বাংলাতে একে কী বলা যাবে আমি নিশ্চিত নই। বোধহয় বিষয় ও ভাষার জটিলতার জন্যে ইংরেজি দু’একটা কাগজের বাইরে ভারতীয় ভাষার অন্য কাগজগুলো এ নিয়ে বেশি মাতামাতি করেনি। আমি বাংলাতে লিখলাম ‘পারমাণবিক ক্ষয়-ক্ষতির সামাজিক দায় বিল ২০১০’ ইংরেজিতে এটিকে বলা হচ্ছে ‘Civil Liability for Nuclear Damage Bill 2010’. সরকারও সাহস করেনি একে সরবে সংসদে নিয়ে আসতে। যেটুকু আওয়াজ না করলেই নয় তাই করে গেল ১৫ মার্চে লোকসভাতে আনতে গেছিল সেই বিল। কিন্তু সমস্ত বিরোধীদের এক যোগে বিরোধের ফলে সেটি আটকে গেছে। বলা ভালো আটকে আছে।
পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন টয়োজন নিয়ে গেল বছর খুব একগুচ্ছ বিতর্ক হয়ে গেছিল। তখনই মার্কিনি দাসত্বের অভিযোগ উঠেছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারেরটা একেবারেই নগ্ন। কল্পনা করুন যে ভূপালের চেয়েও ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনা ঘটালো কোনো কোম্পানী , যার আশঙ্কা করেই অনেকে পারমাণবিক শক্তির বিরোধীতা করে থাকেন, তখন আপনি ঐ বিদেশি কোম্পানীকে আর কোনো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে পাবেন না। লাভের ভাগ নিয়ে ও চম্পট দেবে, লোকসানের ভাগ নিয়ে আপনি মরতে থাকুন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এই হচ্ছে এই বিলের সার কথা!
ইতিমধ্যে ওয়েস্টিং হাউস এবং জেনারেল ইলেক্ট্রিক কোম্পানী দুটো এ দেশে বেশ ক’টি কোটি কোটি ডলারের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করতে এগিয়ে এসছে। কিন্তু আসবার আগেই ওরা নিশ্চিতি চাইছে ভূপাল দুর্ঘটনার পর ইউনিয়ন কার্বাইডের যে সামান্য ভোগান্তি হয়েছে তাও যেন না হয়। সে নিশ্চিতি এতোটাই যেটুকু ওদের নিজেদের দেশ আমেরিকাও ওদের দেয় না। ওদের এই আকাঙ্ক্ষা নিজেই প্রমাণ করে শক্তির পারমাণবিক বিকল্প কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!
এই বিল অনুযায়ী দুর্ঘটনার শিকার কোনো পক্ষের থেকেই ভারতে বা ওদের নিজেদের দেশে কোনো ধরণের মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। দুর্ঘটনার কোনো ধরণের দায় ওদের থাকবে না। দায় বর্তাবে ভারত সরকারের ঘাড়ে । বিলের ধারা ৭ বলছে, “Central Government shall be liable for nuclear damage in respect of a nuclear incident” কেননা বিদেশিদের তৈরি কেন্দ্রগুলোর মালিকানা বুঝি ভারত সরকারের । ব্যাপারটা একটু জটিল বটে। ভারত সরকারের হয়ে ওই শক্তি কেন্দ্রগুলো চালাবে কিন্তু Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL). তারপরেও বিলে প্রায়ই ভারত সরকার ও পরিচালক (Operator) শব্দগুলো কিন্তু আলাদা করেই বলা আছে। বিলের ষষ্ঠ ধারাতে সরকার ও পরিচালকের যৌথ দায়ের চূড়ান্ত সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, “the rupee equivalent of 300 million special drawing rights (SDRs),” এটি খুব প্রায়োগিক ভাষা। টাকার ভাষাতে এর অর্থ হলো দু’হাজার সাতাশি কোটি টাকা ( ২০৮৭ কোটি) বা পঁয়তাল্লিশ কোটি আশি লক্ষ (৪৫৮ মিলিয়ন) ডলার । সমপর্যায়ের মার্কিনি আইনে (প্রাইস এন্ডারসন আইন) ব্যক্তিমালিকানা কোম্পানীগুলোকে যে দায় বহন করতে হয় এর পরিমাণ তার থেকে এক নয়, দুই নয়, তেইশ (২৩!) গুণ কম। এর মধ্যে আবার পরিচালন সংস্থার দায় মাত্র পাঁচশ কোটি টাকা ( ৫০০ কোটি) । সে যারই দায় হোক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে দায় এ দেশের আমজনতার ঘাড়েই চাপছে। যখন কিনা , যে আমেরিকার চাপে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে সে দেশেও এমন বিধঘুটে ব্যাপার নেই! এমন কী দায়ভারের কোনো চূড়ান্ত সীমাও ওখানে বেঁধে দেয়া নেই।
