ফেলানি
গত রাতে খুব বড় তুফান হয়ে গেছে। রিজার্ভে শোঁ শোঁ শব্দ করছিল। মানুষজন ভাবছিল আজ নিশ্চয় একটা গাছও আর সোজা দাঁড়িয়ে থাকবে না। বসতির সবগুলো ঘরই কোনোক্রমে ঢিগা দিয়ে সামলে সুমলে রাখা। সবাই নিশ্চিত ছিল আজ একটা ঘরও আর থাকবে না। সবাই ঘুমিয়ে গেছিল। সকালে উঠে সবাই দেখে রিজার্ভের ডাল-পালা অনেক ভাঙলেও গাছ একটাও পড়ে নি, মানুষেরও ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ হয় নি। আসলে তুফানটা গাছগুলোর উপর দিয়ে পার করে চলে গেলো বলে ঝুপড়িগুলো বেঁচে গেল। চিনিতে যেমন পিঁপড়ে লাইন দেয়, তেমনি বসতির মানুষ গিয়ে রিজার্ভের ভেঙ্গে পড়া ডাল পালা নিয়ে আসতে লাইন দিল।
লাকড়ি জোগাড়ে লেগে থাকতেই খবরটা জানাজানি হয়ে গেলো। পরশুর থেকে তিনশ ঘণ্টা বন্ধ। সবাই চুপ করে গেল। এতো এতো দিন! কী করে কী করবে মানুষগুলো? এমনিতেও কয়েকটা বাজার বার মারা গেছে। আজ বুঝি ধর্মঘট, কাল শোভাযাত্রা, পরশু মিটিং। আলাদা রাজ্য চেয়ে এলাকার একাংশ মানুষ জঙ্গি হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলল সরকার এতো বড় বন্ধ হতে দেবে না। দিল্লির সরকারও এদের আলোচনার জন্যে ডেকেছে। কথা হলো? এতো বড় বন্ধ একটা হবে! মানুষজনকে মরবার জন্যে ছেড়ে দেবার মতো হবে!
সে সাত সকালে ভাত রাঁধতে গিয়ে দেখল চালে আর দিন দুই যাবে। মুড়ি ভাজার জন্যেও চাল নেই। হাতে টাকা বলতে চারখানা দশ টাকার নোট আছে। বড় কষ্টে জমা করেছিল। এই সামান্য নিয়ে সে তিনশ ঘণ্টা চালাবে কী করে! ভাতগুলো নামিয়েই সে বুলেনের ওখানে দৌড় দিল। কথাটার সত্যি মিথ্যা জানতে হবে।
বুলেন একটা দা হাতে নিয়ে বসে আছে। লাকড়ি টাকড়ি কেটেছিল মনে হয়। ছেলেটা বা কোনদিকে গেল। সুমলা ব্লাউজ আর পেটিকোট একটা পরে বসে আছে। কাছে পড়ে আছে একটা ময়লা দখনা।ভারি কাপড়টা সে গায়ে রাখতে চায় না। ব্লাউজের নিচের দিকটা খোলা। সুমলা এমন করে থাকলে ওর শরীরের দিকে তাকানো যায় না, মালতী সব সময় নজর নামিয়ে আনে। আজ সে কিছু বোধ করল না। আধা-খোলা ব্লাউজটা, পেটিকোটটা ওর শরীরে বাজে কিছু লাগছে না। আসলে খোলা ব্লাউজে বাজে লাগবার মতো অবশিষ্ট কিছু আর সুমলার শরীরে নেই। বুলেন যখন থেকে আন্দোলনের কাছে ঘোরা ফেরা করতে শুরু করেছে সেই থেকে ওকে দেখবার মতো মানুষ আর নেই। সুমলা মাথাটা থেকে থেকে চুলকোচ্ছে। মালতীর নজরে পড়ল চুলে উকুনের ডিম সাদা সাদা দেখা যাচ্ছে। ওর গাতেও অনেক ময়লা জমেছে।
“সুমলার চেহারা অনেক বাজে দেখাচ্ছে।” ওর মুখ থেকে ঘোপ করে কথাটা বেরিয়ে পড়ল।
“কে ওর এই অবস্থা করল? আমি?” বুলেনের এই নতুন স্বভাব একটা হয়েছে। কথা বলতে বলতে মাটিতে দা দিয়ে কুপিয়ে থাকে। “ওর নিজের জ্ঞাতি ভাইরা করেছে, বুঝেছো ওর জাতের লোকে করেছে।”
মানুষটা কেমন করে যে মাটিতে দা দিয়ে কোপাচ্ছে। মাটিতো নয়, একটা মানুষকে কোপাচ্ছে। মানুষটার নরম শরীরে দা-টা বসে বসে যাচ্ছে, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, রক্তের ছিটায় মানুষটা লাল হয়ে পড়েছে। মালতী বুলেনের দিকে চোখ তুলে তাকালো, তার চোখজোড়া রক্তের মতো লাল।
“ এসব কী করছিস তোরা? শুনলাম তোরা তিনশ ঘণ্টা বন্ধ দিবি?”
