আমার চেতনার রঙে রাঙানো এই খেলা ঘরে:

~0~0~! আপনাকে স্বাগতম !~0~0~

*******************************************************************************************************

Saturday, 10 May 2014

অধ্যায় বাইশ (২২)

ফেলানি
(মে, ২০১৬ সংখ্যা মাসিক সাময়িক ব্যতিক্রমে বেরুলো এই অধ্যায়)

  ণির মা ক'দিন ধরেই বুলেনের ওখানে একবার গিয়ে আসবার কথা ভাবছিল। হরি ভাঙুয়ার ছেলেটা আজকাল সবসময় ওর ওখানে বসে থাকে। সে জন্যেই বুলেনের ওখানে যেতে ওর ভালো লাগে না। বুলেনের সঙ্গে ওর কীইবা এতো কথা। গেল বাজারটা মার খেলো, মুড়ি যেমন ছিল টিনে তেমনি আছে। আজ বিশেষ কাজ নেই। অনেক পর আজ ও খানিক অবসর সময় পেয়েছে। মাথাটা আঁচড়ে খালি হাতখানাই মুখের উপর বুলিয়ে ও বেরিয়ে গেল। মণি হবে হয়তো আছে কোথাও। সে আজকাল সময় পেলেই মোড়ের সিং গ্যারেজে গিয়ে বসে থাকে। সে বুঝি কর্তার সিং ছেলেটার থেকে গাড়ি চালানো শিখছে। মাথাতে পাগড়ি পরা ছেলেটা বেশ ক’দিন মণির খোঁজে এসেছে। উঁচা লম্বা ছেলেটার হাসিটা ওর বড় ভালো লাগে। এতো অল্প বয়সে এতো বেশি দায়িত্ব সামাল দিতে পারছে, বাপের হাতের বিদ্যা সবটাই শিখেছে। মালতী দেখেনি মণিকে গাড়ি চালাতে, শুনেছে সে চালায় বলে। শুনলে ওর বড় ভয় করে। গাড়ি একটা চালানো কী চাট্টিখানি কথা? রাস্তা ভর্তি গরু-ছাগল, মানুষজন, রিক্সা-ঠেলা, গাড়ির লাইন। এতো সবের ভিড়ে একটু বেটা ছেলে হয়ে উঠেছে বলেই কি মণি গাড়ি চালাতে শুরু করবে? পাগড়ি পরা ছেলেটা বুঝি মণিকে গাড়ির কাজও শেখাচ্ছে।প্রায় রোজই বিকেলে সে জামাতে তেল মবিল লাগিয়ে ঘরে ফেরে। মালতী কিছু বলে না। শিখুক হাতের কাজ একটা , মণি ওর কীইবা আর বাজে কাজে হাত দেয়? সব্বাই বলে মণি হলো এক সোনার টুকরো ছেলে। ছেলের গম্ভীর মুখখানা মনে পড়াতে মালতীর মুখেও রং পালটে গেল, দেখে মনে হয়  এক পশলা বৃষ্টির পর সূর্যকে দেখায় যেমন ঠিক তেমনি। আগামীবার ও মেট্রিক দেবে। ওকে কলেজে পড়াতে হবে। যা করেই হোক পড়াবে, সে মোড়া বানাবে,মুড়ি ভাজবে, কাঁথা সেলাই করবে। আজকাল ও জানে না কোন কাজটাই বা। দরজাটা বন্ধ করে ও এমনিই মুখে হাতদুটো বুলিয়ে নিলো। কী যে ওর অভ্যেস এই একটা। হাতের খসখসে ছোঁয়া অনুভব করল গালে। যে লোকটা লাজুক হাসি হেসে ‘মনে হয় যেন টগর ফুল!’ বলে হাত দুখানা ঠোঁটের কাছে নিয়ে ধরে রাখতে ভালোবাসতো সে যদি আজ এই পচা অশ্বত্থ পাতার মতো হাত দু’খানা দেখত তবে কী ভাবত? কাজকম্ম মালতীর থাকত না বিশেষ, থাকলেও কাজ সেরে অবসর হাত দুখানা নিজের সেগুন পাতার মতো ছড়ানো হাত দুটোতে আলতো করে তুলে ধরত মানুষটা, দিত দু’খানা ঠোঁটের তপ্ত ছোঁয়া। ছোঁয়াটা যেন ওর শরীর দিয়ে গড়িয়ে গেল, পুরোটা শরীর নাড়িয়ে দিল। বন্ধ দরজাতেই সে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তরঙ্গের পর তরঙ্গ। দরজাতে হেলান দিয়ে সে কেঁপে উঠল।
  