ভারত সরকারের অধীন পরিচালন সংস্থা এন.পি.চি.আই.এল. ইচ্ছে করলে নির্মাণ চুক্তি করবার বেলা কোনো কোম্পানীর ঘাড়ে সে দায় চাপাতে পারে কিন্তু সেটাও ঐ ৫০০ কোটি টাকার উপরে যাবে না , কিছুতেই। কিন্তু সেটাও আদায় করাবার দায় ওই ভারতীয় পরিচালন সংস্থারই। আর কোনো ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা সংস্থা স্বদেশে বা ঐ কোম্পানীর দেশে কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ , এই গণতন্ত্রের জয়ধ্বজা তুলবার যুগেও পৃথিবীর সবচে’ শক্তিশালী গণতন্ত্রের চাপে সবচে’ বড় গণতন্ত্রের দেশে এই মহাপুরুষেদের কোম্পানীগুলো থাকবে সমস্ত আইনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওদের গাফিলতির জন্যে আপনার গাঁ-গঞ্জ উচ্ছন্নে গেলেও আপনি ওদের টিকিটির নাগাল পাবেন না। ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে ওরা সহজেই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে প[রবে! ধারা পঁয়ত্রিশে বলা হয়েছে, “No civil court shall have jurisdiction to entertain any suit or proceedings in respect of any matter which the Claims Commissioner or the Commission, as the case may be, is empowered to adjudicate under this Act and no injunction shall be granted by any court or other authority in respect of any action taken or to be taken in pursuance of any power conferred by or under this Act,”
পারমাণবিক ক্ষয়ক্ষতি দাবি কমিশন একটা থাকবে (Nuclear Damage Claims Commission) ওদের রায়ই চূড়ান্ত হবে এর বিরুদ্ধেও কোথাও কোনো মামলা করা যাবে না। মার্কিনি আইনে কিন্তু মার্কিন আদালতকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। ক্ষতির দায় দাবি করবার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নতুন বিলে । আঠারো ধারাতে বলা হয়েছে দশ বছর পর করা কোনো দাবি গ্রহণ করা হবে না। আম পাঠকের মনে হতে পারে , এতো অনেক বেশি সময়। কিন্তু যারা জানেন, পারমাণবিক ক্ষতির সময়ের বিশাল ব্যাপ্তির কথাটা তাদের কাছে এই সময় অতি নগণ্য মাত্র।
এই শক্তিকেন্দ্রগুলো থেকে যে মুনাফা হবে তার কথা মাথায় রাখলে এই যে রেহাই ওদের দেয়া হচ্ছে সেটিকে ভারতীয় আম জনতার সঙ্গে করা এক নিষ্ঠুর রসিকতা বলেই মনে হবে। শুধু কি তাই! আমাদের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে যে এই শক্তি কেন্দ্র গুলো দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু ওরা যাতে ভারতে বাজারজাত করতে পারার মত কমদামে বিক্রী করে সে ব্যাপারেও এই আইনে ওদের ব্যাপক ছুট দেবার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ওখানেও অনেকটা ছাড়ের দায় বহন করবে ভারতীয় পরিচালন কমিটিটি।
আমেরিকার ওই কোম্পানীগুলো ছাড়া ভারত যে আর কোনো আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে তাও নয়। বস্তুত চের্নোবিল দুর্ঘটনার পর থেকে এমন এক আন্তর্জাতিক দায় দায়িত্বের আদর্শ স্থাপনের চেষ্টা হলেও তা খুব একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতেই পারেনি। এমন অবস্থায় এই বিল এমন এক ধারণা দিতে চাইছে যেন ভারত এক আন্তর্জাতিক কর্তব্যের দায় বহন করতে চলেছে। এই যদি সে দায়ের নমুনা হয়, তবে বলতেই হবে উন্নয়নের লোভে এবং তার নামে ভারত অমানবিকতার এক অত্যন্ত নিকৃষ্ট নমুনা পেশ করতে চলেছে। এই আদর্শে মুনাফাটা বিদেশী, কিন্তু ক্ষতিটা স্বদেশী। মুনাফা ব্যক্তিক, কিন্তু ক্ষতিটা সামাজিক! ভারতের সরকার যে এ দেশের মানুষ নয়, বরং বিদেশের কয়েকটি কোম্পানী চালাচ্ছে এর চে’ নির্লজ্জ উদাহরণ আর কী হতে পারে!
