ফেলানি
(সেপ্টেম্বর, '১৪ সংখ্যা ব্যক্তিক্রমে প্রকাশিত হয়েছে এই অধ্যায়।)
মশারিটা ভালো করে চারদিকে গুঁজে মালতী মণিকে শুইয়ে দিল। বাবা এসে তার কপালে হাত বুলিয়ে দিল। হাতে লাঠি আর টর্চটা নিয়ে সে যাবার জন্যেবেরুলো। কিছু একটা ভেবে আবারো দোয়ারমুখে ফিরে এলো। হাতের লাঠিটি সে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে রাখল। বৌয়ের ভারি দেহটা আলতো করে জড়িয়ে ধরে । স্বর কোমল করে বলল, “ মালতী, মালতী আমার, তুই এমন মন খারাপ করে থাকবি না। আমি মানুষটা আছি না, বুঝি? আর মাত্র একটা রাত, কাল আমরা বাড়ি যাব,...।” সে বাড়ির কথা কিছু বলতে চাইছিল, পারে নি। খানিকক্ষণ মালতীর মুখখানাতে হাত বুলিয়ে গেল। বাইরে কেউ ডাকছে। পাহারাতে এসেছে, এমন কেউ হবে। সে মালতীকে ছেড়ে দিল, “ যা, শুয়ে থাক গিয়ে। আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাব। তোকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠতে হবে না।”।একবার মালতীর হাতের শাঁখাজোড়া ছুঁয়ে কিছু বলতে চাইল, বলল না। মালতী মণির কাছে শুয়ে পড়ল। মুখে লেগে রইল এক পুরুষ হাতের স্পর্শ। মানুষটি তাকে শুধু কিছু সাহস দিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। এক গভীর প্রশান্তিতে তার উত্তেজিত স্নায়ু ক্রমে ক্রমে শীতল হয়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়ল সে।
মশারিটা ভালো করে চারদিকে গুঁজে মালতী মণিকে শুইয়ে দিল। বাবা এসে তার কপালে হাত বুলিয়ে দিল। হাতে লাঠি আর টর্চটা নিয়ে সে যাবার জন্যেবেরুলো। কিছু একটা ভেবে আবারো দোয়ারমুখে ফিরে এলো। হাতের লাঠিটি সে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে রাখল। বৌয়ের ভারি দেহটা আলতো করে জড়িয়ে ধরে । স্বর কোমল করে বলল, “ মালতী, মালতী আমার, তুই এমন মন খারাপ করে থাকবি না। আমি মানুষটা আছি না, বুঝি? আর মাত্র একটা রাত, কাল আমরা বাড়ি যাব,...।” সে বাড়ির কথা কিছু বলতে চাইছিল, পারে নি। খানিকক্ষণ মালতীর মুখখানাতে হাত বুলিয়ে গেল। বাইরে কেউ ডাকছে। পাহারাতে এসেছে, এমন কেউ হবে। সে মালতীকে ছেড়ে দিল, “ যা, শুয়ে থাক গিয়ে। আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাব। তোকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠতে হবে না।”।একবার মালতীর হাতের শাঁখাজোড়া ছুঁয়ে কিছু বলতে চাইল, বলল না। মালতী মণির কাছে শুয়ে পড়ল। মুখে লেগে রইল এক পুরুষ হাতের স্পর্শ। মানুষটি তাকে শুধু কিছু সাহস দিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। এক গভীর প্রশান্তিতে তার উত্তেজিত স্নায়ু ক্রমে ক্রমে শীতল হয়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়ল সে।
