মূল ইংরাজি: দীপ হালদার
বাংলা অনুবাদ: সুশান্ত কর
জ্যোতির্ময় মণ্ডল : ১ম ভাগ
জ্যোতির্ময় মণ্ডল ‘ডাইনি’দের রক্ষা করেন। এমনটাই বলা চলে এই ভদ্রলোক সম্পর্কে।এর বেশি কোনোভাবে তিনি পরিচিত নন। সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়েছেন, জীবনের সত্তরটি বছর পার করেছেন। এক কন্যা আছেন, অভিনেত্রী। কিন্তু জীবনের কিছু কথা সত্যি কথায় বলে বোঝানো মুস্কিল।
৮৪ গৌরাঙ্গ সরণি, কলকাতার একটি অংশ — যাকে খুব বেশি লোকে ভদ্রপাড়া বলবেন না,-- তিনি তখন বিড়ি ফুঁকছিলেন। আমি তাঁকে গিয়ে ধরলাম সেই গল্প আবার বলতে হবে যা তিনি আগেও আমাকে বহুবার বলেছেন। আমার সাংবাদিক জীবনের শুরুর দিকে যখন দুনিয়ার খবর আমাকে রাখতে হবে,অথচ সাধন ছিল অল্প তিনিই ছিলেন আমার বহু মানবিক আগ্রহের সংবাদের উৎস। তিনি প্রায়ই বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছুটে যান সেই সব বিধবাদের পাশে দাঁড়াতে যাদের তাঁর প্রতিবেশী বা পরিজনেরা ডাইনি সাজিয়ে দিয়েছে শুধু সামান্য সম্পত্তি হরণ করবার উদ্দেশ্য নিয়ে। তিনি এর জন্যে তাদের সাহায্য করেন না যে মঞ্চে বা কোনো টিভি শোতে বক্তৃতা করবেন বা পুরষ্কার পাবেন। বরং এর জন্যে যে তিনি মরিচঝাঁপির পরে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পুরুষের হিংসার বিরুদ্ধে লড়বার যাদের সামর্থ্য থাকবে না তিনি তাঁদের পাশে থেকে লড়বেন। স্বাভাবিকভাবেই মরিচঝাঁপির মানুষের মৌখিক ইতিহাস যখন নথিবদ্ধ করব বলে ঠিক করেছি আমার প্রথম গন্তব্য হল এই জ্যোতির্ময় মণ্ডলের বাড়ি।
দণ্ডকারণ্যের মানা এবং অন্যান্য শিবিরের কাহিনি জ্যোতির্ময় মণ্ডলের থেকে বেশি কেউ নিজের অভিজ্ঞতার থেকে বলতে পারতেন না।তিনি আমাকে নিয়ে যান কাহিনির একেবারে শুরুতে,তাঁর শৈশবে,যখন তাঁর বাবা এক দেশ থেকে আরেক দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারকে বাঁচাতে। সে ছিল ১৯৫৬-৫৭-র কথা শত সহস্র রাজমিস্ত্রি,কৃষক,মৎস্যজীবী,মৃৎশিল্পী, ভূমিহীন বা ভূম্যধিকারী একটি মাত্র শব্দে পরিচিত হতে শুরু করলেন---‘উদ্বাস্তু’,‘রিফ্যুজি’। তিনি আমাকে বললেন বাবা ও ছেলের, সুখচাঁদ ও শচীনের গল্প — যারা এই পুরো প্রক্রিয়াতে সর্বস্ব হারিয়েছেন। এভাবে তিনি শুরু করেন :
000
অচেনা একটি লোক সুখচাঁদকে হুঁকা এগিয়ে দিলেন। শচীন দিনের ক্লান্তিতে ভারি চোখ নিয়ে দেখল এবং জীবনের একটি সুগভীর পাঠ নিল, শিখল – সেই সহযাত্রীকে শ্রদ্ধা করতে হয় যখন দেখা যাবে সেই লোকটিও তোমারই মতো সব আশা হারিয়ে চলছে।লোকটি স্টিমারের ইঞ্জিন ঘরের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন।সেই দেশে যাচ্ছিলেন যেখানে কোনোদিন যান নি, যাচ্ছিলেন নয়া বাড়ি বানাবেন বলে--- যে বাড়ি হয়তো কোনোদিন তাঁর হবে না।
বেঁটেখাটো লোকটি বেশ আয়াস করে,সবিনয়ে সামান্য সামনে নুয়ে বাঁ হাতে ডান কুনুই ধরে মাটিতে তৈরি হুঁকার নলটি তার বাবা সুখচাঁদকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন। তাদের দেশবাড়িতে --বাংলার যে অংশে তাঁদের বাড়ি ছিল,ফরিদপুর জেলার কদমবাড়ি গ্রাম,যাকে তাঁরা পেছনে ফেলে আরেকটি দেশে চলে যাচ্ছেন -- এই ভঙ্গিমাতেই তাঁরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা জানান। সেসব কথা পরে সুখচাঁদ শচীনকে বলেছেন।