    
  “কী করছ, মামী?” সাইকেল থেকে না নেমেই ও একটা চীৎকার দিয়ে গেল। নবীনের ডাক, ওর হাসি কিছুই চোখে পড়ে নি ফেলানির। পড়ল শুধু সাইকেলের প্যাডেল মারতে মারতে ওর হাঁটু আর গোড়ালির মাঝের পায়ের  পেছনের প্রকট পেশীগুলো। প্যাডেল মারতে মারতেই সেগুলো অদৃশ্যও হয়ে গেল। এবারে সে প্রায় দৌড়ে কালীবুড়ির উঠোনে কালীমূর্তির সামনে গিয়ে লম্বা হয়ে পড়ল। কালীবুড়ি লেপে রেখেছিল সে জায়গাটা, মালতীর চোখের জলে ভিজে গেল সে মাটি। ধীরে ধীরে ওর শরীরের তরঙ্গগুলো মুছে গেল। খানিকক্ষণ ও হাঁটু মোড়ে কালীমূর্তির দিকে তাকিয়ে রইল।
     কালীবুড়ি বেরিয়ে এসে প্রথমে ধরতে পারে নি যে এ মণির মা। বুড়ি দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আবছা একটা সাদা কিছু চোখে পড়ল বুড়ির। একটু পরে গলা শুনে ধরতে পারল যে এ মণির মা। বুড়ি কাছে চাপল। কাছে গিয়ে মণির মাকে অমন দণ্ডবতের ভঙ্গীতে দেখে একটু অবাকই হলো। কোনদিনই ওকে দেবীর সামনে প্রণাম করতে দেখেনি। বুড়ি গিয়ে মণির মাকে আশীর্বাদের ফুল এনে দিল। দেবার সময় হাতখানা কাঁপছিল। বুড়ির যেটুকু উপার্জন হয় তাতেই একজন মানুষের চলে যায়। কিন্তু ও পাই পয়সাটাও জমায়। বছরের কালীপুজোটা গেলবার বুড়ি করতে পারে নি। এবারে করবেই করবে। কত কষ্টে বুড়ি টাকা জমাচ্ছে মণির মা জানে। জীবনে যা কিছু রোজগার করল সবই কালিমার নামে দিয়ে দিল। ওর মাথাতে নির্মাল্য দিতে গেলে মণির মা বুড়ির হাতখানা কিছু সময় ধরে রইল। এই মহিলাকে কে বাঁচিয়ে রেখেছে? এই মাটির মূর্তি? বুড়ি কি কখনো সাইকেল চালানো জোয়ান ছেলের অণ্ডাশয় দেখেছিল? বুড়িরতো একটা মণিও ছিল না। সে খানিকক্ষণ ঘি রঙের কোঁচকানো ছাল একটাতে প্যাঁচিয়ে রাখা বুড়ির কতকগুলো হাড় পরম মমতাতে বুকের কাছে ধরে রইল। এই মুহূর্তে ওর মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে এই হাতখানা থেকে শক্তিশালী আর কিছুই নেই। ওর মনটা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এলো।
    

