আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Monday, 22 March 2010

মুনাফা মার্কিনিদের , দায় আমাদেরঃ পারমাণবিক ক্ষতির সামাজিক দায় বিল ---দাসত্বের এক নয়া নমুনা!

          বাংলাতে একে কী বলা যাবে আমি নিশ্চিত নই। বোধহয় বিষয় ও ভাষার জটিলতার জন্যে ইংরেজি দু’একটা কাগজের বাইরে ভারতীয় ভাষার অন্য কাগজগুলো এ নিয়ে বেশি মাতামাতি করেনি। আমি বাংলাতে লিখলাম ‘পারমাণবিক ক্ষয়-ক্ষতির সামাজিক দায় বিল ২০১০’ ইংরেজিতে এটিকে বলা হচ্ছে ‘Civil Liability for Nuclear Damage Bill 2010’. সরকারও সাহস করেনি একে সরবে সংসদে নিয়ে আসতে।  যেটুকু আওয়াজ না করলেই নয় তাই করে গেল ১৫ মার্চে লোকসভাতে আনতে গেছিল সেই বিল। কিন্তু সমস্ত বিরোধীদের এক যোগে বিরোধের ফলে সেটি আটকে গেছে। বলা ভালো আটকে আছে।
পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন টয়োজন নিয়ে গেল বছর খুব একগুচ্ছ বিতর্ক হয়ে গেছিল। তখনই মার্কিনি দাসত্বের অভিযোগ উঠেছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারেরটা একেবারেই নগ্ন। কল্পনা করুন যে ভূপালের চেয়েও ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনা ঘটালো কোনো কোম্পানী , যার আশঙ্কা করেই অনেকে পারমাণবিক শক্তির বিরোধীতা করে থাকেন, তখন আপনি ঐ বিদেশি কোম্পানীকে আর কোনো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে পাবেন না। লাভের ভাগ নিয়ে ও চম্পট দেবে, লোকসানের ভাগ নিয়ে আপনি মরতে থাকুন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এই হচ্ছে এই বিলের সার কথা! 
ইতিমধ্যে ওয়েস্টিং হাউস এবং জেনারেল ইলেক্ট্রিক  কোম্পানী দুটো এ দেশে বেশ ক’টি কোটি কোটি ডলারের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করতে এগিয়ে এসছে। কিন্তু আসবার আগেই ওরা নিশ্চিতি চাইছে ভূপাল দুর্ঘটনার পর ইউনিয়ন কার্বাইডের যে সামান্য ভোগান্তি হয়েছে তাও যেন না হয়। সে নিশ্চিতি এতোটাই যেটুকু ওদের নিজেদের দেশ আমেরিকাও ওদের দেয় না। ওদের এই আকাঙ্ক্ষা নিজেই প্রমাণ করে শক্তির পারমাণবিক বিকল্প কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!
               এই বিল অনুযায়ী দুর্ঘটনার শিকার কোনো পক্ষের থেকেই ভারতে বা ওদের নিজেদের দেশে কোনো ধরণের মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। দুর্ঘটনার কোনো ধরণের দায় ওদের থাকবে না। দায় বর্তাবে ভারত সরকারের ঘাড়ে । বিলের ধারা ৭ বলছে,           “Central Government shall be liable for nuclear damage in respect of a nuclear incident” কেননা বিদেশিদের তৈরি কেন্দ্রগুলোর মালিকানা বুঝি ভারত সরকারের । ব্যাপারটা একটু জটিল বটে। ভারত সরকারের হয়ে ওই শক্তি কেন্দ্রগুলো চালাবে কিন্তু Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL).  