সেই রাতের অন্ধকারে,পুঁতিগন্ধময় স্যাঁতসেঁতে জায়গাটিতে যখন পুরুষেরা নাক ডাকছিলেন,আর মেয়েরা ছেলেভুলানো গান করে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াচ্ছিলেন,শচীনের মনে পড়ছিল মাথা ভর্তি সাদা আউলানো চুলের সেই মানুষটিকে। তাঁর হাতে পায়ে মরা মাছের পাতির মতো শুকনো চামড়া।তার ঠাকুরদাদা গয়ালি। তার মন ব্যাকুল হচ্ছিল শুনতে -- গয়ালি দুই প্রজন্মের ফাঁক ভরে দিয়ে বন্ধুর মতন ডাকছেন,‘ভাই’!শচীন শেষবারের মতো খুব দ্রুত একবার সেই অচেনা লোকটির থেকে বাবার দিকে,বাবার থেকে লোকটির দিকে নজর ফেরাল। তাঁরা তখন তামাকের নেশায় আশ্রয় নিয়ে ক্লান্তি ঝরাবার তালে আছেন। তারপরে তন্দ্রাচ্ছন্নতা নিয়ে সে ভাবার চেষ্টা করল গোটা দিনে কতটা দূর ভ্রমণ সারা হল।
ঘুমের ভেতরে ঢেউ ভেঙে শচীন সাঁতরে ফিরে গেল মধুমতীর পাড়ে ওদের গাঁয়ে। সেখানে সেই বিশাল বট গাছের ছায়ায় গয়ালির বাড়ি। কৈঠার বাড়ি। ঢালির বাড়ি।সেই সাধু মানুষটির বাড়ি,যিনি দীর্ঘ যাত্রার জন্যে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সেই পাগলের বাড়ি,যে বাড়ির সবাই কিন্তু পাগল নন।ঢালির পরের বাড়িটিই যেন যুদ্ধের বর্ম। দূর থেকে ছুটে আসা বর্শা আটকে ফেলে, তলোয়ারকে ভেঙে দু-টুকরো করে দেয়।
নদীর পাড়ে,সামান্য শুকনো চরে স্থানীয় বাজার।বড় গোলগাল এনামেলের কলসিতে অজস্র মাছ কিলবিল করছে, দিনের নতুন ধরা মাছ।কখনো বা পদ্মার বিখ্যাত ইলিশও।আম,কাঁঠাল,আঁখ,কচ্ছপ সবই সেই বাজারে কিনতে মেলে।জনতার কলরবে সজীব একটি বাজার।
এই সেই বাজারে শচীন সফরির জন্যে বায়না ধরে কান্না জুড়েছিল। গয়ালি দিতে অস্বীকার করেন। একে বর্ষা,তায় পেটের ব্যামো বাঁধতে পারে বলে।তার বদলে কিনে দিয়েছিলেন ‘মদন কুটকুটি’।ছোট্ট গোল গোল লজেন্স।দাঁতের চাপ পড়লেই যার থেকে ‘কুট কুট’ শব্দ বেরোয়।
শচীনের বাবা সুখচাঁদ এপাড়া ওপাড়া ঘুরতেই থাকেন। গ্রামের স্কুলে তিনি ছাত্র পড়ান। স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রায়ই এক আনার লজেন্স নিয়ে আসতেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রি তাঁর জোটানো হয় নি।কেননা মাদারিপুর,ফরিদপুর,কিংবা ঢাকা—যেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সবক’টাই তাঁদের গ্রাম থেকে বহুদূর। শেষটিতে যেতে হলে তো নৌকো করে তিনদিন যেতে হয়। ম্যাট্রিক দেবার বছরেই সুখচাঁদ বিয়ে করেন। প্রতিবেশীরা মানা করেছিলেন। বলেছিলেন,‘ছেলের লেখাপড়া চাই আগে।’ বিয়ের জন্যে অপেক্ষা করা চলে,পড়ার জন্যে না। কিন্তু গয়ালি মেয়েটিকে হারাতে চাইলেন না।তাঁর লম্বাটে মুখের ছেলের জন্যে এত সুন্দরী কনে পাবেন কই? ফলে সুখচাঁদের বিয়ে হল,পরীক্ষা দিলেন এবং ফেল করলেন। পরের বছরে যদিও পাশটা দিলেন। গয়ালি বললেন,‘আমাদের নতুন বউ রাঙাবউ ঘরে লক্ষ্মী নিয়ে এসেছে।’ কিছুদিন পরেই শচীনের জন্ম। দুই ছেলে,দুই ছেলের বৌ আর এখন নাতিকে নিয়ে বিপত্নীক গয়ালি জীবনের কাছে আর কিছু চাইবার থাকতে পারে?
