ফেলানি
সেকার্তিক শাইল আর সুহাগমণি ১দু'ধরণের ধানই আলাদা আলাদা করে রোদে শুকোলো। ধানগুলো দুটো ধারাতে ছড়িয়ে দিয়ে হাত পা মেলে উঠোনে বসল। ধানগুলো যখন সেদ্ধ করা হয়েই গেছে আসল কাজটাই সারা হয়ে গেছে, রাতে মুড়িগুলো ভেজে ফেলতে হবে। কাল আবার বাজারবার। মণি স্কুলে গেছে। তিনটেতে ফিরবে। রান্নাবান্নাও শেষ। স্কুলে যাবার আগে মণির জন্যে যে ভাত বসিয়েছিল তাতেই হয়ে যাবে। বস্তির বাকি মানুষগুলোর মতো তারও এখন সন্ধ্যে সাতটা হতেই ভাত খেয়ে নিতে কোনও অসুবিধে হয় না। আটটা বাজলেই শুয়ে গভীর ঘুমে ঢলে পড়া , কাকভোরে ওঠা, বাজারে যাওয়া, নদীতে স্নান করা, মুড়ি ভাজা, বড়া তৈরি করা--সব কিছুই ওর জন্যে সহজ হয়ে পড়েছে।
সে ধারার ধানগুলো একটু নেড়ে চেড়ে দিল। হাতের তালুতে নিয়ে ধানগুলো একটু ভালোকরে দেখল। ধানগুলো সেদ্ধ করবার বেলা আজকাল আর কালীবুড়িকে দেখে দিতে হয় না। ঠিক চুলের মতো ফাটা দিলেই ধানগুলো যে নামিয়ে নিতে হয়, সে কথা ও এখন জেনে গেছে। ওর হাতের মুড়ি এখন গুণেমানে কালীবুড়ির মতোই হয়। আরেকটা নতুন কাজ শিখেছে সে। মোড়া তৈরি করা। বাজার থেকে এসে ভাত চারটা বসিয়ে মণি যতক্ষণে ওর পড়াশোনা শেষ করে ফেলানি একটা মোড়া তৈরি করে ফেলে। বাজারে যেতে মুড়ির সঙ্গে করে মোড়াগুলোও নিয়ে যেতে ওর আজকাল কোনও অসুবিধে হয় না।
মোড়া বানাতে সে শিখেছে রত্নার মায়ের থেকে। রোগাপটকা মেয়েমানুষটি যেভাবে দুইহাতে কাজ সেরে ফেলে দেখে সে অবাক হয়ে গেছিল। রত্নার মায়ের তিন মেয়ে। বড়টিকে বিয়ে দিয়েছিল। বিয়ে দেবার বেলা জানত না, ছেলেটি মদ খায়। বুকের একটা দিক খেয়েই ফেলেছিল। মেয়ে একটা জন্মাবার পরেই স্বামী হারালো।শ্বশুরের ঘরে এখন বিধবার জীবন যাপন করছে। মেজো মেয়েটি গুয়াহাটির একটি বাসাতে থাকে। ছোটটি বাড়িতে থাকে। চার নম্বর মেয়েটি মারা গেছে। রত্নার বাবা পান চাষ করত । পানচাষিদের সবাই ওকে চেনে। এখন মানুষটি কিছুই করে না। গরম কালে কাঁঠাল তলায় আর শীতের দিনে উঠোনের মাঝখানটিতে বসে থাকে। মেজো-মেয়ের টাকা ক'টিতেই এখন সংসারের এটা ওটা ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে হয়। খাবার খরচ ঐ মোড়াগুলোতেই উঠে যায়। একটা ছেলে সন্তান না থাকার যাতনা বাড়িটাকে চেপে ধরে রেখেছে। হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে বসে কাঁঠাল তলা থেকে, উঠোনের মধ্যি থেকে বুড়ো মানুষটা অনবরত বকতে থাকে, “ আমার যদি একটা ছেলে থাকত...আমার যদি একটা জোয়ান ছেলে থাকত...একটা ছেলে সন্তান...।” মানুষটার এই একটা কথাতেই গোটা বাড়ি নীরব করে রাখে। রত্না দিদির দিয়ে যাওয়া, নিজে পরে আধা পুরনো হওয়া, মালিকনীর মেয়ের পুরোনো কাপড়গুলো পরেই বারান্দার বেড়াতে হেলান দিয়ে বসে থাকে। একটা খড়কুটোও এদিক ওদিক করে না। সেও আজকাল বাবার মতোই কথা বলতে শিখেছে, “ আমাদের একটা যদি বড় ভাই থাকত,” “ যদি একটা ছেলে থাকত...।” রত্নার মা এই দুটো চুপ করে বসে থাকা মানুষের মাঝে নীরবে নড়া চড়া করে থাকে। ভাত রাঁধে, রিজার্ভ থেকে খড়ি জোটায়, মোড়া তৈরি করে, বাজারে মোড়া নিয়ে যায়, চালডাল কিনে।
মালতী শলা তৈরি করে রেখেছে, সাইকেলের ট্যুব, প্লাস্টিকের রশি...সবই জোগাড় করে রেখেছে। দুটো মোড়া আদ্ধেক আদ্ধেক বানিয়েও ফেলল—গাঁটগুলো দেবার বেলাতেই সমস্যা দাঁড়ালো। ঐ আধা তৈরি মোড়া একটা নিয়েই সে রত্নার মায়ের বাড়ি যাবে বলে বেরিয়ে গেল, যাবার বেলা ধানগুলো দেখবার জন্যে কালীবুড়িকে বলে গেল । জোনের মায়ের বাড়ি পেরিয়ে তবে রত্নার মায়ের বাড়ি যেতে হয়। আজ সকাল থেকে মানুষটি একবারও আসে নি। বরের শরীর বেশি খারাপ হলো কি? না সে মুড়ি ভাজতে বসেছে? না কি জোনেরই কিছু একটা হয়েছে?