“ দেব, বন্ধ হবেই। আর কী কী হয় দেখতে থাক।”
মালতীর লাল চোখে মাটিতে কোপাতে ব্যস্ত মানুষটার রাগ উঠেছে।
“কী হবে এসব করে?”
“নিজেদের রাজ্য হবে।”
“কী সোনার নাড়ু পাবি নিজের রাজ্যে? আগের সেই দলটিকে দেখলি কি না? সোনার রাজ্য গড়তে গিয়ে কী করে গোটা রাজ্যকে শ্মশান করে ফেলল।”
“তুই ওদের দলেরই। যা তোর পেয়ারের লোকেদের সঙ্গে গিয়ে থাক।”
“আবার সবেতে আগুন দিবি, দে দুনিয়া জ্বালিয়ে শেষ কর।”
“দেবইতো, আগুন দেবো। দুনিয়া পুড়িয়ে শেষ করব, তবু নিজেদের রাজ আদায় করেই ছাড়ব। তোদের সরকার আমাদের লোকজনকে কী করে পুলিশ মিলিটারি লাগিয়ে মারছে দেখগে’, যা।”
“তোকে কে এই মন্ত্র দিল? ভাঙুয়ার ছেলে? সেই ছাগল চোরের পোলা তোর আপন হলো এখন?”
“ওকে ছাগল-চোর বলছিস কেন? সে এখন টাইগার, পার্টিতে টাইগারের অনেক দাম।”
“ কী করে ও তোদের রাজ্য নেবার পার্টিতে? ছাগল চুরি করে?” বুলেন চটে লাল। দা দিয়ে মাটিতে এতো জোরে কোপালো যে একবার ঢোকে আর বেরুচ্ছিল না।
“ সে এক মিনিটে হাজার হাজার মানুষ মারবার বোমা বানাতে পারে।” কথাটা বলে বুলেন থেমে গেল।
মালতী উঠে দাঁড়ালো, “ বন্ধ দে, আগুনে পুড়িয়ে ফেল গোটা গ্রাম শহর, সবাইকে পুড়িয়ে মার। তারপর নিজের রাজ্যে সুখে থাক।”
শিশু যেমন খিদে পেলে কোঁকাতে কোঁকাতে মায়ের কাছে আসে সুমলা তেমনি বরের কাছে এলো।
“ মেয়েটিকে দেখবি। খেরের মতো শুকিয়ে গেছে ও।”
“ অন্যের কথা ভাবতে হবে না। নিজের ভাবনা ভাব। কিছু যদি করবার ইচ্ছে আছে, গায়ের কাপড় খোলে নিজেদের কাপড় পরবি।” সে দা-টা এক কোপে মাটি থেকে বের করে আনল।
“ আমার নিজের পোশাক হলো যেখানা আমার শরীর ঢাকতে পারে। আমার আলাদা কাপড় লাগবে না, রাজ্যও চাই না। যা হোক একটা পরে, দু’মুঠো খেতে পারলেই হলো।”
“চুপ কর তুই!” বুলেন কাকে এতো কর্কশ গলাতে দাঁতে দাঁত চেপে গালি দিচ্ছে? মালতী না ভাত খেতে চাওয়া সুমলাকে? সে ধীরে ধীরে বুলেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ফিরে তাকিয়ে দেখল দাঁতে দাঁত চেপে চোখজোড়া লাল করে বুলেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
বুলেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে জোনের মায়ের বাড়িতে গেল। স্বামীর অসুখটা বেড়েছে। আজ সে ভালো থাকাটাই সংবাদ, না থাকাটা নয়। দু’হাত দিয়ে কী করে যে মহিলাটি সংসারটা চালাচ্ছে। ছেলে মেয়ে দু’টোও ছোট ছোট। ও আজকাল রাতের পরে রাত ঘুমোয় না বলতে গেলে। মুড়ি ভাজবার পরে ঠোঙা বানাবে, ঠোঙা বানানো হলে মোড়া বানাবে। আরেকটা কাজেও হাত দিয়েছে। চারালিতে পড়ে থাকা সমবায় অফিসে যে নতুন আর্মি ক্যাম্প বসেছে সেখানে কয়েকটা চা-এর দোকানও বসে গেছে। তারই একটিতে সে বাজারবার কয়েকটা বাদ দিয়ে বাকি ক’দিন গিয়ে মশলা বাটে। সমবায় অফিসটা মেরামত করে সামনে গাড়ি আসা যাওয়ার পথে চেক করবার জন্যে বাধা দেবার বোর্ড ইত্যাদি বসানো হয়েছে, পথে স্পীড ব্রেকার দেয়া হয়েছে, গাছ লাগিয়ে তাতে চুন দেয়া ইটে বাগান সাজিয়ে তোলা হয়েছে। একটা বড় সড় আর্মি ক্যাম্প চিরদিনের জন্যে এই চারালির শিমূল তলাতে বসে গেছে। আর সেই ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল ধোপার দোকান, সেলুন, তিনখানা পিসিও, চায়ের দোকান, পানের দোকান। তারই একটা চায়ের দোকানে জোনের মা সকাল বেলা গিয়ে মশলা বাটে। তবুও সে পেরে উঠে না। ওর উপার্জনের বেশিটাই খরচ হয় স্বামীর জন্যে ঔষধ আর ইঞ্জেকশন নিয়ে আসতে। কী করে সে তাকিয়ে থাকে সামান্য একটি বাতাসের জন্যে ব্যাকুল স্বামীর দিকে। ভাত ভাত করে কাঁদতে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর দিকে। তবুও ওর মুখ থেকে হাসি ফুরোয় না। কপালে বিকেলের রোদের মতো সিঁদুরের ফোটা,একই গৌরবে গরবিনী!