     
“মা তোর মঙ্গল করবেন।” কালীবুড়ি হাতটা ওর মাথার উপর রাখল। তারপর গিয়ে যে খাট থেকে নেমে এসেছিল, সেটিতে বসল গিয়ে। আজ বুড়ি চিঁড়ার নাড়ু বানিয়েছে। কিছু দিন থেকে সে কাঁথা সেলাই করতে পারছে না, আন্দাজে আন্দাজেও না। সেই থেকে বুড়ি চিঁড়া মুড়ির নাড়ুই বানাচ্ছে। জগুর বৌ আজকাল বেশি কাজ করতে পারে না। ওর বেমারটা বেড়েছে। জগু ওকে আঠারো বছর বয়সে বিয়ে করে এনেছিল। সেই তখন থেকেই নারকেলের কত কত নাড়ু সে বানিয়ে এলো, জগু লাল চায়ের সঙ্গে বাজারে দোকান দিয়ে এসেছে। এখন মানুষটা করেই বা কী? ওর বৌয়ের এখন নারকেল কুরোবার ক্ষমতা নেই। শরীরে দেয় না। কালীবুড়ি এই সুবিধেটা নিয়েছে। জগু নারকেল কিনে খোসা ছাড়িয়ে , ফাটিয়ে বুড়িকে এনে দিয়ে যায়। বুড়ি নাড়ুগুলো বানিয়ে রাখে। আজকাল মণির মা দেখে আরো অবাক হয়। বুড়ি কালীপুজোর জন্যে পয়সা জমাচ্ছে। সেটুকু পয়সা জমেছে তাতে প্রতিমার খরচও হবে না। তার চোখে ভেসে উঠল মাঝে রাতে সেই যে বুড়ি কালী প্রতিমার সামনে পড়ে কাঁদছিল তার ছবি। কঠিন এই মহিলাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে ওরও মন কেমন করে উঠেছিল। পুজো করতে না পেরে বুড়ির যেন মাথারই ঠিক নেই। বাড়ি ভাড়ার জন্যে যেমন করে তাগাদা দেয়, জগু সেদিন পয়সা দিতে একদিন দেরি করেছিল বলে একেবারে খ্যাঁকখ্যাকিয়ে উঠল। কুষ্ঠ আক্রান্তদের মতো অনবরত পয়সা গুনতে থাকে। ফেলানি জানে বুড়ি একবার রেঁধে তিনবারে খায়। এমনিতেই কম খায়, এখন পাখির মতো খুটোখুটি করে। বুড়ির দিকে একবার তাকিয়ে সে বেরিয়ে গেল। বুলেন আর সুমলাকে একবার দেখে আসবে। বুলেনের ছেলেটার জন্যে একটা প্যাকেটে মুড়ি কতকগুলো নিয়ে নিলো।
     দেখতে দেখতে বস্তিটা ভরে পড়ল। সে যখন এসেছিল তখন এতো ঘিজিঘিজি বাড়িঘর ছিল না। এখনে একটার গায়ে ঘেঁষে অন্যটা গড়ে উঠেছে। কাল রাতে বৃষ্টি দিয়েছিল। সাত সকালেই আকাশ পরিষ্কার করে রোদ উঠেছে। সে আস্তে আস্তে হাঁটছিল। কোথাও একটা কোকিল ডাকছিল। বহুদিন পরে আজ কোকিল ডাকছে। কথাটা মনে পড়তেই ওর হাসি পেয়ে গেল। কোকিলে কেন ডাকবে না? নিশ্চয়ই ডাকে। তারই কি আর সে ডাক শোনার সময় আছে? বিহু এসেই পড়ছে। মণিকে একটা গামছা দিতে হবে। হঠাৎই ওর ইচ্ছে হলো, সব কাজ বাদ দিয়ে ও একটা তাঁতশাল দিয়ে বসবে । বাড়ির সামনাতে আমগাছের ছায়াতে বসে ও গামছা বুনবে। কাকে কাকে দেবে সে গামছা? অবাক কথা। আমগাছের ছায়াতে তাঁতশাল আছে যেখানে সেই সবুজ শ্যামল গাঁয়ের একটা মানুষও ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল না। এমনকি সেগুন পাতের মতো ছড়ানো ছিটোনো হাতের সেই মানুষটা, অল্প আগে যে ফেলানির ফেটে যাওয়া হাতখানা ঠোঁটে নিয়ে বিব্রত করছিল সেই মানুষটাও ওর চোখের সামনে এগিয়ে এলো না। এলো একদল সহায় সম্বলহীন মানুষ, জাতপাতের চিহ্ন ছাড়া ম্লান একদল মানুষ এসে হাত পেতে একটা একটা করে গামছা নিয়ে গেল। জোনের মা, মিনতি, কালীবুড়ি, ফুল, জগুই, জগুর অসুস্থ স্ত্রী, বুলেন, সুমলা, নবীন, রত্নার মা, এমনকি কাঁপা কাঁপা হাতে পায়ে বাঁকা হয়ে ঝুঁকে পড়া সেই বুড়ো দর্জিও এলো। ওর ইচ্ছে হলো, লেপে পুছে লাল করে রাখা রান্নাঘরে সব্বাইকে বসিয়ে ছাই আর তেঁতুলে মেজে ঘসে সোনার মতো চকচকে করে তোলা কাঁসার বাটিতে পিঠে নাড়ু খেতে দেয়। কী তৃপ্তি করে সেই দৈ চিঁড়ে খাবে মানুষগুলো। মণি ছোট থাকতে যেমন ভরা দুধে ওর বুক দুটো ব্যথায় টনটন করত আজও তেমনি টনটন করে উঠল। কোকিলটা তখনও ডাকছে।