জোনের মা উঠোনে এদিক ওদিক করছে। মালতীকে দেখে ওর চিৎকার আরো বেড়ে গেল। কাকেই বা অমন প্রাণ ঢেলে গালিগালাজ করছে? জোনের মায়ের বাড়িটা প্রায় নদীর পারেই। জোনের বাবার এই বস্তিতে আসার হয়েছে অনেক বছর। এই জায়গাটা সুবিধের দেখে বসত গড়েছিল। নদীটা এতো কাছে ছিল না। বাঁক একটা বাড়তে বাড়তে নদীকে এ অব্দি নিয়ে এসেছে। জোনদের বাড়ির গায়েই লেগে আছে রত্নাদের বাড়ি। রত্নার বাবাও জোনের বাবার কাছাকাছি সময়েই এখানে এসে ভিটে-বাসা করে বসেছিল। ওদের আসার বহু আগে থেকেই নদীর পারের বিশাল বটের তলার বাড়িটায় হরি ভাঙুয়া ছিল। হরির দাদা ঠাকুরদারাও এ অঞ্চলেরই বাসিন্দা ছিলেন।এই বস্তির বেশ একটা বড় অংশ হরি ভাঙুয়া তার বাবার থেকে পেয়েছিল। রত্নার বাবা, জোনের বাবাদের দিয়ে শুরু করে ও আজ অব্দি ঐ মাটি বিক্রি করেই মদ ভাঙের খরচ বের করছে। এই নদী, এই রিজার্ভের মতোই হরি ভাঙুয়া এখানে এমনই এক দৃশ্য যা কারোরই আর আলাদা করে চোখে পড়ে না। ওর বাবার আমলের ঘরখানা মেরামতির অভাবে সেই কবেই খসে পড়েছে। একটা একটা করে সেই ঘরের বাঁশ-কাঠ নিয়ে হরি ভাঙুয়ারবৌ ভাত রেঁধে শেষ করল। এখন প্লাস্টিক আর খের দিয়ে তৈরি কাকের বাসার মতো একটা চালার তলায় পরিবারটি থাকে। বটগাছের গায়ে হেলান দিয়ে আছে বলে ঘরটি ভেঙে পড়ে নি। বট গাছটার ঝালরের মতো বেরুনো অজস্র শেকড়ের তলাতে একটি কালো পাথর তেল সিঁদুর দিয়ে রাখা আছে। তার কাছেই কোনোক্রমে গামছা একটাকে নেংটির মতো পরে ওর নগ্নতাকে ঢেকে সে সিলিম টানতে থাকে। তার চোখজোড়া রক্তজবার মতো রাঙা। ছোট ছোট চোখদুটোতে সবসময়েই একটা উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। থুতনিতে কয়েকটি লকলকে আধা কাঁচা আধা পাকা দাড়ি। ওর বৌ সবুজ একটা মেখেলা পরে দিনভর এটা ওটা কাজ সারতে থাকে। সকালে ভাঙুয়া আর ছেলের জন্যে ভাত চারটা বসিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে। ওর কাজ আবহাওয়া আর সময় অনুসারে বদলাতে থাকে। কখনো বা সুপারি বেপারীর কাছে গিয়ে সুপারির খোসা ছাড়ায়, মিলে চাল বাছে, রাস্তাতে বুরুস মারে, কখনো বা সুবিধে পেলে মিস্ত্রির সঙ্গেও কাজ করে। কাজের থেকে এসে রিজার্ভে লাকড়ি খোঁজে বেড়ায়, ঢেঁকিয়া তোলে, নদীতে মাছ মারে। রাতে এসে ছেলের বকাঝকা শুনে, বরের শাপ-শাপান্ত শুনে বা প্রায়শ:ই ধুমধাম কিল খেয়ে ভাত রাঁধে। আঠারো -উনিশ বছরের ছেলেটি কখনো বা আধ কেজির মতো শুয়োরের মাংস নিয়ে আসে। মাংসে তেল মশলা কম হলে মায়ের গায়ে থাল ছুঁড়ে ফেলে ঘরের থেকে বেরিয়ে পড়ে। ছেলেটির হাত নড়ে বলে এই বস্তির সবাই জানে। হাঁস-মুরগির থেকে আরম্ভ করে জলের কল অব্দি সে অনায়াসে সাফ করে দেয়। কেউ ধরতেই পারে না। হাতে নাতে কেউ ধরতে পারেনি বটে, কিন্তু কিছু একটা হারালে সবাই জানে হরি ভাঙুয়ার ছেলেই সে কাজটা করেছে।