শচীন এভাবেই আদরে আবদারে বড় হচ্ছিল। বাপ মায়ের, ঠাকুরদার কোলে পীঠে, সেই বড় বট গাছটার ছায়ায়—যে গাছের ছায়াতে বড় হয়েছেন তাঁর আগেকার বহু পূর্ব পুরুষ,আগামীতেও আরো কিছু প্রজন্ম বড় হবে। কিন্তু শচীনের সেই স্বপ্নের দুনিয়াকে অচিরেই কালো মেঘের ছায়া ঘিরে ফেলল।
শুরুতে গুজবই ছিল,দাঙ্গা ছিল না। কিন্তু দশ গ্রামে যার কথাই দৈববাণী -- সেই গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক যেদিন কোনো বিশ্বাসঘাতকের তলোয়ারে প্রাণ হারালেন,সুখচাঁদের মনে সংশয় দেখা দিল ---শান্তির দিনগুলো কি তবে ফুরিয়ে গেল? প্রধান শিক্ষক পাশের গ্রামে গেছিলেন একটি দাঙ্গা থামাতে। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে কেউ হিন্দু,কেউ মুসলমান।তাঁদের বললেন ধর্মের জন্যে যেন পরস্পরকে হত্যা না করেন।মারামারি তাতে থেমেছিল। কিন্তু বৃদ্ধ যখন ফিরে আসছিলেন,সুখচাঁদের কথাতে মানুষের চেহারাতে সাপ,তাঁকে কেটে দু-টুকরো করে দেয়। প্রধান শিক্ষক এবং তাঁর দুই ছাত্র যখন মারা যাচ্ছিলেন রাতের আকাশ ছেয়ে গেছিল যুদ্ধের দামামাতে,ধমনি দিয়ে বিষ বইয়ে দিয়ে শুনা যাচ্ছিল একদিকে ‘জয় মা কালী’,তো আর দিকে ‘আল্লাহু আকবর’।রামদা,ড্যাগার, ত্রিশূল, তলোয়ার সবই বেরিয়ে গেছিল যুদ্ধে।
০০০
সুখচাঁদ বহুদিন বাড়ি ছিলেন না। দুর্গাপুজোর সামান্য আগে ফিরেছিলেন। গয়ালি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ি ছেড়ে এদ্দিন ছিলেন কই? সুখচাঁদের বুক ভার হয়ে আসছিল।এই প্রশ্ন তাঁকে না করলেই ভালো ছিল, যে জবাব দেবেন গয়ালি তা না শুনলেই ছিল ভালো। সুখচাঁদ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কদমবাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন, ছেড়ে চলে যাবেন পুব পাকিস্তান।পাড়ি জমাবেন সেই নতুন দেশে যাকে লোকে বলে ‘ইণ্ডিয়া’। শুধু এই নামটাই এখানে গালি। কিন্তু এই দেশ তো আর হিন্দুর জন্যে নিরাপদ নয়; নিরাপদ নয় তাঁর বউ ছেলের জন্যে।
এ হবে তাঁদের পূর্বপুরুষের গ্রামে শেষ দুর্গা পূজা।
গাঁয়ের আকাশে কালোমেঘ ছেয়ে গেছে। রাঙাবউর চোখে বিষাদ। গয়ালি বৃথাই ঝড়কে আটকে রাখবার চেষ্টা করলেন। ছোট্ট শচীন কোনো যুক্তিই শুনবে না।সে ঠাকুরদার কোলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল।কেঁদেকুটে আবদার জানাল,এই গ্রাম ছেড়ে যেন তাদের চলে না যেতে হয়। বৃদ্ধ দূরে তাকিয়ে রইলেন। বাইরে তখন ভারি বৃষ্টি।
মাঝি ফেরিতে নৌকাকে বেঁধে রাখা দড়ি ঢিলে করছে শচীন দেখতে পাচ্ছিল। যে দক্ষতাতে গ্রামের মাদারি চোখের পলক না ফেলে দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যায়, সেরকমই দক্ষতাতে মাঝি ঝাঁপ দিয়ে নৌকাতে চড়ল।নৌকার দোলন স্থির করল এবং বৈঠা চালিয়ে দিল।
