আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Monday, 5 May 2014

অধ্যায় পাঁচ (৫)

ফেলানি
            
       সেচোখ খুলে মণির উদ্বেগ ভরা মুখখানা দেখতে পেল দেখাচ্ছিল বসন্ত রোগীর মতোপুরো মুখে ঘাসে তাকে ডাকতে চাইল , মণিপারল নাআসলে সে তাকে ওর বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছিলপারল নাস্বরটা যেন কেমন গলাতে লেগে ধরেছেএবারে কাত হয়ে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকালোগাঁয়ের মুখ, চেনা লোকবাঁচবে বলে পাটের খেতে জায়গা করে যারা বসেছিল, তাদের থেকে সত্যি সত্যি দুএকজন বেঁচে গেছিলতারাও রয়েছেসে বসবার চেষ্টা করলকোথায় আছে সে? চারদিকে হালকা ঝোপঝাড় ধরতে পারল চা বাগানের কাছে এসে পড়েছে সেকিন্তু ওকে এতো দূরে কে নিয়ে এলো? তার চোখের সামনে একখানা কালো চাদরকে কেঁপে কেঁপে স্থির হয়ে যেতে দেখেছিলদেখেছিল জালে বাঁধা পড়া মানুষটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারবার দৃশ্যফিনকি দিয়ে বেরিয়েছিল রক্তসে জিজ্ঞেস করতে চাইছিল কোথায়, কী ভাবে , কেন ? দুপুরের গা পোড়া রোদমণি একখানা কচু পাতাতে করে অল্প জল নিয়ে এলোসেই জলে সে অল্প তেষ্টা মেটালো, অল্প চোখে মুখে দিয়ে ঝরঝরে হয়ে উঠলএকটা লোক দৌড়ে দৌড়ে সেখানে এসে পৌঁছুলোফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, কেঁদে কেঁদে, থেমে থেমে, আটকে আটকে যতদূর সে উচ্চারণ করতে পারল তার থেকে মালতী বুঝতে পারল তাদের গাঁয়ে একটাও বাড়ি টিকে নেই, একটা মানুষ বেঁচে নেইজালে বাঁধা পড়ে পাটখেতের মধ্যে যে লাশটা পড়ে রয়েছিল সেটি নিয়ে যেতে শহর থেকে একদল মানুষ এসেছেসঙ্গে বন্দুক, নানা রকমের অস্ত্রলোকগুলো তৈরি হয়ে এসেছেগ্রামে সেই সকাল দশটা থেকে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছেসে আর বেশি কথা বলতে পারল না, হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল
         একজন কেউ বেশ কষ্ট করে জিজ্ঞেস করল, পুলিশ মিলিটারি?
        কান্না বন্ধ করে মানুষটা জোরে জোরে মাথা নাড়ালোতোতলাতে তোতলাতে বলবার চেষ্টা করল, শহর থেকে বড় নেতা এসেছেরাগে সব কটা জ্বলছেছাগলও একটাও বেঁচে নেই
          লোকগুলো উঠে দাঁড়ালোমালতী জিজ্ঞেস করল, আমরা কোথায় যাব? কেউ একজন মুখে আঙ্গুল দিয়ে কথা বলতে মানা করলযে লোকটা গাঁয়ের খবর এনেছিল সে তার দিকে তাকিয়ে শুধু একটাই শব্দ উচ্চারণ করল , ইস্টেশন
          