আজ জোনের মায়ের গালি বর্ষণ হচ্ছে ঐ নদীর বাঁকের কাছের বট গাছের ঝুরিতে হেলান দেয়া চালাটার দিকেই। জোনের মায়ের গাভিন ছাগলটি বাঁধের উপর থেকেই হারিয়ে গেছে। মুড়ার সঙ্গে মালতীকে দেখে জোনের মায়ের মুখ বন্ধ হলো।
“ কী হলো জোনের মা?” জোনের মায়ের রাগ দেখে সে হাসল।
“ কী আর হবে, ভাঙুয়ার ছেলে ছাগলটি নিয়ে গিয়ে বেচে দিল।” মালতী অল্প দূরের নদীর পারের বাড়িটার দিকে তাকালো। উঠোনে একটা আধ ন্যাংটো ছেলে গামছা পরে হাতে দা নিয়ে মাটিতে অনবরত কুপিয়ে যাচ্ছে। সে যেন মাটিতে নয়, জোনের মায়ের গাভীন ছাগলটাকেই কোপাচ্ছে। কেন যেন ছেলেটির এই কুপানো দেখে ওর পুরো শরীর শিরশিরিয়ে উঠল। জোনের মায়ের হাত দুটো গিয়ে ধরল সে, “ এই সব ছেলেদের সঙ্গে তুই লাগালাগি করবি না।” জোনের মায়ের স্বর দ্বিগুণ বেড়ে গেল , “ কেন, লাগালাগি করব না কেন? কী করবে আমাকে? দায়ের কোপ বসাবে? দেখি, আসুক দেখি ক'টা ঘা মারে!” ওর গলা শুকিয়ে গেছে। দা'টা নিয়ে যদি সে এখনই এদিকে তেড়ে আসে? কী হবে? মালতীর ভয়ে ঠাণ্ডা হবার জোগাড় হলো। কোনও রকমে মাথা তুলে বটগাছটার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল দা'টা হাতে নিয়েই একটা অদ্ভুত গর্জন করে ছেলেটি কোথাও চলে গেল।
“ ওর হম্বিতম্বি দেখিস নি? কেন ওদের সঙ্গে গায়ে পড়ে মরতে যাস?” সে ওই এক কথাতেই লেগে রইল।
“ আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে মণির মা। ছাগলটাকে রত্নার ময়ের থেকে আধি নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হাতে দুটো পয়সা আসবে। জোনের বাবার শ্বাস কষ্টটা বেড়ে গেছে, টাউনের একজন ডাক্তারকে দেখাব।” জোনের মা বসে পড়েছে। মালতীও জোনের মায়ের মুখে দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বসে পড়ল। রত্নার মা হাতে এক বোঝা শলা আর ছুরি একটা নিয়ে ওদের দুজনের কাছে এসে বসল। মাটিতে শলার বোঝা রেখে ছুরিতে একটা একটা করে শলা নিয়ে চাঁচতে শুরু করল। রত্নার মায়ের হাত দুখানা অশ্বত্থ পাতার মতো ফেটে ফেটে পচে গেছে। মালতী সেই হাতগুলোর দিকেই তাকিয়ে রইল। আঙুলের গাঁটগুলো বড় হয়ে যাওয়াতে হাত দুটো বাঁকা বাঁকা দেখাচ্ছিল। ঐ বাঁকা আঙুলেই এতো মিহি করে শলা চেঁছে বের করছে মেয়ে মানুষটি। সে নিজের হাতের মুড়াটার দিকে তাকালো। কেমন যেন কর্কশ দেখাচ্ছে। সে বলেই ফেলল, “ আপনার হাতের শলাগুলো এতো মিহি হচ্ছে, আমারগুলো দেখুনতো।” রত্নার মা মালতী মুড়াটা হাতে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ঠিক ঠাক করে ফেলল। জোনের মা নুন দেয়া লাল চা আর কিছু মুড়ি উঠোনের মধ্যেই নিয়ে এলো।