     “ কই যাও মণির মা?” জোনের মা ওর সাদা দাঁতগুলো বের করে হাসছে। স্নান করে আধুলির সমান ফোঁটা পরেছে কপালে, তাতে মেয়ে মানুষটি পাকা জামের মতো চকচক করছে। রোজ যেমন তাকায় আজো মানুষটির দিকে সে মুগ্ধ হয়ে তাকালো। কত সুন্দর শরীর ওর, মুখের গড়নও তেমনি সুডোল। স্বামীর পিঠে কিছু একটা মালিশ করছিল। অনেকদিন হলো লোকটা হাটে হাটে ইঁদুর মারা, আরশোলা মারার ঔষধ বিক্রি ছেড়ে দিয়েছে। মোড়ের রাস্তার দোকান থেকে চাল আধা কিলো নিয়ে আসতেও মানুষটির কষ্ট হয়।
     “ আয়।” জোনের মা ডাকল ওকে।
     “ না গো, আজ আসছি না, বুলেনের ওখান থেকে আসি গে।” সে ফিরে তাকিয়ে দেখল শক্ত সমর্থ স্বাস্থ্যবান যুবতী কেউ যেন শিশু একটাকে তেল মালিশ করছে। একটা গন্ধ এসে নাকে লাগল। জোনের মায়ের উঠোনে এলাচ লেবুর গাছে ফুল ফুটেছে নিশ্চয়। নতুন জল পেয়েছে, এখন তো লেবু, জাম্বুরা এসবে ফুল ফোটার সময়।
     “ কই যাস মণির মা? দাঁড়াতে বলছি যে?” গলা শুনে ও ফিরে দাঁড়াল, মিনতি। মাথাতে এক গামলা কাপড় নিয়ে নদীতে যাচ্ছে। একটু পেছনে পেছনে ওর ছেলের হাতে সাবান আর বালতি। সুন্দর নাক-মুখের থুলথুলে পরিষ্কার ছেলেটিকে দেখলেই মায়া হয়। মালতী ছেলেটার হাতে একটু মুড়ি দিল। মুড়ি পেয়ে ও হেসে ফেলল। ও তাকে আরো কিছু মুড়ি দিল। ওরা নদীর দিকে এগিয়ে গেল।
     সাইকেলে বোঝাই নারকেল নিয়ে জগু ওর পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেল। সে বোধহয় সেই সকালেই নারকেলের খোঁজে বেরিয়েছিল। অসুস্থ সেই মহিলাটি বা কেমন আছে? সেদিন মিনতি বলছিল, অসুখটা বুঝি বেড়েছে। ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল দু’পায়ের মাঝে ঝুলে থাকা এক টুকরো লালচে মাংস, শুকিয়ে ফেটে চৌচির মাঠের মতো এক জোড়া চোখ। কানে গুমগুমিয়ে উঠল একটা কথা, “ মরা মরদকে মনে নিয়ে সব করতে পারি, কিন্তু আমার মতো জ্যান্ত স্বামী...।” কেমন বা আছে বৃষ্টিতে না ভেজা মাটির মতো শুকনো সেই মহিলাটি। সে বুলেনের বাড়ি যাবার গলির থেকে পথ পালটে অন্য এক গলিতে পা দিল। দু’তিনটে মানুষকে চলতে হলেও এই গলিতে সামনে পেছনে চলতে হয়। তার উপর দু’পাশে নালা। ছোট ছোট বাড়িগুলোতে ঘরটা দাঁড় করবার জায়গা ছেড়ে আর অল্পই মাটি বাকি থাকে। নোংরা জলগুলো ছোট নালা একটা খোঁড়ে আসবার যাবার রাস্তার দিকে বইয়ে দেয়। রাস্তার দু’পারে নালাগুলোতে ভেসে আছে ভাত, মাছের কাঁটা, শাক সবজির বাকল, নানা রঙের প্লাস্টিকের থলে, ব্যবহৃত নিরোধ, মালা ডি বড়ির প্যাকেট। সে নালাগুলোর দিকে ভালো করে না তাকিয়েই হাঁটবার চেষ্টা করল। অল্প দূরে গিয়ে সে টোকা দিয়ে একটা ঘরের সামনে দাঁড়ালো। লেপে পুছে পরিচ্ছন্ন থাকত যে বাড়িটা তার কী ছিরি হয়েছে। উঠোনে ঢেঁকি শাক উঠেছে। বেড়াগুলো খসে পড়েছে। ভুল হলো কি? লেপা মোছা বারান্দায় যে রোগা মহিলাটি নারকেল নাড়ু দিয়ে লাল চা খেতে দিত এ সেই মহিলার বাড়ি নয় কি? হতেই তো হয়। ঘরের উপর ঢলে পড়া বরই গাছটা তো দেখি ঠিকই আছে। এই গাছের বরইতে কত কত আচার এই রোগা মহিলা বানিয়ে দিল, আর ওর বর জগু সেগুলো বিক্রি করে গেল। সেই ঝাল-মিষ্টি-টক আচারের স্বাদ মালতীও চেখে দেখেছে , এই বাড়িতেই। সে ঢুকে গেল। বাড়িতে ঢোকার