“মজবুত দেহ , বুজলি। খাটতে পারিস।”
“ বুঝলি, তোদের মতো আমি ভাতের মাড় খেয়ে বড় হই নি। ছাগলের দুধ খেয়েছিলাম।”
মা-মরা ওকে দিদিমা ছাগলের দুধ খাইয়ে বড় করেছেন –এই গল্প এরা বহুদিন শুনেছে।
“ আচ্ছা, হবে। বেমারি হলেও, বুড়ো হলেও মাথার উপরে মানুষটি আছে।”
“মাথা গুঁজবার চাল একখানা আছে, নিজের বলতে মরিচ গাছ লাগাবার মাটি একটুকরা আছে।”
“বাড়ি এলে মা বলে ডাকবার জন্যে এক জোড়া ছেলে মেয়ে আছে।” দুখের মধ্যেও হাসতে জানে এই মানুষটির সংগে দেখা করে যাবার জন্যে ওর মনে আকুলি বিকুলি করতে শুরু করল। ওকেই গিয়ে বলবে এসব কথা। ওর সংগে কথা বলেই ঠিক করবে, কী করে কী করবে।
উঠোনে জোনের মা বসে আছে। পরিচিত দৃশ্য। তেল গরম করে বরের পিঠে মাখছে, কাছে ছেলে মেয়ে দু’টি।
“আয় আয় মণির মা। বস। কোত্থেকে এলি?”
“ওই, গেছিলাম বুলেনের ওখানে।”
“ বুলেনতো রাজ্য দাবি পার্টির বড় লিডার হয়ে গেছে।”
“সেটিই জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম, শোনা কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা।”
“ সত্যি মণির মা। বন্ধগুলো হবেই। দেখছিস না বস্তি কেমন খালি হয়ে গেল। ঘরে ঘরে শুধু মেয়ে-লোকই পড়ে আছে।”
“ সবাই কি গুয়াহাটি চলে গেল?”
“কাছের বড় শহর বলে গুয়াহাটিতেই গেছে বেশিরভাগ। বাকিরা কাছাকাছি অন্য শহরে গেছে।”
“কলাই গাঁও আমাদের এখান থেকে ওই বারো-তেরো কিলোমিটার হবে। মঙ্গলদৈ মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার। সেসব জায়গাতেও গেছে নিশ্চয়।”
“ যেখানে পারে সরে গেছে। রিকশাওয়ালারা রিক্সা নিয়ে কাছের কলাইগাঁওতেই গেছে। রাজমিস্ত্রি যে ক’টা আছে, তারা গেছে গুয়াহাটি।”
“ লাতুর মা বলছিল, ওর ছেলেকে এসে ওর মামা নিয়ে যাবে।”
“লাতুর মা তোকে কই পেলো?”
“কালী বুড়ির মন্দিরে ছেলের জন্যে বাতি দিতে এসেছিল।”
“তোকে কি সে বলল? ও আমাকে সিনেমা দেখিয়েছিল, তিনশ টাকার কাপড় দিয়েছিল, সোনার আঙটি দিয়েছিল। সে বড় গাছের তলার জমিটা নেবে বলেছিল, পাকা ঘর তুলবে বলে বলেছিল। এই রাক্ষসী সব শেষ করল। তার মন ভেঙ্গে ফেলেছে।”
লাকড়ি জোগাড়ে লেগে থাকতেই খবরটা জানাজানি হয়ে গেলো। পরশুর থেকে তিনশ ঘণ্টা বন্ধ। সবাই চুপ করে গেল। এতো এতো দিন! কী করে কী করবে মানুষগুলো? এমনিতেও কয়েকটা বাজার বার মারা গেছে। আজ বুঝি ধর্মঘট, কাল শোভাযাত্রা, পরশু মিটিং। আলাদা রাজ্য চেয়ে এলাকার একাংশ মানুষ জঙ্গি হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলল সরকার এতো বড় বন্ধ হতে দেবে না। দিল্লির সরকারও এদের আলোচনার জন্যে ডেকেছে। কথা হলো? এতো বড় বন্ধ একটা হবে! মানুষজনকে মরবার জন্যে ছেড়ে দেবার মতো হবে!