“ খা, রত্নার মা।” রত্নার মা বেশ আমোদে চায়ের কাপে চুমুক দিল। অনেকক্ষণ পর ওকে বলতে শোনা গেল, “ অনেক দিন পর চা খেলাম।” স্বরটা বড় ছোট। এমন মনে হচ্ছিল যেন সে ঐ কথাগুলো বলতে যেতেই কেউ ওর গলা চেপে চেপে ধরছিল। মালতীও বেশ আগ্রহে চায়ের কাপে মুখ দিল। কালীবুড়ি না দিলে সেও যে এককাপ চা খেতে পায় না। চাল ডালের সঙ্গে চা, চিনির ব্যয়টা সে কোন সাহসেই বা বাড়িয়ে নেয়? জোনের মাও শাড়ির আঁচলে চায়ের গ্লাসটা ঠোঁটে ছুঁইয়েছে। “ চিনি দেয়া চা এক কাপ বহুদিন খায় নি, চিনি কিনবার পয়সা থাকেই বা কৈ?” হরতকি গাছের ছায়াতে বসে তিনজনেই অল্প অল্প করে চা মুড়ি খেতে রইল । কাশির শব্দ শুনে মালতী ঘুরে তাকালো। জোনের বাবা এসেছে। মানুষটাকে সে আজ এই প্রথমবারের জন্যে কাছের থেকে দেখল। মাথাতে চুল প্রায় নেইই। গাল দুটো ঢুকে পড়েছে। মেরুদণ্ড পিঠের কাছে বাঁকা হয়ে পড়েছে। বড় ক্লান্ত লাগছিল মানুষটাকে। জোনের মায়ের চায়ের গ্লাসে আরো খানিকটা চা বাকি ছিল। সে ঘোপ করে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রায় দৌড়ে গিয়ে বরের হাত থেকে বাজারের থলেটা আর কাঁধের পোটলাটি নিয়ে নিলো। যে ক'টা পোটলার ভারে মানুষটি বাঁকা হয়ে পড়েছিল, লম্বাটে মহিলাটির হাতে সেই একই ভার ছোট আর হালকা হয়ে পড়ল। জোনের বাবা ওদের দু'জনকে কিছু একটা বলতে চাইছিল, পারেনি। শ্বাস বন্ধ হবার জোগাড় হলো। মানুষটি উঠোনে বসে পড়ল। উঠোনে এক ঘরঘরে শব্দ যেন গড়িয়ে পড়ল। চায়ের গ্লাস একটা সামনে এগিয়ে দিয়ে জোনের মা বুক চাপড়া কাঁদতে শুরু করল , “ মণির মা, ছাগলটা আমি বেচে...।” ওর কথা বেরুচ্ছিল না। ওর কান্না আর কুঁজো মানুষটির বুকের ঘরঘরে শব্দ যেন কোনও এক জায়গাতে এসে মিশে গেল। মাথাটা তুলে জোনের বাবা দাঁত কটমট করে ক্রন্দনরতা জোনের মাকে গাল পাড়তে চাইছিল, পারে নি। গালির বদলে বেরিয়ে এলো আরেকটা ঘরঘরে শব্দ। রত্নার মা যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালো। মালতী একটু দাঁড়াল, জোনের মায়ের ফিসফিসিয়ে কান্নার সঙ্গে পিঠটা ওঠা নামা করছিল। সেই পিঠে হাত রেখে ওর কিছু একটা বলবার ইচ্ছে হচ্ছিল। হঠাৎই জোনের বাবার চোখে চোখ পড়ল। পারলে যেন এই জোড়া চোখেই মানুষটি কালো মেয়েমানুষটিকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে। ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল কালো জামের মতো দুটো চকমকে পুষ্ট স্তন। কালো মাংসের মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে থ্যাঁতলানো জামের মতো লালচিটে ঘা। ওর শরীর শিউরে উঠল। মোড়াটা হাতে নিয়ে সে জোরে হাঁটা দিল।
কালীবুড়ি একটা পিড়িতে বসে ধানগুলোর থেকে পাখি তাড়াচ্ছিল। জট ছাড়া এই মানুষটিকেই কত শান্ত লাগে। যখন জট গজায়, কপালে অঙ্গারের মতো ফোটা পরা থাকে, মুখে রক্তের দাগ নিয়ে এই একই মহিলা যেন কেমন ভয়ানক হয়ে পড়ে। বুড়ি পাই পাই করে পয়সা গোটাচ্ছে। আগামী মাসে কালী পূজা করবে। মাথাতে যেদিন থেকে জটা গজিয়েছে সেদিন থেকেই বুঝি বুড়ি প্রতি বছর কালী পূজা করে আসছে। কত না কষ্ট করে বুড়ি পয়সা জোগাড় করছে। আলুর খোসাটাও ফেলে দেয় না বুড়ি। আলুটা যদি ভাতে সেদ্ধ দেয়, বাকলগুলো মিহি করে কেটে পেঁয়াজ লংকা দিয়ে ভাজে। হাতে সুই সুতো থাকেই। কাঁথা সেলাই করেও পয়সা জোগাড় করে বুড়ি। একটা ডাঁটা