তারপরেও বিলে প্রায়ই ভারত সরকার ও পরিচালক (Operator) শব্দগুলো কিন্তু আলাদা করেই বলা আছে। বিলের ষষ্ঠ ধারাতে সরকার ও  পরিচালকের যৌথ দায়ের চূড়ান্ত সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, “the rupee equivalent of 300 million special drawing rights (SDRs),” এটি খুব প্রায়োগিক ভাষা। টাকার ভাষাতে এর অর্থ হলো  দু’হাজার সাতাশি কোটি টাকা ( ২০৮৭ কোটি) বা পঁয়তাল্লিশ কোটি আশি লক্ষ    (৪৫৮ মিলিয়ন) ডলার । সমপর্যায়ের মার্কিনি আইনে (প্রাইস এন্ডারসন আইন)  ব্যক্তিমালিকানা কোম্পানীগুলোকে যে দায় বহন করতে হয় এর পরিমাণ তার থেকে এক নয়, দুই নয়, তেইশ (২৩!) গুণ কম। এর মধ্যে আবার পরিচালন সংস্থার দায় মাত্র পাঁচশ কোটি টাকা           ( ৫০০ কোটি) । সে যারই দায় হোক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে দায় এ দেশের  আমজনতার ঘাড়েই চাপছে। যখন কিনা , যে আমেরিকার চাপে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে সে দেশেও এমন বিধঘুটে ব্যাপার নেই! এমন কী দায়ভারের কোনো চূড়ান্ত সীমাও ওখানে বেঁধে দেয়া নেই।
ভারত সরকারের অধীন পরিচালন সংস্থা এন.পি.চি.আই.এল. ইচ্ছে করলে নির্মাণ চুক্তি করবার বেলা কোনো কোম্পানীর ঘাড়ে সে দায় চাপাতে পারে কিন্তু সেটাও ঐ ৫০০ কোটি টাকার উপরে যাবে না , কিছুতেই। কিন্তু সেটাও আদায় করাবার দায় ওই ভারতীয় পরিচালন সংস্থারই। আর কোনো ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা সংস্থা স্বদেশে বা ঐ কোম্পানীর দেশে কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ , এই গণতন্ত্রের জয়ধ্বজা তুলবার যুগেও পৃথিবীর সবচে’ শক্তিশালী গণতন্ত্রের চাপে সবচে’ বড় গণতন্ত্রের দেশে এই মহাপুরুষেদের কোম্পানীগুলো থাকবে সমস্ত আইনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।  ওদের গাফিলতির জন্যে আপনার গাঁ-গঞ্জ  উচ্ছন্নে গেলেও আপনি ওদের টিকিটির নাগাল পাবেন না। ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে ওরা সহজেই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে প[রবে! ধারা পঁয়ত্রিশে বলা হয়েছে, “No civil court shall have jurisdiction to entertain any suit or proceedings in respect of any matter which the Claims Commissioner or the Commission, as the case may be, is empowered to adjudicate under this Act and no injunction shall be granted by any court or other authority in respect of any action taken or to be taken in pursuance of any power conferred by or under this Act,”
 পারমাণবিক ক্ষয়ক্ষতি দাবি কমিশন একটা থাকবে (Nuclear Damage Claims Commission) ওদের রায়ই চূড়ান্ত হবে এর বিরুদ্ধেও কোথাও কোনো মামলা করা যাবে না। মার্কিনি আইনে কিন্তু মার্কিন আদালতকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। ক্ষতির দায় দাবি করবার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নতুন বিলে । আঠারো ধারাতে বলা হয়েছে দশ বছর পর করা কোনো দাবি গ্রহণ করা হবে না। আম পাঠকের মনে হতে পারে , এতো অনেক বেশি সময়। কিন্তু যারা জানেন, পারমাণবিক ক্ষতির সময়ের বিশাল ব্যাপ্তির কথাটা তাদের কাছে এই সময় অতি নগণ্য মাত্র।