একটা স্বপ্ন দেখছিল, তার কোনও আগাগোড়া নেই। দমবাঁধা ছাইয়ের উপর একটা কুকুর গোল হয়ে শুয়ে আছে...কুকুরটার কাছে একটা শিশু, ওঁয়া ওঁয়া করে কাঁদছে । তার পরেই সে ঝপাং করে একটা শব্দ শুনল। জলে পাথর ছুঁড়ে মারলে যেমন শব্দ করে তেমনি। শব্দটি বেড়েই যাচ্ছিল। বেড়ে বেড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছিল, এক সময় যেন কানে তালা দেবার মতো অবস্থা হলো। তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, মণিও জেগে গেছে। চারদিকে আশ্চর্য সব শব্দ। মণি তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল, সেও তাকে জড়িয়ে ধরল। শব্দটা সে এবারে চিনতে পেল। নাগরা আর শঙ্খ। মণি তাকে জিজ্ঞেস করল, মা কার ঘরে কীর্তন হচ্ছে ? সে কিছু একটা জবাব দিতে যাচ্ছিল, পারল না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চেপে আসা গলাতে সামান্য থুথুও গিলতে পারছে না এমন অবস্থা হলো। নাগরা আর শঙ্খের আওয়াজ বন্ধ হয়েছে। এবারে মরণ কান্না। কিছু আতশবাজি , আতশবাজি ঠিক নয়, তার থেকেও জোরালোশব্দ শোনা গেল। নাকে খারের মতো একটা গন্ধ এসে লাগল। সে উঠে মণিকে ধরে ধরে দরজার কাছে গেল। বাইরে থেকে বন্ধ। মণির বাবা বাইরে থেকে তালা দিয়ে গেছে। মানুষটা চাইছিল না তাকে মাঝরাতে কাঁচাঘুম থেকে ওঠাতে। সে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল বাইরে চারদিকে লাল আলো। এবারে সে পেছনের দরজাটা খুলল। বেরিয়ে যাবে না, ভেতরে থাকবে? একটার পর একটা ঘর আগুনে ছেয়ে ফেলছে। হুইসেলের মতো তীক্ষ্ণ একটা শব্দ তার কানে এলো। সে মণির মুখখানা চেপে ধরল।তারপর তাকে নিয়ে বাড়ির কোনের পুকুরটাতে নেমে গেল। পুকুর মানে একটা বেশ গভীর বড়সড় গর্ত। মানুষটার বড় শখ ছিল বাড়ির কোনাতেএকটা পুকুর খুঁড়ে তাতে মাছ পোষবার। মালতী যে বাড়িতে গিয়ে এখনো পা দেয় নি সেখানে বুঝি দু’দুটো পুকুর। ওদের গ্রামটিতে বুঝি সব বাড়িতে একটা পুকুর রয়েইছে। কিন্তু পুকুরে সে মাছ ফেলতে পারল না। এখানকার নদীটার জন্যেই বুঝি লোকে পুকুর খুঁড়তে পারেনা, নদী সব জল টেনে নিয়ে যায়। কেউ শখ করে খুঁড়লেও ভরা বর্ষার ভারি বৃষ্টির পরেও জল ধরে রাখতে পারে না। জল জমাতো হয়। কিন্তু অল্প রোদেই শুকিয়ে যায়। পুকুরের জন্যে খোঁড়া গর্তগুলো আবর্জনা ফেলবার জায়গা হয়ে পড়ে। লম্বোদরের খোঁড়া পুকুরও আবর্জনা ফেলবার গর্ত হয়ে রইল। আবর্জনা ফেলবার গর্তটিতে রি রি করা মশা আর আবর্জনার দুর্গন্ধের মধ্যে সে মণিকে নিয়ে বসে রইল। দিন দু’এক আগে বাড়ির কলাগাছ কতকগুলো পরিষ্কার করেছিল । সমস্ত শুকনো কলাপাতা এনে এই গর্তটিতে ফেলেছিল। দশ বারোটাকলা গাছ মা-ছেলেকে ঢেকে ফেলবার জন্যে যথেষ্ট ছিল।