খুলে পড়া চশমা পরেই বুড়ি দিনে রাতে মাথা নুইয়ে নুইয়ে মানুষের দেয়া ছেঁড়া কাপড় জুড়ে জুড়ে কাঁথা সেলাই করে। আজও বুড়ি ধানের ধারাগুলোর কাছে আরেকটা ধারাতে কাঁথার কাপড়গুলো মেলে ধরেছে। সে গিয়ে বুড়ির কাছে দাঁড়ালো। কাঁথা সিলাই করবার সময় বুড়ি ঐ ডাঁটা ছাড়ানো চশমাটা পরে। বাজারবার বাজারবারে বড় বটগাছের নিচে চশমা নিয়ে বসে এক দোকানী। ওর থেকে বুড়ি এটা কিনে এনেছিল। বুড়ির সেলাই করার ধরণ দেখলেই বোঝা যায় চশমাটা পরা আর না পরা একই কথা। একেকবার বুড়ি এতোটাই ঝুঁকে পড়ে যে কাঁথার সঙ্গে প্রায় লাগো লাগো হয়। সূচে সুতা ভরাবার বেলা সূচটা একবার নাকের কাছে নিয়ে আসে আরেকবার দূরে নিয়ে যায়। সূচে সুতা ভরানো হয়ে গেলে পরে কাঁথা সহজেই সিলাই করে নিতে পারে। আগে বুড়ি বাঁহাতের আঙুলগুলো বুলিয়ে নেয়, তারপরে ডানহাত চালায়। সে ভালো করে তাকিয়ে দেখল, এক সারি সেলাই শেষ হলেই পরে বুড়ি পুরো কাপড়েই উপুড় হয়ে পড়ে। বুড়ির জমানো টাকা আছে। সে জানে বুড়ি কালীপূজার জন্যেই পাই পাই করে টাকা জমাচ্ছে। পূজা করবার জন্যেই বুঝি চশমার ডাঁটাও পাল্টাবে না? সে জিজ্ঞেসই করে ফেলল, “ এই বাজারবারে একজোড়া চশমা নিয়ে আসব কি?” বুড়ি ওর দিকে চোখ বাঁকা করে তাকালো , “ ধানগুলো গুটিয়ে ফেল, মুড়ির চাল বের করতে হবে।” সে বুঝতে পেল প্রশ্নটা বুড়ির ভালো লাগে নি। সে ধান গুছানো সারতেই মণি এসে পড়ল। তার সঙ্গেই ভাত দুটো খেয়ে সে রত্নার মায়ের কাছে যাবার জন্যে বেরুলো। এখনো সে মুড়ার উপরের দিকে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বোনা শেখে নি।
রত্নার মায়ের বাড়ির মুখে দাঁড়িয়ে ওর বড় অস্বস্তি হলো। কী বলে বা সে ঢুকে গিয়ে? মানুষটি আছে বা নেই ? রত্নার মায়েরাও এই বস্তিতে প্রথম আসা পরিবারগুলোর একটি। ভাঙুয়া বুড়োর থেকেই আধ কাঠা মাটি নিয়ে ঘরটা তুলেছিল। ভাঙুয়াকে টাকা দেয় নি , রত্নার মায়ের একটা আঙটি দিয়েছিল। আঙটিটা পেয়ে ভাঙুয়া বেশ খুশি হয়েছিল। সে আস্তে করেডাক দিল, “রত্নার মা!” একটি মেয়ে বেরিয়ে এলো। মেয়েটি মোটাসোটা, গায়ের রঙ অনেকটাই ফর্সা। সে লালের মধ্যে সাদা ফুল আঁকা চুড়িদার কামিজ পরে আছে, ঠোঁটেও লাল রঙ। সে এসে বললে , মা নেই । দোকানে গেছে, এখনই আসবে। মেয়েটি বসবার জন্যে একটা ভাঙা মোড়া দিয়ে গেল।লাল চুড়িদার কামিজ পরা এই মেয়েটিকে ঢিগে দিয়ে রাখা এই ঘরে কেমন বেমানান দেখাচ্ছে। রত্নার মা এসে ঢুকল, হাতে পলিথিনের পেকেটে কিসের পোটলা একটা।