এই শক্তিকেন্দ্রগুলো থেকে যে মুনাফা হবে তার কথা মাথায় রাখলে এই যে রেহাই ওদের দেয়া হচ্ছে সেটিকে ভারতীয় আম জনতার সঙ্গে করা এক নিষ্ঠুর রসিকতা বলেই মনে হবে। শুধু কি তাই! আমাদের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে যে এই শক্তি কেন্দ্র গুলো দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু ওরা যাতে ভারতে বাজারজাত করতে পারার মত কমদামে বিক্রী করে সে ব্যাপারেও এই আইনে ওদের ব্যাপক ছুট দেবার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ওখানেও অনেকটা ছাড়ের দায় বহন করবে ভারতীয় পরিচালন কমিটিটি। 
আমেরিকার ওই কোম্পানীগুলো ছাড়া ভারত যে আর কোনো আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে তাও নয়। বস্তুত চের্নোবিল দুর্ঘটনার পর থেকে এমন এক আন্তর্জাতিক দায় দায়িত্বের আদর্শ স্থাপনের চেষ্টা হলেও তা খুব একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতেই পারেনি। এমন অবস্থায় এই বিল এমন এক ধারণা দিতে চাইছে যেন ভারত এক আন্তর্জাতিক কর্তব্যের দায় বহন করতে চলেছে। এই যদি সে দায়ের নমুনা হয়, তবে বলতেই হবে উন্নয়নের লোভে এবং তার নামে  ভারত অমানবিকতার এক অত্যন্ত নিকৃষ্ট নমুনা পেশ করতে চলেছে। এই আদর্শে মুনাফাটা বিদেশী, কিন্তু ক্ষতিটা স্বদেশী। মুনাফা ব্যক্তিক, কিন্তু ক্ষতিটা সামাজিক! ভারতের সরকার যে এ দেশের মানুষ নয়, বরং বিদেশের কয়েকটি কোম্পানী চালাচ্ছে এর চে’ নির্লজ্জ উদাহরণ আর কী হতে পারে!
    ভারতের কিন্তু রাশিয়া ঐ ফ্রান্সের সঙ্গেও পারমানবিক ব্যবসা ও চুক্তি রয়েছে। ওদেরো ওমন এক আইনের দরকার নেই এ দেশে ব্যবসা করতে। মজার কথা এই যে পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে এবারে কেবল বিরোধীরাই নয়, খোদ সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্রক প্রতিবাদের বিণ বাজাচ্ছে।  অর্থ মন্ত্রক এতোটা আর্থিক দায়ভার নিতে প্রস্তুত নয়, পরিবেশ মন্ত্রক পরিবেশের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। বোধ করি তাতেই সরকার একটু নড়ে চড়ে বসেছে। কিন্তু খুব যে একটা পিছু হটবে তা মনে হয় না। কেন না, ২০০৮এর ভারত মার্কিন পারমাণবিক চুক্তির এটা এক বাধ্যবাধকতা। তখনই ঠিক হয়ে আছে যে ভারতের Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL) হবে শক্তি কেন্দ্রগুলোর পরিচালন কর্তা। এই কর্তাটিই লাঠি হাতে দারোয়ান। রাতে চুরি হলে সব দায় ওর। নির্মাণ ও সরবরাহের কাজটা করবে মার্কিনি কোম্পানীগুলো। মুনাফাটাও ওরা নিয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যাতে এখানে ওদের টিকি ধরে টান না দেয় তার নিশ্চয়তা দিতে অরকম একটা আইন আনতে হবে। সরকার এখন সেই নির্দেশনামাই অনুসরণ করছে। এটা না করতে পারলে দু’বছর ধরে বাজানো সব ঢাক ঢোল অথলে গেল! দেখা যাক , এখন স্বপ্নের পারমাণবিক বিদ্যুতের বিনিময়ে ভারতের মানুষ ঠিক  কতটা মরতে তৈরি হোন।