একদল মানুষের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, সঙ্গে একটা জীপগাড়ির চেনা শব্দ। অল্প দিন থেকে এ ধরণের জীপ গাড়ি ওদের গাঁয়ে ঘন ঘন আসা যাওয়া করতে শুরু করেছিল। কেটে ফেলা মালভোগ কলার গাছগুলোতেকেঁচো জন্মাতে শুরু করেছে। সেই গাছগুলোতে পা দিয়েই পাতার ফাঁকে সে মাথাটা অল্প তুলে বাইরে তাকালো। আগুনের আলোয় পুরো জায়গাটা আলোকিত হয়ে গেছে। সে দেখতে পেল দু’টো মানুষ দৌড়ে দৌড়ে এসে ঘরটিতে ঢুকেছে। বুঝতে পেল শিবানীর দাদু আর...। সে ভালো করে তাকালো শিবানীর বাবা। মানুষটা খোঁড়াচ্ছে। এবারে মানুষটা পেছনের দরজাটা খুলছেন। মানুষদু’টোর পেছনে আরো বেশকিছু মানুষ। সম্পূর্ণ অচেনা পোশাক, চেহারা এমনকি হাঁটার ধরণ। লোকগুলো ঘরটাকে ঘিরে ফেলেছে। ঐ ঐ ওরা ঘরের দরজাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। করছে কী ডাকাতগুলো? মালতীর নাকে পেট্রল আর কেরোসিনের গন্ধ এসে লাগল। চোখের সামনে ওর ঘর দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করল। ভেতর থেকে দুটো মানুষের চীৎকার। সে মণিকে কলাপাতার ভেতরে আরো বেশি করে ঢুকিয়ে দিল। সে খামচে ধরে রেখেছে ভাঙ্গা দা খানা। কোনও এক মহিলা রাস্তা দিয়ে দৌড়ে গেছে ... ঐ ধুম করে শব্দ একটা হয়েছে...ওই মানুষটি গড়িয়ে পড়েছে...লোকগুলো ওকে ঘিরে ফেলেছে... আধমরা মেয়েমানুষটিকে টুকরো টুকরো করে কাটছে...কোলের শিশুটিকে ঐ পোড়া ঘরটাতে ছুঁড়ে ফেলেছে। নাগরা বাজছে, শঙ্খ বাজছে। ওর পেটেরটি কাত ফিরছে। একহাতে মণিকে ধরে সে নুয়ে নুয়ে কলাপাতার মাঝে আরো ঢুকে গেল। তার পায়ে লাগছে পচা আবর্জনার ঠাণ্ডা ছোঁয়া। হুঁইসেল বাজছে, লোকগুলো ওদিকে গেছে।একদল লোক পুকুরগুলোর থেকে বাসন বর্তনগুলো বের করে এক জায়গায় জমা করছে। অন্যেরা টেনেটুনে বাক্সটাক্সগুলো লরিতে তুলছে। সে আগুনের আলোতে স্পষ্ট দেখল ক’জন হাতে বর্শা বল্লম, চোখা চোখা ত্রিশূল নিয়ে আবর্জনাতে ভরা গর্তগুলো খুঁচিয়ে যাচ্ছে। কেউ একজন মালতী যে পুকুরে লুকিয়ে ছিল, তার পাড়ে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে আদেশ দিয়ে বলল, “ গেলবারে এই রক্তচোষাগুলো গর্তে লুকিয়ে বেঁচে গেছিল। একটা গর্তও ছেড়ে দিবি না। যেখানেই বেশি গর্ত দেখবি খুঁচিয়ে যাবি।” বড় করে হৈ...ঐ...ঐ...আওয়াজ তুলে ছেলেটি চলে গেল। বর্শা বল্লম ত্রিশূল হাতে ছেলেগুলো শুকনো পুকুরেরে কাছে কাছে চলে এসেছে। ওদের বর্শা বল্লম ত্রিশূল শুকনো কলাপাতাতে লেগে খসখস করে যাচ্ছে।কলাপাতার ডাঁটারস্তূপ পুরো একটা মানুষের সমান হয়ে পড়াতে মালতী আর মণির মাথার উপর উঠে গেছে। তাতেই ওরা বর্শা বল্লম আর ত্রিশূলেরখোঁচা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারছে। যদি কেউ একজন চেঁচিয়ে বলে, “দে জ্বালিয়ে এই পুকুরেরে শুকনো কলাপাতাগুলো!” যদি কেউ পোড়া ঘরেরথেকে নিয়ে আসে একটুকরো জ্বলা কাঠ, একটুকরো অঙ্গার ! মালতী মণিকে আরো জড়িয়ে ধরে। মণির গায়ে কুঞ্জলিকা১লেগে লেপটে আছে। কলার খোসাগুলো অল্প খচমচ করে উঠেছে।