গ্রামের লোকে ভিড় করে তাদের বিদায় জানাতে এসেছিল। দুই জা-য়ে দু’জনকে বিদায় জানালেন।গয়ালির চোখ দিয়ে জল ঝরছিল।কেঁদে উপচানো গলাতে বললেন,‘ সুখচাঁদ,বাবা এই লম্বা যাত্রা। দেখেশুনে যেও বাবা। রাঙাবউ-র যত্ন নিও। ছেলেটার পেটটা খারাপ।ওর খাবার দাবারে যত্ন নিও। বাছা আমার।”
কদমবাড়ি ধূসর হয়ে এল।তারপরে কচুচুষি বিল। তারপর চিতলমারি খাল। যেখানে স্টিমার লাইন করে দাঁড়িয়েছিল তাঁরা সেই পাড়ে গিয়ে পৌঁছুলেন।সেরকম এক ভিড়ে ঠাসা স্টিমারে চেপে ছোট্ট ইঞ্জিন-ঘরের কাছে তাঁরা জায়গা পেলেন বসবার। সেখানে সেই বেঁটেখাটো লোকটি বসে হুঁকো টানছিলেন।এই স্টিমার তাঁদের নিয়ে যাবে এক বাংলা থেকে আরেক বাংলাতে। শচীনের বাবা যখন অচেনা লোকটির সঙ্গে হুঁকো ভাগ করে টানছিলেন, এই অন্ধ কাছেই গাইছিলেন,
‘দয়াল রে, কেনে রে তুই ভাগ করলি দেশ?
শান্তি আছিল। কেনে তুই করলি তারে শেষ?’
শচীনের চোখে তখন গভীর ঘুম।
০০০
জলধর মণ্ডল
১৯৫৭ সন। শচীনের সামনে মানুষের মাথার সাগর। দুই
হাতে বয়ে
নিয়ে যাচ্ছে পোটলা
বাঁধা ভাঙা জীবন। জং ধরা জাহাজ থেকে সবাই নামছে। ভিড়ে
ঠাসা খুলনা জেটি।অস্থায়ী হোটেল থেকে লোক একে
খাবার জন্যে লোক ডাকাডাকি করছে। ফেরিওয়ালারাও বালা চুড়ি বিক্রি করছে।কিন্তু নষ্ট করবার জন্যে সময় ছিল না সুখচাঁদের কাছে। তিনি
তাঁর স্ত্রী সন্তানকে বললেন পা চালাতে।এখনো
তাঁদের বহু পথ চলা বাকি।আগুন ঝরানো
চড়া রোদের তলা দিয়ে খুলনা স্টেশনের দিকে হাঁটা দিলেন।
এত বড় নগর এই প্রথম দেখতে পেল শচীন।পথ দিয়ে চলে যাচ্ছে মুখ ছাড়া বিশালকায় সব কচ্ছপ।লোকে এখানে এগুলোকে গাড়ি বলে।মেয়েলোকেরা চপ্পল পরে হাঁটছে,পুরুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। রাঙাবউ জীবনে চপ্পল পরা মেয়ে দেখেনি।লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন।
সবুজ রেলগাড়িগুলো মানুষজনকে কলকাতা নিয়ে যাচ্ছিল।বরিশাল এক্সপ্রেস কোনো এক অজানা স্টেশনে একই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল ইলিশ,মানুষ,আশা আর স্মৃতি।কেউ একজন বলছিল,মধুমতীর ইলিশের ওপারে কদর অনেক।তাঁরা বেনাপোল স্টেশন অব্দি যাবার জন্যে একটি রেলে চাপলেন।বেনাপোলে দল বেঁধে পুলিশে কাগজপাতি,তল্পিতল্পা দেখছিল। দেখছিল যদি কেউ যতটা লিখেছে, তার চেয়ে বেশি জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে কি না।অনেকেরই কাগজপত্র কিছু ছিল না।তারা কাকুতিমিনতি করে বললও,সেগুলো খুঁজে পায় নি।কিন্তু কড়া পুলিশ।কারো উপায় ছিল না নজর এড়াবার।পুলিশ তাদের নামিয়ে দিচ্ছিল।ঘুস নিয়ে কাউকে কাউকে যদিওবা থাকতে দিচ্ছিল সোনাদানা নিয়ে নিচ্ছিল।জিনিসপত্রও এলোমেলো করে দিল। মেয়েদের গায়ে ছ্যাঁকা দিচ্ছিল লোভী চোখ।আইন তার নিজের পথে কাজ করছিল।
খাকি পোশাকের নীল টুপিতে পুলিশের দল শচীনের বাবার কাছেও এল।এর আগে কোনোদিন শচীন পুলিশ দেখেনি।সে ভাবছিল,এত বড় বড় লোকে স্কুলের পোশাক পরে আছে কেন?