সে সাত সকালে ভাত রাঁধতে গিয়ে দেখল চালে আর দিন দুই যাবে। মুড়ি ভাজার জন্যেও চাল নেই। হাতে টাকা বলতে চারখানা দশ টাকার নোট আছে। বড় কষ্টে জমা করেছিল। এই সামান্য নিয়ে সে তিনশ ঘণ্টা চালাবে কী করে! ভাতগুলো নামিয়েই সে বুলেনের ওখানে দৌড় দিল। কথাটার সত্যি মিথ্যা জানতে হবে।
বুলেন একটা দা হাতে নিয়ে বসে আছে। লাকড়ি টাকড়ি কেটেছিল মনে হয়। ছেলেটা বা কোনদিকে গেল। সুমলা ব্লাউজ আর পেটিকোট একটা পরে বসে আছে। কাছে পড়ে আছে একটা ময়লা দখনা।ভারি কাপড়টা সে গায়ে রাখতে চায় না। ব্লাউজের নিচের দিকটা খোলা। সুমলা এমন করে থাকলে ওর শরীরের দিকে তাকানো যায় না, মালতী সব সময় নজর নামিয়ে আনে। আজ সে কিছু বোধ করল না। আধা-খোলা ব্লাউজটা, পেটিকোটটা ওর শরীরে বাজে কিছু লাগছে না। আসলে খোলা ব্লাউজে বাজে লাগবার মতো অবশিষ্ট কিছু আর সুমলার শরীরে নেই। বুলেন যখন থেকে আন্দোলনের কাছে ঘোরা ফেরা করতে শুরু করেছে সেই থেকে ওকে দেখবার মতো মানুষ আর নেই। সুমলা মাথাটা থেকে থেকে চুলকোচ্ছে। মালতীর নজরে পড়ল চুলে উকুনের ডিম সাদা সাদা দেখা যাচ্ছে। ওর গাতেও অনেক ময়লা জমেছে।
“সুমলার চেহারা অনেক বাজে দেখাচ্ছে।” ওর মুখ থেকে ঘোপ করে কথাটা বেরিয়ে পড়ল।
“কে ওর এই অবস্থা করল? আমি?” বুলেনের এই নতুন স্বভাব একটা হয়েছে। কথা বলতে বলতে মাটিতে দা দিয়ে কুপিয়ে থাকে। “ওর নিজের জ্ঞাতি ভাইরা করেছে, বুঝেছো ওর জাতের লোকে করেছে।”
মানুষটা কেমন করে যে মাটিতে দা দিয়ে কোপাচ্ছে। মাটিতো নয়, একটা মানুষকে কোপাচ্ছে। মানুষটার নরম শরীরে দা-টা বসে বসে যাচ্ছে, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, রক্তের ছিটায় মানুষটা লাল হয়ে পড়েছে। মালতী বুলেনের দিকে চোখ তুলে তাকালো, তার চোখজোড়া রক্তের মতো লাল।
“ এসব কী করছিস তোরা? শুনলাম তোরা তিনশ ঘণ্টা বন্ধ দিবি?”
“ দেব, বন্ধ হবেই। আর কী কী হয় দেখতে থাক।”
মালতীর লাল চোখে মাটিতে কোপাতে ব্যস্ত মানুষটার রাগ উঠেছে।
“কী হবে এসব করে?”
“নিজেদের রাজ্য হবে।”
“কী সোনার নাড়ু পাবি নিজের রাজ্যে? আগের সেই দলটিকে দেখলি কি না? সোনার রাজ্য গড়তে গিয়ে কী করে গোটা রাজ্যকে শ্মশান করে ফেলল।”
“তুই ওদের দলেরই। যা তোর পেয়ারের লোকেদের সঙ্গে গিয়ে থাক।”
“আবার সবেতে আগুন দিবি, দে দুনিয়া জ্বালিয়ে শেষ কর।”
“দেবইতো, আগুন দেবো। দুনিয়া পুড়িয়ে শেষ করব, তবু নিজেদের রাজ আদায় করেই ছাড়ব। তোদের সরকার আমাদের লোকজনকে কী করে পুলিশ মিলিটারি লাগিয়ে মারছে দেখগে’, যা।”
“তোকে কে এই মন্ত্র দিল? ভাঙুয়ার ছেলে? সেই ছাগল চোরের পোলা তোর আপন হলো এখন?”
