একদিন , দু’দিন, চারদিন, সাতদিন অব্দি বন্ধের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু তিনশ ঘণ্টা কী করে কাটায় মানুষগুলো? কী খায়? কী করে? কই যায়? কেউ খোলামেলা ঘোরাফেরাও করতে পারে না। মিলিটারিতে গিজ গিজ করছে।
মণি সক্কাল সক্কাল পাঞ্জাবি গ্যারেজের জন্যে বেরিয়ে যায়, একেবারে রাত আটটা নটাতে আসে। সে সেই সকালে ঘরে একমুঠো খেয়ে যায়, দুপুরের আর রাতের খাবার সেখানেই খেয়ে আসে। এ কয়দিনে সে বেটা ছেলে হয়ে গেছে। কোনও কোনও দোকানের পেছনে কেনাবেচা চলে, সেখান থেকে দরকারি জিনিস কিনে আনে। কোনও অসুবিধে ছাড়াই মালতীর চলছে।
জোনের মা ঠিকই বলেছিল, কিছু একটা করে মানুষের চলে যাবে, যাচ্ছেও।
ফুল একটা বাড়িতে কাজ নিয়েছে। বন্ধ বলেতো আর মানুষের বাড়ির কাজকম্ম বন্ধ নয়।
জগুও হাজিরা করা শুরু করেছে।
রত্নার মা ঘরে মশলা কুটে গুড়ো করে বাড়ি বাড়ি বিলোনো শুরু করেছে। সঙ্গে মিনতিও যায়। সে গরম মশলার ছোট ছোট প্যাকেট করে নিয়ে যায়।
লাতুর মাও আজ এই বাড়িতে কাপড় ধোয়া, তো কাল ওই বাড়িতে ঘর লেপা চালিয়ে যাচ্ছে।
নবীন আর্মি ক্যাম্পের কাছে যে বাজার বসে সেখানে বসতে শুরু করেছে।
শহর ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষগুলো যা পারে, যেভাবে পারে টাকা পয়সা পাঠাচ্ছে।
চারালিতে আর্মি ক্যাম্পের সামনে শাক সবজির একখানা ছোট বাজার বসেছে। বস্তির অনেকেই ভেতর গ্রামে গিয়ে শাক লতা যা পারে এনে সেখানে বিক্রি করতে শুরু করেছে। আসলে এই বন্ধ দেয়া পার্টি আর মিলিটারির মধ্যে বোঝাপড়া আছে। ওদের পার্টি অফিসটাও ক্যাম্পের গা লাগিয়ে বসানো। নইলে একেবারে দেশের থেকে আলাদা হয়ে আলাদা রাজ্য দাবির পার্টিটি দেশের ভেতরে রাজ্য দাবি করা পার্টিকে পেলেই মারে। একেবারে সাপে নেউলে সম্পর্ক। শেয়াল যেমন বাঘের সঙ্গে সঙ্গে থাকে বন্ধ দেয়া পার্টিটিও আর্মির সঙ্গে সঙ্গে থাকে। সুতরাং বাজার বসতেও কোনও অসুবিধে হয় নি। আর্মি ক্যাম্পেরও শাক সবজি চাই। পার্টির ক্যাম্পেও চাই। নদীতে মেরে আনা দুই এক ভাগা মাছও বিক্রি হচ্ছে, গেল রোববারেতো ছাগল একটাও কেটে বিক্রি হয়েছিল।
চলছে। যেমন তেমন করে ফাঁক বের করে ঠেলা ঠেলি করে হলেও চলছে। থেমে থাকে নি কিছু।