“কতটা কী নিয়ে যাচ্ছ?”
নরম স্বভাবের সুখচাঁদ জবাব কী দেবে ভাবতেই লোকটি চালের কলসের ভেতরে হাত ডুবিয়ে দিল সোনাদানা বা টাকাপয়সা আছে কি না দেখতে। “শুধুই চাল মনে হচ্ছে।” লোকটি হেসে ফেলল।“কিন্তু যতটা নেবার তার থেকে বেশি জিনিস নিয়ে যাচ্ছ।” একটা লোক রাঙাবউর দিকে তাকিয়ে বলল।এই তাকানো মানুষের তাকানো নয়।শচীন এমন চোখ দেখেছে আগে।এগুলো জানোয়ারের সন্ধানী চোখ।ওর বুক ভার হয়ে এল ভয়ে।
তাড়াতাড়ি করে সুখচাঁদ লোকটার হাতে ত্রিশটাকার দোমড়ানো নোট গুঁজে দিল। সেগুলো পকেটে ভরে সীমা পার করবার আবার রেলে চাপবার পাস দিয়ে দিল। রেল বেনাপোল ছেড়ে চলে গেল।
শ্যামল সবুজ মাঠ,ধীরে স্থিরে চরমান গরু মোষ,নাম জানা অজানা গাছের সারি, শুকনো কিম্বা ভরাট পুকুর,ঘর্মাক্ত চাষি,ব্যস্ত বাজার পেরিয়ে গেল।স্মৃতি এসে ভিড় করল শচীনের মনে।গয়ালি নিশ্চয় এখন মাঠে,এখন মাঠে ব্যস্ত থাকার ঋতু। ওরা চলে এল বলে তিনি কি কাজে ছুটি দিয়েছেন?শচীন ওর ঠামুরমাকে দেখেনি কোনোদিনই। কিন্তু ঠাকুরদাই ওকে দুনিয়ার সব আদর ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন।শৈশবে ঠাকুরদার দুই বাহুই ছিল ওর নিত্য-ক্ষণের আশ্রয়।পাখির ঘর। হরিদাসপুরে যখন গাড়ি এসে পৌঁছুল শচীনের গলা জড়িয়ে এসেছিল।অনেকটা পথ ওরা পার করেছে। ঘণ্টা-খানিক পরে ওরা একটি ওভারব্রিজ পার করল।ঠিক পরে পরেই একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘No Man’s Land’।দিনের রোদ চড়া হয়ে আসছিল।কামরার লোকজন অস্থির হয়ে পড়ছিলেন।আরেকটি সাইনবোর্ডে পেরিয়ে গেল,তাতে লেখা ‘Welcome to India!’
এঁরা প্রায় পৌঁছে গেলেন। পলক পড়তেই শিয়ালদা এসে পৌঁছুবেন। তারা এখন ভারতবর্ষে।
০০০
সুখচাঁদ ডুবন্ত সূর্য দেখতে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন।কিছুদিন থেকে তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।বনগাঁ রেলস্টেশনে প্রতিষেধক ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।সেই থেকেই তাঁর বমি হচ্ছে থেকে থেকে। রাত কাটে কাশতে কাশতে। তাঁবুর ভেতরে মাথার উপরে টিমটিম করে জ্বলে একটি ভাল্ব।পাশের তাঁবুতে স্বামী-স্ত্রীর শীৎকার শুনা যাচ্ছে,পাশে শিশু কাঁদছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এখানে একটি বিদেশি ধারণা।
বেশ কদিন ধরেই তাঁরা এখানে রয়েছেন। একটা মোটা ফাইলে তাঁদের নাম পঞ্জিভুক্ত হয়েছে।শিয়ালদা স্টেশনের বাইরে বাইরে উদ্বাস্তুদের জন্যে একটা অস্থায়ী আস্তানা করা হয়েছে, যেখানে থেকে কাছে বা দূরের নানা ত্রাণ শিবিরে তাঁদের পাঠানো হবে। রাঙাবউ ফুটপাতে ইট বিছিয়ে চুলো বানিয়েছেন,সেখানেই পরিবারের জন্যে রান্না করেন।ডালপালা জ্বালিয়ে। চালের যে কলসটা নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে করে সেটি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল।প্রত্যেক শরণার্থীকে দিনে দু-টাকা করে নগদ দেওয়া হত।সুখচাঁদ পরিবারের জন্যে পেতেন পাঁচ টাকা মাত্র।বিরক্তিতে প্রায়ই বলেন,‘ধুর ছাই!এত ভিখারির জীবন এখানে!” কে জানত ভারত হবে এত হয়রানি, হতাশা আর ব্যর্থতার দেশ ! তিনি তাঁর চারদিকে দেখছিলেন কেবলই নিরাশা আর মৃত্যু তিনি একবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন---এত শ্রম আর সংকটের ভারেও সজীব সুন্দর।তারপরেই সামনে দূরে তাকিয়ে দেখেন আশার ঝলক -- সেটি কলকাতা।সে কি মহানগর না মরীচিকা?