“মণির মা, আজ বড় মেয়েটি আসবে। সে ভালো খাওয়া দাওয়া করে। বাড়ি এসে কষ্ট পাবে। তাই এই আলু ক'টা নিয়ে এলাম। রত্না, আলুগুলো রাখ নিয়ে!” রত্নার মা রোদে পুড়ে লাল হয়ে ফিরেছে, ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। মালতী ভেতরের দিকে তাকালো। মেয়েটি কি জল একগ্লাস নিয়ে আসবে, মায়ের হাত থেকে পোটলাটা কি নিয়ে যাবে? না, আসে নি। রত্নার মা ভেতরে গিয়ে কাপড় পালটে এলো। পাল্টানো কাপড়টা বাড়ন্ত। বেশ ক'জায়গাতে ফাটা। ঠিক বুকের কাছে এক টুকরো ভালো রকমই ছিঁড়ে গেছে। ছেঁড়া কাপড়, পাতলা ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে কোঁচকানো একটা স্তন বেরিয়ে পড়েছে। ছেঁড়া জায়গাটা লুকোবার চেষ্টা করে রত্নার মা খানিক হেসে ফেলল। , “ কী করব মণির মা, বড় মেয়ের দেয়া শাড়িটাই পরছি। আমার রোজগারেতো শুধু ওই ভাত-দুমুঠোই জোগাড় হয়। ইতিমধ্যে সে মোড়ার উপরটা বুনে ফেলল। মালতী মন দিয়ে দেখে নিয়েছে, আর ভুল হবে না। বসবার জায়গাটাতে লাল হলুদ প্লাস্টিকের রশিতে বরফির মতো তোলা ডিজাইন দেখে সে তাকিয়ে রইল, “ রত্নার মা, কী সুন্দর হয়েছে!” রত্নার মা হাসছে। বাড়ির মুখে একটা রিক্সা এসে দাঁড়িয়েছে। কাঁধে কালো এয়ারবেগ নিয়ে একটি রোগা শুকনো মেয়ে নেমে এলো। মেয়েটির পরনের কাপড় বেশ ভালোই। রোগা শরীরে পোশাক দেখে মনে হচ্ছে যেন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েটিকে দেখে গামছা পরা একটি মানুষ বাড়ির পেছন থেকে বেরিয়ে এলো। আধো পাকা, আধো কাঁচা দাড়িতে শুকনো মুখ তার । মানুষটি বাড়ির মুখ অব্দি এগিয়ে গেল। মেয়েটিকে রিক্সার থেকে নামতে দেখে ভেতর থেকে ফর্সা মেয়েটি দৌড়ে এসে হাত থেকে ছোঁ মেরে বেগটা নিয়ে চলে এলো। পুরুষ মানুষটি ওর মাথাতে হাত রেখেছে ,
আমার ঔষধ এনেছিস? এরা তো আমি যদি পেটের অসুখে মরে পড়েও থাকি, খবরটাই করে না।” “ এনেছি “, বলে মেয়েটি হাসিতে ক্লান্তি ঝরিয়ে দিল। রত্নার মা হাঁটুতে মাথা গুঁজে দিয়েছে। মেয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসে মালতীর দিকে তাকিয়ে হাসল। মেয়েটির শুকনো মুখের হাসিটা কেন জানি মালতীর বড় ভালো লেগে গেল।
“
“ বস্তিতে নতুন এসেছেন?” ওর কথাতে শহুরে সুর।
“ এই অল্প দিন হয়েছে। তোমার নাম কী? গুয়াহাটিতে থাকো?
“ আমার মায়েদের দেয়া নাম অম্বিকা, দিদিরা গুয়াহাটিতে কুকু বলে ডাকে।”
“ মা তোমার শরীর ভালো? এতো শুকিয়েছো না।”
রত্নার মা মেয়ের হাত পায়ের জল লেগে হওয়া ঘাগুলো হাতে ছুঁয়ে দেখছিল , “ সেখানে বুঝি বাড়ির ভেতরে জল, জল কাদা ঘাটতে হয় না। তবে এতো জলে খেল কী করে?”
রত্না এসে দিদির কাছে দাঁড়ালো, “ আমার নতুন কাপড় কই? প্রত্যেকবার ঐ পুরোনো কাপড় আনতে হয় বুঝি?”
বাবা এসে ওর থেকে টাকা দশটা চাইল।
রত্নার মা খিটখিটিয়ে উঠল , “মেয়েটি এসেছে মাত্র, সব্বার এখন এটা লাগে , ওটা লাগে।”
বাবা একবার গেটের বাইরে গিয়ে আবার ফিরে এসে কাঁঠালতলাতে বসে পড়ল। মানুষটি মাথায় কপালে হাত দিয়ে বসেছে। , “ আমার যদি জোয়ান ছেলে একটা থাকত তবে আমি পায়ের উপর পা তুলে মাছে ভাতে খেতাম। পোড়া কপাল। পেটের ব্যথার একটা ওষুধও জোটে না।”
পচতে শুরু করেছে ঘরের একটা খুঁটি। তাতে ধরে দাঁড়িয়ে ফর্সা মেয়েটি বলল , “ রোজগেরে দাদা একটা থাকলে কি আর আমাকে লোকের ফেলে দেয়া কাপড় পরে থাকতে হতো?”