দরজা বলে কিছু নেই। বাঁশ একটাতে সুপারির খোল ঝুলিয়ে বেড়ার নামে যে একটা আড়াল তৈরি করা ছিল তারও একটা দিক বসে গেছে। খোলগুলো খসে খুলে পড়ে এক জায়গাতে জমা হয়ে আছে। উঁই ধরেছে, আদ্ধেক খোল ইতিমধ্যে মাটি হয়ে গেছে, বাকিটাও শীগগির তাই হয়ে যাবে। খোলগুলোর পাশ দিয়ে সে ভেতরে এলো। কোনও সাড়া শব্দ নেই। আজানো দরজার কাছে নারকেলের স্তূপ। ও যে জগুকে সাইকেলে করে নারকেল আনতে দেখেছিল এগুলো সেই নারকেলই হবে। পুরো ঘরটাতেই একটা পচা পচা গন্ধ।
     “কে?” দুর্বল একটা ডাক শুনে সে চমকে গেল।
     “আমি ,মণির মা। এদিকে আয়।”
    এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ঢিগা দিয়ে রাখা ঘরটার পেছনে গিয়ে ছেঁড়া কাঁথার স্তূপ একটা পড়ে থাকতে দেখতে পেল। তেল চিটকে পড়া, সেলাই করা থেকে জলের ছোঁয়া না মেলা এই কাঁথার স্তূপ থেকেই হয়তো গন্ধটা আসছে। সে দেখল দুর্বল ডাকটা এই কাঁথার ভেতর থেকেই বেরুচ্ছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। পুঁজ , রক্ত লেগে আছে কাঁথাগুলোতে। তার ভেতর থেকে মেয়ে মানুষটি ডাক দিল।
     “মণির মা, কে মণির মা?” কাঁথার স্তূপের ভেতরে বসেছে জগুর বৌ। মালতীর নাকে একটা গন্ধ লাগল, কংকালসার মহিলাটির গা থেকেই বেরুচ্ছে।
    “ তোর বেমার...মিনতি বলল...।” সে কিছু একটা বলতে গিয়ে বলতে পারছিল না, গলাতে আটকে যাচ্ছিল। জগুর বৌও ওর কথাগুলো ধরতে পারেনি।
    “ তোকে দেখিনি অনেকদিন, জগু...।”
    জগুর বৌ হাত একটা তুলে জোরে নাড়ালো, যেন একটা শুকনো পেঁপের পাতা ডাল সহ বাতাসে নড়ছে। ভেঙ্গে দু’টুকরো হবেই এইমাত্র।
     “মণির মা তুই আমার বিচার করতে এসেছিস?” মণির মা ভালো করে দেখল গর্তে বসে পড়া চোখজোড়া থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।
     “ কি আর খবর নিবি এই মরা শরীরের?” মহিলার রক্তে পুঁজে ঘায়ে ভরা ঝুলন্ত জরায়ু কাপড়ের থেকে বেরিয়ে এসেছে। মালতীকে সে দিকে তাকাতে দেখে সে দাগে ভরা শাড়িতেই সেটি ঢাকার চেষ্টা নিলো।
     “ ডাক্তার , হাসপাতাল...” সে তাকে চিকিৎসার কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছিল।
    “ যন্ত্র দিয়ে আর ঢুকিয়ে দিতে পারে না। উঠিয়ে দিতে হবে। হাসপাতালের মহিলা ডাক্তারটি আমাকে খুব গালাগাল করেছে। করলে কী হবে? এটা উঠাতে অনেক টাকা লাগবে, এতো টাকা কোথায় পাব? বুঝলি মণির মা আমার ভেতরে সব পচে গেছে। খালি রক্ত আর পুঁজ, কি যে দুর্গন্ধ।” বলতে বলতে নিজেই নাকে হাত দিল।
     পায়ের শব্দ শুনে দু’জনে ঘুরে তাকালো। জগু। সে ভেতরে ঢুকে কাপড় পাল্টাচ্ছে। বৌ আর মালতী চুপ রইল। সে একজোড়া পরিষ্কার কাপড় পরল। তারপর বেরিয়ে গেল। পেছনটায় যে দু’জন মহিলা বসে আছে তাদের কোনও অস্তিত্বই অনুভব করল না। সে বেরিয়ে যাবার পর ওর বৌ নড়ে চড়ে বসল। পচা গন্ধটা ভোক করে নাকে লাগল।
     “আমি মরলেই ভালো ছিল। তুই কি জানিস এসব অসুখে লোক মরে কতদিনে?”
    “ডাক্তারনীকে...” সে চিকিৎসার কথাটা আবার পাড়তে চাইছিল।
    “ডাক্তারদি কী বলছিল , জানিস মণির মা?”
    “কী বলেছে?”
    “ বলেছে আমার এই অসুখটা হয়েছে কেন?”
    “কেন হয়েছে?”
    “সেই আঠারো বছর বয়স থেকে আমি প্রতি রাতে ত্রিশটা করে নারকেল কুরেছি, পাটায় পিষেছি, সন্দেশ নাড়ু বানিয়েছি। মহিলা ডাক্তার ওকে খুব বকা বকি করেছে।”
  


