' যে ধারণা দেয় আমি নিজে যে তাঁর বিরোধী। মানে সাহিত্য নিয়ে 'বিলেতি নাম আর ধারণা'র আমি প্রবল বিরোধী শুধু নই , রীতি মত তাঁর বিরুদ্ধে জেহাদী। আপনারা আমার যে কোন লেখাতে সেটি পাবেন। এমন কি 'সওগাত' কাগজ নিয়ে লেখা শেষ লেখাতেও। ধারণাটি আমার দু'দশকের প্রাচীন। এমনকি রাজনীতিতে আমি মার্ক্সবাদী। কিন্তু মার্ক্সবাদী সাহিত্য তত্বেও আমার দারুণ এলার্জি। অটিকে আমার এক জঘন্য শিল্প তত্ব বলে মনে হয়, যেটি গড়ে উঠেছিল স্তালিনের রাশিয়াতে। যে শিল্পতত্বের সঙ্গে আমি এমনকি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের কোন সংযোগ পাইনা, গোটা ব্যাপারটিই আমার কাছে মনে হয় পোষাকী। আমি মাটির সাহিত্য তত্বে বিশ্বাসী। সংক্ষেপে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলি। 'আধুনিকতা' ব্যাপারটিই আমরা সবাই জানি ঔপনিবেশিকদের দান। আমরা তাঁদের তাড়িয়েছি বটে, কিন্তু রাজনীতি-অর্থনীতিতেও ঠিক ততটাই যতটা তারা চেয়েছে। আমাদের চাহিদাটুকুরও তাঁরা বিলেতিকরণ করে ফেলেছে তিন শতকে। আমাদের শৃঙ্খল ওদের থেকে আসা বটে,কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সমস্ত মুক্তির ধারণাও ওদের থেকেই পাওয়া। মুক্তি পেয়ে আমরা চিরদিনই ওদের মতো হতে চেয়েছি। আমাদের মতো হওয়াটাকে জেনেছি, মধ্যযুগের অন্ধকারে ফিরে যাওয়া। যে মধ্যযুগ আসলে আমাদের কোনদিনই ছিল না। ওটা আমাদের ধারণাতে ওদের দেয়া। আমাদের মতো না হতে চাওয়ার বিপদ হলো, ওরা যে তত্ব্বগুলো তৈরি করে সেতো ওদের মাটিতে উঠে আসে, কিন্তু আমাদের কাছে সেগুলো ধার করা। আমাদের মাটিতে মেশেনা, খাপ খায়না। অনেক সময়েই আমরা পারিনা। কারণ, অনেক পথ হেঁটে আসতে আসতে সেই তত্বগুলো স্বরূপে থাকেও না, আর যেটুকু থাকে সহজ চোখে সেগুলো ধরাও পড়েনা। এই নিয়ে রবীন্দ্রনাথই লিখে গেছিলেন। আমি এই লেখা থেকে নজির দিই, এই যেমন ধরুন একে যদি মার্ক্সীয় তত্ব্ব হিসেবে দেখিঃ"দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল কথা হল সমস্ত বস্তুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের মধ্যেই সম্পর্কযুক্ত।" তা হলে কিন্তু এটা আর মার্ক্সবাদ রইল না। গল্পে এই সব চলতে পারে। কিন্তু তত্ব হিসেবে এটি মার্ক্সবাদকে মেরে ফেলে। কারণ মার্ক্সবাদের গোড়ার কথা, জগতের ব্যাখ্যা নয় , তাকে পালটে ফেলা। আর সম্পর্ক যুক্ত বললে আসলে কিছুই বলা হলো না। গতির কথা কই, বিকাশের কথা কই? আসলে কথাটা ছিল, বস্তুর বিকাশের মূলে দ্বন্দ্ব।
তেমনি আদিম সাম্যবাদ- থেকে পুঁজিবাদের যে ক্রম--এটা বাংলা ভাষাতে খুব চলে। এগুলো আসলে মার্ক্স ইউরোপ সম্পর্কে লিখেছিলেন। আমরা ইংরেজি অনুবাদে পড়ে মজে গেছি। কিন্তু কিছুতেই মার্ক্স এগুলো ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে বলেন নি, এই নিয়ে তাঁর আলাদা সূত্রায়ন আছে, আমরা সেগুলো খুব ঘাটাই নি। দরকারও বোধ করিনি। কারণ আমাদের ধারটাই দরকার আত্মস্থ করা নয়। ইনি লিখেছেন বলে লিখছি না, এগুলো আমরা পড়তে পাই এখানে , ওখানে। মনে হবে যেন ইতিহাসের গতি