Saturday, 13 March 2010

কেমন আছেন ভারতের দলিতেরা !


           গেল বছর বাঙালুরুর জাতীয় আইন বিদ্যালয় ( NLS, Bangalore) অস্পৃশ্যতার উপর নাগরিক অধিকার  সুরক্ষা আইনের প্রভাব নিয়ে এক অধ্যয়ন চালিয়েছিলএই অধ্যয়ন দেশের ছটি রাজ্যের ২৪টি জেলাতে করা হয়অন্ধ্র, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ , রাজস্থান, মায় বর্ণবাদ নেই বলে অহংকার যেখানে তীব্র সেই পশ্চিম বাংলাতেও ওরা অধ্যয়ন চালিয়েছিল তারা যে তথ্য পেয়েছিল তা এরকমঃ
৬৪৮ জন দলিত মানুষকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, তাদের ৫১৬ জনকে মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হয় না যাদের, ১৫১ জন জানিয়েছেন তাদের দেবতার মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করতে দেয়া হয় না৫৮১ জন জানিয়েছেন তাদের নিজেদের বাড়ির বিয়েতে  ঢাকঢোল বাজাতে দেয়া হয় না১৬% দলিত মানুষ স্বীকার করেছেন যে দলিতদের মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হয় না১৩% মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেনকিন্তু এই অস্বীকৃতি থেকেও বোঝা গেছে তাদের বিদ্বেষ কত প্রবল।  .
সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে দলিতদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, ৫৯১ জন জানিয়েছেন তাদের বিয়ে টিয়েতে ডাকা হয়, মানে নেমন্তন্ন করা হয় কিন্তু ওই পর্যন্তই২৯% জানিয়েছেন  অন্যেরা খাওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হয় ২৯ শতাংশ দলিত জানিয়েছেন খাবার পরে দলিতদের থালা দলিতদের নিজেদেরই ধোয়া উচিত
৭ শতাংশ জানিয়েছেন গ্রামের সদর রাস্তা দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে দেয়া হয় নাআরো ৭ শতাংশ জানিয়েছেন প্রভাবশালী বর্ণের কারো সামনে দিয়ে ওরা যেতে পারেন না, গেলেও চপ্পল পরেতো নৈব নৈব চ ! ৯% শতাংশ জানিয়েছেন তাদের সবসময় হাতজোড় করে রেখে কথা বলতে হয়২৯ % বলেছেন বড়লোকদের সম্মানে ওদের দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলতে হয়
১৮ শতাংশ লোক জানিয়েছেন , তাদের এখনো উচু বর্ণের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় নাএক বড় অংশের দলিত মানুষ জানিয়েছেন যে তারা দলিতদের নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে দিয়ে থাকেন, কিন্তু সেই সমান অংশের অন্যেরা আবার এনিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেনদলিত মহিলাদের বাড়িতে কাজ করবার কাজে লাগানো হয়, কিন্তু ভেতর বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় নাবাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় না এমন অনেক সম্প্রদায়কেই কর্নাটক, রাজস্থানআদিতে চিহ্নিত করা গেছেকিন্তু শুধু বাংলাতেই তেমন ৩৪টি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে ওরা চিহ্নিত করেছেন
দলিত শিশুকে স্কুলে যেতে দেয়াতো হয়, কিন্তু ওদের পেছনের বেঞ্চে বসত বলা হয়, দুপুরের আহারের বেলা যে স্বতন্ত্র আহারের ব্যবস্থা হয়, সে আর বলতে? ৪০ % অদলিত মানুষ বলেছেন যে তাদের গাঁয়ে কোনো দলিত শিক্ষক নেই
দলিতরা তবে করেন কী? মানে কোন কাজে লেগে আছেন? দলিতদের এখনো প্রায় পরম্পরাগত  কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় ৫৫৩র মধ্যে ১৫৪ জন দলিত ড্রাম বাজান, ৪২ জন কবর খোঁড়ার কাজ করেন, ৯৭ জন জুতো সেলাইর কাজে লেগে আছেন , ৫৭ জন এর মধ্যে সাফাই কর্মীতাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তাও তাদের জন্যে সংরক্ষিত আসনগুলোতেও সীমাবদ্ধ
সেন্টার অফ সোসিয়াল এক্সক্লুসন এ্যান্ড  ইনক্লুসিভ পলিসির  সঞ্চালক এস জাফেট মানেন যে এই অধ্যয়ন সম্পূর্ণ নয়তাছাড়া সামাজিক বৈচিত্রতো রয়েইছে।  "No study can claim to be totally representative because of social and regional diversity. But this is as comprehensive as it can be as an empirical study. The methodology is scientific."
     তার পরে যখন এই দলিতেরা ধর্ম পরিবর্তন করেন, হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে, মেয়েদের ধর্ষণ করতে ঝাপিয়ে পড়েএই কথা অবশ্য আমারপ্রতিবেদনে বলা হয় নিগেল বছর উড়িষ্যার খৃষ্টান বিরোধী হামলাবাজির এমনই কিছু কারণ ছিল
         এর পরেও যারা দালিতদের সংরক্ষনের বিরোধীতা করেন বুঝতে কষ্ট হয় না তারা কোন পক্ষের লোককোন ভারতের লোকসেই 'ভারত'কে ঘৃণা করবার সাহস থেকেই শুধু নতুন ভারতের জন্ম হতে পারে