কিন্তু জোনের মা ঠেলা-ঠেলি করেও চালাতে পারে নি। শুধু যদি ভাত-মুঠোর কথা হতো, তবে কথা ছিল না। আসল কথা হলো মানুষটির অসুখ। বেছে বেছে এই ক’টা দিনেই কি এমন হতে হয়? মালতী একদিন দেখতে গেছিল। উঠোনে পা দিয়ে সে চেনা শব্দ আর দৃশ্য দেখতে পায় নি। সেই শ্বাস টানতে থাকা একটা পুরুষ আর তেল মালিশে ব্যস্ত মহিলা। সে ভেতরে গিয়ে ঢুকলো। চেনা ঘরঘর শব্দে শ্বাস টানার শব্দের বদলে সে শুনতে পেল সাঁ সাঁ শব্দ।বিছানার কাপড়ের সঙ্গে মিশে মানুষটা পড়ে আছে। সে কাছে চেপে গেল। মানুষটার ঠোঁট, হাতের আঙুল, পায়ের বুড়ো আঙুল নীল হয়ে গেছে। সাঁ সাঁ শব্দটি শুনলে টের পাওয়া যায় বুকের ভেতরে টোপ টোপ করে জল পড়বার মতো করে অল্প অল্প বাতাস যেতে পারছে। সে যে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি টের পেয়েছে, কিন্তু কেউ তা ধরতে পারে নি।
“আমার বিড়ি...” না, কথা শেষ করতে পারে নি লোকটা। বাতাস শূন্য বুক থেকে শব্দ কয়টি বড় কষ্টে বেরিয়ে আসছে।
“নে তোর বিড়ি, খা আর মর, এগুলো টেনে টেনেই তোর আজ এই অবস্থা।”
জোনের মা বিড়ি একটা জ্বালিয়ে বুড়াকে দিচ্ছে।
“আমি যখন কামাই করতাম...” বুড়ো থেকে গেছে, কথা বলতে পারে নি।
“বল না, নিজে কামাই করতাম যখন দিনে তিন চার প্যাকেট বিড়ি খেয়েছিলাম, এখন বৌয়ের রোজগারে..., বল, বলবি না কেন?”
“ বুড়ো একটান মারতেই জোনের মা কেড়ে এনে ফেলে দিল। বুড়ো কিছু বলতে গেলে নিজের খিং খিঙিয়ে উঠল, “বল কোন প্যারের মানুষকে দেবার জন্যে নিয়েছিস, বল না!”
বিড়িতে টান দিয়ে বুড়ো শান্ত হয়ে বিছানাতে পড়ে রইল। শুধু সাঁ সাঁ শব্দটা বেরুতেই থাকল।
জোনের মা বাইরে বেরিয়ে এলো। বেড়াতে গুঁজে রাখা ছোট ডিবার মতো জিনিস একটা বের করল, শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখা পিল দু’টো বের করল। ডিবার মতো জিনিসটাতে জল দু’চামচ দিয়ে পিলগুলো ফেলে আবার ভেতরে ঢোকে গেল। বুড়োকে সে এবারে হাঁটুতে হাত রেখে বসিয়ে দিল। তারপরে নাকের কাছে ডিবাটা দিয়ে শুঁকতে দিল। ভালো করে শ্বাস টানতে পারে নি বুড়ো। কিছুক্ষণ শুঁকিয়ে সে বাইরে উঠোনে এলো।
“আয় মণির মা, বস।” জোনের মা পুরোনো চাটাই, ধারাতে ছোট করে উঠোনেই একখানা পাকঘর সাজিয়ে নিয়েছে। দেখলেই বোঝা যায় মেয়ে মানুষের হাতের কাজ।
“এখানে রান্নাঘর করলি কেন? তোর অসুবিধে হয় না? বৃষ্টি দিলে কী করিস?”
“ভেতরে ভাত রান্না করলে বড় ধোঁয়া হয়, ওর ধোঁয়া লাগলে অসুখ বাড়ে। বৃষ্টি দিলে হাড়ি কড়াই তুলে ভেতরে চলে যাই। ভেতরের চুলোটা ভাঙিনি তো।” চা ঢালতে ঢালতে বলল। বস্তির সবার ঘরেই একই চা। লবণ দেয়া লাল চা। “আজ মুড়ি নেই, কতদিন হলো মুড়ি ভাজি নি।” সে গিয়ে এক বাটি চা বুড়োকে খাইয়ে এলো।
“মণির মা , আজ ওষুধে কাজ দেয় নি।”
“ কী করবি?”