এক সপ্তাহ পরে,তাঁদের আবার বলে দেওয়া হল,এগুতে হবে। তাঁদের নতুন ঠিকানা হবে যজ্ঞেশ্বর ডিহি ত্রাণ শিবির। আবারও তারা তাঁদের তল্পি তল্পা নিয়ে একটি ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে চাপলেন।শতশত হিন্দু শরণার্থী।নতুন দেশে পা রাখবার ভূমি খুঁজে বেড়াচ্ছেন।ভেতরে একটাও খালি বসবার আসন ছিল না। যে টিনের সুটকেস তাঁরা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তাতেই বসলেন রাঙাবউ আর বসল শচীন।সুখচাঁদ দাঁড়িয়ে রইলেন।তাঁদের সামনের একটি আসন থেকে শিশু একটি কেঁদে উঠল।অসহায়ের মতো শিশুটির মা তাঁর চারদিকের উদাসীন পুরুষদের দিকে তাকালেন।বহুদিন ধরে এমন অচেনা মানুষের ভিড়ে ভ্রমণের অভ্যাসে তার দক্ষতা এসে গেছে---তিনি একটি স্তন উন্মুক্ত করে শিশুটির মুখে গুঁজে দিলেন।
“কোত্থেকে আসছেন বোন?” কেউ তাঁকে প্রশ্ন করলেন।
“গোপালগঞ্জ।” তাঁর উত্তর।
“ওখানেই তো আমার বাপের বাড়ি।” রাঙাবউ চেঁচিয়ে উঠলেন। মহিলাটির নাম আয়নামতী এবং এও বেরিয়ে গেল যে তিনি রাঙাবউর পরিবারের লোকজনকে চেনেন।তিনি রাঙাবউকে জানালেন যে তাঁর মা বাবা এখনো দেশ ছাড়েন নি। তারুণ্যে ভরপুর মহিলা।এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা পারেনি তাঁকে ভেঙে ফেলতে,মুখের হাসি কেড়ে নিতে।তাঁর বর অখিল সুখচাঁদের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলেন, মাঝে মধ্যে নিজের স্ত্রীর মুখের দিকেও তাকাচ্ছিলেন। রেল গাড়ি ঝিঁ কু কু করে এগিয়ে যাচ্ছিল।
০০০
যজ্ঞেশ্বর ডিহি অস্থায়ী শিবির, ডাকঘর কইচোর, জেলা বর্ধমান, পশ্চিমবাংলা।একটি ছোট্ট গ্রাম।বটগাছ ঘিরে তাঁবু ফেলে শিবির তৈরি হয়েছে।কাছেই একটি পদ্মভরা বড় দিঘি। লালমাটি যেন অভ্যাগতদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে বিছানো ধুলোমাখা কার্পেট। রাতভর রেল যাত্রা করে এঁরা এসেছেন।নদীর পাড়ে কিছু বিরতি।শেষে লরির পেছনে চড়ে।দিঘির অন্য পাড়ে সপ্তাহে দু-দিন সকালে কইচোর বাজার বসে।স্থানীয় শাকসবজি মেলে।আর মেলে কাছের পুকুরগুলোর মাছ -- বিস্বাদ আর চর্মসার--- বড় বড় গোল পাত্রে বিক্রি হয়।পদ্মার মাছের এরা ধারে কাছে আসে না। ভাগ্য ভালো যে রাঙাবঊ দেখলেন দিঘির চারপাশে ঝোঁপ ঝাড়ের মধ্যে প্রচুর ঢেঁকি শাক মেলে। বেশ কিছু অর্ধাহারের দিন ইতিমধ্যে এরা পার করেছেন। যেদিন সেই শাক আবিষ্কৃত হল, সেদিনই প্রথম এই শিবিরে সুখচাঁদের পরিবার খেতে পেলেন রাজভোগ ।