“ওকে ছাগল-চোর বলছিস কেন? সে এখন টাইগার, পার্টিতে টাইগারের অনেক দাম।”
“ কী করে ও তোদের রাজ্য নেবার পার্টিতে? ছাগল চুরি করে?” বুলেন চটে লাল। দা দিয়ে মাটিতে এতো জোরে কোপালো যে একবার ঢোকে আর বেরুচ্ছিল না।
“ সে এক মিনিটে হাজার হাজার মানুষ মারবার বোমা বানাতে পারে।” কথাটা বলে বুলেন থেমে গেল।
মালতী উঠে দাঁড়ালো, “ বন্ধ দে, আগুনে পুড়িয়ে ফেল গোটা গ্রাম শহর, সবাইকে পুড়িয়ে মার। তারপর নিজের রাজ্যে সুখে থাক।”
শিশু যেমন খিদে পেলে কোঁকাতে কোঁকাতে মায়ের কাছে আসে সুমলা তেমনি বরের কাছে এলো।
“ মেয়েটিকে দেখবি। খেরের মতো শুকিয়ে গেছে ও।”
“ অন্যের কথা ভাবতে হবে না। নিজের ভাবনা ভাব। কিছু যদি করবার ইচ্ছে আছে, গায়ের কাপড় খোলে নিজেদের কাপড় পরবি।” সে দা-টা এক কোপে মাটি থেকে বের করে আনল।
“ আমার নিজের পোশাক হলো যেখানা আমার শরীর ঢাকতে পারে। আমার আলাদা কাপড় লাগবে না, রাজ্যও চাই না। যা হোক একটা পরে, দু’মুঠো খেতে পারলেই হলো।”
“চুপ কর তুই!” বুলেন কাকে এতো কর্কশ গলাতে দাঁতে দাঁত চেপে গালি দিচ্ছে? মালতী না ভাত খেতে চাওয়া সুমলাকে? সে ধীরে ধীরে বুলেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ফিরে তাকিয়ে দেখল দাঁতে দাঁত চেপে চোখজোড়া লাল করে বুলেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
বুলেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে জোনের মায়ের বাড়িতে গেল। স্বামীর অসুখটা বেড়েছে। আজ সে ভালো থাকাটাই সংবাদ, না থাকাটা নয়। দু’হাত দিয়ে কী করে যে মহিলাটি সংসারটা চালাচ্ছে। ছেলে মেয়ে দু’টোও ছোট ছোট। ও আজকাল রাতের পরে রাত ঘুমোয় না বলতে গেলে। মুড়ি ভাজবার পরে ঠোঙা বানাবে, ঠোঙা বানানো হলে মোড়া বানাবে। আরেকটা কাজেও হাত দিয়েছে। চারালিতে পড়ে থাকা সমবায় অফিসে যে নতুন আর্মি ক্যাম্প বসেছে সেখানে কয়েকটা চা-এর দোকানও বসে গেছে। তারই একটিতে সে বাজারবার কয়েকটা বাদ দিয়ে বাকি ক’দিন গিয়ে মশলা বাটে। সমবায় অফিসটা মেরামত করে সামনে গাড়ি আসা যাওয়ার পথে চেক করবার জন্যে বাধা দেবার বোর্ড ইত্যাদি বসানো হয়েছে, পথে স্পীড ব্রেকার দেয়া হয়েছে, গাছ লাগিয়ে তাতে চুন দেয়া ইটে বাগান সাজিয়ে তোলা হয়েছে। একটা বড় সড় আর্মি ক্যাম্প চিরদিনের জন্যে এই চারালির শিমূল তলাতে বসে গেছে। আর সেই ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল ধোপার দোকান, সেলুন, তিনখানা পিসিও, চায়ের দোকান, পানের দোকান। তারই একটা চায়ের দোকানে জোনের মা সকাল বেলা গিয়ে মশলা বাটে। তবুও সে পেরে উঠে না। ওর উপার্জনের বেশিটাই খরচ হয় স্বামীর জন্যে ঔষধ আর ইঞ্জেকশন নিয়ে আসতে। কী করে সে তাকিয়ে থাকে সামান্য একটি বাতাসের জন্যে ব্যাকুল স্বামীর দিকে। ভাত ভাত করে কাঁদতে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর দিকে। তবুও ওর মুখ থেকে হাসি ফুরোয় না। কপালে বিকেলের রোদের মতো সিঁদুরের ফোটা,একই গৌরবে গরবিনী!