  “ঠিক করেছে।” মণির মায়ের হঠাৎ মিনতির বলা কথাগুলো। সে হাতে পয়সা পেলেই ড্রাইভারণীর ওখানে যায়। সে বুঝি একদিন ফুলের ওখানে মদ খেতে গিয়ে ওর হাতে চড় খেয়েছে। মিনতি জগুর নাম শুনলেই চটে যায়। সে বুঝি আজকাল যার তার সঙ্গে গড়াগড়ি করে বেড়ায়। মিনতির বিটকোনো ঠোঁট দু’টোর থেকে বেরিয়ে ঝরে পড়া শব্দগুলো ওর মনে পড়ল। বজ্জাতটা বৌকে খাটিয়ে খাটিয়ে বেমারি করল, এখন তার ডিম দুটোর চুলকানো বেড়েছে।” মালতী আবার বলল, “ভালো করেছে ডাক্তারণী।”
    “ অমন করে বলবি না মণির মা। সে বেটা মানুষ, তাতে জোয়ান পুরুষ। সে বলেই এখনো একজনকে নিয়ে আসেনি। ভাত রাঁধতে না পারলে সে আমার জন্যে কিছু না কিছু রেখে যায়। এই দেখ মণির মা।” কাপড়ের তলা থেকে সে ছোট একটা ব্রেড বের করে দেখালো। “ তাকে আমি কীইবা দিতে পেরেছি, না পেরেছি সংসার চালাতে, না দিতে পেরেছি বিছানার সুখ।” কংকালসার মেয়েমানুষটির কথাগুলো শুনে ওর যেন গায়ে লংকা পোড়া লাগল। ঠিক মিনতির মতো মুখ বিটকে ও হঠাৎই নিজের অজান্তে বলে উঠল, “ তোকে খাটিয়ে খাটিয়ে মারল, এখন তার...।” থেমে গেল সে।
     “কী বলতে চাস মণির মা! সে জোয়ান পুরুষ, জোয়ান পুরুষের খালি বিছানা।” মুখ বাঁকা করে কেঁদে ফেলল জগুর বৌ, সেদিকে তাকিয়ে কেমন এক বিতৃষ্ণাতে মন ভরে গেল মালতীর, ঠিক যেমন মিনতির হয় মুখখানা যখন জগুর কথা বলে, ওরও তাই হলো।
    “ ছেলেমেয়েগুলো গেছে কই?” সে প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল।
     “ কী করবে আর? একটা ভাঙ্গাচোরার ব্যবসাতে নেমেছে, একটা রদ্দি জোগাড় করে ফেরে, একটা...।” মহিলাটি কথা বলতে গিয়ে হাঁপাচ্ছিল।“ কী করবে, মা হলো ওদের মরা লাশ।”
     “বাবা কী করে, সে দেখতে পারে না?”
    “ ওর কথা তুই অমন করে বলবি না, সে দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে বলেই দু’মুঠো খেতে পাচ্ছি।”
    হঠাৎ সে উঠল।
     “যাই , বুঝলি। বুলেনের ওখান থেকে আসিগে একটু।” মুড়ির তোড়াটা ওর হাতে দিয়ে ও বেরিয়ে এলো। পচা গন্ধের সঙ্গে কোথাও যেন মিশে গেছে এক সস্তা আতরের গন্ধ। জগু কাপড়ে মেখে বেরিয়ে গেছে। ওর ঠোঁট দুটো মিনতির মতো ভাঁজ হয়ে গেছে, ভাঁজ করা ঠোঁটে বিড় বিড় করছে সেই শব্দগুলো। নালার দিকে তাকিয়ে সে পিক করে থু এক দলা ফেলে দিল। অল্প শান্তি পেল যেন।
     রত্নার মা পিড়িতে বসে বাঁশের শলা চাঁচছিল। সে ডাক দিল।
    “ কী করছ, রত্নার মা?”
     “কী আর করবি, শলা দুটো চাঁচছি।”
    “গেল বাজারটা মার খেল।”
    আমি বাসস্ট্যাণ্ডে গিয়ে দু’জোড়া বিক্রি করে এসেছি। কোনোক্রমে চাল কতকগুলো আছে।”
    “মণি সিঙের গ্যারেজে কাজ করে চালের খরচটা তুলেছে বলেই উপোস করতে হলো না।”
    “তুই হলি বেটার মা।” রত্নাদের ঘর থেকে তখন বুড়ো মানুষটা বেরিয়ে আসছিল কিছু বলতে বলতে। হাতে একগুচ্ছ ঠোঙা। বুড়োর কথাতে দুনিয়ার তেতো মেশানো,
    “ আজ আমার একটা ছেলে থাকত তবে আমাকে কি এই বুড়ো শরীরে এসব করতে হতো?” বুড়ো ঠোঙার তোড়া উপরে তুলে দেখাচ্ছে। মালতীর পাশ দিয়েই বুড়ো বেরিয়ে গেল।
     “রত্নার মা, বুড়ো যে ঠোঙা বানায় এ চোখ দিয়ে পারে?”
    “চোখে সব পারে, খেতে পারে, শুতে পারে, কী করতে পারে না? মা-মেয়েকে গালি পাড়বার সময় বুড়োর গলা শুনবি, জোয়ান মানুষে ওর সঙ্গে পারবে না। কাজের সময় ওর বেটা নেই।”
     “ঠোঙা কে বানালো তবে?”
    “ কে আবার, আমি!”
    “রত্না” রত্নার কথা কিছু ওর কানে আসছে। বেশিরভাগ সময় ও ড্রাইভারণীর বাড়িতে থাকে। জোনের মা বলছিল চাকরের কাজ করে। ওর কানে বেজে উঠে একটা তীব্র মিহি শিষ। একটা গাড়িতে হেলান দেয়া পুরুষ আমার মেয়েমানুষের রোজগারে খায় বলে গালি পাড়তে পাড়তে মাতাল একটাকে নিয়ে যাচ্ছে আরেকজন মানুষ। সেই বাড়িতে, সেইসব মানুষের সঙ্গে...।
     রত্নার মা কিচ্ছু বলেনি, একমনে শলা চাঁচছে।
    “বুকের ব্যথাটা?” সে মেয়েমানুষটির শরীরের কথা, বুকের ব্যথার কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছিল। মানুষটি কোনও উত্তর করল না। সেও কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এলো।
     ড্রাইভারণীর বাড়িটা পেরিয়ে একটা পাক দিলেই বুলেনের ঘর। ড্রাইভারণী নতুন ঘর তুলছে। নতুন ঘরের টিনে টিভির এন্টেনা বাঁধা। শুনেছে রঙিন টিভি , বড় কাঁচের বড় টিভি। বুড়ো দর্জি বা নবীনের ঘরের ছোট সাদা কালো টিভি নয়। নতুন ঘরের সামনে ড্রাইভারের সাদা রঙের গাড়ি।
     বস্তির ভেতরে ড্রাইভারণীরই অবস্থা ভালো। ড্রাইভারণীর ঘর থেকে গানের শব্দ ভেসে আসছে। বড় কাঁচের বড় টিভির থেকেই হয়তো। সেইটুকু জায়গা ও মাথা নিচু করে পেরিয়ে গেল। কেন জানি ওর মনে হলো কেউ ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। তার মনে হলো যেন গলা শুকিয়ে আসছে।
   