গুয়াহাটির থেকে এসে ক্লান্ত মেয়েটি নীরবে ঢিগে দিয়ে রাখা ঘরটিতে ঢুকে গেল। রত্নার মা মালতীর দিকে তাকালো, “ একটি ছেলে জন্ম দিতে পারিনি। অম্বিকা আর রত্নার মাঝের দুটো নষ্ট হলো, রত্নার পরে আরো দুটো। শেষেরটা ছেলে ছিল মণির মা। ছ'মাসে খসে গেছিল। আমি নিজেই গিয়ে ছেলেটিকে পোঁতে এসেছিলাম মণির মা। সেই সন্তান খসানোর রোগেই আমাকে শেষ করল।”
“ মা ঘরে চিনি চা পাতা নেই?” ভেতর থেকে বোধহয় অম্বিকা জিজ্ঞেস করছে।
রত্না রশিতে মেলে দেয়া কাপড় গোটাতে এসে মুখ ঝাঁকিয়ে বলল, “ চা পাতা , চিনি! এই বাড়িতে থাকবে?”
মালতী বাসাতে ফেরার জন্যে উঠে দাঁড়ালো। হাতে মোড়টা নিয়ে সে শেষবারের জন্যে ডিজাইনটা দেখে নিলো। অম্বিকা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো, সে এবারে একটা ফ্রক পরেছে। বয়সের ছাপ পড়েছে ওর মুখে, তার উপর রোগা পাতলা শরীরে এই ফ্রক পরা মেয়েটিকে অদ্ভুত লাগছিল দেখতে। মেয়েটির শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কেমন যেন বোধ হলো। সে শুধু বলল, “ আসবে কিন্তু অম্বিকা, আমি কালীবুড়ির বাড়িতে ভাড়া থাকি।”
একবার কি জোনের মায়ের ওখানে যাবে? ছাগল হারিয়ে মানুষটি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। না কি বুলেনের বাসাতে যাবে? বুলেন ফেরে নি। সে টাউনের রাস্তাতে পাথর ঢালার কাজে লেগেছে। আসতে আসতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। পাগলির উপদ্রব আজকাল কমেছে। সে প্রায়ই কাঠ-লিচুর গাছের নিচে বসে থাকে , নইলে বিছানাতে পড়ে শুয়ে থাকে। সে বাসাতে ফেরাই ঠিক করল।
বহুদিন পর ওর সেই ভুলটা আবার হলো।সে যাচ্ছিল, নারকেল সুপুরি গাছের মাঝের রাস্তাটি দিয়ে। গিয়ে গিয়ে সে বাড়ির মুখের দরজাটিতে হাত দেবে। লাল গোলাপের গাছ, মাছে ভরা পুকুর, কামরাঙা গাছের চারা, বেড়ার জন্যে বাঁশ চিরতে ব্যস্ত একটি মানুষ উঠে আসবে। ওর চোখে চোখ রাখবে। কিছু কি জিজ্ঞেস করবে মানুষটি? মানুষটি চোখ দিয়ে একবার তাকালেই কত কথা বলে বলে যায়। মালতী ভেতরের দিকে এগুবে, মানুষটি কি যাবে ওর পেছন পেছন? ডাক দেবে কি একটি বার?
“মণির মা, মোড়া নিয়ে বাজারে যাবি বুঝি?” জোনের মা সাদা মিহি দাঁত দুপাটি বের করে হাসছে।
“ রত্নার মায়ের থেকে মোড়ার বুনন শিখে এলাম একটু। তুই কই যাচ্ছিলি?”
“ এই যাবার জন্যে বেরিয়েছি, চিনি নিয়ে আসি, জোনের বাবা চিনি দিয়ে চা এক কাপ খেতে চাইছিল। চা এক কাপ পেলে মানুষটি বড় আরাম পায়।”
“ চল, আমিও দোকানের থেকে আসিগে' । লবণ নেই।”
“এখন কি তুই মোড়া নিজে বুনতে পারিস?”