“ডাক্তার ডেকে ইঞ্জেকশন দিতে হবে।”
“ ডাক্তার কই পাবি?”
“ওষুধের দোকান খোলা আছে। বুড়ো ডাক্তারকে ডাকতে হবে।” বুড়ো ডাক্তার বস্তির মানুষের চিকিৎসার শেষ উপায়। কোনওডিগ্রিধারী নয়। ইন্দু ফার্মাসির মালিক আগের দিনের কলকাতার এম বি বি এস ডাক্তার রজনীকান্ত শইকিয়ার সঙ্গে থেকে সেই ছেলেবেলা থেকে বহুদিন থেকে কাজ শিখে ওর ডাক্তার হওয়া। অবশ্য এই বুড়ো ডাক্তারকে শহরের কেউ ডাকে না। জোনের মা তাকেই ডাকতে চাইছে।
“এই ক’টা টাকা।” সে হিসেব করে দেখল চারখানা দশটাকার নোট ওর বাক্সের তলায় পড়ে আছে।
“আঙটিটা বিক্রি করব।”
“কার কাছে?”
জোনের মা সামান্য ভাবল। এবারে ভেতরের গিয়ে আবার এলো।
“ও মানুষজন চিনতে পারছে না আজকাল। সামান্য আগেও বিড়ির কথা বলছিল, এখন বিড়িটাও চাইল না। এবারে বুড়োকে আমি বাঁচাতে পারব না।”
“তুই দেখি সবসময় বলিস, কিছু একটা হবে। এমন ব্যস্ত হয়েছিস কেন?”
“ আমার সঙ্গে ড্রাইভারণীর ওখানে যাবি?”
“ড্রাইভারণীর ওখানে?” মালতীর লজ্জা করছে।
“ও ছাড়া সোনারা আংটি কিনতে পারার ক্ষমতা আছে কার?”
জোনের মা আংটিটা হাতে নিয়ে ছেলেমেয়েকে বাবার কাছে থাকতে বলে মালতীর হাত ধরল। “চল, মণির মা আমি একা ড্রাইভারণীর ওখানে গেলে কাল আর বস্তিতে মুখ দেখাতে পারব না।”
মালতী মুখে কিছু বলল না, যাবার জন্যেও উঠল না।
“চল মণির মা, কেউ কিছু বলবে না। আমরা এতোদিন ধরে বস্তিতে আছি, আমাদের লোকে চেনে না?”
সে যেতে রাজি হলো।
ড্রাইভারণী বাড়ির চার-সীমা উঁচু উঁচু চাটাইর বেড়াতে ঢেকে দিয়েছে। পাকা ঘরের সিঁড়িতে পা দিতেই ড্রাইভারণী বেরিয়ে এলো।
“আয়, আয় জোনের মা।” এমন করে ডাকল যেন এরা দু’জন প্রায়ই আসে আর কি। কুশন দেয়া চেয়ারে বসতে দিয়ে সে রত্নাকে ডাকল।
“রত্না কি এখানে থাকে?”