দলটির থেকে একটা ছেলে ফিরে এসে হাতের ত্রিশূলটা দিয়ে কলার পাতাগুলোকে খুঁচিয়ে দেয়াতে আরো একবার কিছুক্ষণ খসখসে শব্দ একটা হলো। মালতী শ্বাস বন্ধ করে বসে রইল। একটা আগুনের ফুলকিও যদি ওরা এনে এখানে ফেলে দেয়! সে মণির মুখটা বুকে চেপে ধরল। ফাল্গুন মাসের বাতাস সোঁ সোঁ করে বইছে, সঙ্গে করে বেড়ে যাচ্ছে আগুন। দলটি চলে গেছে। ওর কানে আর কোনও শব্দ আসছে না। হঠাৎ সে অনুভব করল এক উত্তাপ, কানে পড়ল ফট ফট করে একটা শব্দ। আগুন লেগেছে। শুকনো কলাপাতাগুলোতে আগুন লেগেছে। সে মণির হাতে ধরে পুকুরটা থেকে উঠে এলো। পাড় ভেঙ্গে উঠতে ওর বেশ কষ্ট হলো। মণির হাতে ধরে সে পাড়ে উঠল । মণির দিকে তাকালো সে। ওর মুখে, গায়ে পচা আবর্জনা। সে একবার হেলে দুলে জ্বলন্ত ঘরটার দিকে যেতে চাইল। মণি ওর হাত ধরে টান দিল। আবার নাগরার শব্দ, হৈ হুল্লোড়ের শব্দ। দুজনেই বাড়ির পাশের ছোট খালে নেমে গেল। কেউ মাথা নুইয়ে যেতে থাকলে দেখা যায় না, লুকোনো যায়। বর্ষাতে এই খালে জল থাকে, শীতে শুকিয়ে যায়। শুকোলেও জায়গায় জায়গায় বালি পাথরগুলো ভিজে থাকে। মায়ে ছেলেতে নুইয়ে নুইয়ে এই খাল দিয়ে এগুতে থাকল। মালতী যেতে পারছিল না। নোয়ালেই ওর শরীরটা যেন ভেঙ্গে ছিঁড়ে যায়। এবারে সে হামাগুড়ি দিতে শুরু করল। মণি ফিসফিসিয়ে বলল, “ মা,কলাপাতাগুলোতে আগুন...!” খালের পারে পাড়ে মানুষের পায়ের শব্দ, বর্শা বল্লমের ঝনঝনাঝন শব্দ। মায়ে ছেলেতে দু’জনেই বসে পড়ল। লোকগুলো চলে গেল। এই খালটা দিয়ে যেতে থাকলে মরা পাটের খেত পাওয়া যাবে। সেখানে পাটখেত ভেঙ্গে গাঁয়ের লোকে আড়াল তৈরি করে লুকিয়ে আছে। নারকেল, চিঁড়া-মুড়ি গুটিয়ে রেখেছে। আর গুটিয়ে রাখা আছে তির ধনুক, টর্চ লাইট। গেলবারের গোলমালে ওখানে লুকিয়েই মানুষগুলো রক্ষা পেয়েছিল। বিঘার পর বিঘা ছড়িয়ে আছে ঘন সবুজ পাটখেতের মাঝে লুকিয়ে আছে একদল ভয়ার্ত মানুষ। সে আরেকটু জোরে হামাগুড়ি দিতে আরম্ভ করল। খালটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে প্রচুর জমা পচা জল। উপরে কচুরি পানাতে একটা ঘন স্তর পড়েছে। এই খালটা পার হতেই আরম্ভ হয়েছে বিশাল মরাপাটের খেত। এখানে খালটিতে বেশ জল রয়েছে। কাদাতে হামাগুড়ি দিয়ে মালতীর কাপড়চোপড় জবজবে হয়ে গেছে। ঠিক যেন সারা গায়ে কাদা মাখা মহিষ একটি, এমন দেখাচ্ছিল ওকে। সে মণির হাতে ধরে খাল থেকে উঠতে যেয়েও আবারো নেমে এলো। ট্রাক একটিতে একদল মানুষ। পেছনে আরো অনেক দল। তারই দু’একটা এসে এই খালের থেকে অল্প দূরে দাঁড়ালো।