তাঁবুর বাইরে সামান্য মাটি পেয়ে রাঙাবউ সেখানে লাউ বিচি লাগিয়ে দিলেন। বীজগুলো তিনি দেশের বাড়ি থেকে বয়ে এনেছিলেন।তাঁবুকেই বাড়িতে রূপান্তরিত করতে করতেই তাঁর দিনের বেশিটা সময় যায়।সুখচাঁদ শিবিরে শিক্ষকতার কাজ নিয়েছেন।বটগাছের নিচে ক্লাস বসে।নিজের মনকে বোঝাতে নিজেকেই বলতেন,এভাবেই ক্লাস নিতেন রবিঠাকুর।চেয়ার নেই, টেবিল নেই।শুধু সুখচাঁদের জন্যে একটি টুল আর ব্ল্যাকবোর্ড কোনোভাবে জোগাড় করা গেছে।শিবিরের ছেলেমেয়েদের তিনি শেখান বর্ণমালা, গুণনামতা আর সামান্য কিছু ভূগোল।ছাত্রদের ধরে রাখতে পড়ানোর মাঝে মধ্যে তিনি তাদের ছেড়ে আসা দেশের গল্পও শুনান।
শিবিরের ছাত্রদের পড়িয়ে সুখচাঁদ মাসে সত্তর টাকা করে আয় করতে শুরু করলেন।কিছু শ্বাস ফেলবার ফুরসৎ পাবেন বলে আশা করছিলেন। কিন্তু কীসের কী! এক অজানা অসুখ এসে শিবিরের লোকজনকে ঘিরে ধরল।এক অদ্ভুত জ্বরে লোকজন মারা পড়তে শুরু করলেন।দুই শিশু আর এক বৃদ্ধের মৃত্যুতে অনেক কাকুতিমিনতি,কিছু হল্লা চীৎকারের পরে শেষপর্যন্ত শহর থেকে রোগী দেখতে এক চিকিৎসক এলেন।জীবন এখানে এতোই সস্তা!
ডাক্তার কোনো কাজের ছিলেন না।তাঁর সাদা পিল আর লাল জলে মৃত্যু থামাতে পারল না।গোটা শিবিরকে নৈরাশ্যতে ঘিরে ফেলল।আয়নামতী আর তাঁদের সন্তানকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্যে ছেড়ে অখিলও মারা গেলেন।
০০০
বছর ঘুরে গেল। রাঙাবউ আবার সন্তান সম্ভবা হলেন।যে সামান্য চারা তিনি তাঁদের তাঁবুর চারপাশে রোপণ করেছিলেন সেগুলোও শক্তপোক্ত গাছের আকার নিতে শুরু করেছে।তাঁদের উদ্বাস্তু জীবনের শূন্যতাকে ভরে তুলবার চেষ্টাতে অন্যান্য পরিবারও তাই করেছিলেন,নিজেদের তাঁবুর বাইরে লাউ,মিষ্টিকুমড়ো,লঙ্কা,প্যাঁজের গাছ লাগিয়েছিলেন।এখন সময় দশভুজা দেবী দুর্গার আসবার। সুখচাঁদ এখন শিবিরের মুরব্বি---প্রধান ব্যক্তি।তিনি পুজোর আয়োজন করলেন, এবং যে যেটুকু চাঁদা দিতে পারে তাই সংগ্রহ করলেন।তিনিই এখানকার লোকের মুস্কিল আসান করেন।যজ্ঞেশ্বর ডিহির শিবিরটি হচ্ছে মানবতার ক্ষুদে সাগর যেন।মানুষ এখানে বাঁচে মরে।নারী পুরুষ পরস্পর কাছে আসে,বিয়ে ভাঙে,বিধবারা আগ্রহী বিবাহিত পুরুষের বাহুতে আশ্রয় পায়... সব গুঞ্জনই সুখচাঁদের কানে আসে,সব তর্কই তিনি গোপন রাখেন।যদিও এই সীমান্ত পার করে আসা ঘরহারা মানুষগুলোর খুব ব্যক্তিগত খুব গোপন বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
০০০
সুখচাঁদের স্কুলে ছাত্র উপচে পড়ছিল।শিবিরের পাশের গ্রাম থেকে দুই নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।এখন স্কুলে চেয়ার আছে,টেবিল আছে।মাথার উপরে একটা ছাদও আছে,এবং ক্লাসের শুরুতে ও শেষে বাজাবার জন্যে একটি ঘণ্টিও আছে। একটি সম্পূর্ণ পাঠশালা।
একদিন একটি ছাত্র সুখচাঁদকে জিজ্ঞেস করল ‘রিফ্যুজি’ শব্দের মানে কী? সে পাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছিল।অনেকটা পথ হেঁটে তেষ্টা পেলে এক বাড়ির দরজাতে টোকা দিয়েছিল।এক মহিলা দরজাতে এলে ছেলেটি জল চাইল। মহিলা প্রবল উপেক্ষার নজরে তার দিকে তাকালেন।মুখ ফিরিয়ে শাশুড়িকে বললেন, ছেলেটিকে ভালোই তো মনে হচ্ছে। রিফ্যুজিদের মতো না।দুই মহিলাই এক চোট হাসলেন এই কথাতে।