Friday, 12 March 2010

নারীকে নিয়ে বর্ণবাদিদের অসভ্যতা

 এখন সারা ভারতে সবাই খুব নারী দরদী হয়েছে। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব খুব কম। যারা মহিলা বিলের বিরোধীতা করছে তাদেরকে সমর্থকেরা পুরুষতান্ত্রিক বলে গালিগালাজ করছে। তবে ঐ যুক্তিতে যারা দলিত-সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্বের বিরোধীতা করছে তাদের ব্রাহ্মণ্যবাদি ও বর্ণবাদি বলা যাবে না কেন? দলিতদের বেলা যোগ্যতা আর নারীদের বেলা সংরক্ষণ-এতো দেখি কাঠালের আমসত্ব! সংরক্ষণ ছাড়া যোগ্য নারীরাও সুযোগ পাবে না , যদি মেনে নেয়া হয়, তবে  সংরক্ষণের ভেতরে সংরক্ষণের তত্ব না মেনে ঐ বর্ণ বাদি নারী দরদীরা দলিত মেয়েদের বঞ্চিত করাই শুধু নয়, দলিত পুরুষের ভাগেও ভাগ বসাতে চাইছে। এভাবেই এদেশে নারীকে নিয়েই সবচে' বেশি বর্ণবাদি রাজনীতি হয়ে গেছে।আজো ওই বর্ণবাদিরা কোনো ব্রাহ্মণের মেয়ে দলিত ঘরে বিয়ে করে গেলে জ্যান্ত পুতে ফেলে। তালিবানেরা ওমন করলে প্রচার পায়। বামুনেরা করলে এই অসভ্যরা ঢেকে ফেলে। এই অসভ্যতা আর কতদিন? সবচাইতে মজা হলো এই কৌতুকে সরকারি বামপন্থীরা সবচে' এগিয়ে যোগ দিয়েছে! ওদের ডুববার দিন এলো বলে!

Monday, 8 March 2010

আমার কবিতা ০১

       
 কবিতাঃ আমার কৈশোর যৌবনের ভালোবাসা
           সেই ছেলেবেলা স্কুলে যখন পড়তাম , সত্তরের শেষের দিকে কবিতা লিখতে শুরু করি। শুধু কি কবিতা? গল্প, নাটক, উপন্যাস, কি না লিখেছি। এখন সবই বাজে কাগজের বাক্সে আছে। তবু ১৯৮৫র শেষের দিকে থেকে লেখা কিছু কবিতা বাছাই করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম এ কাজটা বাদ যাবে না। কিন্তু দশ বছর পর ১৯৯৫ থেকে সে ভালোবাসাও টিকিয়ে রাখতে পারিনি। সে অনেক কথা , পরে কখনো বলবোখন।
         কিন্তু এই দশ বছরে লেখা কবিতা এখনো যত্নে রেখেছি। তার সব ক'টা যে আমার এখন ভালো লাগে, তা নয়। কিন্তু অনেক গুলো আছে, অন্যের ভালো না লাগলেও আমার লাগে । যেমন অনামিকা সিরিজের সেই 'প্রাকৃত পৈঙ্গলে'র অনুবাদ " প্রিয়তম দূর দেশে /দিগন্ত পার। ওড়না ওড়ালো এসে।মেঘ বরষার/" তেমনি আরো কিছু। সেগুলো এতোদিন খাতাতে ছিল। এখন এখানে তুলে রাখব ভাবছি ক্রমান্বয়ে।




                                           ভূপালের পর

                                         বড় কষ্টে বাঁচার লড়াই করেও ,
                                         সবুজ সবুজ গাছগুলো মরে কাঠ।
                                         বড় কষ্টে বাঁচার লড়াই করেও
                                         নির্বোধ পশুগুলো মরে লাশ।