শঙ্খ বাজল, বাজল নাগরা । শেষটাতে বাজল এক তীক্ষ্ণ হুইসেলের শব্দ। মায়-ছেলেতে আবারো ওই পচা খালটিতে নেমে কচুরিপানার নিচে গা ঢাকা দিল। চতুর্দিকে শোনা গেল হৈ হৈ হুল্লোড়। তারপর সৈনিকের মতো নানা দলে ভাগ হয়ে গিয়ে লোকগুলো পাটখেতের ভেতরে ঢুকে গেল। অল্প পরেই শোনা গেল বন্দুকের শব্দ, মানুষের আর্ত চীৎকার। কচুরিপানাতে ঢাকা পচা খালটার উপর দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে আগুনের হলকা। পাট খেতের ভেতর থেকে উড়ে আসছে তির। সামান্য পরে শোনা গেল বন্দুকের, কিন্তু আলাদা ধরণের, শব্দ। এক একটাকরে নয়, একাধারে অনেকগুলো গুলি চলবার মতো এক সমগ্র শব্দ। শব্দটি পাটখেতের ভেতরে চলে গেছে। ভেতরের মানুষের চীৎকার চেঁচামেচিও কমে গেছে। বুকে কাঁপন তোলা লাগাতার শব্দটিও মিলিয়ে গেছে। সে দেখতে পেল আকাশে অল্প অল্প আলো দেখা দিতে শুরু করেছে।
আকাশের অল্প আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেল মোটা লম্বাটে মানুষ পাটখেতের ভেতর থেকে দৌড়ে আসছে। পেছনে পেছনে পাটখেতের আড়ালে লুকোনো মানুষগুলোর আরো জনা দুই। কেউ একজন একটাজাল ফেলে দিল মানুষটার উপর। মানুষটিতার ছাই রঙের বন্দুকটা সহ গড়িয়ে ঐ জালে বাঁধা পড়ে গেল । লোকগুলো তির,লাঠি, বাঁশের বল্লম যাতে পারে প্রবল আক্রোশে লোকটিকে খোঁচাতে শুরু করল।চতুর্দিকে ফিনকী দিয়ে রক্ত ছড়িয়ে পড়ল। তারপর আবারো সব চুপ।
সে মণিকে ধরে কচুরিপানার থেকে বেরিয়ে এলো। আকাশে আলো ফুটেছে। আলোতে সে দেখল এক ঝাঁক হাতিতেযেন সবুজ পাটের খেতখানাকে পিষে চলে গেছে। চতুর্দিকে মরা মানুষ আর রক্তের দাগ। সে মণির দিকে তাকালো। জলে ভিজে ভিজে গায়ের চামড়াগুলো কুঁচকে গেছে। গায়ে মুখে অনেকগুলো জোঁক। একটা ছাড়াতে গিয়ে রক্তের এক ছোট দলা ওর হাতে লাগল। মণির বাবা? লোকটা কোথায় গেল? কইগেল মানুষটা! “তোকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠতে হবে না...” বলে মানুষটা গেল কোথায় ? পাটখেতের মাঝে মাঝে যে মানুষগুলো পড়ে আছে তাদের মধ্যে...। সে হঠাৎ যেন চোখে ধোঁয়াশা দেখতে পেল, পড়ে গেল। পড়ে যাবার আগে সে দেখতে পেল কতকগুলো লোক ওর দিকে দৌড়ে আসছে। ধীরে ধীরে ওর চোখে নেমে এলো একখানা কালো চাদর। চাদরখানা কাঁপতে কাপতে একসময় থেমে স্থির হয়ে গেল।
টীকা:
১) কুঞ্জলিকা:সংস্কৃত কিঞ্চলুক, কিঞ্চুলুক । তার থেকে বাংলা কেঁচো। কিন্তু এখানে শব্দটির মানে ঠিক তাই নয়। এই সংস্কৃত শব্দের কাছাকাছি অর্ধতৎসম শব্দ কেঞ্জুলিকা বা কেঞ্জেলুকাআছে সিলেটিতে। সিলেটিতে কেঁচু শব্দও আছে। কেঁচু আর কেঞ্জুলিকা শব্দর অর্থ আলাদা। এই প্রাণী অনেকটা খোলসহীন মাটির শামুকের মতো পিচ্ছিল, মাটিতে ঘাসে, গাছে , দেয়ালে ঘুরে বেড়ায়। ঘাস পাতা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। অসমিয়া শব্দটি ‘কুমজেলেকুৱা’। তাই কাছাকাছি সিলেটি বাংলা শব্দটিও রাখা গেল।
2 comments:
প্রিয় শুসান্ত