        
             বাগান হয়ে স্টেশনে যাবার ছোট রাস্তাটা মালতী চেনেসে মানুষগুলোর পেছনে পেছনে হাঁটতে শুরু করল পেটের বাড়ন্ত অংশটিতে হাত দিলহঠাৎই ওর খেয়াল হলো পেটেরটি অনেক ক্ষণ নাড়াচাড়া করেনিমণির মুখের দিকে তাকিয়ে ওর বুকখানা ধড়ফড় করে উঠলদুটো প্রাণীকে উপোস রাখতে হচ্ছে একটা সরকারী টিউব কলের কাছে গিয়ে সবাই দাঁড়ালোদুহাতের আঁজলা ভরে জল খেলএখানেই সরু রাস্তাটা এসে পাথুরে মূল রাস্তাটিতে উঠেছেএরকম বিকেলে রাস্তাটা লোকজনের ভিড়ে গমগম করতে থাকে, আজ জনশূন্যদোকান টোকান সব বন্ধপাথুরে রাস্তাটার থেকে নেমে গেলে সামান্য ঢালু জায়গা ওখানে নাগাগাছ, ঢেঁকী , ফুটুকলার গাছে হালকা একখানা জঙ্গলই হয়ে গেছেজায়গাটিতে শুকনো পায়খানার গন্ধ নাকে হাত দিল সেঢালু জায়গাটা গিয়ে একটা মাঠে পড়েছে এতোদিন মাঠে সবুজ বিন্নি ধানের গাছ বাতাসে হেলত দুলতএবারে অন্য আরো বহু মাঠের মতো এই মাঠেও কেবলি খের মাঠখানা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একখানা গ্রাম শুরু হয়েছেহালকা জনবসতির গ্রামটিতেএখন একটাও জনমানব নেই, দুএকটা ঘর এখনো জ্বলছেগ্রামেপা দিয়েই মানুষগুলোর রা করা বন্ধ হয়ে গেলএখনি বুঝি শুনতে পাবে শঙ্খ আর নাগরার শব্দভেসে আসবে একটা তীক্ষ্ণ হুইসেলের শব্দপোড়া ঘরগুলোর ধোঁয়াতে ভারি বাতাস এখনি ভরে উঠবে রক্তের গন্ধেকানে ধরা সেই আতশবাজির থেকেও জোরালো শব্দগুলো চারদিক থেকে বাতাস চিরে ফালাফালা করে ফেলবেওরা একটা বাড়ির উঠোন পেরোচ্ছিলগোবরে লেপা উঠোনে গৃহস্থ বাড়ির ধান শুকোনো হচ্ছিল ঘরের বেড়াতে হেলিয়ে রাখা রয়েছে একখানা ভিমকলার আটি এদের ধানের ভাঁড়ারটা তখনো জ্বলছেকেউ টু শব্দটি না করে হাতে যতটা পারেকলা ছিঁড়ে নিয়ে নিলোমালতীর কিছুই মুখে দিতে ইচ্ছে হলো নাযে মানুষটি ওকে কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে কষ্ট দিতে চায় নি তাকে বারেবারেই মনে পড়ছিলকইবা গেল, কী বা হলো! বাড়িটার উঠোন পেরোতেই বেলা ডুবে এলোএবারে লোকগুলোর পায়ের জোর বেড়ে গেলএকজন মণিকে কাঁধে তুলে নিলোমণির হাতটিছেড়ে ওর কেমন খালি খালি লাগছিলকানা মানুষ একটার হাত থেকে যেন কেউ লাঠিটা নিয়ে গেছেওরা এক আখের খেত পার হচ্ছিলআখের খেতও সেই পাট খেতের মতো মাড়িয়ে গেছেঅল্প আঁধারে একটা শরীর দেখতে পেল সবাই, যার মাথাটা নেইচারদিকে দলা দলা রক্তসে কাছে গেলগায়ের ছাল কুঁচকে যাওয়া এক বৃদ্ধের শরীর, কোমরে একটা ছেঁড়া ধুতি প্যাঁচানো রয়েছেমা, তাড়াতাড়ি আয়ছেলের ডাক অনুসরণ করে সে দেখল লোকগুলো বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছেহনহন করে ওদের যাওয়া দেখলে মনে হয় যেন কেউ ওদের তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেসে পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলহঠাৎই ওর পায়ে লেগে একটা কিছু ছিটকে পড়ে গেলআখের খেতের ভেতরটা বাইরের থেকে একটু অন্ধকার যদিও সে স্পষ্ট দেখল ওর পায়ে লেগে একটা বাচ্চার শরীর ছিটকে পড়েছে একটা সম্পূর্ণ মানব শিশু নয়উপর থেকে নিচে সমানে কেটে দুটুকরো করা হয়েছেনাক মুখ , পেট , পা সব সমানে সমানে কাটা সে চীৎকার দিয়ে উঠললোকগুলো ঘুরে তাকালোদুটুকরো শিশুটিকে দেখে সবারই মুখের থেকে কিছু চাপা শব্দ বেরুলোকোথাও একটা শব্দ হলোধস্ত আখের খেতের মধ্যি দিয়ে যেন কিছু একটা দৌড়ে গেলসবারই চোখে পড়ল দুটো শেয়ালমণি, মালতী আর সঙ্গের মানুষগুলোও দেখল দুটো শেয়ালে শিশুটির এক টুকরোকে টেনে খেতের যে দিকটা ধসে যায়নি সেখানে টেনে নিয়ে যাচ্ছেমালতী দৌড়তে শুরু করলমণি আর সঙ্গের লোকগুলোও ওর পিছু নিলো
 