   

বুলেন জাত্রোফা গাছ দিয়ে বেড়া তৈরি করেছিল , এখন এগুলো বেড়ে এমন হয়েছে যে একটা মুরোগও এপার ওপার হতে পারবে না। বেশ সবুজ হয়ে উঠেছে বেড়াগুলো। লিচু গাছটাও দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেছে। গাছাটাতে ছোট ছোট ফুল ধরেছে।বুলেনের বাড়ির উঠোনে সে এক নতুন গাছ দেখতে পেল। ফনি মনসার গাছ একটা বাড়তে বাড়তে ডালপালা মেলে একেবারে মাঝ উঠোনে এসে পড়েছে। গাছাটার চারদিকে বেড়া । দেখলেই বোঝা যায় বুলেনের কাজ। গাছটার চারদিক লেপাপোঁছা করে রাখা, একটা প্রদীপও জ্বলছে। বুলেন হরি ভাঙুয়ার ছেলের সঙ্গে বসে আছে। মালতী ভেতরে ঢুকে এলো।
     “ আয় বৌদি।” বুলেন ওর দিকে একটা কাঠের টুল এগিয়ে দিল।
    “সুমলা কই? ভালো আছে তো?”
     “কী আর ভালো থাকবে? ভাঙা গাছ শেকড় কি মেলবে কখনো?”
    কমলা রঙের একটা দখনা আধা মাটিতে ছ্যাঁচড়ে আধা পরে সুমলা বেরিয়ে এলো। ওর মাথার লম্বা চুলগুলো নেই। কদম ছাট দিয়ে ছেটে ফেলা হয়েছে।
     “ চুলগুলো, চুলগুলো কেটে দিলি কেন?”
    “ উকুন হয়েছিল।”
    “ এই কাপড়টা ও পরবে কী করে? বাজার থেকে একটা ম্যাক্সি কিনে এনে...।”
    ওর কথা শেষ না হতেই বুলেন গিজগিজিয়ে উঠল, “পরতে হবে জাতের কথা আছে, না পরলে হবে কি?”
     “বেজাতের পোশাক পরতে নেই। এখন সমস্ত বডো মানুষকে নিজের পোশাক পরতে হবে।” ভাঙুয়ার ছেলে মালতীর গায়ের কো-অপারেটিভের সস্তা শাড়ির দিকে চোখ বাঁকা করে তাকালো।
     “বৌদি ,তুইও এসব কাপড় ছাড়। নিজেদের পোশাক পর।”
    “নিজেদের পোশাক?” কী বলে বুলেন? বুলেন এতো পালটে গেছে?
    “তোর গায়ে বডোর রক্ত। তুই কিনারাম বডোর নাতনি।”
    সে অবাক হয়ে বুলেনের দিকে তাকিয়ে রইল।
    “ বড়ো সড়ো আন্দোলন হবে। অসম আন্দোলনের থেকেও বড়ো, আমরা নিজেদের রাজ্য নিয়েই ছাড়ব।” হরি ভাঙুয়ার ছেলে যখন কথা বলে চোখগুলো লাল অঙ্গারের মতো হয়ে পড়ে।
    “আন্দোলন হবে?”
    “হবে।” বুলেনের গলার স্বর এই ফণিমনসার গাছের মতো তীব্রগন্ধী।
    “তারমানে আবার গোলমাল হবে?” ওর কানে বেজে উঠল এক হাবাগোবা মানুষের স্বর , “ মাথা নেই, চোখ নেই।”
    কী করে সে ভুলে লোকটার সেই গোঙানোর স্বর, “ দাদু...দিদা, শিমুল গাছের তলায়, বুলাবুলির মাথা...লাল লালা লক্ত।”
    “হবে, গোলমাল, বন্ধ, সব হবে। আমরা রাজ্য আদায় করেই ছাড়ব।” হরি ভাঙুয়ার ছেলের চোখে সে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা এক অগ্নিকুণ্ড দেখতে পেল।
     “ এগুলো যদি না হয়, এগুলো কি না করলেই নয়?”
    “হবে না, দেখলি না ওরা কী করল? বিদেশী তাড়াবে বলে গদি দখল করল। কোদাল দিয়ে ধন তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। আমাদের কী হলো? আমরা পেলাম কী? আমার বাড়িঘর ধ্বংস করেছে ওরা, আমার বৌ পাগল হলো। চাইই চাই, নিজেদের রাজ্য চাই।”
    হরি ভাঙুয়ার ছেলে চলে গেল। যেতে যেতে ওর শরীরের শাড়িটার দিকে আরো একবার তাকিয়ে গেল।
  