ফেলানি সম্পর্কে তোমার নিমন্ত্রন অনেক দিন আগেই দেখেছিলাম কিন্তু নানা রকম জটিলতার কারনে ডানা কাটা পায়রার মত আকাশে উড়তে পারিনি মাটিতে থেকে শুধু ছট ফট করেছি, তাই কিছু লিখতেও পারিনি। আমি যে দেশে থাকি সে দেশে বছড়ের শেষে ক্রিস্টমাস উতসব উপলক্ষ্যে জনতার কেনাকাটার ধুম শেষ হলে প্রায় সব বড় বড় দোকানেই থেকে যাওয়া মালামাল কোন কোনটা অর্ধেকের চেয়েও কম দামে বেচে দিয়ে দোকান খালি করে আবার নতুন মাল দিয়ে দোকান সাজায়। এই সুযোগে আজ মানে এই ক্রিস্টমাসের আগের বিকেলে একটা Sony vaio লেপটপ কিনে এনে সবকিছু সেট আপ, ইন্সটল ইত্ত্যাদি সেরে এখন বসলাম।
ভিন্ন ভাষায় রচিত চমতকার একটা উপন্যাস অনুবাদ করার যে সাহসিকতা ও মানসিকতা নিয়ে শুরু করেছ তা একটি চমতকার উদ্দ্যোগ। এটি না হলে কোন দিন জানতেই পারতাম না বাড়ির কাছেই এমন এক অসাধারন উপন্যাস রয়ছে। এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ কঠিন কাজ, মেজাজটা পুরোপুরি বজায় রাখা যায় না তবুও আমার মনে হচ্ছে এখানে সে রকম হচ্ছে না। আমি তোমাকে আর কি সাহায্য করব ভাই আমার নিজেরই যে এক পাতা লিখতে ৩৪০০০ বানান ভুল হয় আর হবে নাই বা কি করে? আজ অনেক গুলি বছর আগে মাথায় করে যে বাংলা অভিধান নিয়ে এসেছিলাম তা আটলান্টিক মহাসাগরিয় স্রোতের টানে যেন কি ভাবে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে এমন হয় যে প্রায় মাস খানিকের মদ্ধ্যে কেবল মাত্র ফোন ছারা সামনা সামনি কারো সাথে বাংলায় কথাও বলতে পারি না।
নক্ষত্রের গোধুলি সম্পর্কে বেশ কয়েক জন ইংরেজ আমাকে বলেছে তুমি এই কাহিনি ইংরেজিতে করে দাও স্থানিয় পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছাপিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দিব। আমি এই সাহস পাইনি। সময়ের অভাবে আমার বড় মেয়ে যে কিনা এই দেশে থেকে লেখাপড়া করেছে তাকে বলাতে সে বলে বাবা তুমি পারছনা আমি কি করে করি এক ভাষা থেকে আর এক ভাষায় রুপান্তর করা কি সহজ কাজ? বোকা মেয়ে বুঝেনি যে বাবার অসমাপ্ত কাজইতো সন্তানকে করতে হয়।যাই হোক সে হয়তো করবে যখন তার এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নেয়া হবে, এখন তা নেই বলে হয়তো ওই কথা বলেছে।
তোমার অনুরোধের প্রেক্ষিতেই কিন্তু তুমি করে লিখছি। তোমার লেখার গতি ভালোই তবে আমার মনে হচ্ছে তুমি একটু তারাহুরো করছ ফলে গতির সাবলিলতা সামান্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লেখা শেষ হবার সাথে সাথেই পোস্ট না করে কিছু দিন রেখে দিবে। তারপর ওই অদ্ধ্যায় থেকে মন যখন সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হবে তখন আবার পড়ে দেখবে, তখনই বুঝতে পারবে কোথায় কি হলে আরো একটু মানানসই হবে। ভাষা বা শব্দ সম্পর্কে কিছু বলা আমার সঙ্গত হবে না কারন আমাদের বাংলা ভাষা এক হলেও প্রত্যেক এলাকায়ই নিজস্ব কিছু কিছু শব্দের প্রচলন থাকে যা নিতান্ত স্বাভাবিক। আমি কোলকাতায় গেলেও তোমাদের ওই এলাকায় কখনো যাবার সুযোগ পাইনি কাজেই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। তবে এবার দেশে যাবার পর আমি অবশ্যই আসাম দেখতে যাব এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা।অনুবাদের সাথে আকা ছবি দেয়ার ধারনাটাও চমতকার। তোমার লেখার সাথে যিনি ছবি আকছেন তার কথা আর কি বলব এক কথায় প্রতিটি ছবিই জীবন্ত নির্বাক উপন্যাস, যেমন তার ভাবনা তেমনি তা ফুটিয়ে তোলার কৌশল, তাকে আমার শ্রদ্ধা জানালে নিজেকে ধন্য মনে করবো।
