সেদিন হায়ার সেকেণ্ডারি ক্লাসে 'অশুদ্ধি সংশোধন', মানে বানান পড়াচ্ছিলাম! তো শুরুতেই সহজ করে বলেদিলাম, তোমাদের কটি ভুল শব্দ দিয়ে বলা হবে শুদ্ধ কর! সেরকম কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া আছে, মুখস্ত করে ফেল। কপাল ভালো থাকলে মার্ক পেয়ে যাবে! এর পরে তোমরা ভুলেও যাবে! এটাই নিয়ম! ফলে ভুলো না - এহেন আবান্তর উপদেশ আমি দেব না। তার জন্য স্বতন্ত্র প্রজাতির শিক্ষক আছেন, তাঁরা নিজেরাও ভুল করেন! কিন্তু তোমাদের ভুল দেখলে মার্ক কেটে দেন! সে জন্য বাংলার ছাত্ররা খুব কম মার্ক পায়! ভয়ে বাংলা লেখা পড়া ছেড়ে দেয়! তোমরাও দেবে হয় তো। কী আর করা যাবে? এই পোড়া দেশে আমাদের জন্ম! কিন্তু তোমরা ভয় করো না, যদি আগ্রহ জন্মায় তবে ভুলে ভালে লেখো বলো! সেই ভাষা যেন বাংলাই হয়! মাস্টারদের হুমকি ধমকিতে ভয় পেয়ো না, কারণ পরীক্ষার বাইরে তাঁদের কিচ্ছুটি করবার ক্ষমতা নেই! ভুল করতে করতেই লোকে শেখে, ভাষাকে ধরে রাখে, বাঁচায় এবং এগিয়ে নিয়ে যায়! বাংলার জন্ম ও বিকাশ এভাবেই হয়েছে। পণ্ডিতেরা বাংলার জন্ম দেন নি, তাঁরা সংস্কৃতের জন্ম দিয়েছিলেন। সে ভাষার কী গতি হয়েছে আমরা সবাই জানি! তাঁরা উনিশ শতকে সংস্কৃতের নকলে 'সাধু ভাষা ' বলে একটি ভাষা গড়তে গিয়ে হাজার বছরের বাংলা লিখিত সজীব ভাষাকে আসলে শ্মশানে পাঠিয়েছেন! কবরেও বলতে পারি এই অর্থে যে বুদ্ধিটি কিছু মিশনারি পণ্ডিতদের ছিল! তৎসম শব্দে বাংলার লিখিত ভাষা ভারাক্রান্ত করে তুলেছিলেন! এখন যে প্রমিতভাষাতে আমরা কথা বলি আর লিখি তার আয়ু ১০০ একশ বছর মাত্র, রবীন্দ্রনাথের হাতে এর জন্ম! কিন্তু সংস্কৃত বা প্রমিত বাংলা যারাই তৈরি করুন এরা মালমশলা উপকরণগুলো নিয়েছিলেন অপণ্ডিত মানুষের মুখে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি ভাষার থেকে! ধরে নিলাম, সে ভাষা খুবই বাজে, খুবই বিশ্রি, অনেকটা ভাষার জঙ্গল! সে কোনো শৃঙ্খলা মানে না, মানে না বিধান। কিন্তু যে দুনিয়াতে জঙ্গল নেই সেই দুনিয়াতে পণ্ডিতেরা দুই চারটি যত্নের বাগিচা করে দেখান তখন জঙ্গলকে অপমান করবেন! ফলে জঙ্গল আমাদের চাই! চাঁদে অরণ্য নেই, তাই সেখানে সভ্যতা নেই! নেই বাবুদের সাধের বাগান! কিন্তু 'বৈপরীত্যের মধ্যে ঐক্য ' বলে একটি কথা আছে! বাবু পণ্ডিতরাও সেসব ভুলে থাকেন, তাঁরা আশা করেন দুনিয়ার সর্বত্র তাঁদের সাধের বাগান হবে! যা অসম্ভব! কিন্তু দুনিয়ার সর্বত্র যদি অরণ্যই থাকত? যদি কোথাও চাষাবাদ না হত? যদি কোথাও না থাকত সাধের বাগান? আমরা তো বানরের সঙ্গে গাছে ঝুলতাম, কলেজে কি ক্লাস করতাম বসে আজ? সেই কথাও মনে রাখা দরকার, যখন তুমি লিখছ পড়ছ! যত বেশি লিখবে পড়বে তত বেশি সেটা মনে রাখা দরকার! আর যদি তুমি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে যাও তবে তুমিই হবে ভাষার মান! তোমাকে লোকে অনুসরণ করবে! ভাষার মান রপ্ত করবার এটিই বিজ্ঞান! স্থির মান বলে কিছু হয় না!যারা হয় বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা অনৈতিহাসিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোক! এর পরে চাষাবাদের, মানে 'বানান বিধি'র কিছু নিয়ম কানুন বলে বললাম, এগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাষাবাদ শেখাবার মতো বিষয়! শিখলে ভালো! কিন্তু কেউ ভালো শেখে না, পরীক্ষার পর মনেও রাখে না! চাষ তো ভালো শিখতে পারে চাষাই কেবল!
No comments:
Post a Comment