“থাকে না, টিভি দেখতে এসে আমার এটা ওটা করে দিয়ে একটু সাহায্য করে দেয় আর কি। যা তো রত্না, চা দু’কাপ আন।”
রত্না দু’কাপ দুধ দেয়া চা, বিস্কিট, দু’রকমের মিষ্টি দু’টো প্লেটে দিয়ে গেলো।
“খা, এই মিষ্টি আমার মামা এনেছেন। সোনার জিনিস বানাবার দু’খানা দোকান আছে তাঁর, বিশাল অবস্থা। গরীব ভাগ্নিকে দেখতে এসেছেন। মামার হাতের সোনার জিনিস দেখ। ড্রাইভারণী হাত দু’খানা তুলে ধরল। দুটো দুটো চারটা বালা চিকচিক করছে।
রত্না তামোল দিয়ে গেল।
“মামা ডাকছেন।”
ড্রাইভারণী উঠে গেল। উঠে যাবার সময় ওর পায়ের পায়েল জোড়া ঝুনঝুন করে সঙ্গে গেল। যেন সে এখনি কোথাও বেড়াতে যাবে।
“চল, জোনের মা, যাই গে’।” মালতীর কেন যেন ভালো লাগল না। ভেতরে, মানে তারা যে কোঠাতে বসেছে তার কাছের কোঠাতে ড্রাইভারণীর খিলখিল হাসি শুনতে পেলো। মালতীর নজরে পড়ল কাপড় একটাতে ঢেকে রাখা বেতের রেকে সারি সারি মদের বোতল। বস্তির লোকে বলে আর্মির ক্যাম্পের থেকে সস্তাতে মদ এনে ড্রাইভারণী বেশি দামে বিক্রি করে ভালো পয়সা করেছে।
“চল , জোনের মা।” কেন যেন ওর এক মিনিটও থাকতে ইচ্ছে করল না।
“ দাঁড়া না, আংটিটা দিয়ে যাই।”
হ্যাঁ, এখানে ও এসেছিল কেন সেটাই ভুলে গিয়েছিল। ভেতরে ড্রাইভারণী কারো উপরে রাগ করেছে, ওর টনটনে গলাতে নয়, গলা ছোট করে।
সামান্য সময় দু’জনে বসে রইল।
“রত্না,” হিসপিস করতে করতে জোনের মা রত্নাকেই ডাকল। ড্রাইভারণী বেরিয়ে এলো।
“এই আংটিটা রাখ, বুড়োর বড় অসুখ।”
ড্রাইভারণী আংটিটা হাতে নিয়ে দেখল। সে আজকাল বস্তির মানুষের অলংকার বন্ধকে রাখে। নেড়ে চেড়ে দেখে সে বাঁকা হাসি একটা হাসল।
“এতো পেতলের আংটি, সোনার জল ছিটিয়ে দিয়েছে।”
জোনের মা সেলাইর খেপ মারবার মতো আংটিটা ড্রাইভারণীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বলে উঠল, “চল।”
ড্রাইভার ভেতরে আসছিল। আসছিল মানে এসেছেই। একটা ছেলে ধরে ধরে নিয়ে আসছে। লোকটার কাপড়ে চোপড়ে কাদা।
“কই পড়েছিল, শুয়োরটা?” ড্রাইভারণীর গলা এবারে চড়া, টনটনে।
“চুপ কর বেটি!” ড্রাইভারের জিহ্বা কোনও মতেই ঘুরতে চাইছিল না মুখের ভেতরে।
“ বাগানে ভাড়া মারতে গিয়ে লাইনে পড়ে ছিল।” ছেলেটি ড্রাইভারকে বাইরের বিছানাতে শোয়াতে চাইছিল।
“নে, শুয়োরটাকে বাইরের কল পারে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখ। দে জল ছিটিয়ে দে গে’। তুলে আনলি কেন ওকে? পড়ে মরে থাকতে দিলি না কেন?”
বমি আর দেশি মদের গন্ধে ঘরটা ভরে গেছে।
রাস্তাতে পা দিয়ে এরা দু’জনে শ্বাস ফেলল। জোনের মা পাকা রাস্তা ধরে হাঁটা দিল।
“কই যাবি?”
“আর্মি ক্যাম্পটা পার করে রিজার্ভ পাবার আগে সোনারির দোকান একটা আছে। বুড়োর ঘরটা দোকানের পেছন দিকে। চল তো দেখি, ওখানে যাই।”
জোনের মা আজ কোনও কারণে আজ একা ঘোরাফেরা করতে চাইছে না। ওকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যাবে না বলে সে বলি কী করে?
বুড়ো সোনারির বাড়ি থেকে বেরিয়ে জোনের মা মাথায় কপালে হাত দিয়ে রাস্তাতেই বসে পড়ল।
“হলো কী? সোনারিও কি একই কথা বলল?”