   
  “তুই ঐ মিনতি না টিনতি ঐ হারামজাদীর সঙ্গ ছাড়।” বুলেনের স্বর ছোট হয়ে আসছে, “পাক্কা খবর পেয়েছি ওর শরীরে ওই জারজ জন্ম দেয়া লোকটার সঙ্গের অনেকে সারেণ্ডার করবে, সেও করবে। তার পর দেখবি ঐ হারামজাদী রেণ্ডীর বিছানাতে এসে মরা লাশে শকুন পড়ার মতো এসে পড়বে এই সব ক’টা। তোকে বলে রাখলাম।”
    মালতী ঢোক গিলল। সুমলা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। ওর শরীরের দখনাটা খুলে গেল। গায়ে শুধু পেটিকোট। পেটিকোটে লাল লাল দাগ। বুলেন দখনাটা ওর শরীরে প্যাঁচিয়ে একটা রশিতে সেটি বেঁধে দিল। পুরো পরিবেশটা—বুলেন, এই দখনা পরা সুমলা সবই যেন কেমন অচেনা ঠেকল মালতীর।
    “যাইরে, মণি আসবার সময় হল। ভাত দুটো বসিয়ে দিইগে’ ।“ ধপ করে উঠে সে বুলেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
    “বৌদি, গাছটাতে একটা প্রণাম করে যা।” বুলেনের ডাক না শোনার ভান করে সে চলে গেল।
    কেন জানি ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল। চারদিকে যেন লকলক করে বেড়ে উঠেছে তীক্ষ্ণ কাঁটার ফণিমনসার গাছ। ও সেদিকেই যায় সদিকেই পাতাগুলো ওকে ঘিরে ফেলে। কী করে সে যায়, কোনদিকেই বা?
          

2 comments:

BORAH RUMI said...

ডারুণ........

Sushanta Kar said...

পঢ়াৰ বাবে ধন্যবাদ! আপনালোকৰ এনে উৎসাহ পাই থাকিলে, কামটো হৈ থাকিব।