ভারতের কিন্তু রাশিয়া ঐ ফ্রান্সের সঙ্গেও পারমানবিক ব্যবসা ও চুক্তি রয়েছে। ওদেরো ওমন এক আইনের দরকার নেই এ দেশে ব্যবসা করতে। মজার কথা এই যে পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে এবারে কেবল বিরোধীরাই নয়, খোদ সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্রক প্রতিবাদের বিণ বাজাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক এতোটা আর্থিক দায়ভার নিতে প্রস্তুত নয়, পরিবেশ মন্ত্রক পরিবেশের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। বোধ করি তাতেই সরকার একটু নড়ে চড়ে বসেছে। কিন্তু খুব যে একটা পিছু হটবে তা মনে হয় না। কেন না, ২০০৮এর ভারত মার্কিন পারমাণবিক চুক্তির এটা এক বাধ্যবাধকতা। তখনই ঠিক হয়ে আছে যে ভারতের Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL) হবে শক্তি কেন্দ্রগুলোর পরিচালন কর্তা। এই কর্তাটিই লাঠি হাতে দারোয়ান। রাতে চুরি হলে সব দায় ওর। নির্মাণ ও সরবরাহের কাজটা করবে মার্কিনি কোম্পানীগুলো। মুনাফাটাও ওরা নিয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যাতে এখানে ওদের টিকি ধরে টান না দেয় তার নিশ্চয়তা দিতে অরকম একটা আইন আনতে হবে। সরকার এখন সেই নির্দেশনামাই অনুসরণ করছে। এটা না করতে পারলে দু’বছর ধরে বাজানো সব ঢাক ঢোল অথলে গেল! দেখা যাক , এখন স্বপ্নের পারমাণবিক বিদ্যুতের বিনিময়ে ভারতের মানুষ ঠিক কতটা মরতে তৈরি হোন।
পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন টয়োজন নিয়ে গেল বছর খুব একগুচ্ছ বিতর্ক হয়ে গেছিল। তখনই মার্কিনি দাসত্বের অভিযোগ উঠেছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারেরটা একেবারেই নগ্ন। কল্পনা করুন যে ভূপালের চেয়েও ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনা ঘটালো কোনো কোম্পানী , যার আশঙ্কা করেই অনেকে পারমাণবিক শক্তির বিরোধীতা করে থাকেন, তখন আপনি ঐ বিদেশি কোম্পানীকে আর কোনো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে পাবেন না। লাভের ভাগ নিয়ে ও চম্পট দেবে, লোকসানের ভাগ নিয়ে আপনি মরতে থাকুন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এই হচ্ছে এই বিলের সার কথা!
ইতিমধ্যে ওয়েস্টিং হাউস এবং জেনারেল ইলেক্ট্রিক কোম্পানী দুটো এ দেশে বেশ ক’টি কোটি কোটি ডলারের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করতে এগিয়ে এসছে। কিন্তু আসবার আগেই ওরা নিশ্চিতি চাইছে ভূপাল দুর্ঘটনার পর ইউনিয়ন কার্বাইডের যে সামান্য ভোগান্তি হয়েছে তাও যেন না হয়। সে নিশ্চিতি এতোটাই যেটুকু ওদের নিজেদের দেশ আমেরিকাও ওদের দেয় না। ওদের এই আকাঙ্ক্ষা নিজেই প্রমাণ করে শক্তির পারমাণবিক বিকল্প কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!