জোনের মা ওর দিকে সামান্য তাকিয়ে জোরে পা চালালো। লম্বা উঁচা মহিলাটির লম্বা লম্বা পা ফেলার সঙ্গে মালতী পেরে উঠে নি। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মানুষটি মিলিয়ে গেল।
“মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।” নিজেকে নিজে এই কথা বলে সে বাড়ির দিকে পা চালালো। মণি এলো কিনা তার ঠিক নেই। চাবি ওর হাতে।
ঠিকই মণি এসে দাঁড়িয়ে আছে।
“মা, কই গেছিলি? কী হয়েছে শুনিস নি?”
“কী হয়েছে?”
“ দুই পার্টির মধ্যে গুলা-গুলি। ওরা গিয়েছিল পয়সা ডিমান্ড করতে, অন্য পার্টি টের পেলো। ডিমান্ড করা পার্টির সঙ্গে তো আর্মি থাকেই। অন্য পার্টির সব ক’টা লাশ হয়ে গেল।”
“কী হবে এখন?”
“ বন্ধ খুললেই হয়তো কার্ফিউ দেবে। দিনকাল বড় খারাপ। কই গিয়েছিলি? বেরোবি না। কখন কী হয় বলতে পারি না।”
সে মণির দিকে তাকালো। কখন যে সেই ছোট ছেলেটা ওর মাথার উপরের মানুষটা হয়ে গেল। হাসি একটা দিয়ে ও ভাতে লাগল গিয়ে।
বিকেলে মিনতির সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত ছিল, জোনের মা এলো। মাত্র এক বেলাতেই মানুষ একটা এমন বদলে যেতে পারে? কেমন যেন হয়ে গেছে ও। কোমর অব্দি ভেজা, চুল এলো মেলো, কপালের আধলির মতো ফোটা গলে একাকার, চোখ দু’টো গোল গোল।
“কী হলো, জোনের মা?” মিনতি হা-হুতাশ শুরু করল।
জোনের মা এসে কালী বুড়ির থানে ধপাস করে বসে পড়ল। তারপরে লম্বা হয়ে পড়ে দণ্ডবৎ করল।
“আমাকে আজ মা কালী দেখা দিয়েছে।” জোনের মায়ের গলা আগের মতো সজীব আর ফুর্তিবাজ নয়, কিসে যেন চেপে ধরেছে ওর গলা।
“মা কালী দেখা দিয়েছে?”
“ কী বলছিস , জোনের মা? কী হয়েছে তোর? চল কাপড় পালটে হাত মুখে ধুয়ে নিবি।”
“আমি মাছ মারতে গিয়েছিলাম। নদীর পাড় ধরে যাচ্ছিলাম। সে যে হেলে পড়া বাঁশের ঝাড় একটা আছে, সেখানে মা কালী বসে ছিলেন।” সে আবার মাটিতে পড়ে দণ্ডবৎ করল। মা কালী নেমে এলেন আর এই দিক দিয়ে মা আমার মধ্যে ঢুকে গেলেন।” পা দুটো ফাঁক করে নিজের গোপনাঙ্গ সবার সামনে উন্মুক্ত করে দিল। “মা কালী আমার পেটে। দেখ আমার পেটে মা কালী।”
জোন এসে মাকে দেখে কেঁদে ফেলল, “মা বাবা বিছানাতে পায়খানা করেছে।”
জোনের বোন তাতে যোগ দিল, “তিন বার পেচ্ছাব করেছে।”
জোনের মা দাঁড়ালো, “আমাকে একটু কাঁচা দুধ দিতে পারবি? আমার খিদে পেয়েছে।”
মিনতি আর মালতী ধরে ধরে জোনের মাকে বাড়ি নিয়ে গেল। ভেতরে হেগে মুতে চ্যাপটা হয়ে মানুষটা মরে পড়ে আছে।