    সে যখন আখের খেত থেকে বেরুলো তখন বাতাসে কলাপাতার মতো কাঁপছিলওর চারপাশের সবকিছু যেন চাকার মতো ঘুরছিলমণির গায়ে কাঁধে হাত রেখে সে যখন এসে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছুলো তখন ওর গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছেমানুষের ভিড়ে প্ল্যাটফর্ম ভরে গেছেবিচিত্র বাক্স বোচকা তল্পিতল্পার জন্যে কোথাও পা ফেলবার জো নেইওকে কেউ একজন একটু জায়গা বের করে দিলপ্ল্যাটফর্মের ঠাণ্ডা পাকা মেঝেতে সে অচেতন মানুষের মতো পড়ে রইলঠাণ্ডা মেঝের মতোই ওর শরীর আর মগজখানাও ঠাণ্ডা আর অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছিল
     
       মাঝরাতে প্ল্যাটফর্ম জুড়ে এক হৈ হল্লা শুরু হলোহাল্লা মানে একেবারে মারণ চীৎকার ! এসেছেরে! , এসে পড়েছে!বলে স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি আকাশ বাতাস কাঁপানো চীৎকারে সে ঠাণ্ডা পৃথিবীটার থেকে ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলোএবারে আকাশ কাঁপানো শব্দগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অদ্ভুত ধরণের কিছু শব্দকেউবা হাতের কাছে পাওয়া বাঁশের লাঠিতে স্টেশনের লোহার খুটাতে ঘা মারছে, কেউবা টিনের বাক্সে ঘা দিয়ে আওয়াজ করছেকেউ একজন ফেলে রাখা ড্রাম একটা পেয়ে তাতেই কাছে বসা এক বুড়োর হাতের লাঠি নিয়ে ঘা বসাচ্ছেনানারকম শব্দ বাক্যে গলাগুলো একেবারে ছিঁড়ে ফেলে সবাই মিলে আর্ত চীৎকারে শুধু একটাই কথা বারে বারে বলে যাচ্ছে, এসে গেছে ওরা! এবারে আর কেউ বাঁচবে না! সব শেষ হয়ে যাবে!সারা রাত চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভোরের দিকে মানুষগুলো একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলআবারো একবার চীৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে সবাই আঁতকে উঠলএকটা মুগা রঙের কেউটে এসে প্ল্যাটফর্মের আবর্জনা ফেলবার বাক্সটাকে প্যাঁচিয়ে বসে আছেমানুষের হৈ হট্টগোলে সাপটা ফণা তুলে দিয়েছেফণাতে মধ্যিখানে সবাই এক অদ্ভুত সুন্দর আর ভয়ঙ্কর চক্র দেখতে পেলভয়ার্ত মানুষগুলোর দুর্বল মনে সাপের চক্রটি ক্রমেই অলৌকিক হয়ে পড়লমা মনসা, শিব কিম্বা নিজের নিজের দীক্ষাদাতা গুরুর নাম কীর্তন ,জপ আরাধনাতে প্ল্যাটফর্ম দেখতে দেখতে এক মন্দির হয়ে পড়লপুজো অর্চনার মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছিল সেই মৃত্যু ভয়ের আর্তনাদএটাক হবেই মানুষের মুখে মুখে শব্দগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছেশুধু মানুষ ভেদে শব্দটা একটু অন্যরকম হচ্ছেএটেক, অটেক,আটেক, উটেক...শব্দটি ভিন্ন রূপ নিতে পারেকিন্তু অর্থ সেই একইএক ভয়ঙ্কর আতংক মিশে আছে শব্দটিতেসমস্ত আশংকা, ভয় গিয়ে জড়ো হলো গিয়ে ঐ চক্রটিতেই
   