এই বিল অনুযায়ী দুর্ঘটনার শিকার কোনো পক্ষের থেকেই ভারতে বা ওদের নিজেদের দেশে কোনো ধরণের মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। দুর্ঘটনার কোনো ধরণের দায় ওদের থাকবে না। দায় বর্তাবে ভারত সরকারের ঘাড়ে । বিলের ধারা ৭ বলছে, “Central Government shall be liable for nuclear damage in respect of a nuclear incident” কেননা বিদেশিদের তৈরি কেন্দ্রগুলোর মালিকানা বুঝি ভারত সরকারের । ব্যাপারটা একটু জটিল বটে। ভারত সরকারের হয়ে ওই শক্তি কেন্দ্রগুলো চালাবে কিন্তু Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL). তারপরেও বিলে প্রায়ই ভারত সরকার ও পরিচালক (Operator) শব্দগুলো কিন্তু আলাদা করেই বলা আছে। বিলের ষষ্ঠ ধারাতে সরকার ও পরিচালকের যৌথ দায়ের চূড়ান্ত সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, “the rupee equivalent of 300 million special drawing rights (SDRs),” এটি খুব প্রায়োগিক ভাষা। টাকার ভাষাতে এর অর্থ হলো দু’হাজার সাতাশি কোটি টাকা ( ২০৮৭ কোটি) বা পঁয়তাল্লিশ কোটি আশি লক্ষ (৪৫৮ মিলিয়ন) ডলার । সমপর্যায়ের মার্কিনি আইনে (প্রাইস এন্ডারসন আইন) ব্যক্তিমালিকানা কোম্পানীগুলোকে যে দায় বহন করতে হয় এর পরিমাণ তার থেকে এক নয়, দুই নয়, তেইশ (২৩!) গুণ কম। এর মধ্যে আবার পরিচালন সংস্থার দায় মাত্র পাঁচশ কোটি টাকা ( ৫০০ কোটি) । সে যারই দায় হোক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে দায় এ দেশের আমজনতার ঘাড়েই চাপছে। যখন কিনা , যে আমেরিকার চাপে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে সে দেশেও এমন বিধঘুটে ব্যাপার নেই! এমন কী দায়ভারের কোনো চূড়ান্ত সীমাও ওখানে বেঁধে দেয়া নেই।
ভারত সরকারের অধীন পরিচালন সংস্থা এন.পি.চি.আই.এল. ইচ্ছে করলে নির্মাণ চুক্তি করবার বেলা কোনো কোম্পানীর ঘাড়ে সে দায় চাপাতে পারে কিন্তু সেটাও ঐ ৫০০ কোটি টাকার উপরে যাবে না , কিছুতেই। কিন্তু সেটাও আদায় করাবার দায় ওই ভারতীয় পরিচালন সংস্থারই। আর কোনো ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা সংস্থা স্বদেশে বা ঐ কোম্পানীর দেশে কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ , এই গণতন্ত্রের জয়ধ্বজা তুলবার যুগেও পৃথিবীর সবচে’ শক্তিশালী গণতন্ত্রের চাপে সবচে’ বড় গণতন্ত্রের দেশে এই মহাপুরুষেদের কোম্পানীগুলো থাকবে সমস্ত আইনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওদের গাফিলতির জন্যে আপনার গাঁ-গঞ্জ উচ্ছন্নে গেলেও আপনি ওদের টিকিটির নাগাল পাবেন না। ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে ওরা সহজেই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে প[রবে! ধারা পঁয়ত্রিশে বলা হয়েছে, “No civil court shall have jurisdiction to entertain any suit or proceedings in respect of any matter which the Claims Commissioner or the Commission, as the case may be, is empowered to adjudicate under this Act and no injunction shall be granted by any court or other authority in respect of any action taken or to be taken in pursuance of any power conferred by or under this Act,”