                                         মরে লাশ বাস্তিলে বন্দি মানুষ !
                                                  (১২-০৫-৮৫)



                                           ঘুর্ণি ঝড়
                                 (২৫ মে,৮৫ বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে)
                                        চাঁদের গহনা খুলে দিয়ে এসে
                                        মেঘলা রাতের ঝিঁঝিঁ 
                                        গুনে গুনে যায় পল।
                                        শোঁ শোঁ ছল শব্দ সাগরে উত্তরঙ্গ জল।

                                        জবাব দিতে ঘুরে এলো না দুর্বিনীত ঝড়

                                        কবর খুঁড়ে দেখা মেলে শুধু...
                                        ছিন্ন শেকড়।
                                              ( ২৮-৫-৮৫)

                            


                                     এখন

                                         ( কবি বীরেন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের মৃত্যুতে)
 
                                      আমরা  এখন কী করব?
                                      কিছুই করি না করি
                                      তাঁকে আর অন্নদেবতাকে সম্মাণ জানাবো।
                                      আমরা এখন কী করব?
                                     কিছুই করি না করি ---- জননী জন্মভূমি,
                                     চোখের দুপাতা জড়ো হয়ে এসছে তাঁর
                                                    ছিন্ন আঁচলে তুমি মুছে দাও জল,
                                                    তাঁর ক্লান্ত শরীরটাকে শুইয়ে দাও
                                                    অতীতের সুরম্য বিছানায়।
                                    যতদিন তোমার এ শীর্ণ শরীরে আছে
                                                   ছিন্ন পোষাক
                                                   আর
                                                   জলসা ঘরে বেঁচে আছে কতিপয় অসভ্য লোক
                                                   আমরা ভুলে থাকব না
                                                   তাঁকে
                                                   পূজোর ছলে।

                                                   আমরা ভুলে থাকব না
                                                   তাঁকে
                                                   পূজোর ছলে।
                 
                                                     ( ১৪-০৭-৮৫)

                                                 মদ

                                           তোরা আমার তেপান্তরের কাজলা দিঘির জল,
                                 দুচোখ থেকে নিঙড়ে নিয়ে
                                 পান করেছিস মদ।

                                                    ( ১৮-৭-৮৫)

Monday, 1 March 2010

ফাগুন


             ফাগুন
                                    মূল ইংরেজিঃ উদ্দীপনা গোস্বামী


(অসমের এই লেখিকার সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতার বই
We Called the river Red’ থেকে নেয়া Trystকবিতার অনুবাদ)

সেদিন বিকেলের বালুকা বেলায়
আমাদের যখন দেখা হলো
সারা দিবং জুড়ে তখন জ্বলছিল আগুন!
আমি আর আমার কানেং,
আমাদের ঘিরে ফেলেছিল হলদে ফাগুন!

তুমি এমনি এমনি পড়ে যেতে দিলে
তোমার   রিবি গাছেংটাকে 
আমার নগ্ন পায়।
আর আমি ওদিকে ঝলসে গেলাম !

একটু শীতল হব বলে
তোমার স্তনের ছায়াতে
সরে গিয়েছি কি,
পুড়ে ছাই হয়ে গুড়িয়ে গেলাম!
ফাল্গুনী বাতাসে হারিয়ে  গেলাম !

আমাকে যে বাঁচাবে, তুমি সেদিন তেমন  কিচ্ছুটি করোনি !
~~~~~~~

টীকাঃ
১)দিবং ঃ ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদী। ২) কানেং ঃ মিসিং ভাষাতে এর অর্থ প্রেমাষ্পদ। ৩) রিবি গাছেং ঃ মিশিং মহিলার পোষাক
        শব্দগুলো লেখিকা ইংরেজি মূলে অপরিবর্তীত রেখে দেয়াতে আমরাও বাংলা অনুবাদে পাল্টাবার প্রয়োজন বোধ করিনি।

Tryst

When we met
On the afternoon sands
The Diabong was on Fire
And I, my Kaneng,
Was on fire too


When you let fall
Your Ribi-gacheng
At my feet,
I was scalded.

I reached out
For coolness in the shadow
Of your breasts
 And I was scorched

You did nothing to help

                                               * * *