বড় সরলরৈখিক। অথচ পোষ্ট মডার্ণরা আসবার বহু আগে থেকেই মার্ক্সীয় স্থানকালের ধারণা আসলে কিন্তু অগ্রমুখী বর্তুলাকার। ইতিহাসের পুণরাবৃত্তি হয়, কিন্তু কখনোই তা আগেকার মতো হবে না, এগুলো নিয়ে মার্ক্সের এঙ্গেলসের ভালো ভালো লেখা আছে। নইলে আর তাঁরা স্বপ্ন দ্রষ্টা কিসের। বিলেতি ভাবনাকে অনুসরণ করবার বিপদ নিয়ে বলতে গিয়ে আমি এগুলো নজির দিলাম মাত্র। এমন সাহিত্য তত্বগুলো নিয়েও আমার ভাবনা দুই দশকের প্রাচীন। এমন কি , আমি কিন্তু লাকা -ফুকো-বাখতিন পড়ে অনেকটাই হজম করে রেখেছি। কিন্তু দেখবেন কোত্থাও ওদের কোট অব্দি করি না। আজকালতো কলকাত্তাইদেরও কোট করি না। কারণ ওরাই আমাদের এই সব শিখিয়েছেন। ......যদি এন্টি-গল্পকে গল্প বলতে হয়, তবে কমলাকান্তের দপ্তর বা পঞ্চভূতের ডায়েরিকে বলব না কেন? এগুলোই কি আমাদের ঐতিহ্যগুলোর আদি নয়? আমরা কিন্তু বলিনি। আমি দুপুর মিত্রের লেখাটিকে সেই সারিতে বসাতে পারি। অন্য সারিতে বসাবার যুক্তি ভেবে পাচ্ছি না। এর মানে কিন্তু এই নয় যে , আমি এগুলোকে নিরর্থক লেখা বলছি। কিন্তু গল্পের রসমূল্যকে আমি কোনভাবেই হেয় করতে রাজি নই, এন্টি-গল্পের যে বিলেতি ঐতিহ্য সে কিন্তু অস্বীকার করে...।
তেমনি আদিম সাম্যবাদ- থেকে পুঁজিবাদের যে ক্রম--এটা বাংলা ভাষাতে খুব চলে। এগুলো আসলে মার্ক্স ইউরোপ সম্পর্কে লিখেছিলেন। আমরা ইংরেজি অনুবাদে পড়ে মজে গেছি। কিন্তু কিছুতেই মার্ক্স এগুলো ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে বলেন নি, এই নিয়ে তাঁর আলাদা সূত্রায়ন আছে, আমরা সেগুলো খুব ঘাটাই নি। দরকারও বোধ করিনি। কারণ আমাদের ধারটাই দরকার আত্মস্থ করা নয়। ইনি লিখেছেন বলে লিখছি না, এগুলো আমরা পড়তে পাই এখানে , ওখানে। মনে হবে যেন ইতিহাসের গতি বড় সরলরৈখিক। অথচ পোষ্ট মডার্ণরা আসবার বহু আগে থেকেই মার্ক্সীয় স্থানকালের ধারণা আসলে কিন্তু অগ্রমুখী বর্তুলাকার। ইতিহাসের পুণরাবৃত্তি হয়, কিন্তু কখনোই তা আগেকার মতো হবে না, এগুলো নিয়ে মার্ক্সের এঙ্গেলসের ভালো ভালো লেখা আছে। নইলে আর তাঁরা স্বপ্ন দ্রষ্টা কিসের। বিলেতি ভাবনাকে অনুসরণ করবার বিপদ নিয়ে বলতে গিয়ে আমি এগুলো নজির দিলাম মাত্র। এমন সাহিত্য তত্বগুলো নিয়েও আমার ভাবনা দুই দশকের প্রাচীন। এমন কি , আমি কিন্তু লাকা -ফুকো-বাখতিন পড়ে অনেকটাই হজম করে রেখেছি। কিন্তু দেখবেন কোত্থাও ওদের কোট অব্দি করি না। আজকালতো কলকাত্তাইদেরও কোট করি না। কারণ ওরাই আমাদের এই সব শিখিয়েছেন। ......যদি এন্টি-গল্পকে গল্প বলতে হয়, তবে কমলাকান্তের দপ্তর বা পঞ্চভূতের ডায়েরিকে বলব না কেন? এগুলোই কি আমাদের ঐতিহ্যগুলোর আদি নয়? আমরা কিন্তু বলিনি। আমি দুপুর মিত্রের লেখাটিকে সেই সারিতে বসাতে পারি। অন্য সারিতে বসাবার যুক্তি ভেবে পাচ্ছি না। এর মানে কিন্তু এই নয় যে , আমি এগুলোকে নিরর্থক লেখা বলছি। কিন্তু গল্পের রসমূল্যকে আমি কোনভাবেই হেয় করতে রাজি নই, এন্টি-গল্পের যে বিলেতি ঐতিহ্য সে কিন্তু অস্বীকার করে...।
No comments:
Post a Comment