“রিফ্যুজি মানে কী স্যর?” ছেলেটি সুখচাঁদকে আবার জিজ্ঞেস করল।
“আইনের ভাষাতে বলতে গেলে শব্দটি নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের ১৯৫১র অধিবেশন থেকে।বাংলাতে বললে, উদ্বাস্তু, শরণার্থী। রিফ্যুজি সেই ব্যক্তি যে নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। সে আর সেই দেশে নিজেকে নিরাপদ বলে ভাবে না, তার জীবন, বিশ্বাস বা অভিমত সেই দেশে অত্যাচারের মুখোমুখি হবে বলে সে মনে করে।” কঠিন কথা।কিন্তু ছাত্রের জন্যে সেই কথাগুলোই বলে যান সুখচাঁদ।তাঁর চোখে জল নামে। তাঁর ছাত্রও শুনে তার পুনরোচ্চারণ করে। “আইনের ভাষাতে বলতে গেলে শব্দটি নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের ১৯৫১র অধিবেশন থেকে।...”
০০০
সুখচাঁদ তাঁর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর বা কাঁপছে।স্কুল প্রাঙ্গণে নারী পুরুষ তাঁকে ঘিরে রয়েছেন।এক নয়া ফরমান এসেছে। আবার তাঁদের যেতে হবে। রেলগাড়ি তৈরি। সরকারি বাবুরা ঘোষণা দিলেন, তাঁদের যেতে হবে দণ্ডকারণ্য। ৭,৬৭৮ কিলোমিটার জুড়ে ওড়িশার কোরাপুট কালাহাণ্ডি থেকে মধ্যপ্রদেশের বস্তার অব্দি ছড়ানো বিশাল দণ্ডকারণ্য প্রকল্পের এলাকা।এই সেই এলাকা যেখানে রাম চৌদ্দ বছরের জন্যে বনবাস কাটিয়েছেন।এখন এই পুব পাকিস্তানের বাঙালি উদ্বাস্তুদের জন্যে শিবির বসানো হয়েছে।যদি তারা না যান তবে সরকারি নগদ সাহায্য,যাকে ‘ডোল’ বলে-- বন্ধ হবে।
“ আমরা কে?” সুখচাঁদ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
“ মানব সভ্যতার ফেলে দেওয়া অবশেষ।” ভিড় জবাব দিল।
বাবুরা নীরবে চলে গেলেন।কিন্তু রাতে আবার ফিরে এলেন খাকি পোশাকের লোক সঙ্গে।কোনো সতর্কতা ছাড়াই তাঁবুতে প্রবেশ করল তারা। উদ্বাস্তুরা খুবই দুর্বল প্রতিরোধ যা করবার করলেন, জবাব পেলেন লাঠি আর টিয়ার গ্যাসে।
বাইরে অপেক্ষা করছিল লরি।সুখচাঁদ সহ সবাইকে তাতে চড়তে বাধ্য করা হল।হৈ হট্টগোল যখন চলছে, কোত্থেকে কিছু বামদলের নেতারা ছুটে এলেন।সাহায্যের জন্যে চেঁচিয়ে উঠলেন সুখচাঁদ।এগুলো অস্থায়ী,তাঁরা বললেন।বাঙালি উদ্বাস্তুদের পশ্চিম বাংলাতে ফিরিয়ে আনা হবে।দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে তাঁরা বললেন,“কমরেডরা,আমরা নিশ্চিত করব খুবই তাড়াতাড়ি যাতে আপনাদের আবার ফেরা সম্ভব হয়।শরণার্থীদের সুন্দরবনের দ্বীপে বসত গড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনকার মতো আপনাদের দণ্ডকারণ্যে যেতে হবে।”
(চলবে...)
No comments:
Post a Comment