“ পারি। রত্নার মায়ের মতো এত তাড়াতাড়ি পারি না।”
“ রত্নার মা বেশ কাজের মানুষ। কিন্তু হবেটা কি, সুখ নেই মানুষটির।”
“ আজ বড় মেয়ে এসেছে।”
“ওই সংসারটা চালাচ্ছে।”
মিনতির বাড়ির সামনে এসে দুজনে দাঁড়ালো, ঘর দোয়ার বন্ধ। সে ভালো করে তাকালো। বাইরে কোথাও গেলে চারকোনা যে তালাটা রোজ লাগিয়ে যায়, আজ সেটি নেই। তার মানে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। সে বাড়ির ভেতরে গিয়ে মিনতিকে ডাক দেবে ভাবল। জোনের মা ওর হাতধরে টানল, “ ডাকিস নে।”
“কেন?” সে অবাক হলো। ছেলেটার অসুখের খবর নিত সে, জোনের মা এমন করল কেন? জোরে পা চালাচ্ছে, কেন?
“ দাঁড়া না, জোনের মা! এতো দৌড়োচ্ছিস কেন?”
পাকা রাস্তাতে উঠে রামুর দোকানের কাছে আসতেই সে দেখল সমস্ত দোকানগুলো ধুপধাপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রামুও তার দোকান বন্ধ করছে।
কী হলো রামুদাদা ?” সে জিজ্ঞেস করল। ওর শরীর শিরশিরিয়ে উঠল। এভাবেই ধুপধাপ দোকান বন্ধ হয়। মানুষগুলো এখানে জটলা বাঁধে, ওখানে জটলা বাঁধে। তারপরেই সব ওলট পালট হয়ে যায়।
“ “প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে মেরেছে ।"
“নিজের রক্ষীই গুলি করেছে।”
“ ভদ্রমহিলা পাখির মতো ছটফট করছিল।”
“ বেশ ক'টা গুলি লেগেছে।”
বাজারের দোকান একটাতে টানিয়ে রাখা একটা বড় ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল। ছোট চুল, হাসি মুখে এক সুন্দরী রমণী। কেই বা মারল, কীইবা করেছিল? কেই বা শত্রু ছিল? ছেলেমেয়েরাই বা কী করছে? স্বামী আছে বা নেই! মা বাবা?
জোনের মা বিশেষ কথাবার্তা বলেনি। অমন হাসিমুখে মিশুকে মহিলাটি অমন চুপ করে থাকলে ওর বাজে লাগে। ওরা ফিরে আবার মিনতির বাড়ির সামনে এসে গেছে। দরজা এখনো খুলে নি। সে জোনের মায়ের মুখের দিকে তাকালো। বারির সামনে দিয়ে ওরা যাচ্ছে, কিন্তু অসুখে ছেলেটার খবর একটা নেয়া হলো না।
“ জোনের মা!” মালতী মিনিতির বাড়ির সামনে দাঁড়ালো।
“চল, এখন ওর বাড়িতে ঢুকতে হবে না। নীরবে সে জোনের মায়ের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে থাকল। নিজের বাসাতে ঢোকার রাস্তার কাছটাতে এসে চুপটি করে জোনের মায়ের মুখের দিকে তাকালো। মানুষটি ছাগলের শোক ভুলতে পারে নি।
“মিনতি আজ ঘরে মরদ তুলেছে।” কথাটা বলেই জোনের মা নিজের পথ ধরল।
সে এসে ঘরের তালা খুলল। খেলাধুলা সেরে নদীতে স্নান করে এসেছে মণি। ওকে সামান্য খাবার কিছু দিয়ে ও দরজার সামনে বসে রইল। মুড়ি ভাজবার ছিল, মোড়া একটাও বুনতে হবে। কালকে বাজারে যাবে। ওর কিছুই করবার ইচ্ছে হলো না। কানে গুমগুম করছে একটি হাবাগোবা মানুষের অস্পষ্ট বিড়বিড়ানি “ মাথা নেই, চোখ নেই।” মাথা নেই, চোখ নেই—অমন একদল মানুষ একটি সুন্দরী মেয়ে মানুষকে গুলি করে মারছে, পাখির মতো ছটফট করছে মহিলাটি। লোকগুলো মিনতিকে চেপে ধরেছে। বন্ধ ঘরে মিনতি চিৎকার দিয়ে যাচ্ছে। লোকটি বিড়বিড়িয়ে যাচ্ছে --মাথা নেই চোখ নেই।
ওর চোখজোড়া ভার হয়ে এসেছে।
“মা, কী করছ?” মণি ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
“না, কিছু না। যা তো দিদাকে ডাক দে, মুড়ি ভাজতে হবে।”
মণি চলে যেতেই ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে নামল।
টীকাঃ
১) সুহাগমণিঃ মূল অসমিয়া নাম সুৱাগমণি। তাই রাখলাম কেবল বাংলা উচ্চারণ অনুযায়ী লিখে দিলাম। নামটির বাংলা হতে অসুবিধে নেই। সুহাগমণি একধরণের শাইল ধান।
No comments:
Post a Comment