“মজবুত দেহ , বুজলি। খাটতে পারিস।”
“ বুঝলি, তোদের মতো আমি ভাতের মাড় খেয়ে বড় হই নি। ছাগলের দুধ খেয়েছিলাম।”
মা-মরা ওকে দিদিমা ছাগলের দুধ খাইয়ে বড় করেছেন –এই গল্প এরা বহুদিন শুনেছে।
“ আচ্ছা, হবে। বেমারি হলেও, বুড়ো হলেও মাথার উপরে মানুষটি আছে।”
“মাথা গুঁজবার চাল একখানা আছে, নিজের বলতে মরিচ গাছ লাগাবার মাটি একটুকরা আছে।”
“বাড়ি এলে মা বলে ডাকবার জন্যে এক জোড়া ছেলে মেয়ে আছে।” দুখের মধ্যেও হাসতে জানে এই মানুষটির সংগে দেখা করে যাবার জন্যে ওর মনে আকুলি বিকুলি করতে শুরু করল। ওকেই গিয়ে বলবে এসব কথা। ওর সংগে কথা বলেই ঠিক করবে, কী করে কী করবে।
উঠোনে জোনের মা বসে আছে। পরিচিত দৃশ্য। তেল গরম করে বরের পিঠে মাখছে, কাছে ছেলে মেয়ে দু’টি।
“আয় আয় মণির মা। বস। কোত্থেকে এলি?”
“ওই, গেছিলাম বুলেনের ওখানে।”
“ বুলেনতো রাজ্য দাবি পার্টির বড় লিডার হয়ে গেছে।”
“সেটিই জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম, শোনা কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা।”
“ সত্যি মণির মা। বন্ধগুলো হবেই। দেখছিস না বস্তি কেমন খালি হয়ে গেল। ঘরে ঘরে শুধু মেয়ে-লোকই পড়ে আছে।”
“ সবাই কি গুয়াহাটি চলে গেল?”
“কাছের বড় শহর বলে গুয়াহাটিতেই গেছে বেশিরভাগ। বাকিরা কাছাকাছি অন্য শহরে গেছে।”
“কলাই গাঁও আমাদের এখান থেকে ওই বারো-তেরো কিলোমিটার হবে। মঙ্গলদৈ মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার। সেসব জায়গাতেও গেছে নিশ্চয়।”
“ যেখানে পারে সরে গেছে। রিকশাওয়ালারা রিক্সা নিয়ে কাছের কলাইগাঁওতেই গেছে। রাজমিস্ত্রি যে ক’টা আছে, তারা গেছে গুয়াহাটি।”
“ লাতুর মা বলছিল, ওর ছেলেকে এসে ওর মামা নিয়ে যাবে।”
“লাতুর মা তোকে কই পেলো?”
“কালী বুড়ির মন্দিরে ছেলের জন্যে বাতি দিতে এসেছিল।”
“তোকে কি সে বলল? ও আমাকে সিনেমা দেখিয়েছিল, তিনশ টাকার কাপড় দিয়েছিল, সোনার আঙটি দিয়েছিল। সে বড় গাছের তলার জমিটা নেবে বলেছিল, পাকা ঘর তুলবে বলে বলেছিল। এই রাক্ষসী সব শেষ করল। তার মন ভেঙ্গে ফেলেছে।”
ঠিক লাতুর মায়ের মতো গলা করে চুল থেকে উকুন বাছার ভান করে যেভাবে কথাগুলো বলে গেলো মণির মায়ের হাসি উঠে গেলো। হাসতে হাসতেও ওর মন খারাপ হয়ে গেলো। লাতুর মা কি আর কম দুঃখে এসব বলে? ওর হাসি মরে গিয়ে মুখখানাতে আঁধার নেমে এলো।
“বলতো ও মণির মা, দেখতো, দুনিয়ার যত দুঃখ মেয়ে-লোকটিকে চেপে ধরেছে, দেখতোগো বেঁচে যে আছে!” ‘দেখতোগো’ শব্দটা এমন লম্বা নাকি সুরে টেনে জোনের মা লাতুর মায়ের মতো বলল যে মালতীর আবার হাসিতে দম বন্ধ হবার জোগাড় হলো।
সে জোনের মায়ের পিঠে হাত রাখল। বড় আলতো করে, বড় আদরে, “তুইও পারিস, জোনের মা।” মেয়েমানুষটির মুখের হাসি মরে নি, “চিন্তা করবি না, বুঝলি। মরবো না, বেঁচে থাকব। কিছু একটা করে বেঁচে থাকব।”
জোনের মা ওকে লবণ চা মুড়ি দিয়ে খাইয়ে কলসটা দেখালো। রেশনের চাল তুলে রেখেছে। টাকা দু’তিনটাও রেখেছে। আজ সে বাক্স খুলে রুমালে বেঁধে রাখা সবচে’ বড় সম্পত্তিটা বের করল, একটা সোনার আংটি।
“মায়ের সব গয়না বাবা সৎ-মাকে দিয়ে দিয়েছেন। আমার মা ভালো ঘরের মেয়ে ছিলেন। গয়নাগাটিও ভালো করে দিয়ে কনে বিদেয় করেছিল। সৎ-মা আমাকে কিছুই দিল না। মাত্র এটা দিল। হবে বুঝলি। কিছু একটা করে চালিয়ে দেবো। সব সময়তো আর এমন হয় না।”
“মিনতি কী করবে? ফুল? রত্নার মা? জগু? আর নবীন?” এক শ্বাসে সে নাম ক’টা বলে গেলো।
“সবাই কিছু না কিছু উপায় করবে, তুই কী করবি?”