মালতীর অর্ধ-চেতন মনটিতেও চক্রটি ঢুকে পড়েছে, একবার মণিকে , একবার ওর বাবাকে চক্রটি এসে গ্রাস করে তারপর আবারো সব হালকা আঁধারে ডুবে যায়
           পরদিন, ঠিক রাত নয় সন্ধ্যার খানিকটা পরেই প্ল্যাটফর্মের লোকেরা পুবদিকে দাউদাউ করে ঘরবাড়ি জ্বলতে দেখতে পেল আগুন থেকে বেরুচ্ছে একটা শব্দ , এটেক, এইটেক, এটাক, আটেক, উটেক...মানুষগুলোর মাঝখানে শব্দটি এক আগুনের শিখা হয়ে দাউদাউ করে জ্বলছেসাপটা আবর্জনার বাক্সটি থেকে অল্প অল্প করে বেরুচ্ছিলভয়, খিদে আর তেষ্টাতে উন্মাদ মানুষগুলোর থেকে দু-একজন কাঁদতে শুরু করলমা মনসা থাকবার জন্যেই ওরা আসতে পারেনিগেলেই এসে পড়বেআবারো আরম্ভ হলো জপ আরাধনাক্ষুধা, ভয় আর কান্নার মাঝ থেকে উঠে আসা এই প্রার্থনা সঙ্গীতের হুলস্থূলতে সাপটি আবারো একবার ফণা তুলে দাঁড়ালোগোল গোল করে চক্কর দিতে দিতে ঘুরতে থাকলসারা রাত এই মানুষগুলো তাদের চারদিকে দেখতে পেল আগুন জ্বলছেমাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছিল শঙ্খ আর নাগরার শব্দএই শব্দগুলো এসে প্ল্যাটফর্মের মানুষগুলোর কাছে পেলেই একটাই মাত্র শব্দে এসে জড়ো হয়অর্থ সেই একইমুখ ভেদে তার ধ্বনিগুলো আলাদা আলাদা চেহারা নেয়সাপটি আবর্জনার বাক্স থেকে বেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের মাঝে এসে পড়েছেএকটা খুঁটি প্যাঁচিয়ে ধরেছেলোকগুলো এবারে ভালো করে দেখল সাপটার গায়ে ঘাপোড়ার দাগসাপটি যেন পোড়া কোনও কিছু উপর দিয়ে চলে এসেছেওদের লাগানো আগুনে মা মনসাও পুড়েছেন! অভিশাপ লাগবেওরা সবংশে মারা পড়বেলোহার ঘর তৈরি করে ঢুকে থাকলেও বাঁচবে নাচাঁদ সওদাগর কি পেরেছিল লক্ষীন্দরকে রক্ষা করতে? পারে নি, কখনোই পারবে নামা মনসার শাপে ওরা শেষ হয়ে যাবেআবারো শুরু হলো সেই নাকি সুরের মা মনসার বন্দনাসাপটা খুঁটির প্যাঁচটাকে অল্প ঢিলে করেছেআকাশে ফরসা হয়ে আসছেএবারে যেন মানুষগুলো শঙ্খ আর নাগরার শব্দ খুব কাছে থেকে শুনতে পেলচারদিকে খা খা নীরবতাএই ছোট্ট স্টেশনটিতে এমনিতেও রেল কম আসেএখন সেগুলোও নেইস্টেশন মাস্টার, গার্ড সবারই কোয়ার্টার সেই কবে থেকেই খালিযেন নয়, সত্যি সত্যি ওরা পুবদিকে শঙ্খ আর নাগরার আওয়াজ শুনতে পেলআবারো আরম্ভ হলো সেই মৃত্যু কাতর চীৎকার চেঁচামেচি এখানে ওখানে ঘা বসাবার বিচিত্র অদ্ভুত সব শব্দসাপটা আবারো একবার ফণা তুলে দাঁড়ালোওর গলার দোলন্ত চক্র দুটো ঝিলিক দিয়ে উঠলএক মহিলা, যার হাতে পায়ে দায়ের কোপের চিহ্ন ফুলে ঘা হয়ে গেছে , সে গিয়ে সাপটার সামনে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লচক্র দুটো অল্প দুলে নিচে নেমে এলোতার পরেই সাপটি ফোঁস ফোঁস করে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে গেলমহিলাটির ইতিমধ্যে কোনও সাড়াশব্দ নেই মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়ে গেছেভিড়ের লোকেরা কাছে সরে এলোএবারে কী করা যায়? একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এলোদাঁত-শূন্য মুখে এক অদ্ভুত শব্দ করে একটা ছুরি বা ব্লেড আর মুরগীর বাচ্চা চাইলএকটা ব্লেড পাওয়া গেলকেউ একজন বেঁধে সঙ্গে করে আনা দুটো মুরগীর বাচ্চাও বের করে দিলবৃদ্ধ মেয়েমানুষটির পায়ের হাঁটুর নিচে, হাঁটুর ঠিক উপরটাতে এবং উরুতে তিন জায়গাতে বাঁধলতারপর যেখানে সাপের দাঁত বসেছিল ওখানে কেটে দিলখানিকটা কালো রক্ত বেরিয়ে এলোবৃদ্ধ এবারে মুরগীর বাচ্চার মলদ্বার কাটলসবাই ঝুঁকে গিয়ে লক্ষ্য করছে বৃদ্ধের হাতটা যতই কাঁপুক না কেন ঠিক সময়ে ঠিক থেমে যায়বৃদ্ধ এবারে মুরগীর বাচ্চার কাটা মলদ্বার মহিলাটির ক্ষততে লাগিয়ে দিলখানিক পরেই মুরগীর বাচ্চাটি ধড়ফড় করে মরে গেলঅন্য যেটি ছিল সেটিকেও একই রকম মলদ্বার কেটে ক্ষততে লাগিয়ে দিলখানিক পরে সেটিও মরে গেলএবারে বুড়ো একটা শব্দ উচ্চারণ করল, কী করল কেউ বোঝেনিওর ছেলে-বৌ বুঝিয়ে দিল আরো যদি ত্রিশ পঁয়ত্রিশটা মুরগীর বাচ্চা পাওয়া যায় তবে গিয়ে মেয়ে মানুষটি বাঁচবেমুহূর্তে সবার চোখে ভেসে উঠল এক একেকটা ঝাঁট দিয়ে লেপে মুছে রাখা উঠোনউঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়ের সঙ্গে একদল মুরগীর বাচ্চাখুবই সাধারণ দৃশ্য এই প্ল্যাটফর্মে জটলা বেঁধে থাকতে গিয়ে মানুষগুলো হঠাৎই আবিষ্কার করল এইটেই পৃথিবীর সবচেবড় স্বপ্ন যেটিকে আর হাতে ধরা যাবে নামুরগীর বাচ্চা নিয়ে একেকটা উঠোনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতে থাকতেই মুরগীর বাচ্চাগুলোরই মতো সামান্য ধড়ফড় করতে করতে মেয়েমানুষটি নিথর হয়ে গেলমা মনসা বলি নিয়েছেন বলে কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করতেই সবাই শুনতে পেল হুঁইসেলের শব্দ মাঝখানে নীল হয়ে পড়ে থাকা একটি মহিলা আর মরা মুরগীর বাচ্চাগুলো নিয়ে মানষগুলো নীরব হয়ে গেলসব্বাই একে অন্যের আরো কাছে চেপে এলোবৃদ্ধ তার দু হাত উপরে তুলে দাঁতঝরা মুখে কিছু একটা বিড়বিড় করছেভিড়ের মানুষগুলো বৃদ্ধের আরো কাছে চেপে এলোকেউ একজন মণির মাকেও কাছে টেনে কাছে নিয়ে এলোওর অর্ধ-চেতন শরীরে সাপের বিষে বিষাক্ত কালো রক্তের কয়েক ফোটা লেগে গেলএইবারে বন্দুকের আওয়াজ স্পষ্ট শোনা গেলহুঁইসেলের তীক্ষ্ণ শব্দটি আর হৈ ..... ঐ ধ্বনির শব্দ ক্রমেই মিলিয়ে গেলখানিক সময় থমথমে নীরবতানীরবতা ভেঙ্গে মণির মা কিছু একটা বলে বিড়বিড়িয়ে উঠেছিল, তারপরে আবার শুয়ে পড়লপাকা মেঝেতে পড়ে থাকা মণির মা আর নীল হয়ে যাওয়া মহিলাটির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেইশুধু একজনের পেটটা ঢিলা হয়ে নিচে নেমে গেছে আর অন্যজনের পেটটা ছোট
         