পারমাণবিক ক্ষয়ক্ষতি দাবি কমিশন একটা থাকবে (Nuclear Damage Claims Commission) ওদের রায়ই চূড়ান্ত হবে এর বিরুদ্ধেও কোথাও কোনো মামলা করা যাবে না। মার্কিনি আইনে কিন্তু মার্কিন আদালতকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। ক্ষতির দায় দাবি করবার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নতুন বিলে । আঠারো ধারাতে বলা হয়েছে দশ বছর পর করা কোনো দাবি গ্রহণ করা হবে না। আম পাঠকের মনে হতে পারে , এতো অনেক বেশি সময়। কিন্তু যারা জানেন, পারমাণবিক ক্ষতির সময়ের বিশাল ব্যাপ্তির কথাটা তাদের কাছে এই সময় অতি নগণ্য মাত্র।
এই শক্তিকেন্দ্রগুলো থেকে যে মুনাফা হবে তার কথা মাথায় রাখলে এই যে রেহাই ওদের দেয়া হচ্ছে সেটিকে ভারতীয় আম জনতার সঙ্গে করা এক নিষ্ঠুর রসিকতা বলেই মনে হবে। শুধু কি তাই! আমাদের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে যে এই শক্তি কেন্দ্র গুলো দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু ওরা যাতে ভারতে বাজারজাত করতে পারার মত কমদামে বিক্রী করে সে ব্যাপারেও এই আইনে ওদের ব্যাপক ছুট দেবার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ওখানেও অনেকটা ছাড়ের দায় বহন করবে ভারতীয় পরিচালন কমিটিটি।
আমেরিকার ওই কোম্পানীগুলো ছাড়া ভারত যে আর কোনো আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে তাও নয়। বস্তুত চের্নোবিল দুর্ঘটনার পর থেকে এমন এক আন্তর্জাতিক দায় দায়িত্বের আদর্শ স্থাপনের চেষ্টা হলেও তা খুব একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতেই পারেনি। এমন অবস্থায় এই বিল এমন এক ধারণা দিতে চাইছে যেন ভারত এক আন্তর্জাতিক কর্তব্যের দায় বহন করতে চলেছে। এই যদি সে দায়ের নমুনা হয়, তবে বলতেই হবে উন্নয়নের লোভে এবং তার নামে ভারত অমানবিকতার এক অত্যন্ত নিকৃষ্ট নমুনা পেশ করতে চলেছে। এই আদর্শে মুনাফাটা বিদেশী, কিন্তু ক্ষতিটা স্বদেশী। মুনাফা ব্যক্তিক, কিন্তু ক্ষতিটা সামাজিক! ভারতের সরকার যে এ দেশের মানুষ নয়, বরং বিদেশের কয়েকটি কোম্পানী চালাচ্ছে এর চে’ নির্লজ্জ উদাহরণ আর কী হতে পারে!
ভারতের কিন্তু রাশিয়া ঐ ফ্রান্সের সঙ্গেও পারমানবিক ব্যবসা ও চুক্তি রয়েছে। ওদেরো ওমন এক আইনের দরকার নেই এ দেশে ব্যবসা করতে। মজার কথা এই যে পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে এবারে কেবল বিরোধীরাই নয়, খোদ সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্রক প্রতিবাদের বিণ বাজাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক এতোটা আর্থিক দায়ভার নিতে প্রস্তুত নয়, পরিবেশ মন্ত্রক পরিবেশের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। বোধ করি তাতেই সরকার একটু নড়ে চড়ে বসেছে। কিন্তু খুব যে একটা পিছু হটবে তা মনে হয় না। কেন না, ২০০৮এর ভারত মার্কিন পারমাণবিক চুক্তির এটা এক বাধ্যবাধকতা। তখনই ঠিক হয়ে আছে যে ভারতের Nuclear Power Corporation of India Limited (NPCIL) হবে শক্তি কেন্দ্রগুলোর পরিচালন কর্তা। এই কর্তাটিই লাঠি হাতে দারোয়ান। রাতে চুরি হলে সব দায় ওর। নির্মাণ ও সরবরাহের কাজটা করবে মার্কিনি কোম্পানীগুলো। মুনাফাটাও ওরা নিয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যাতে এখানে ওদের টিকি ধরে টান না দেয় তার নিশ্চয়তা দিতে অরকম একটা আইন আনতে হবে। সরকার এখন সেই নির্দেশনামাই অনুসরণ করছে। এটা না করতে পারলে দু’বছর ধরে বাজানো সব ঢাক ঢোল অথলে গেল! দেখা যাক , এখন স্বপ্নের পারমাণবিক বিদ্যুতের বিনিময়ে ভারতের মানুষ ঠিক কতটা মরতে তৈরি হোন।