ভিন দেশের একটি ওয়েব সাইটে তুমি আমার নামের সাথে আমার প্রলাপের লিঙ্ক সংযোজন করে দিয়ে তোমাকে সহযোগিতার তালিকায় স্থান দিয়ে যে বিরল সন্মান দিয়েছ সে সম্পর্কে আমার বলার মত কোন শব্দ মনে আসছে না, কি জানি এমনও হতে পারে সাত সাগর মহাসাগর আর তেরশ নদী পাড়ি দিতে গিয়ে তা কোথাও ভেষে গেছে বলে আর খুজে পাচ্ছি না। তুমি প্রকৃত বন্ধুই বটে।
ভালো থেকে লেখালেখির কাজ গুলি সুন্দর করে চালিয়ে যাও তোমার লেখনির মাদ্ধমে ঘুমন্ত সমাজ জেগে উঠুক এই আশা করি।
ও হ্যা, নীল নক্ষত্রে দেয়া তোমার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওখানেই বলেছি সময় হলে দেখে নিও।
সবার জন্য ক্রিস্টমাসের শুভেচ্ছা।
প্রিয়বরেষু খালিদদা, শেষ অব্দি আপানার লেপটপ হওয়াটা আমার জন্যে এক সুংবাদ! এতো এতো দিন সংযোগ বিহীনতা ভাল লাগছিল না। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের এই সমস্যা। আজা যদি আমার কম্প্যুটারেও এমন সমস্যা হয়, চট জলদি ঠিক করতে পারব না। আপনার দেশের বাংলা অন্যরকম হলেও আপনি পরাম্ররশ দেবেন। অন্তত আপনার পরামর্শ আমাকে ভাবতেতো সাহায্য করবে। তাতে আমি শোধরাতে পারব। এই যেমন আপনি লিখলেন,"আমার মনে হচ্ছে তুমি একটু তারাহুরো করছ ফলে গতির সাবলিলতা সামান্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লেখা শেষ হবার সাথে সাথেই পোস্ট না করে কিছু দিন রেখে দিবে। তারপর ওই অদ্ধ্যায় থেকে মন যখন সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হবে তখন আবার পড়ে দেখবে।" এটাতো ঠিকই লিখেছেন আপনি। আমি সেটা অবশ্যই করব। তবে কিনা, এখানে আমি সপ্তাহে একটা তুলে দেবার প্রতিজ্ঞা যদি না রাখি তবে কাজ কিছুতেই এগুবে না। পড়ে থাকবে। এখানে আমি ভুলে ভালে তুলে দেবো ভেবেছি। তারপর আপনি ও অন্যেরা পড়ে মন্তব্য দেবেন।আমি ভাবব ও পরে ঠিক করে নেব। এ ভাবে এটা হয়ে উঠবে এক যৌথ কাজ।
আপনার ভাষা এতো দুর্দান্ত যে আপনি যা লেখেন তাই মধুর শোনায়। কিন্তু এটা ঠিক যে আপনার বানান দেখে অনেকে ভাববে আপনি বোধহয় বাংলা জানেন না। আপনি আমার এই ব্লগের উপরে দেখুন দুটো অভিধানের লিঙ্ক আছে। এছাড়াও এখানে দেখুনঃhttp://www.google.co.in/#hl=en&source=hp&q=bengali+dictionary+online&meta=&aq=1&oq=bengali+dic&fp=52d75a02b21082af
আমার আশা এগুলো আপনার কাজে আসবে।আ র কিছু সরল বানান বিধি আমি আপনাকে মেইলে বলব।
Post a Comment