“পাঞ্জাবি গ্যারেজে বন্ধের মধ্যেই ওদের ওখানে মেরামতি করবার জন্যে বাস দু’টো নিয়েছে। বাসের বডি বানাবে। অনেক কাজ বেরুবে, মণিকেও নিয়েছে। হবে যা, কোনোক্রমে মায়ে ছেলের চলে যাবে।”
“ তাই হোক, তোর ছেলের গায়ে আমার আয়ু লাগুক গিয়ে।”
বাইরে শ্বাস টেনে টেনে বুড়ো জোনের মাকে ডাকল। রোদের দিকে পিঠ দিয়ে বসা বুড়োর পিঠখানা একবার উঠছে একবার নামছে।
“যা গে’ মণির মা, আমিও যাই। বুড়োর জন্যে বড়ি এনে রাখি। বড় বেশি ধরেছে গো মানুষটাকে। দেখি, দাঁড়া, বন্ধ খুললে গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার একটা দেখাতে পারি কিনা। লাতুর মামার সঙ্গে কথা বলেছি।”
সে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তাতে পা দিল। ওর মন এখন অনেকটা শান্ত। জগুর বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে জগু ডাক দিল।
“মণির মা, যাও কই?
“ এই এলাম, জোনের মায়ের সঙ্গে দেখা করে।”
“শুনছ কি, তিনশ ঘণ্টার বন্ধ!”
“ সেই নিয়েতো কথা বলে এলাম।”
“ বস্তির আধা মানুষতো চলেই গেল।”
“তুইও যাবি?”
“যেতাম, কিন্তু এই অসুস্থ মেয়ে মানুষটিকে ফেলে যাই কই? ও যে মরেও না!”
“ ওভাবে বলবি না , জগু।”
“মাঝে মধ্যে বড় রাগ চড়ে, বুঝলে।”
“একবার গুয়াহাটি নিয়ে যাবি, বন্ধ-টন্ধগুলো খুলুক।”
“ পয়সা কিছু গুটিয়েছিলাম, এই বন্ধে সেগুলো ভেঙ্গেই খেতে হবে। সব সময় এমন হয়, ওকে ডাক্তার দেখাবো বলেই তো দু’টো টাকা জোগাড় করেছিলাম। এদিকে গোটাই, ওদিকে কিছু একটা হবেই। কখনো মনে হয় যে করেই হোক মরেই যাই, রেলের তলাতে মাথা পেতে দিতে ইচ্ছে করে।”
“কেন এসব কথা মুখে আনিস? তোর কিছু একটা হলে যে এই বেমারি বৌটি মা –মরা পাখির বাচ্চার মতো মরে যাবে।”
মাথা নিচু করে জগু চুপ করে রইল।
“চিন্তা করবি না বুঝলি। মরবো না, বেঁচে থাকব। কিছু একটা করে বেঁচে থাকব।” ঠিক জগুকে নয়, জোনের মায়ের কথাগুলোই সে নিজেকে বলবার জন্যেই উচ্চারণ করল। রাস্তার কাছের নরসিংহ গাছের থেকে নরম একটা ডাল ভেঙে নিয়ে নিলো সে। বেটে চাটনি করে দিলে মণি বেশ খুশি হয়। মণি এখন গ্যারেজ থেকে আসবেই। সে জোরে হাঁটা দিল, ঘরের সব কাজ পড়ে আছে যে!