সব সময় যা হয়, বস্তিতে হুড়ো হুড়ি পড়ে গেল। পাঁচ টাকা, দু’টাকা , আট আনা করে পয়সা তোলে মানুষটাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হলো।
“কাঁচা দুধ নিয়ে আয়।”
“কালা পায়রা এক জোড়া মাথা ছিঁড়ে আন।”
“কলা দিয়ে সাগু মেখে দে।”
“ মিষ্টি আর দুধ আন।”
“মা কালীর খিদে পেয়েছে।”
“মা খিদেতে কষ্ট পেলে তোদের শাপ দেবে।”
ক্রন্দনরত ছেলে মেয়ে, লাকড়ি দিতে নিয়ে যাওয়া স্বামী, এখনো আধা বাকি থাকা লম্বা বন্ধটা, গতকালকের গোলমাল সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে জোনের মা হুংকার দিচ্ছে, “কাঁচা দুধ...কলা...সাগু...মিষ্টি...কালো পায়রা...।”
সত্যি সত্যি কেউ একজন একটা থালাতে কলা মেখে সাগু কিছু দিয়ে রেখে গেল। জ্বলে গেল একটা প্রদীপ, রাখা হলো ধোঁয়া ছড়ানো ধূপদান একটা, পায়ের কাছে রেখে গেল কালো একটা পায়রা।
কণ্ঠ নালীতে মোচড়ে পায়রাটার রক্ত পানরতা জোনের মাকে দেখে মালতী পালিয়ে বাড়ি চলে এলো। টিউব কলের পাড়ে বসে সে হু হু করে কাঁদতে শুরু করল। বারে বারে ওর সামনে আসা যাওয়া করছিল এক লম্বা, তেলে পিছল কালো চামড়ার হাসিমুখো মহিলা, কপালে আধলির সমান সিঁদুরের ফোটা একটা।
মহিলাটি গায়ের জোর লাগিয়ে ড্রাইভারণীকে চেপে ধরেছে, মিনতিকে তাড়া করে এসেছিল যে টনটনে গলার ড্রাইভারণী, সেই তাকে।
মহিলা নরম বুকের শুকনো ঘায়ে হাত দিয়ে ছুঁয়েছে, “ আমার শরীরটা ওর মতো হাড় জিরজিরে হলেই আমার শান্তি হবে...কফে ভরা বুড়োর শরীরের কাছে আমার এই শরীর...” পাকা জামের মাটিতে গড়িয়ে পড়ার মতো মহিলা মালতীর শরীরে গড়িয়ে পড়ছে।
কালো মহিলাটি ঘা খাওয়া আলদ সাপের মতো ঝাঁপ দিয়ে দিয়ে উঠছে, “ কেন লাগব না? কী করবে আমাকে? দা দিয়ে ঘা মারবে? আসুক , কয় ঘা মারে দেখি।”
মহিলা চায়ের পয়সা দিচ্ছে, “মাথার উপরে পুরুষ থাকা মহিলা আমি।” কালো মুখখানা হাসিতে উজ্জ্বল।
এই মুখটাও হাসিতে উজ্জ্বল, “ মরবো না, বেঁচে থাকব। কিছু একটা করে বেঁচে থাকব। নিশ্চয় কিছু একটা করে বেঁচে থাকব।”
কালো মহিলাটি বারে বারে আসে, মালতীর শরীরে একখানা পুরোনো কাপড় চাপিয়ে দেয়, তাকে দিয়ে যায় একখানা কাঁথা। যায় আর আসে। গায়ে দিয়ে যায় একখানা কাপড়ের উম। তারপর মেয়ে মানুষটি সোনারি বুড়োর বাড়ি থেকে বেরিয়ে মালতীর দিকে একবার বাঁকা চোখে তাকিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে গেল যে গেলই। মহিলাটি ফিরে এসেছে, উন্মুক্ত করে দিয়েছে ওর গোপন অঙ্গ। মুখখানা ওর পায়রা পাখির রক্তে লাল।
মণি না আসা অব্দি মালতী কলপাড়ে বসে কেঁদেই গেল।
No comments:
Post a Comment