         ওরা ঘরঘর করে গাড়ির শব্দ শুনতে পেলএবারে যেমন পিঁপড়েতে জমাট বাঁধে তেমনি মানুষগুলো জড়ো হয়ে গেলনিশ্চুপ মানুষগুলো থরথর করে কাঁপতে শুরু করলঅল্প পরেই বুট জুতোর গপ গপ শব্দে প্ল্যাটফর্ম ভরে গেল

দলবাঁধা লোকগুলোকেআর্মি কর্ডন করে ফেললমাঝখানে দুটি মেয়েমানুষএকজন অচেতন , অন্যজন মৃতা আর দুটো মুরগীর বাচ্চা, রক্তে মাখামাখি যেন তুলোতে তৈরি তেমনি সাদা এর চারদিকে বানের জলে ভেসে যাবার জন্যে তৈরি একদল পিঁপড়ের মতো মানুষমানুষগুলোকে ঘিরে ফেলেছে বন্দুকধারী মিলিটারিতাদের গায়ে জলপাই রঙের পোশাক তাতে আবার পাতার ছবি আঁকাকারো মুখে কোনও কথা নেই


টীকা:
)নাগাগছঃ  অসমিয়াতে শব্দটি নগাবনআগাছা জাতীয় গুল্মমূল বাংলা না পাওয়া অব্দি একে নাগাগাছবলতে অসুবিধে দেখছি নাএমন কাছাকাছি নাম দুটি ভাষাতে বিরল নয়যেমন ঢেঁকীয়াব্রহ্মপুত্রের বাংলাতে এটি ঢেঁকি
) ফুটুকলাঃ আগাছা জাতীয় গুল্ম


3 comments:

Smritikona said...

বেশ এগুচ্ছে, এমনি করেই দেখতে দেখতে একদিন ঘাটে পৌছাবে।

Sushanta Kar said...

স্মৃতিকোনা, আপনি আজ জীটকে এসে যেমনটি বললেন, দেখুন অনুচ্ছেদগুলো একটূ ছোট করে দিলাম। এ রকম পরামর্শ দিতে থাকবেন। তবে নিশ্চয়ই ঘাটে পৌঁছুব।

Smritikona said...

আসলে অন স্ক্রীনে একটু ছোট প্যারা পড়তে সুবিধা তাই বলেছিলাম, তাছারা আমার আবার চোখে সমস্যা আছেতো। অথচ কাহিনীটা এতো ভাল লাগছে যে ভাল করে পড়তে না পারলে মনযোগ দেয়া যায় না বা তৃপ্তিও পাওয়া যায় না। আমি এই উপন্যাসের একটা অক্ষরও আড়ালে রাখতে চাই না।
তোমার যৌথ প্রচেষ্টা বলে এটাকে যথা সময়ে, উপযুক্ত সাজে এবং ত্রুটিহীন ভাবে সকলের কাছে উপস্থাপন করা হোক সেটাই আমার শুভ কামনা।
আশা করি এক মত হতে দ্বিধা নেই।
ভালো থেকো, সুস্থ থেকো।
আবার দেখা হবে।