“বলতো ও মণির মা, দেখতো, দুনিয়ার যত দুঃখ মেয়ে-লোকটিকে চেপে ধরেছে, দেখতোগো বেঁচে যে আছে!” ‘দেখতোগো’ শব্দটা এমন লম্বা নাকি সুরে টেনে জোনের মা লাতুর মায়ের মতো বলল যে মালতীর আবার হাসিতে দম বন্ধ হবার জোগাড় হলো।
সে জোনের মায়ের পিঠে হাত রাখল। বড় আলতো করে, বড় আদরে, “তুইও পারিস, জোনের মা।” মেয়েমানুষটির মুখের হাসি মরে নি, “চিন্তা করবি না, বুঝলি। মরবো না, বেঁচে থাকব। কিছু একটা করে বেঁচে থাকব।”
জোনের মা ওকে লবণ চা মুড়ি দিয়ে খাইয়ে কলসটা দেখালো। রেশনের চাল তুলে রেখেছে। টাকা দু’তিনটাও রেখেছে। আজ সে বাক্স খুলে রুমালে বেঁধে রাখা সবচে’ বড় সম্পত্তিটা বের করল, একটা সোনার আংটি।
“মায়ের সব গয়না বাবা সৎ-মাকে দিয়ে দিয়েছেন। আমার মা ভালো ঘরের মেয়ে ছিলেন। গয়নাগাটিও ভালো করে দিয়ে কনে বিদেয় করেছিল। সৎ-মা আমাকে কিছুই দিল না। মাত্র এটা দিল। হবে বুঝলি। কিছু একটা করে চালিয়ে দেবো। সব সময়তো আর এমন হয় না।”
“মিনতি কী করবে? ফুল? রত্নার মা? জগু? আর নবীন?” এক শ্বাসে সে নাম ক’টা বলে গেলো।
“সবাই কিছু না কিছু উপায় করবে, তুই কী করবি?”
“পাঞ্জাবি গ্যারেজে বন্ধের মধ্যেই ওদের ওখানে মেরামতি করবার জন্যে বাস দু’টো নিয়েছে। বাসের বডি বানাবে। অনেক কাজ বেরুবে, মণিকেও নিয়েছে। হবে যা, কোনোক্রমে মায়ে ছেলের চলে যাবে।”
“ তাই হোক, তোর ছেলের গায়ে আমার আয়ু লাগুক গিয়ে।”
বাইরে শ্বাস টেনে টেনে বুড়ো জোনের মাকে ডাকল। রোদের দিকে পিঠ দিয়ে বসা বুড়োর পিঠখানা একবার উঠছে একবার নামছে।
“যা গে’ মণির মা, আমিও যাই। বুড়োর জন্যে বড়ি এনে রাখি। বড় বেশি ধরেছে গো মানুষটাকে। দেখি, দাঁড়া, বন্ধ খুললে গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার একটা দেখাতে পারি কিনা। লাতুর মামার সঙ্গে কথা বলেছি।”
সে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তাতে পা দিল। ওর মন এখন অনেকটা শান্ত। জগুর বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে জগু ডাক দিল।
“মণির মা, যাও কই?
“ এই এলাম, জোনের মায়ের সঙ্গে দেখা করে।”
“শুনছ কি, তিনশ ঘণ্টার বন্ধ!”
“ সেই নিয়েতো কথা বলে এলাম।”
“ বস্তির আধা মানুষতো চলেই গেল।”
“তুইও যাবি?”
“যেতাম, কিন্তু এই অসুস্থ মেয়ে মানুষটিকে ফেলে যাই কই? ও যে মরেও না!”
“ ওভাবে বলবি না , জগু।”
“মাঝে মধ্যে বড় রাগ চড়ে, বুঝলে।”
“একবার গুয়াহাটি নিয়ে যাবি, বন্ধ-টন্ধগুলো খুলুক।”
“ পয়সা কিছু গুটিয়েছিলাম, এই বন্ধে সেগুলো ভেঙ্গেই খেতে হবে। সব সময় এমন হয়, ওকে ডাক্তার দেখাবো বলেই তো দু’টো টাকা জোগাড় করেছিলাম। এদিকে গোটাই, ওদিকে কিছু একটা হবেই। কখনো মনে হয় যে করেই হোক মরেই যাই, রেলের তলাতে মাথা পেতে দিতে ইচ্ছে করে।”
“কেন এসব কথা মুখে আনিস? তোর কিছু একটা হলে যে এই বেমারি বৌটি মা –মরা পাখির বাচ্চার মতো মরে যাবে।”
মাথা নিচু করে জগু চুপ করে রইল।
“চিন্তা করবি না বুঝলি। মরবো না, বেঁচে থাকব। কিছু একটা করে বেঁচে থাকব।” ঠিক জগুকে নয়, জোনের মায়ের কথাগুলোই সে নিজেকে বলবার জন্যেই উচ্চারণ করল। রাস্তার কাছের নরসিংহ গাছের থেকে নরম একটা ডাল ভেঙে নিয়ে নিলো সে। বেটে চাটনি করে দিলে মণি বেশ খুশি হয়। মণি এখন গ্যারেজ থেকে আসবেই। সে জোরে হাঁটা দিল, ঘরের সব কাজ পড়ে আছে যে!
No comments:
Post a Comment